গায়ত্রী মন্ত্র সনাতন ধর্মের একটি অন্যতম প্রধান এবং পুরনো বৈদিক মন্ত্র। গায়ত্রী মন্ত্র হিন্দুধর্মে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র বলে মানা হয়। এটা ঋগ্বেদ (মণ্ডল ৩, সূক্ত ৬২, মন্ত্র ১০) থেকে এসেছে এবং দেবী গায়ত্রীর প্রতি উৎসর্গিত। নিয়ম করে এই মন্ত্র জপলে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ করলে জীবনের অনেক রকম মুশকিল থেকে মুক্তি মেলে। এই মন্ত্রটা প্রতিদিন সূর্য ওঠার সময় পড়লে আত্মা পরিশুদ্ধ হয়, মন শান্ত হয় আর নতুন জ্ঞান আসতে শুরু করে। গায়ত্রী মন্ত্রকে 'বেদমাতা' বলা হয়, কারণ এটা সব বেদের মূল শিক্ষার সূত্র।
 |
গায়ত্রী মন্ত্র জপের সঠিক নিয়ম ও উপকারীতা |
গায়ত্রী মন্ত্র হলো: (গায়ত্রী মন্ত্রের হিন্দি ভার্সন)
“ॐ भूर्भुवः स्वः।
तत्सवितुर्वरेण्यं।
भर्गो देवस्य धीमहि।
धियो यो नः प्रचोदयात्॥”
এই মন্ত্রের সংস্কৃত ভাষণ ভার্শন, উচ্চারণ ও অনুবাদ:
“ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ।
তৎ সবিতুর্বরেণ্যং।
ভর্গো দেবস্য ধীমহি।
ধিয়ো যোনঃ প্রচোদয়াত্॥”
অর্থ: আমরা সেই পরমেশ্বরের (ধ্যান) চিন্তা করি, যিনি পৃথিবী, আকাশ, আর স্বর্গের পালনকর্তা। তিনি সৃষ্টির উপাদান, পবিত্র ও জ্ঞানের উৎস। আমরা তাঁর দীপ্তি বা আলোকে ধ্যান করি, যেন আমাদের মনকে সৎ পথে চলতে সাহায্য করেন।
গায়ত্রী মন্ত্র জপের তিনটি শ্রেষ্ঠ সময় হলো:
দিনে তিন বেলা গায়ত্রী মন্ত্র পড়তে হয়, সময়গুলো হলো: একদম ভোর, দুপুর আর সাঁঝবেলা। এই সময়গুলোতে যারা নিয়ম করে জপ করে, তাকে "ত্রিকাল সন্ধ্যা" নামে ডাকা হয়। অর্থাৎ দিনে তিনবার জপ করলে তা “ত্রিকাল সন্ধ্যা” নামে পরিচিত। এই ত্রিকাল সন্ধ্যা করাটা ব্রাহ্মণ আর যাদের পৈতে আছে, তাদের জন্য একটা জরুরি কাজ। এটা করলে মন শান্ত হয়, নিজের ভেতরের ময়লা দূর হয় আর সৃষ্টিকর্তার প্রতি মনোযোগ বাড়ে।
প্রাতঃকাল – সূর্যোদয়ের আগে বা সময়। সন্ধ্যার সময় নিজের বুকের কাছে বাঁ হাতটা এমনভাবে রাখতে হবে যেন তালুটা উপরের দিকে থাকে, তারপর ডান হাতটা ঠিক সেভাবে রেখে মনে মনে জপ বলতে হবে।
মধ্যাহ্নকাল – দুপুর ১২টা নাগাদ। বুকে ডান হাত বাঁকা করে রাখুন, এরপর বাম হাতটিও বাঁকা করে আগের হাতের ওপর আলতো করে রাখুন, তার পর আপন মনে জপ করতে থাকুন।
সন্ধ্যাকাল – সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়। বুকে ডান হাত এমনভাবে রাখতে হবে যেন তালু উপরের দিকে থাকে। তার ওপর বাঁ হাত রেখে, ডান হাতের বুড়ো আঙুলে পৈতা ধরে মন্ত্র পড়তে হবে।
গায়ত্রী মন্ত্র পাঠের কিছু নিয়মকানুন:
