গুরু মন্ত্র জপ করার নিয়ম
সূর্যোদয়ের কমপক্ষে আধঘণ্টা আগে,স্নানের পর দুপুরে বা তার একঘন্টা আগে পরে এবং সৃর্যাস্তের অর্ধ ঘণ্টা পর ফ্রেশ মন নিয়ে ১০৮ বার গুরু মন্ত্র জপ করতে হয়।গুরু মন্ত্র জপ করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের কিছু জিনিস জানতে হবে তা এমনি বর্ণনা করা হলোঃ
গুরু মন্ত্র জপ করার সঠিক নিয়ম
সাধারণ অর্থে অন্ধকার ভেদ করে আসা আলোর একটি উৎসস্থল স্থান হলে গুরু। গুরু মন্ত্র হল এমন একটি বিশেষ মন্ত্র, যা একজন শিষ্য তার গুরু বা আচার্যের কাছ থেকে দীক্ষার সময় গ্রহণ করেন। এই মন্ত্র গুরু প্রদত্ত আধ্যাত্মিক শক্তি বহন করে এবং শিষ্যের আত্মিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। বংশের পরমপরাক্রম অনুসারে, অভীষ্ট গুরু থেকেই এই গুরু-মন্ত্র গ্রহণ করতে হয়। কারণ, যাঁকে নিয়ে তোমার পূর্বপুরুষরা আজও গর্বিত—সেই গুরু, অর্থাৎ গোত্রগুরু, তিনিই তোমার ও আমার গুরু।
![]() |
গুরু মন্ত্র জবের নিয়ম |
📖Table of contents
গুরু মন্ত্র জপ করার সঠিক নিয়ম
ত্রিসন্ধ্যা বা নিত্য কর্ম করার নিয়ম কি?
গুরু মন্ত্রের গুরুত্ব:
গুরু মন্ত্রঃ যে পদ্ধতি বা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাপ কাজ থেকে বিরত থেকে,সৎ কাজের মাধ্যমে ভগবানের জ্ঞান কিংবা দিব্যজ্ঞান লাভ করার জন্য ভগবানের যে নাম বা মন্ত্র জপ করা হয় তাকে দীক্ষা মন্ত্র বলে।
সাধারণত দীক্ষা মন্ত্র,গুরু মন্ত্র,বীজ মন্ত্র,মহামন্ত্র, হচ্ছে-
"হরে-কৃষ্ণ হরে-কৃষ্ণ, কৃষ্ণ-কৃষ্ণ হরে-হরে
হরে-রাম হরে-রাম, রাম-রাম হরে-হরে"
এই মহান মন্ত্রটি অন্ধকার দূর করে আলো নিয়ে আসার প্রতীক। গুরু হলেন সেই আলোর উৎস, যিনি অজ্ঞানতার অন্ধকার দূর করে আমাদের সত্যের পথে নিয়ে যান। গুরু মানে শুধু একজন শিক্ষক নন — তিনি হলেন সেই ব্যক্তিত্ব, যিনি বংশ পরম্পরায় শ্রদ্ধেয় ও পূজ্য। প্রত্যেকেরই উচিত নিজের বংশানুক্রম অনুসারে অভিষ্ট গুরুর কাছ থেকে গুরু মন্ত্র গ্রহণ করা। কারণ, যে গুরুকে নিয়ে আমাদের পূর্বপুরুষেরা আজও গর্ব অনুভব করেন, সেই গুরুই আমাদের গোত্রের, আমাদের আত্মিক পথপ্রদর্শক।
দীক্ষা মন্ত্র : এটি একটি দক্ষতার বিষয়। অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে, একটি নির্দিষ্ট আদেশ/মার্গনির্দেশ/করণীয় বিবরণ প্রয়োজন—যা কেবলমাত্র গুরুই প্রদান করতে পারেন, অন্য কেউ নয়। আর এই পথের সন্ধানই হলো দীক্ষা।
