হিন্দু ধর্মে সম্পদ ঐশ্বর্য, ধন, সমৃদ্ধি, সৌভাগ্য প্রভৃতির দেবী হলেন মা লক্ষ্মী। ভগবান বিষ্ণুর পত্নী হলেন লক্ষ্মী তথা নারায়ণ শক্তির প্রতীক লক্ষ্মী। দুটি বা চারটি হাত বিশিষ্ট কোমল মূর্তির মা লক্ষ্মী হয়ে থাকেন। তার বসার আসনে থাকে পদ্মফুল এবং তার হাত থেকে সোনার মুদ্রা জলের মত ঝরে পড়তে দেখা যায় যা সমৃদ্ধির প্রতিক হিসেবে বিবেচিত হয়।
শাস্ত্রে অষ্টলক্ষ্মীর কথা শাস্ত্রে আছে ।
মা লক্ষীর আটটি রূপ আছে?
.............................................
মাতা আদিলক্ষ্মী, মাতা ধনলক্ষ্মী,
মাতা ধান্যলক্ষ্মী, গজলক্ষ্মী মাতা,
মাতা সন্তানলক্ষ্মী, বীরলক্ষ্মী মাতা,
বিজয়ালক্ষ্মী মাতা ও মাতা বিদ্যালক্ষ্মী ।
...................................................
তবে কখনো কখনো
সংখ্যাটি হয়ে যায় দ্বাদশ।
তাই দ্বাদশ মহালক্ষীর
মাহাত্ম্য কথাই বলা ভালো।
.....................
সনাতন হিন্দু ধর্ম অনুযায়ী, মহালক্ষ্মী হচ্ছেন জীবাত্মা থেকে পরমাত্মায় উত্তরণের চিরনন্দনের, সৎচিদানন্দ পরব্রহ্মের চেতনার মূল আধার।
...................
এখানে আধারের অর্থঃ
সম্পদ ও ঐশ্বর্যের মূর্ত রুপ।
জীবাত্মা হতে পরমাত্মার স্বরুপতত্ত্বে, জীবনীশক্তি, আত্মশক্তি, জ্ঞানশক্তি, ইচ্ছাশক্তি, ক্রিয়াশক্তি ও মূলাশক্তির স্বারশ্বত স্বারতত্ত্ব চিরন্তন সত্য।
 |
মা লক্ষ্মীর আটটি রূপ |
মূলাশক্তির মূলতত্ত্ব মূলসত্যর অর্থ হলোঃ |
..............................
সংক্ষেপে শিকড় ছাড়া গাছ, জল ছাড়া মাছ, বায়ু ছাড়া জীবন আর সূর্য ছাড়া ব্রহ্মাণ্ডের মহাজাগতিক সংসারে মৃত্যু যেমন অবধারিত এবং চিরন্তন সত্য তেমনি জীবাত্মা হতে পরমাত্মা পর্যন্ত, মহালক্ষী ছাড়া জীবন- জীবিকা আর প্রাণের বিকাশ ও উৎকর্ষতা বিকাশিত হবার প্রকাশশক্তি অবরুদ্ধ হয়ে ক্রমশ মৃয়মান, নিষ্ক্রিয় ও নিস্পৃহ হয়ে মৃত্যুর করালগ্রাসে পতিত হয় এই কথা অতিধ্রুব সত্য।...................জল ছাড়া যেমন পৃথিবী শুকিয়ে মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যায় তদ্রূপ মহালক্ষীর কৃপা ছাড়া জীবকুলে প্রকাশ হয় দৈনতা, দারিদ্র্যতা, মানসিক-শারীরিক-স্নায়বিক- দৈহিক পঙ্গুতা, রোগ-ব্যাধি, জ্বালা-যন্ত্রণা, বেদনা-শুষ্কতা বৃদ্ধি পেয়ে জীবকুল যমলোকের যন্ত্রণা ভোগ করে অবশেষে মহামৃত্যুকে লাভ করে। ..................