পুজোর আগে উপোস করতে হয় কেন? জানুন ধর্মীয় ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

পুজোর আগে উপোস বা উপবাস করার রীতি বিভিন্ন ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য-এর অংশ। এটি প্রধানত আধ্যাত্মিক শুদ্ধতা ও মানসিক প্রস্তুতির সাথে সম্পর্কিত। তাই আমরা বলতে পারি উপবাস = ইন্দ্রিয়সংযম + আত্মশুদ্ধি + ঈশ্বরনিষ্ঠা। পৃথিবীর শুরুর প্রান্তিক অবস্থা থেকে অর্থাৎ  সেই হাজার বছর আগে থেকে বিভিন্ন ধর্মে উপোস করার প্রথা চলে আসছে। মুসলিম ধর্মে যেমন রমজানের সময় সারা দিন না খেয়ে সন্ধ্যা বেলায় খাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। অন্যদিকে হিন্দু ধর্মে যে কোনও পুজো বাড়িতে উপোস তো মাস্ট। ভগবানকে প্রসাদ নিবেদন করা হবে। পুজো শেষ হবে। তবে সেই প্রসাদ খেয়ে উপোস ভাঙবেন ভক্তরা। এখানেই শেষ নয়। পৃথিবীর বাকি ধর্মেও উপোস বা ফাস্টিং-এর প্রথা লক্ষ করা যায়।

পুজোর আগে উপোস hd
পুজোর আগে উপোস


উপবাস করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় ব্যাখ্যা

উপবাস (উ + উপ = নিকট, বাস = অবস্থান করা) অর্থাৎ ঈশ্বরের নিকটবর্তী হতে, আত্মসংযমের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা। হিন্দু ধর্মীয় শাস্ত্র ও পুরাণসমূহে উপবাসকে এক গুরুত্বপূর্ণ তপস্যা বা সাধনার রূপে বিবেচনা করা হয়। উপবাস কেবলমাত্র খাদ্যবর্জন নয়, বরং ইন্দ্রিয়সংযম, পবিত্রতা, মনসংযম ও ঈশ্বরচিন্তনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধির এক বিশেষ পদ্ধতি।

শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যা

মনুসংহিতা (৬/৯২):

"উপবাসঃ শুচিত্বার্থং আত্মসংযমসাধনম্।"

অর্থাৎ উপবাস পবিত্রতার জন্য এবং আত্মসংযম সাধনার জন্য।


গীতা (৬.১৬-১৭) তে বলা হয়েছে:

"নাত্যশ্নতস্তু যোগোऽস্তি ন চৈকান্তমনশ্নতঃ।"

অর্থাৎ অতিরিক্ত আহার বা উপবাস দুটোই যোগপথের বিরোধী। তাই সুষম ও নিয়মিত উপবাস করাই উচিত।

পুজোর আগে উপোস করলে যে উপকার গুলো পরিলক্ষিত হয় তা নিম্নে কয়েকটি ধাপে আলোচনা করা হইল

১. শারীরিক ও মানসিক শুদ্ধতা: উপবাস আসলে আমাদের শরীরের জন্য অনেকটা তাজা বাতাসের মতো কাজ করে। এটা শরীর থেকে বিভিন্ন টক্সিন বের করে দেয় এবং আমাদের মনের শান্তি ফিরিয়ে আনে। যখন পুজো বা প্রার্থনা করি, তখন উপবাসের ফলে আমাদের মন একদম পরিষ্কার হয়। এর ফলে আমরা পুরোপুরি ঈশ্বরের দিকে মনোযোগ দিতে পারি। উপবাসের সময় যে সাদাসিধে খাবার খাই, তার ফলে আমাদের মন আরও ফোকাসড হয়। সহজ কথায়, উপবাস আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।  যখন আমরা উপবাস করি, তখন নিজের প্রতি একধরনের শ্রদ্ধা জানাই এবং আমাদের আত্মা ও শরীরের সঙ্গে একটা সুন্দর সম্পর্ক গড়ে তুলি। এটা একটা সুন্দর অভিজ্ঞতা, যা শুধু খাবারের অভাব নিয়ে নয়, বরং আত্মজ্ঞান এবং শান্তির খোঁজে। এতে করে আমরা নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করতে পারি।