শিক্ষা মন্ত্র : এটি আধ্যাত্মিক সাধনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। ধর্মীয় জ্ঞানের গভীর অনুশীলন ও নিত্যানন্দ মহাপ্রভুর চরণামৃত সেবনের পর, গুরু কর্তৃক প্রদত্ত মন্ত্র বা নির্দেশই ঈশ্বর-দর্শন ও মুক্তি লাভের প্রকৃত পথ - এটিই এই পর্বের মূল সত্য।
গুরু মন্ত্রঃ দীক্ষা মন্ত্র হলো সেই পবিত্র প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে পাপকর্ম পরিহার করে সৎকর্ম ও ভগবদ্ভক্তির মাধ্যমে ঐশ্বরিক জ্ঞান লাভের উদ্দেশ্যে ভগবানের নির্দিষ্ট নাম বা মন্ত্র জপ করা হয়।
সাধারণত দীক্ষা মন্ত্র,গুরু মন্ত্র,বীজ মন্ত্র,মহামন্ত্র, হচ্ছে-
"হরেকৃষ্ণ ................................................... হরেহরে"
যদি অন্য কোন দেবতার নাম জপ করতে
চাও তহল প্রথমে ওঁ বা ‘ওম’ উচ্চারণ করে
সেই দেবতার নাম নিবে, যেমন- ওঁ জয় মা কালী,ওঁ জয় মা দূর্গা,ওঁ জয় মা লক্ষী,
ওঁ জয় বাবা লোকনাথ, ওঁ জয় শিব,ওঁ জয় ব্রম্ম,ওঁ জয় বিষ্ণু ,যে কারও নাম জপ করতে পারবে ।
মন্ত্রদীক্ষা এমন একটা বিষয় যা আমাদের সব সময়ই মস্তিকের মধ্যে ঘোরাফেরা করে থাকে।পরমপ্রাপ্তি,যোগ, সাধনা এগুলো আসলে কি? আবার এগুলোর কি আমাদের মানব জীবনের উপর কোনপ্রভাব ফেলে থাকে না আরো কিছু গুহ্য রহস্য এর মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে।
কতটা করবে আর কি ভাবে জপ করবেএবং কি
কি বিধি কেমনভাবে পালন করবে গুরুমন্ত্র?
সংস্কৃতে মন্ত্র শব্দের অর্থ হল "মননাৎত্রায়তে ইতি মন্ত্র"। মানে যা মনন করে মানুষের জন্ম-মৃত্যূর পরম্পরা,সংসার,মায়া বা অবিদ্যা থেকে নিজেকে মুক্ত করে নিজের যোগসুত্র স্থাপন করা সেই পরমাত্মার সঙ্গে।
ত্রিসন্ধ্যা বা নিত্য কর্ম করার নিয়ম কি?
১ম কর্ম: সূর্যোদয়ের কমপক্ষে আধঘণ্টা আগে ঘুম থেকে ওঠা উচিত। এই সময়কে বলা হয় "ব্রাহ্ম মূহূর্ত", যা আত্মিক সাধনার জন্য সবচেয়ে উপযোগী সময়। ঘুম থেকে উঠে হাত-মুখ ধুয়ে শুচি হয়ে— যাঁদের দীক্ষা হয়েছে, তাঁরা গুরুর স্মরণ করে গুরুর প্রদত্ত মন্ত্র জপ করবেন। যাঁদের দীক্ষা বা মন্ত্র এখনও হয়নি, তাঁরা ঈশ্বরের যেকোনো নাম (যেমন রাম, কৃষ্ণ, শিব, নারায়ণ, মা কালী ইত্যাদি) অন্তত ১০৮ বার জপ করবেন। সম্ভব হলে এই জপ আরও বেশিবার করুন এবং ঈশ্বরের প্রতি গভীর মনোনিবেশ রাখুন। এই সময়ের এই সাধনাই হল দিনের প্রথম সন্ধ্যা — যা আত্মিক উন্নতির এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
২য় কর্ম: স্নানের পর এইভাবে দুপুরে, বা তার এক ঘণ্টা আগে-পরে, কমপক্ষে ১০৮ বার—যতবার সম্ভব জপ করবেন। ঈশ্বরের নাম স্মরণ ও তাঁর ধ্যান এই প্রক্রিয়াই হলো দ্বিতীয় সন্ধ্যা।
