হিন্দু ধর্মে আদি পিতা ও মাতার নাম

স্বয়ং ব্রহ্মা হলেন সনাতন /হিন্দু ধর্মের আদি পিতা এবং সতী দেবী সরস্বতী হলেন হিন্দু ধর্মের আদি মাতা। যদিও পিতা মনু ও মাতা শতরূপা সম্পর্কে  নানান গ্রন্থে ও মানুষের ভিন্ন ভিন্ন মতামত রয়েছে।

আসুন আমারা এসম্পর্কে জেনে রাখি। ব্রহ্মা সৃষ্টির প্রথম দেবতা এবং সতী তার শক্তি হিসেবে বিবেচিত। অন্যদিকে, মনু ও শতরূপা মানব জাতির আদি পিতা-মাতা হিসেবে পরিচিত। হিন্দু ধর্মের এই বিভিন্ন দিকের মাধ্যমে আদি সৃষ্টির কাহিনী এবং মানব সমাজের গঠন বোঝা যায়।
সর্ব প্রথমে ধর্মীয় পুরান ও বেদ গ্রন্থ আদি পিতা ও মাতার পরিচয় সম্পর্কে কি আলোচনা করা হয়েছে সে সম্পর্কে জানতে হবে তাহলে সঠিক তথ্যটি আমরা খুঁজে পাবো। এখন আমরা জেনে নেব হিন্দু ধর্ম গ্রন্থে প্রাথমিকভাবে আদি পিতা মাতা হিসেবে কাদেরকে বিবেচিত করা হয় সে সম্পর্কে।  তা নিম্নরুপ........

হিন্দু ধর্মে আদি পিতা ও মাতার ছবি hd
হিন্দু ধর্মে আদি পিতা ও মাতার ছবি

হিন্দু ধর্মের আদি পিতা ও মাতা

....১. ব্রহ্মা ও সতী (বা দেবী সারস্বতী)ব্রহ্মা:ভূমিকা: ব্রহ্মা হলো সৃষ্টিকর্তা দেবতা, যিনি হিন্দু ধর্মের সৃষ্টির মূল দায়িত্ব পালন করে থসকেন। তিনি চারটি মাথা এবং চারটি হাত সহ পূজিত হন এবং সৃষ্টির প্রতি তার ভূমিকা নিশ্চিত করে থাকেন।কাহিনী: পুরাণ মত অনুযায়ী, ব্রহ্মা প্রথম মানব জাতি এবং পৃথিবী সৃষ্টির জন্য দায়ী। তাকে 'ব্রহ্মা' নামে অভিহিত করা হয় এবং তিনি সৃষ্টির পরিণতি ও বণ্টনের ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করেন।সতী (অথবা দেবী সারস্বতী):ভূমিকা:  দেবী সারস্বতী বা সতী, যিনি ব্রহ্মার স্ত্রীরূপে বিবেচিত ও পুজিত হন। তিনি সতী জ্ঞান, সঙ্গীত, এবং বিদ্যার দেবী হিসেবে পরিচিত।কাহিনী: সতী ব্রহ্মার সঙ্গিনী হিসেবে পরিগণিত হন এবং তাঁর শক্তি ও জ্ঞান পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেন। তিনি সৃষ্টি রচনার জন্য প্রয়োজনীয় সকল গুণের মূল উৎস।

২. মনু ও শতরূপা:

মনু ও শতরূপা হিন্দু পুরাণ অনুসারে আদি মানব ও মানবী। বিভিন্ন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে, বিশেষত মনুসংহিতা ও পুরাণগুলিতে, তাদের উল্লেখ রয়েছে।

মনু:

মনু হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী মানবজাতির আদি পিতা এবং প্রথম আইনপ্রণেতা। তাকে "মানব" (মানুষ) শব্দের উৎস হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বিভিন্ন যুগে (মন্বন্তরে) ভিন্ন মনুর আবির্ভাব ঘটে, কিন্তু সর্বপ্রথম মনু হলেন স্বয়ম্ভুব মনু, যিনি ব্রহ্মার মানসপুত্র হিসেবে বিবেচিত।

শতরূপা:

শতরূপা হলেন মনুর সঙ্গিনী এবং প্রথম নারী। তাকে আদি মাতৃকা হিসেবে গণ্য করা হয়। ব্রহ্মা তাকে সৃষ্টি করেছিলেন মনুর সহধর্মিণী হিসেবে।