২. আত্মসংযম ও তপস্যা: উপবাস হচ্ছে একটা পদ্ধতি যার মাধ্যমে আমরা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করি আর নিজেদের শুদ্ধ করার চেষ্টা করি। হিন্দু ধর্মে, এটা তপস্যা হিসেবে পরিচিত। তপস্যার মাধ্যমে আমরা নিজের ভেতরের আধ্যাত্মিক শক্তিকে আরো বাড়াতে পারি। উপবাসের সময় আমরা সাধারণত খাওয়া-দাওয়া থেকে বিরত থাকি, যাতে আমাদের মনে এবং শরীরে একটা ক্লিয়ার ফোকাস থাকে। এই সময়টা আসলে আমাদের আত্মা এবং শরীরের জন্য এক ধরনের বিশ্রামের সুযোগও। এটা করতে হলে অবশ্যই নিয়ম পালন করতে হয়। অনেক লোক উপবাসের সময় শুধু পানি পান করে অথবা কিছু ফল খায়, আবার কয়েকজন সম্পূর্ণ নির্জন থাকেন এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সময় কাটান। উপবাস করার সময়ের চর্চা আমাদের মনকে আরও স্পষ্ট করে, চিন্তাধারা পরিষ্কার করে এবং আমাদের জীবনে ভাল কিছু পাওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করে। এক কথায়, উপবাস আমাদের সামগ্রিক সুস্থতা এবং আত্মিক উন্নতির জন্য সত্যিই সাহায্য করে।

৩. দেবতার প্রতি শ্রদ্ধা: ভক্তরা দেবতার কৃপা পেতে কঠোর নিয়ম মেনে চলে। উদাহরণস্বরূপ, দুর্গাপুজোর সময় অনেকেই কল্পারম্ভ করার আগে উপবাস করেন। এই সময়টা মানুষের কাছে পুজোর এক বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে আসে। উপবাসের মাধ্যমে তারা নিজেদের ভক্তি এবং শ্রদ্ধা জানানোর চেষ্টা করেন। অনেকেই মনে করেন, এইসব নিয়ম পালন করলে দেবতাদের কাছে তাদের মনস্কামনা পৌঁছাবে। দুর্গাপুজোর সময় উপবাস করা শুধুমাত্র একটি ধর্মীয় রীতি নয়, এটা মানুষের আবেগ, বিশ্বাস ও পারিবারিক বন্ধনকে আরও দৃঢ় করে।

৪. প্রাচীন ঐতিহ্য: বেদ আর পুরাণে উপবাসের নানা নিয়ম নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, নবরাত্রির সময় দেখা যায়, অনেক লোক দিনজুড়ে ফলমূল খান আর রাতের বেলায় খাবার গ্রহণ করেন। এই সময় ধর্মীয় কাজের জন্য উপবাস রাখা হয়, যা অনেকের জন্য আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা দেয়। এই ধরণের উপবাসে ফল খেয়ে সময় কাটানো হয়। রাতের ভোগে তৃপ্তি পাবার জন্য অনেকেই অপেক্ষা করেন। এভাবে, এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপবাসের জন্য বিভিন্ন ধরণের খাবারের বাছাই করা হয়, যারা নিজেদের বিশ্বাসকে মূল্যায়ন করেন এবং উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। 

৫. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ: বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বললে, হালকা উপবাস আমাদের পাচনতন্ত্রকে বিশ্রাম দেয়। যখন আমরা কিছু সময় খাবার থেকে বিরতি নিই, তখন আমাদের শরীরকে মুনশিয়ানার সুযোগ মেলে। এটা আমাদের হজম শক্তিকে উন্নত করতে সাহায্য করে, ফলে আমরা শরীরে বেশি সুস্থ থাকি। বিশেষ করে পুজোর সময় যখন আমরা আরও বেশি এনার্জি ও মনোযোগ চাই, তখন এই ধরনের অভ্যাস আমাদের মানসিকভাবে ভালো থাকতে সহায়তা করে। তাই বলা যায় যে, হালকা উপবাসের এই প্রক্রিয়াটা আমাদের জীবনে খুবই সাহায্যকারী হতে পারে।


বিশেষ উদাহরণ:

দুর্গাপুজো: দুর্গাপুজো হলো বাংলাদেশের অন্যতম বড় উৎসব। এই দিনটা শুরু হয় কল্পারম্ভ থেকে, যেখানে বেশি মানুষ সকালে স্নান করে থাকেন এবং তার পর একবার ভোগ খেয়ে উপবাস শুরু করেন। অনেকের কাছে উপবাস রাখা এক ধরনের প্রথা বা রীতি। ধরা যাক, দিনটা থেকে তাদের ভগবতী দুর্গার বরদান পাওয়ার জন্য নিজেকে কিছুটা সীমাবদ্ধ রাখতে হয়।

শিবরাত্রি: শিবরাত্রি আসছে, আর এই বিশেষ দিনে ভক্তরা পুরো দিন উপবাস থেকে শিবের পুজো করেন। এটি এক ধরনের ঐতিহ্য যা বছরের এই সময়ে ভক্তদের মনে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। সাধারণত, রাতটাতে শিবের জন্য আদ্ধাতিক পুজো করা হয়। অনেকেই প্রথম প্রহরে জাগ্রত থাকেন, এবং সারা রাত দেবতার নামে জপ-মন্ত্র করতে থাকেন।

উপবাসের সংস্কৃত শব্দ হল উপবাস - আক্ষরিক অর্থ হল কাছে থাকা। তার মানে ভগবানের সান্নিধ্যে থাকা - শারীরিকভাবে বা মানসিকভাবে এবং এভাবে সময় এবং ক্ষুধার বোধ হারিয়ে ফেলুন... খাবারের কথা ভুলে যান কারণ মন ঈশ্বরের কাছে থাকার আনন্দে নিমজ্জিত। অনুশীলনে, খুব কমই সেই অবস্থা অর্জন করতে পারে। কিন্তু লোকেরা বিভিন্ন মাত্রায় দ্রুত / উপবাস গ্রহণ করে - কেউ তাদের নিয়মিত খাবার ছেড়ে দেয় এবং কিছু ভিন্ন, হালকা কিছু খায়, কেউ কেবল ফল খায়, কেউ কেবল দুধ খায়… কেউ কেবল দিনে উপবাস করে এবং রাতে খায়, কেউ উপবাস করে। রাতে খাই আর দিনে খাই... ধারণা হল শরীর ও মনকে শুদ্ধ করা এবং ঈশ্বরকে তাঁর বহু নাম ও রূপে স্মরণ করার চেষ্টা করা।

হিন্দু ধর্মে, উপবাস একটি বাধ্যবাধকতা নয়, তবে একটি নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক কাজ যেখানে লক্ষ্য শরীর ও মনকে শুদ্ধ করা এবং ঐশ্বরিক অনুগ্রহ অর্জন করা তাই আবার সেই দিক দিয়ে দেখলে উপবাস বাধ্যতামূলক বটে।

 উপবাসের বিভিন্ন রূপ

 উপবাসের বিভিন্ন রূপ রয়েছে যা কমবেশি কঠোর, অনুসরণ করা কমবেশি কঠিন এবং যা ব্যক্তিগত, পারিবারিক এবং সম্প্রদায়ের বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। কিছু ক্ষেত্রে, উপবাসের সাথে দিনে একটি খাবার পরিহার করা জড়িত। যাইহোক, উপবাসের অর্থ এই নয় যে শরীরকে ছাড়া যেতে হবে বা কষ্ট পেতে হবে। কখনও কখনও, পরিমাণ সীমাবদ্ধ না করে নির্দিষ্ট ধরণের খাবার বাদ দেওয়া এবং অন্যদের দ্বারা প্রতিস্থাপন করা যথেষ্ট। মাংস ভক্ষণকারীরা, উদাহরণস্বরূপ, কঠোরভাবে নিরামিষ খাবারের জন্য স্থির হতে পারে। নিরামিষাশীরা, প্রায়ই চাল, গম, বার্লি এবং মসুর ডাল বাদ দেয় এবং আলু দিয়ে প্রতিস্থাপন করে। এমনকি সারা দিন মিষ্টি খাওয়াও সম্ভব। আরও কী, এই বিধিনিষেধগুলি প্রতিদিনের খাদ্যের পরিবর্তন এবং নতুন খাবার চেষ্টা করার একটি উপায়ও হতে পারে। উপবাসের একটি দিন এমনকি আচরণের প্রতিশ্রুতিও হতে পারে। মোদক উদাহরণস্বরূপ, নারকেল থেকে তৈরি মিষ্টি ডাম্পলিং এবং চালের আটা দিয়ে ঢেকে, উপবাসের নির্দিষ্ট দিনের জন্য প্রস্তুত করা হয় যার মধ্যে দেবতা গণেশের উপাসনা জড়িত।