৩য় কর্ম: সৃর্যাস্তের অর্ধ ঘণ্টা পর থেকে শােবার আগে যে কোন সময়, তবে সন্ধ্যা আরতির সময় করা বেশী উত্তম। একই ভাবে ১০৮ বা অধিক বার তাঁর নাম জপ ও তাঁকে স্মরণ করতে হবে। এটি হল ৩য় সন্ধ্যা। এভাবে ত্রিসন্ধ্যা করা একাস্ত কর্তব্য (এছাড়াও শোবার সময় উঠার সময় হাই তােলার সময়,হাঁচি, কাশিতে সর্বদা তাঁর নাম করতে হয়)। মনে রাখতে হবে ঈশ্বরকে মহিলা, পুরুষ, আবাল, বৃদ্ধ, বনিতা, শরীরের যে কোন অবস্থায় যে কোন কালে, যে কোন স্থানে এমনকি বাথরুমেও তাঁর নাম মনে মনে করবেন। কারণঃ শ্রীমৎ ভগবত গীতার ৮ এর ৫ শ্লোকে উল্লেখিত আছে ;অন্তকালে চ মামেব স্মরণ মুক্তা_কলেবরম্ য়ঃ প্রয়াতি স মদ্ভাবং য়াতি নাস্ত্যত্র সংশয়ঃ। বাংলা অর্থ হল ; দেহত্যাগকালে বা মৃত্যুকালে যে ঈশ্বরকে স্মরণ করে বা তাঁর নাম করে সে আমার ভাব অর্থাৎ ঈশ্বর লাভ করে বা ঈশ্বরকে প্রাপ্ত হয়। গায়ত্রী মন্ত্রঃ ওঁ ভুঃ ভুবঃ স্বঃ তৎ সবিতুর্ বরেণ্যং ভর্গদেবস্য ধীমহি ধিয়াে ইয়েনঃ প্রচোদয়াৎ ওঁ। গায়ত্রীর অর্থঃ ভুঃ ভুবঃস্বঃ অর্থ-স্বর্গ, মর্ত্য, অন্তরীক্ষ—সমস্ত ব্রহ্মাণ্ড যাঁর থেকে উৎপন্ন, তিনিই সেই স্রষ্টা।
গুরু মন্ত্রের গুরুত্ব:
আত্মশুদ্ধি ও মোক্ষ লাভ: এই মন্ত্র জপ করলে মন ও আত্মা শুদ্ধ হয় এবং মুক্তির পথ সুগম হয়।
গুরুর কৃপা লাভ: গুরু মন্ত্র নিয়মিত জপ করলে গুরুর আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
আত্মবিশ্বাস ও স্থিরতা: এটি মানসিক স্থিরতা ও আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে।
কিছু জনপ্রিয় গুরু মন্ত্র:
গুরু ব্রহ্মা মন্ত্র:
“গুরু ব্রহ্মা গুরু বিষ্ণু গুরু devo মহেশ্বরঃ।
গুরু সাক্ষাৎ পরব্রহ্ম তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ॥”
এই মন্ত্র গুরুকে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের সমতুল্য বলে বর্ণনা করে এবং তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।
গুরু গায়ত্রী মন্ত্র:
“ওঁ গুরুবে নমঃ।”
এটি সরল কিন্তু অত্যন্ত শক্তিশালী মন্ত্র, যা গুরুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য জপ করা হয়।
শক্তি গুরু মন্ত্র:
“ওঁ হ্রিং হ্রিং গুরুবে স্বাহা।”
এটি শক্তি প্রদানকারী এক বিশেষ মন্ত্র, যা আত্মিক শক্তি ও জ্ঞানের বিকাশ ঘটায়।
আসুন ধ্যান করি জ্যোতির্ময় পরমাত্মার, পরমাত্মার দিকে পরিচালিত হউক আমাদের বুদ্ধি (মতি)।সর্বদা জেনে রাখবেন পুজার চেয়ে নামজপ বা নাম করা বড় তাঁর চেয়ে ঈশ্বরের ধ্যান করা আরাে বড়। তাই জপ, ধ্যান অবশ্যই কর্তব্য। তবে বিশেষ দিনে পূজা করা কর্তব্য। জপ ধ্যান সর্বদা কর্তব্য।
সটিক তথ্যের জন্য ধন্যবাদ