হাতের আঙুলের মাঝে যে ফাঁকা জায়গা, তাকে গাঁট বলা হয়। প্রতি আঙুলে এইরকম তিনটা করে গাঁট থাকে। আঙুলগুলোর নাম হল বুড়ো আঙুল, শাহাদাৎ আঙুল, মধ্যমা, অনামিকা আর কড়ে আঙুল। বুড়ো আঙুল দিয়ে অনামিকার মাঝের গাঁট আর প্রথম গাঁট, কড়ে আঙুলের প্রথম, মাঝের ও শেষ গাঁট, আর অনামিকার শেষ, মধ্যমার শেষ, আর শাহাদাৎ আঙুলের অর্ধেক, মাঝের ও প্রথম গাঁট পর্যন্ত দশবার গুণতে হবে। এভাবে হাতে হিসাব রেখে জপ করতে হয়।
উপরোক্ত গায়ত্রী মন্ত্র (ওঁ ভূর্ভুবঃ,,,,,,,) পাঠ পূর্বক কুশীতে জল নিয়ে নিচের মন্ত্রটা পাঠ করবেন:
পাঠ শেষ হলে সেই জল তাম্র কুন্ডে দিয়ে দেবেন। মন্ত্রটা হল:
ওঁ উত্তর শিখরে যাতে ভূমাং পল্লব বাসিনী। ব্রহ্মণা সমুনাজ্ঞাতা গচ্ছ দেবী যথা সুখং।
গুরুমুখী বিদ্যার মধ্যে গায়ত্রী এবং গায়ত্রী সাধনা অন্যতম। উপবীত পরে তিন দিন ব্রহ্মচর্য পালন করা কঠিন, তবে লেখক বলেন গায়ত্রী মন্ত্রের সাধনা নিয়মিত করতে হবে। তারপর নিয়ম অনুযায়ী ত্রিসন্ধ্যা গায়ত্রী উপাসনার নিয়ম আছে। এখন অনেক ব্রাহ্মণ সন্তান সময়ের অভাবে ত্রিসন্ধ্যা গায়ত্রী মন্ত্র জপ করেন না, কিন্তু অন্তত স্নানের পর গায়ত্রী জপ করেন। কারণ গায়ত্রী মন্ত্র থেকে বিশেষ এক ধরনের শক্তি পাওয়া যায়।
গায়ত্রী মন্ত্র জপের সঠিক নিয়ম
১. উপযুক্ত সময়
সূর্যোদয়ের পর (ব্রহ্মমুহূর্তে) গায়ত্রী মন্ত্র জপ করলে সবচেয়ে বেশি ফলপ্রসূ হয়। সন্ধ্যায়ও জপ করা যেতে পারে।
২. স্থান নির্বাচন
নিরিবিলি ও পবিত্র স্থান বেছে নিন। উত্তর বা পূর্ব দিকে মুখ করে বসা উচিত।
৩. প্রস্তুতি ও শুচিতা
স্নান করে, পরিষ্কার পোশাক পরে, ধ্যানমগ্ন হয়ে বসুন। কুশাসন বা তুলসী আসনে বসলে বিশেষ ফল হয়।
৪. জপের সংখ্যা
প্রতিদিন ১০৮ বার (১ মালা) জপ করলে সর্বোত্তম। যাদের সময় কম, তারা অন্তত ১১ বার বা ২১ বার জপ করতে পারেন।
৫. মনোযোগ ও ভাবনা
মনোযোগী হয়ে, ঈশ্বরের কৃপা কামনায় জপ করুন। শুধুমাত্র মুখস্থভাবে না করে, প্রতিটি শব্দের অর্থ অনুভব করুন
গায়ত্রী পাঠের অন্যতম উপকারিতা সমূহ
গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় আচার নয়, এটি একটি আধ্যাত্মিক সাধনা, যার বহু উপকারিতা আছে। গায়ত্রী মন্ত্র পাঠ শুধু একটি ধর্মীয় কৃত্য নয়, এটি দৈহিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে উন্নত করার এক পরিপূর্ণ উপায়। প্রতিদিন অন্তত একবার শ্রদ্ধা ও মনঃসংযোগের সঙ্গে পাঠ করলে জীবনে শান্তি ও শক্তি অর্জন সম্ভব। নিচে এর মূল উপকারিতাগুলি তুলে ধরা হলো:
১. বুদ্ধি ও চিন্তাশক্তি বৃদ্ধি করে