হিন্দু ধর্মের আদি পিতার নাম: 

মানবজাতির প্রথম পুরুষ মনু প্রাচীন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত আছেন এবং ‘মানব জাতির পিতা’ হিসেবে তাঁকে গণ্য করা হয়। কাহিনী অনুযায়ী, মনু মানবজাতির প্রাথমিক সমাজের প্রতিষ্ঠাতা এবং ধর্মীয় নীতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচিত। তাঁর নামে একটি ধর্মীয় গ্রন্থ রয়েছে, যার নাম ‘মনুস্মৃতি’, যা মানবজাতির জন্য নৈতিক বিধি ও আদর্শ নির্ধারণ করে।

হিন্দু ধর্মের আদি মাতার নাম:

শতরূপা হলেন মনুর স্ত্রী এবং মানব জাতির সর্বপ্রথম নারীও বটে।কাহিনী:  মানবজাতি সৃষ্টির প্রথম প্রক্রিয়া শুরু করেন শতরূপা এবং মনু একসাথে। শতরূপার নামের অর্থ 'শত রূপে সুন্দর', এবং তিনি মনুর সঙ্গী হিসেবে মানব জাতির সামাজিক ও পারিবারিক জীবন নিশ্চিত করেছেন ও এখনো করছেন।

📖Table of contents
  • হিন্দু ধর্মের আদি পিতার নাম
  • হিন্দু ধর্মের আদি মাতার নাম
  • মানবজাতির আদি পিতা-মাতা কে?(origin of Hinduism)
  • হিন্দুধর্মে মানবজাতির আদি পিতা-মাতা

ধর্মগ্রন্থ বেদের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “ঈশ্বর শুধুমাত্র একজন, সেই ঈশ্বরের অনুরূপ আর অন্য কেউ নেই।” এর মানে, আমাদের উচিত শুধুমাত্র ঈশ্বরের আরাধনা করা। তবে, এক আশ্চর্য বিষয় হলো যে, বর্তমান যুগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মূর্তি পূজা করছেন, যা প্রাচীন যুগের ঋষি-মুনিরাই প্রথম প্রচলন করেছিলেন। তাহলে এর পেছনে কী কারণ ছিল? প্রাচীন কালে, বেদ, গীতা ইত্যাদি ধর্মগ্রন্থগুলি সবাই পড়তে পারতেন না। ঋষি-মুনিরা এই ধর্মগ্রন্থগুলির তাত্ত্বিক বাণী বুঝতেন এবং সেগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে ব্যাখ্যা করতেন। এই ব্যাখ্যা দেয়ার জন্যই তাঁরা মূর্তি পূজার সূচনা করেছিলেন। তবে, এখনও একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন থেকে যায়—হিন্দু ধর্মের ভগবান কে? ভগবান, আসলে, নিরাকার—অর্থাৎ, তিনি এক এবং অবিনশ্বর। তাঁকে কেউ দেখতে পারেননি, কারণ তাঁর কোনো সৃষ্টি বা ধ্বংস নেই। তিনি অসীম, অদৃশ্য এবং সর্বজ্ঞ।

 মানবজাতির আদি পিতা-মাতা কে?(origin of Hinduism)

বিভিন্ন ধর্মে মানবজাতির আদি পিতা-মাতার ধারণা রয়েছে, তবে সেগুলো ধর্মবিশ্বাস ও সংস্কৃতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রূপ নিয়েছে। এখানে প্রধান কয়েকটি ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা হলো—

ইসলাম

ইসলামের মতে, মানবজাতির আদি পিতা আদম (আ.) ও আদি মাতা হাওয়া (আ.)। কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন এবং তাঁর জন্য হাওয়া (আ.)-কে জীবনসঙ্গী হিসেবে সৃষ্টি করেন। তাঁরা প্রথমে জান্নাতে ছিলেন, পরে পৃথিবীতে প্রেরিত হন (সূরা আল-বাকারা ২:৩৫-৩৬, সূরা আল-আরাফ ৭:১৯-২৫)।

খ্রিস্টধর্ম ও ইহুদিধর্ম

খ্রিস্টধর্ম ও ইহুদিধর্মের মতে, প্রথম মানব আদম (Adam) এবং প্রথম নারী ইভ (Eve)। বাইবেলের আদিপুস্তকে বলা হয়েছে, ঈশ্বর আদমকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেন এবং তাঁর পাঁজরের হাড় থেকে ইভকে সৃষ্টি করেন (Genesis ২:৭, ২:২১-২২)।

