বৈষ্ণব ধর্মমতের উদ্ভব ও বিকাশ: ইতিহাস, দর্শন ও প্রভাব

শৈব ধর্মকে সাধারণত বৈষ্ণব ধর্ম বলা হয়। এটি হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে শাক্তবাদ এবং স্মার্টবাদের সঙ্গে অন্যতম প্রধান সম্প্রদায়। জনসন এবং গ্রিমের ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী, বৈষ্ণবরা মোটামুটি ৬৪১ মিলিয়ন, যা মোট হিন্দু জনসংখ্যার ৬৭.৬%। 

বৈষ্ণব ধর্মমতের উদ্ভব ও বিকাশ
বৈষ্ণব ধর্মমতের উদ্ভব ও বিকাশ


আজ আমরা জানব বৈষ্ণব কাকে বলে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই বিষয়ে তাঁর চৈতন্য লীলায় কিছু বলেছেন। একদিন, যখন তিনি কুলিন গ্রামে হরিনাম প্রচার করছিলেন, তখন একজন গ্রামের মানুষ তাঁকে প্রশ্ন করলেন, প্রভু, বৈষ্ণব কী? চৈতন্য মহাপ্রভু তাঁর জবাবে বললেন, যার মুখে একবার হরি বা কৃষ্ণের নাম শুনবে, তাকেই বৈষ্ণব বলা হয়।

বৈষ্ণব ধর্মমতের উদ্ভব ও বিকাশ

শ্রীল ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ বলছেন, নামের তিনটি স্তর আছে। এগুলো হলো নাম অপরাধ স্তর, নাম আভাস স্তর এবং শুদ্ধ নাম স্তর। নামের অক্ষরগুলো তখনই কাজে আসে যখন সেগুলো সঠিকভাবে উচ্চারিত হয়। কিন্তু যাহোক, ক্রমাগত নামসংকীর্তন করার পরেও যদি কৃষ্ণের প্রেম না পাওয়া যায়, তাহলে বুঝতে হবে যে নামের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা রয়েছে। এখানে আমরা নাম দোষমুক্ত করার আলোচনা করছি। শ্রীল ভক্তিচারু স্বামী মহারাজ আরও বলেছেন যে বৈষ্ণবদের মধ্যে তিনটি স্তর রয়েছে। থা-

(১) তিনি একজন বৈষ্ণব, যিনি একবার যদি শুদ্ধভাবে হরিনাম বলেন, সেটা শুনলে নির্ঘাৎ ভালো লাগে।

(২) তিনি একজন মধ্যম বৈষ্ণব, যিনি নিয়মিত হরিনাম ও কৃষ্ণনাম বলেন।

(৩) আর তিনি হচ্ছেন উত্তম বৈষ্ণব, যার দর্শনে মূখে নাম চলে আসে। 

এইভাবে, বৈষ্ণবদের তিনটি ধাপ রয়েছে। তাই আমাদের শুদ্ধ হরিনাম ও কৃষ্ণনাম করতে হবে, নামের অপমান থেকে মুক্ত থাকতে হবে এবং নামের আভাস পেতে শিখতে হবে। এইভাবে আমরা সহজেই ওই স্তরে পৌঁছাতে পারব। বৈষ্ণব সম্প্রদায় নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঞ্জোরে ধর্মীয় সভায় বৈষ্ণব ব্রাহ্মণ ছাত্ররা। সূত্র: দ্য ন্যাশানাল জিওগ্রাফিক ম্যাগাজিন, নভেম্বর ১৯০৯।

বৈষ্ণব মতে চারটি প্রধান উপশাখা বা সম্প্রদায় রয়েছে। প্রতিটি সম্প্রদায়ের আধ্যাত্মিক বৈশিষ্ট্য আলাদা, এবং জীবাত্মা ও পরমাত্মা (যেমন বিষ্ণু বা কৃষ্ণ) সম্পর্কের ব্যাখ্যায় কিছুটা পার্থক্য দেখা যায়। তবে অধিকাংশ বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মূল ধারণাগুলি পরস্পরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত।

লক্ষ্মী-সম্প্রদায় দর্শন: লক্ষ্মী সম্প্রদায় হল রামানুজাচার্যের বিশিষ্ট দ্বৈত মতবাদ। 