মহালক্ষ্মীর অভাবে ইন্দ্রদেব স্বর্গচ্যুত হয়েছিলেন। মহালক্ষ্মীর অভাবে ভগবান শ্রীমান নারায়ণ শনি মহাদেবের ক্রোধে গণ্ডকী নদীর তীরে খন্ড খন্ড রুপে নারায়ণ শীলায় পরিনত হয়েছিলেন। মহালক্ষ্মীর অভাবে ব্রহ্মার শিরচ্যুতি(পাঁচ মাথার এক মাথা ছিন্ন) হয়েছিল। মহালক্ষীর অভাবে মহাদেব সতি ছাড়া হয়ে বৈরাগ্যচারি শ্মশানচারি জীবন বেছে নিয়েছিলেন। মহালক্ষ্মীর অভাবে ভগবান শ্রীরাম অযোধ্যা নগরী ছেড়ে নৈমিষারন্যের জঙ্গলে থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত তার অযোধ্যা রাজ্য শাসন ব্যবস্থা পরিচালনা করতেন। ........................মহালক্ষ্মীর অভাবে মহারাবন তার স্বর্নলংকা হারিয়ে মৃত্যুকে লাভ করেছিলেন।এককথায় মহালক্ষ্মী যার গৃহে নেই তার গৃহে কেবলমাত্র শ্মশানের শান্তি আর যমলোকের মৃত্যুপুরীর ভয়াবহতার অন্ধকার বিরাজ করে।
মা লক্ষ্মী দশটি রূপ কি কি? মহালক্ষ্মীর দ্বাদশ প্রকার রুপ হলোঃ
--------------------------------------------------------
(১) মহালক্ষীঃ আদিলক্ষ্মী রুপে ইনি মহাঋষি ভৃগুর কন্যা অবতার। দেবীর অপর নাম সাগরকন্যা। পৃথিবীতে তিনি হিমালয় পর্বত রুপে প্রকাশিত। সমুদ্র মন্থনের সময় এই আদি মহালক্ষ্মী প্রকটিত হন। ব্রহ্মার গৃহে তিনি মাতা গায়ত্রী। বিষ্ণুর গৃহে তিনি মাতা মহালক্ষ্মী। শিবের গৃহে তিনি মাতা মহাগৌরী।
(২) ধনলক্ষ্মীঃ দেবী সাধককের সকল বৈষয়িক সুখ সমৃদ্ধি প্রদান করেন এবং তার সম্পত্তি রক্ষা করেন (৩) ধান্য লক্ষ্মীঃ দেবী কৃষকের সম্পদসিদ্ধি প্রদান করেন। তিনি কৃষকের গৃহে নবান্নে ধান্য লক্ষী রুপে পূজিত হন। বেদোক্ত শাস্ত্রে এই দেবীর গুপ্তনাম গৃহলক্ষ্মী।
গৃহলক্ষীর অর্থঃ সংসারের মাতা, স্ত্রী ও কন্যা।
কৃষকের অর্থঃ পিতা ও পুত্র।
জমির অর্থঃ এখানে গর্ভ।
ধান্যলক্ষ্মীর করকমলে থাকা ধানের শীষের প্রতীক অর্থ হলো—বহুপুত্র প্রাপ্তি, কুলবৃদ্ধি এবং বংশধারার ধারাবাহিকতা। অর্থাৎ, যেন নাতি-নাতনীদের মাধ্যমে পরিবার ও বংশের অস্তিত্ব অক্ষুণ্ণ থাকে এবং বংশ পরম্পরায় ধন, ধর্ম ও ঐতিহ্যের ধারা অব্যাহত থাকে। আয়ভারঃ ধানের গোলা রুপক সম্পদের প্রাচুর্য যেন বজায় থাকে। সামনে প্যাঁচা: সংসারের স্ত্রীগন যেন বহিশক্রু হতে সজাগ ও সচেতন থাকার নির্দেশ। কারণ প্যাঁচা দিনে দেখতে না পেলেও রাত্রিতে খুব ভালো দেখতে পায়।
ছিড়া খই কদমা নারকেলের ভোগঃ পিতৃপুরুষ যেন সন্তুষ্ট হয়ে সন্তানকে সুখে শান্তিতে থাকার আশীর্বাদ করেন।
নৌকাঃ সংসার সমুদ্রের দুঃখ কষ্ট অভাব ও দারিদ্র্যের তরঙ্গে যেন সংসারের নৌকা ডুবে না গিয়ে মাঝি রুপে কর্তা যেন তার সংসার নৌকার বৈঠা বয়ে নিয়ে যেতে পারে.................কোজাগরী লক্ষী পূজা তাই আর্থিক সম্পদের সাধনা নয়।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার অর্থঃ সংসারে নারীর সন্তান উৎপাদন ক্ষমতা ও নারী রুপে মহালক্ষীর তুষ্ট করার সম্পদ ও সৌভাগ্যের সাধনা।