হিন্দুধর্মে মানবজাতির আদি পিতা-মাতা

হিন্দুধর্মে মানবজাতির আদি পিতা-মাতা নিয়ে একাধিক কাহিনি রয়েছে। একটি প্রচলিত বিশ্বাস হলো, মনু (প্রথম মানব) ও শতরূপা (প্রথম নারী) মানবজাতির আদি পিতা-মাতা। ব্রহ্মা তাঁদের সৃষ্টি করেন এবং তাঁদের থেকেই মানবজাতির বিস্তার ঘটে। এছাড়া, পুরাণ মতে, বিভিন্ন ঋষি ও প্রজাপতিরাও মানবজাতির পূর্বপুরুষ হিসেবে বিবেচিত।

বৌদ্ধধর্ম

বৌদ্ধধর্মে নির্দিষ্টভাবে কোনো আদি পিতা-মাতার কথা বলা হয়নি। তবে পালি গ্রন্থ "অগ্গঞ্ঞ সুত্ত" অনুযায়ী, মানুষের উৎপত্তি এক প্রাচীন স্বর্গীয় অস্তিত্ব থেকে, যারা পরে পৃথিবীতে আসে এবং ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। বৌদ্ধ দৃষ্টিভঙ্গিতে মানবজাতির উৎপত্তি মূলত কর্মফল ও চেতনার বিবর্তনের ফল।

চীনা ধর্মতত্ত্ব (তাওবাদ ও লোকবিশ্বাস)

চীনা পুরাণে আদি পিতা-মাতা হিসেবে ফু শি (Fu Xi) ও নুয়া (Nüwa)-র কাহিনি পাওয়া যায়। নুয়া মানবজাতিকে মাটির তৈরি পুতুলের মাধ্যমে সৃষ্টি করেন, এবং পরে ফু শি ও নুয়া একসঙ্গে মানবজাতির বিস্তার ঘটান।

গ্রিক পুরাণ

গ্রিক পুরাণে মানব সৃষ্টির বিভিন্ন কাহিনি রয়েছে। প্রমিথিউস দেবতাদের কাছ থেকে আগুন চুরি করে মানুষকে দেয় এবং জিউস প্যান্ডোরাকে (প্রথম নারী) সৃষ্টি করেন। তবে মানবজাতির আদি পিতা হিসেবে দেওকালিয়ন (Deucalion) ও পাইরা (Pyrrha)-কে গণ্য করা হয়, যাঁরা মহাপ্লাবনের পর মানবজাতিকে পুনরায় সৃষ্টি করেন।

নরস (স্ক্যান্ডিনেভিয়ান) পুরাণ

নরস পুরাণে প্রথম মানুষ হিসেবে অস্ক (Ask) ও এম্বলা (Embla)-র কথা বলা হয়েছে। দেবতা ওডিন এবং তাঁর ভাইরা এক বৃক্ষ থেকে তাঁদের সৃষ্টি করেন এবং প্রাণ দেন।

আফ্রিকান পুরাণ

আফ্রিকার বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নিজস্ব সৃষ্টিতত্ত্ব রয়েছে। যেমন, পশ্চিম আফ্রিকার ডোগন জাতির বিশ্বাস মতে, প্রথম মানুষ ছিল নমো। অন্যদিকে, কিছু উপজাতি বিশ্বাস করে, দেবতা উনকুলুনকুলু (Unkulunkulu) প্রথম মানুষকে সৃষ্টি করেন।

প্রতিটি ধর্ম ও সংস্কৃতির নিজস্ব ব্যাখ্যা থাকলেও প্রায় সব বিশ্বাসেই প্রথম মানুষ ও মানবজাতির সূচনা নিয়ে গভীর কাহিনি ও দর্শন রয়েছে।

উপরের আলোচনা থেকে আপনারা কি জ্ঞান অর্জন করলেন তা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন আর আপনি কোন ধর্মের সেটাও জানাতে পারেন। 


Next Post Previous Post
2 Comments
  • Muslim
    Muslim April 4, 2025 at 3:58 AM

    আপনার লেখাটি পড়ে আমি এই বিষয়ে সকল তথ্য পেলাম ধন্যবাদ সুন্দর একটি বিষয়কে তুলে ধরার জন্য

    • HINDU
      HINDU April 21, 2025 at 8:43 AM

      Thanks

Add Comment
comment url