হিন্দু ধর্মের সাধারণ কিছু উপবাস: হিন্দু ধর্মে উপবাসের সময়কাল হিন্দুধর্ম উপবাসের বিভিন্ন সময় দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। সবচেয়ে সাধারণভাবে পালন করা উপবাস, একাদশী, মাসে প্রায় দুবার, প্রতিটি আরোহী ও অবরোহ চাঁদের একাদশ দিনে সম্মান করা হয়। বছরের শুরুতে উদযাপন, শিবের সম্মানে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপলক্ষ। জুলাই এবং আগস্ট মাসে, অনেক হিন্দু একটি নিরামিষ খাদ্য গ্রহণ করে এবং সোমবার এবং শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপবাস করে। অনেক হিন্দু মহিলা ভাল স্বামী পাওয়ার জন্য সোমবার উপবাস করেন।

উপবাসের ক্ষেত্রে বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা


সবকিছুর পিছনে একটি বিজ্ঞান আছে, ভারতের বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি এবং খাদ্যাভ্যাস রয়েছে। অবস্থান, জলবায়ু এবং উপলব্ধ খাদ্য সম্পদের উপর ভিত্তি করে, এটি পরিবর্তিত হয়। তবে এখানে আপনার জন্য কয়েকটি পয়েন্ট রয়েছে। সনাতন/হিন্দুধর্ম সর্বদাই প্রকৃতি এবং তার সৃষ্টিতে বিশ্বাসী। সাধারণত প্রত্যেক হিন্দুর সপ্তাহে অন্তত একদিন উপবাস করা উচিত প্রকৃতিকে শ্রদ্ধা জানাতে এবং তাকে বাকিটা দিতে এবং তার কাছ থেকে কিছু না নিয়ে তার যা প্রাপ্য তা সম্মান করা উচিত। উপবাস আপনার পাচনতন্ত্রকে বিরতি দেয় এবং এটি আপনার যকৃত এবং অন্ত্রকে পরিষ্কার করে। এটা সত্যিই আপনার স্বাস্থ্যের প্রয়োজন. একটি ধর্মীয় কারণে উপবাস প্রকৃতি এবং তার স্রষ্টা, ঈশ্বরের প্রতি আপনার উত্সর্গ দেখায়। আপনি যখন কোন খাবার গ্রহণ করছেন না, তখন এটি বিবেচনা করে এবং বোঝায় যে আপনি একটি দিনের জন্য কিছু জীবন (গাছ/জীবিত জীবন) রেখে গেছেন এবং এটি আপনাকে ঈশ্বরের কাছে শুদ্ধ করে তোলে।

Frequently Asked Questions (FAQ Schema)

Q: পুজোর আগে কতক্ষণ উপোস করতে হয়?

A: সাধারণত সকাল থেকে পুজো শেষ পর্যন্ত। পুজোর আগে অন্তত ১২ ঘণ্টা উপবাস পালন করা উচিত – বিশেষ করে সন্ধ্যা বা রাতের পূজা হলে সকাল থেকে উপবাস শুরু করা উচিত। তবে এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে কোন পুজো হচ্ছে, তার নিয়ম-নীতি, এবং আচারসংহিতা অনুযায়ী।


Q: গর্ভবতী বা অসুস্থরা কি উপোস করবে?

A: ডাক্তারের পরামর্শ নিন, ধর্মে  উপবাসের চেয়ে স্বাস্থ্যের গুরুত্ব বেশি। শারীরিক অসুবিধা থাকলে, উপোস না করে মনযোগ, প্রার্থনা ও নামস্মরণ করলেও একই ফল লাভ হয়।

উপবাসের উদ্দেশ্য

পাপক্ষয় – উপবাসের মাধ্যমে পাপক্ষয় হয় কারণ এটি শরীর ও মনের সংযমের মাধ্যমে ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ করে, যা পাপের মূল কারণগুলি হ্রাস করে। উপবাসের সময় শারীরিক কষ্টের তাপ তপস্যা হিসেবে গণ্য হয়, যা শাস্ত্র অনুযায়ী পাপ নাশ করে। এছাড়া উপবাসের ফলে অহংকার লঘু হয় এবং বিনয় ও শুদ্ধচেতনা বৃদ্ধি পায়, যা পাপক্ষয়ে সহায়ক। সর্বোপরি, উপবাসের সময় ঈশ্বরচিন্তা ও জপ-ধ্যান করার মাধ্যমে সৎকর্ম হয়, যা পাপ বিনাশের গুরুত্বপূর্ণ উপায়।