(৪)গজলক্ষ্মীঃ গবাদি পশু, হাতি ও ঘোড়া দ্বারা যে ধন-সম্পদ এবং ঐশ্বর্য লাভ হয়, তিনি হলেন গজলক্ষী। এই দেবীর আরাধনায় ইন্দ্র তাঁর হারানো স্বর্গ পুনরুদ্ধার করেছিলেন। বসুধা নারায়ণ যখন হাতিদের দ্বারা পূজিত হচ্ছিলেন, তখন দেবী গজলক্ষীর নামকরণ হয়। মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পূর্ণিমায় এই দেবীর আরাধনা করলে ব্যক্তি তার হারানো স্বাস্থ্য, সম্পত্তি ও রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন।
(৫) সন্তানলক্ষ্মী(কোলে গনেশ)ঃ মাতা লক্ষ্মীর এ স্বরুপের আরাধনা করলে সন্তানসুখ প্রাপ্তি হয়। সন্তান বংশের মুখ উজ্জ্বল করে।
(৬) বীরলক্ষ্মীঃ যুদ্ধে তিনি বীরত্ব জাগ্রত করেন, আর জীবনের কঠিন অধ্যায়ে ধৈর্য ও সাহসের দীপ্তি দান করেন।
(৭) বিজয়লক্ষ্মীঃ জীবনের কঠিন সময়ে বাধা বিপত্তি জয় করে, সাফল্য অর্জন করতে সাহায্য করেন।
(৮) বিদ্যালক্ষ্মীঃ দেবী সাধকদের জ্ঞান, বিজ্ঞান, কলা, রূপ-লাবণ্য ও সমস্ত সিদ্ধি ও ঐশ্বর্য দান করেন
(৯) ঐশ্বর্যলক্ষ্মীঃ মাতা লক্ষ্মীর এ রুপের আরাধনা করে কুবের লক্ষ্মী মাতার বিপুল ধন-সম্পদ-সম্পত্তি, রত্ন-স্বর্ণ-মণিমাণিক্য, স্ফটিক ও সোনার সিংহাসন প্রাপ্ত করেছিলেন। দেবী সাধককে ত্রয়োদশ প্রকার ধন সম্পত্তি প্রদান করেন বলে দেবীর অপর নাম ধনত্রয়োদশী মাতা বা ধনত্রেরাচ মাতা। এই সময় দেবীকে ইক্ষুদন্ড বা আঁখের ভোগ দিলে দেবী অতি প্রসন্ন হয়ে গৃহস্থ বা সাধকের সুখ ও শান্তি প্রদান করেন।আয়ুর্বেদ আচার্যগন এই ত্রয়োদশ তিথিতে স্বর্গ লোকের বৈদ্য, ধন্বন্তরি ভগবানের কৃপালাভ করার জন্য পূজাপাঠ ও তপস্যা আরম্ভ করতেন। কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী তিথিতে আয়ুর্বেদাচার্যগণ বনজ, অরণ্যজ, স্থলজ ও জলজ ঔষধিগুণসম্পন্ন বৃক্ষের মূল, পত্র, বাকল, ফুল ও ফল সংগ্রহ করে আয়ুর্বেদীয় ঔষধ প্রস্তুত করতেন।
(১০) সৌভাগ্যলক্ষীঃ মাতার এ স্বরুপের আরাধনা করলে মানুষের জীবনে দুর্ভাগ্য, গ্রহ ও নক্ষত্র জনিত দোষ,দারিদ্র্যতা, মানসিক অশান্তি, গৃহকলহ, মামলা জনিত সমস্যা ও ক্ষতি, শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতা দূর হয়ে যায়। কিন্তু যদি উপাসক অসদাচার, কদাচার, মিথ্যাচার, ব্যভিচার, কপটতা, দুর্নীতি ও দুরাচরণে রত থাকে, তবে দেবীর কৃপা লাভ করা দুর্লভ হয়ে পড়ে, আর সাধনার কোনো সুফল সে পায় না।...............