গায়ত্রী মন্ত্রে বলা হয়েছে — “ধিয়ো যো নঃ প্রচোদয়াত্”, অর্থাৎ আমাদের বুদ্ধিকে সৎ পথে পরিচালিত করো। নিয়মিত জপ মানসিক শক্তি, স্মৃতিশক্তি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়ায়।
২. মনঃসংযম ও একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়
এই মন্ত্র উচ্চারণে মন শান্ত হয়, স্ট্রেস ও উদ্বেগ কমে, ফলে ধ্যান ও শিক্ষার কাজে মনোযোগ বাড়ে।
৩. আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে
গায়ত্রী মন্ত্র আত্মশুদ্ধির পথ খুলে দেয়। নিয়মিত পাঠ ঈশ্বরচিন্তা, ধর্মপালন ও আত্ম উপলব্ধিকে গভীর করে।
৪. নেগেটিভ শক্তি দূর করে, ইতিবাচক শক্তি আকর্ষণ করে
এই মন্ত্র পাঠের ধ্বনি ও কম্পন পরিবেশকে পবিত্র করে এবং আশেপাশের নেগেটিভ শক্তিকে হ্রাস করে।
৫. শরীর ও মন দুটোই সুস্থ রাখে
গায়ত্রী জপ নিয়মিত করলে হৃদস্পন্দন নিয়মিত থাকে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং মনের শান্তি বজায় থাকে — এটি একটি প্রাকৃতিক মেডিটেশন।
মহাগায়ত্রী মন্ত্র মানে হল, আমাদের ভগবানকে জীবন, কষ্ট, খারাপ, ভালো, দারুণ, সম্মানের, সৃষ্টিকর্তার মতন করে ভাবতে হবে। ভগবান আমাদের শিক্ষাকে ভালো পথে চালায়। এই মন্ত্র বলার সঠিক সময় হল - গায়ত্রী মন্ত্র বলার প্রথম সময়টি হল সকাল বেলা। সূর্যের ওঠার কিছু আগে এই মন্ত্র বলা শুরু করে,পরে বলা ভালো। মন্ত্র বলার দ্বিতীয় সময় হল দিনের বেলা। এই মন্ত্রটি বলা হয় সন্ধ্যায় ও। তৃতীয় সময় হল রাতের বেলা। সূর্য ডোবার আগে এই মন্ত্র বলা শুরু করে,পরে বলা ভালো। যদি আপনি গায়ত্রী মন্ত্র বলতে চান তবে মনে মনে বলতে পারেন। জোরে বলা উচিত না এই মন্ত্র।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
গায়ত্রী মন্ত্র কি শুধু ব্রাহ্মণরা জপ করতে পারেন?
না, যেকোনো ভক্তশ্রদ্ধালু ব্যক্তি নিয়ম মেনে জপ করতে পারেন।
মন্ত্র জপ করার সময় মানসিক জপ করবো নাকি উচ্চারণ করবো?
যদি সম্ভব হয়, ধীরে ও স্পষ্ট উচ্চারণ সহ জপ করা উত্তম।
উপসংহার
মহাগায়ত্রী মন্ত্র মানে হল, আমাদের ভগবানকে জীবন, কষ্ট, খারাপ, ভালো, দারুণ, সম্মানের, সৃষ্টিকর্তার মতন করে ভাবতে হবে। ভগবান আমাদের শিক্ষাকে ভালো পথে চালায়। এই মন্ত্র বলার সঠিক সময় হল - গায়ত্রী মন্ত্র বলার প্রথম সময়টি হল সকাল বেলা। সূর্যের ওঠার কিছু আগে এই মন্ত্র বলা শুরু করে,পরে বলা ভালো। মন্ত্র বলার দ্বিতীয় সময় হল দিনের বেলা। এই মন্ত্রটি বলা হয় সন্ধ্যায় ও। তৃতীয় সময় হল রাতের বেলা। সূর্য ডোবার আগে এই মন্ত্র বলা শুরু করে,পরে বলা ভালো। যদি আপনি গায়ত্রী মন্ত্র বলতে চান তবে মনে মনে বলতে পারেন। জোরে বলা উচিত না এই মন্ত্র।।