ঈশ্বরপ্রাপ্তি – উপবাসের মাধ্যমে ঈশ্বরপ্রাপ্তি সম্ভব, কারণ উপবাসের সময় মানুষ তার দৈহিক আসক্তি ও ইন্দ্রিয়ের ভোগস্পৃহা নিয়ন্ত্রণ করে, যা ঈশ্বরপ্রাপ্তির পথে অন্তরায়। উপবাসের মাধ্যমে অহংকার দূর হয় এবং বিনয় ও আত্মসমর্পণের মানসিকতা বৃদ্ধি পায়, যা ভক্তির জন্য অপরিহার্য। উপবাসের সময় মানুষ নিজের ক্ষুদ্রতা ও ঈশ্বরের মহানতা উপলব্ধি করে, ফলে হৃদয়ে ঈশ্বরভক্তি বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, উপবাস কালে প্রার্থনা, জপ, ধ্যান ইত্যাদি সাধনায় মনোনিবেশ করলে ঈশ্বরপ্রেম সহজে লাভ হয়।

শরীরশুদ্ধি – উপবাসের ফলে শরীরের শুদ্ধি হয় কারণ এতে হজমপ্রক্রিয়া কিছুটা বিশ্রাম পায় এবং শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্য ও দূষিত পদার্থ নিঃসৃত হয়। উপবাসের সময় দেহের টক্সিন বা বিষাক্ত উপাদানগুলো শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, যা শরীরের স্বাভাবিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনে। পাশাপাশি, উপবাসের সময় সহজ, নিরামিষ, এবং হালকা আহার গ্রহণ করলে পাচনতন্ত্রের ওপর চাপ কমে যায়, যা দেহকে শুদ্ধ রাখতে সহায়ক। উপবাসের নিয়মিত চর্চা দেহকে সতেজ, হালকা, এবং রোগমুক্ত রাখে, যা সার্বিক স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মানসিক সংযম –উপোস করার মাধ্যমে প্রচন্ডভাবে মানসিক পরিশ্রান্তি পাওয়া যায় যেমন- ক্রোধ, কাম, লোভ ইত্যাদি রিপুগুলি দমন হয়।

ধার্মিক তিথির মান্যতা – এটা নিশ্চিত থাকবেন যে- একাদশী, অমাবস্যা, পূর্ণিমা, মহাশিবরাত্রি, জন্মাষ্টমী ইত্যাদি বিশেষ তিথিতে উপবাস পালন করলে তার বিশেষ ধর্মীয় ফললাভ হয়।

উপবাসের নিয়মাবলী
শুদ্ধাচার পালন – মিথ্যা, চুরি, হিংসা, রাগ ইত্যাদি ত্যাগ।
সৎসঙ্গ ও ঈশ্বরচিন্তা – নামজপ, স্তোত্রপাঠ, উপনিষদ বা গীতা পাঠ করা।
নিয়মিত উপবাস – একাদশী, শিবরাত্রি, জন্মাষ্টমী ইত্যাদিতে।
ফলমূল বা নিরামিষ ভোজন – উপবাসকালে সহজপাচ্য ও পবিত্র আহার গ্রহণ।

উপবাসের ফল
ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে, উপবাসের দ্বারা পুণ্যলাভ হয়, পাপক্ষয় ঘটে, শারীরিক ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায় উপবাস মানেই কেবল না খাওয়া নয়, বরং সকল রিপুর সংযম করে ঈশ্বরের ধ্যানে মগ্ন হওয়া – এটিই উপবাসের আসল উদ্দেশ্য।

মন্তব্যঃ যেহেতু আমাদের দেহ বাসর ইলেকট্রিক ইঞ্জিন স্বরূপ তাই এগুলো মাঝেমধ্যে রেস্ট বা বিরতির প্রয়োজন এজন্য উপবাস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসুন আমরা সকলে মিলে ধর্ম পথে  থাকার চেষ্টা করি এবং বিভিন্ন পুজোতে এবং একাদশীতে উপবাস থাকার চেষ্টা করি। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url