১১) রাজলক্ষ্মীঃ যিনি রাজাকে আশীর্বাদ প্রদান করেন প্রাচুর্য, বীরত্ব, যশ, মান-সম্মান, ধন-সম্পত্তি, ঐশ্বর্য, খ্যাতি ও রাজপ্রতিপত্তির জন্য, তিনি রাজলক্ষ্মী দেবী। মহারাবণ রাজলক্ষ্মী দেবীর তপস্যার মাধ্যমে সিদ্ধি লাভ করে বিপুল ধন-সম্পদ, অনন্ত ঐশ্বর্য, অজেয় বীরত্ব, বিরাট যশ ও খ্যাতি, রাজমর্যাদা এবং প্রভাব-প্রতিপত্তির অধিকারী হন। দেবীর কৃপায়ই তিনি স্বর্ণনগরী লংকাপুরীর রাজ্যভূষণে অভিষিক্ত হন। উনার রাজলক্ষ্মীর নাম ছিল মাতা ক্ষীরভবানী। রাবণের মৃত্যুর পর পবনপুত্র শ্রী হনুমান যখন ভগবান শ্রী রাম চন্দ্র, মাতা সীতা এবং শ্রীমান লক্ষণকে কাঁধে নিয়ে অযোধ্যা রাজ্যের অভিমুখে আসছিলেন তখন মাতা ক্ষীরভবানী সংকটমোচনকারী ভগবান শ্রী হনুমান কে অনুরোধ করেন তিনি যেন দেবীকে হিমালয়ের তুলমুল্লা পাহাড়ের পাদদেশে শ্রীখন্ডে (জম্মু কাশ্মীরের শ্রী নগর জেলায়) রেখে আসেন। যেহেতু হনুমানজীর কাঁধে তখন তিনজন ছিলেন, তাই তিনি দেবী ক্ষীরভবানীকে হৃদয়ের অন্তর্গত গহীনে লুকিয়ে রাখেন এবং পরে দেবীকে বরফাচ্ছাদিত হিমালয়ের শ্রীখণ্ড পর্বত অঞ্চলের এক নির্জন জলাশয়ের মধ্যে স্থাপন করেন। হনুমানজীর বক্ষ থেকে ক্ষীরভবানী দেবী প্রকাশ পাওয়ামাত্রই তিনি পাথরের মূর্তি রূপে স্থির হয়ে যান, আর সেই জলাশয় মুহূর্তেই দুধে পরিণত হয়ে যায়। দেবী ক্ষীরভবানীর এই অপার লীলা এক অসীম বিস্ময় এবং মুগ্ধতা নিয়ে তাঁর মাহাত্ম্য প্রকাশ করে। ভারতের সমৃদ্ধির সময়ে এর জল লাল, উন্নতির সময়ে এর জল গোলাপী, অস্থিরতার সময় এর জল ধূসর সাদা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় মহামারী যুদ্ধের সময়ে এর বর্ণ কালো হয়ে যায়। ভক্তগণ দেবী ক্ষীরভবানীকে তাদের সুখ, শান্তি, ঐশ্বর্য ও মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য দুধ, দই, মধু, নারকেলের জল দ্বারা দেবীকে স্নান ও পূজা করেন। মহাবৈষ্ণবী শক্তির আধার এই ক্ষীরভবানী মাতা, যিনি বহু দূরেও থাকেন, সেই ভক্ত যিনি 'জয় মা ক্ষীরভবানী' এই মহামন্ত্রটি মহানন্দের সাথে ৭ বার উচ্চারণ করেন, তার জীবনে সমস্ত বাধা-বিপত্তি ও সংকট দূরীভূত হয়ে যায়। নবরাত্রির মহাসপ্তমী, মহাঅষ্টমী ও মহানবমী তিথিতে, যে ভক্ত বৈষ্ণবী দেবীকে উদ্দেশ্য করে মাতা ক্ষীরভবানীর নামে দুধ, ফল, মিষ্টান্ন, নারকেলের নাড়ু ও নারকেল ভোগ প্রদান করেন, দেবী সেই ভক্তের প্রতি অতি প্রসন্ন ও সন্তুষ্ট হয়ে তার মনোবাঞ্ছিত ফল প্রদান করেন।
(১২) বরদালক্ষ্মীঃ এই মহালক্ষ্মী মাতার আরাধনা করলে অবিবাহিত কন্যা সুন্দর বর পায়। অবিবাহিত পুরুষ সুন্দর স্ত্রী পায়। সাধকের সিদ্ধিলাভ দ্রুত করায়ত্ত হয়।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার মাহাত্ম্যঃ
-------------------------------------------------
নিশীথ রাতে যিনি জাগরণে থেকেছেন ও লক্ষ্মী দেবীর স্তব করেছেন, দেবী তাঁকে প্রশ্ন করেন—‘কে জেগে আছে?’ এবং তাঁকে ধন, ঐশ্বর্য ও অক্ষয় ফল দান করেন। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার রাত্রে দেবী বরদালক্ষ্মী জগতের ভূমন্ডলে বিচারন করে খোঁজ নেন কে জেগে আছে? যে জাগ্রত চেতনায় অক্ষ ক্রীড়া করেন, বরদা লক্ষ্মী সেই সাধককে যোগবিভূতির বর প্রদান করেন। ‘হঠযোগ সংহিতা’র ভাষ্য অনুযায়ী, এর গভীর অর্থ হলো: ‘কো জাগর্তি’—অর্থাৎ, মানবদেহের কোন চক্রতীর্থ জাগ্রত হয়েছে? যোগীক অক্ষক্রীড়ার অর্থঃ ক্রিয়া ওম কার যোগক্ত সাধনা, ক্রিয়া মুদ্রাযোগ সাধনা, ক্রিয়া প্রাণযোগ সাধনা। অক্ষক্রিয়াকর্ম পদ্ধতি হলোঃ ক্রিয়াযোগ সাধনার আহুতি সাধনার অন্তর্গত মনোলয়যোগ সাধনা। অর্থাৎ প্রাণের মধ্যে প্রাণের, আহুতি দেওয়ার যে যজ্ঞরুপ সাধনা, তার নাম অক্ষ ক্রিয়াযোগ সাধনা। সংক্ষেপেঃ শ্রীমদ্ভগবত পুরাণ অনুসারে অক্ষর ব্রক্ষযোগ সাধনা। অক্ষক্রীড়ার অর্থ তাই রাত জেগে পাশা বা জুয়া খেলা বোঝানো হয় না। রাত জেগে পাশা খেলে মহালক্ষ্মীর বর লাভ করার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই। আর কে জেগে আছে? এর অন্তর্নিহিত মর্মার্থ হলো আত্মার জাগরণ। যে ব্যক্তির আত্মশরীরে জীবাত্মা জাগ্রত, সে সাধক আত্মজ্ঞান লাভের মাধ্যমে জীবন্মুক্ত অবস্থায় পরম ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করে এবং মোক্ষ প্রাপ্ত হন। কোজাগরী লক্ষ্মী পূজার মৌলিক তত্ত্ব হচ্ছে—আত্মচৈতন্যের জাগরণ। এই সংসারজালে যে মানুষ মায়া, মোহ ও শোকের বন্ধন থেকে আত্মাকে মুক্ত করতে সক্ষম, তিনিই বরদালক্ষীর কৃপায় মুক্তকামী হয়ে বৈকুণ্ঠে অধিষ্ঠিত হন। যিনি সত্যগুণে বিশুদ্ধ, তিনিই মহালক্ষ্মী দেবীর আশীর্বাদ লাভের যোগ্য বলে গণ্য হন।
উপনিষদের তাই পরমার্থিক পরমানন্দপ্রদায়ি বাণীঃ
উত্তীষ্ঠ জাগ্রত কুরু মাং ভবো দূর্বলাং কিংবা ভয়ো তমসা মাং জ্যোতির্ময় চলো প্রাপ্য বরান্ নিবোধত।
হে অমৃতপুত্র! জগতের মায়া, মোহ ও শোকের বন্ধন থেকে উঠে দাঁড়াও। কিসের ভয়ে তুমি দুর্বল হয়ে পড়েছো? অন্তরের তমসাচ্ছন্নতা দূর করে জ্যোতির্ময় আত্মসত্তার দিকে এগিয়ে চলো। যে বর তোমার প্রাপ্য, তা লাভে নিরন্তর সচেষ্ট হও।যার জীবাত্মা এখনও ঘুমিয়ে রয়েছে, তার পক্ষে জন্ম-মৃত্যুর অনন্ত কালচক্র থেকে মুক্তি লাভ কি সম্ভব? সে জীব সত্যিই হতভাগ্য, যার থেকে দৈবশক্তি মুখ ফিরিয়ে নেয়। মনের রুদ্রদ্বার বন্ধ থাকলে, কোনো জীবই শান্তি, সন্তুষ্টি, সুখ কিংবা স্বস্তি লাভ করতে পারে না—যতক্ষণ না সে আত্মার চৈতন্যে জাগরিত হয় এবং অন্তর্গত সত্যকে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়।
==============================
লক্ষ্মী দেবীর বিভিন্ন রূপ:
অদ্র লক্ষ্মী – মূল লক্ষ্মী, সমুদ্র মন্থন থেকে উৎপন্ন।
ধন লক্ষ্মী – অর্থ ও সম্পদের দেবী।
গজ লক্ষ্মী – হাতির সঙ্গে থাকা লক্ষ্মী, রাজকীয় ঐশ্বর্যের প্রতীক।
ভাগ্য লক্ষ্মী – সৌভাগ্যের দেবী।
বৈষ্ণবী লক্ষ্মী – ভগবান বিষ্ণুর শক্তির প্রতীক।
সন্তান লক্ষ্মী – সন্তান সুখের জন্য পূজিত হন।
পূজা ও উৎসব: দীপাবলি – লক্ষ্মী পূজার প্রধান উৎসব, যেখানে ঘরবাড়ি আলোকিত করা হয় এবং মা লক্ষ্মীর আশীর্বাদ কামনা করা হয়।
কোজাগরী লক্ষ্মী পূজা – আশ্বিন মাসের পূর্ণিমা রাতে লক্ষ্মী দেবীর আরাধনা করা হয়।
শুক্রবার ও অমাবস্যা পূজা – অনেক মানুষ প্রতি শুক্রবার ও অমাবস্যা তিথিতে লক্ষ্মী পূজা করে থাকেন।
মন্তব্য মা লক্ষ্মীর আটটি রূপের বন্দনা করলে আপনি ইহজগতে ও পরজগতে দুই জগতে অবশ্যই ধনবান হতে পারবেন
Comments
Post a Comment