শ্রী বৈষ্ণবধর্ম ব্রহ্মা সম্প্রদায় দর্শন: শ্রী বৈষ্ণবধর্ম ব্রহ্মা সম্প্রদায় বা মাধবাচার্যের শিক্ষা আর চৈতন্য মহাপ্রভু এবং দ্বৈত মতবাদ অচিন্ত্য ভেদ অভেদ নিয়ে গড়ে উঠেছে।

গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম রুদ্র সম্প্রদায় দর্শন: গৌড়ীয় বৈষ্ণবধর্ম রুদ্র সম্প্রদায় শুদ্ধাদ্বৈত মতবাদ অনুসরণ করে, যা বিষ্ণুস্বামী এবং বল্লভ আচার্য প্রচার করেছেন।

নিম্বার্ক সম্প্রদায় দর্শন: যেভাবে নিম্বার্ক প্রচার করেছিলেন দ্বৈতাদ্বৈত মতবাদ , তার থেকে অনেক উপশাখা ও সম্প্রদায় গড়ে উঠেছে। যেমন, রামানন্দের প্রবর্তিত রামানন্দি সম্প্রদায়, শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের মহাপুরুষীয়া বৈষ্ণবধর্ম, আর জগন্মোহন গোসাঁইয়ের জগন্মোহনী বাউল সম্প্রদায়। বৈষ্ণবদের মধ্যে তিলক আঁকার একটি বিশেষ রীতি প্রচলিত। কেউ তিলক আঁকেন দৈনন্দিন উপাসনার জন্য, আবার কেউ আঁকেন বিশেষ অনুষ্ঠান বা উৎসবের সময়। প্রতিটি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের তিলক আঁকার নিজস্ব ধারা রয়েছে, যা সেই সম্প্রদায়ের পরিচয় প্রকাশ করে। সাধারণত, তিলকের আকার ইংরেজি Y অক্ষরের মতো হয়, নাকের ওপর একটি রেখা থাকে যা বিষ্ণুর পদ নির্দেশ করে, আর সাথে থাকে এক বা একাধিক লম্বা রেখা ও পদ্মচিহ্ন।

মাধব সম্প্রদায়ের তিলক ও বৈষ্ণব ধর্মের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করলে দেখা যায়, শ্রী বৈষ্ণব ধর্মের যে ভিত্তি রয়েছে, তা গৌড়ীয় বৈষ্ণবের সাথে খুবই মিলে যায়। ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ পশ্চিমে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচার করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। ভারতের ইতিহাসে বহু বছর ধরে বিষ্ণুর পূজা প্রচলিত রয়েছে এবং হপকিনসের মতে, এটি ছিল ভারতের একমাত্র স্থানীয় ধর্ম। 


বৈষ্ণব ধর্মমতের পৃথিবীতে প্রচার: ধর্মীয় ব্যাখ্যা

ভগবদ্গীতা, যা মহাভারতের একটা অংশ, সেখানে বৈষ্ণবধর্মের উত্থান সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এতে কৃষ্ণ ও অর্জুনের মধ্যে কথোপকথন রয়েছে, যেখানে কৃষ্ণ বিষ্ণুর একটি অবতার হিসেবে ধরা হয় এবং অর্জুনের রথের সারথি হন। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ও পরবর্তী বহু রাজা পরমভগবত বা ভাগবত বৈষ্ণব নামে পরিচিত ছিলেন। দক্ষিণ ভারতে শৈবধর্মের প্রভাবের ফলস্বরূপ, খ্রিষ্টীয় সপ্তম থেকে দশম শতাব্দীতে বৈষ্ণব ধর্ম বৃদ্ধি পায়। আজও এই অঞ্চলে বৈষ্ণব ধর্ম রমরমা। এখানকার মানুষ এখনও সঠিকভাবে কৃষ্ণনামের গান গেয়ে চলেছে।

বৈষ্ণব ধর্মমতের মূল ধর্মীয় ব্যাখ্যা হলো — জীবের প্রকৃত ধর্ম হল ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুর চরণাশ্রয় গ্রহণ করে তাঁর ভক্তি করা। শাস্ত্র অনুসারে, প্রত্যেক জীব ভগবানের অংশ এবং চিরশক্তি-চিন্ময় স্বরূপ। জীব যখন ভগবান থেকে বিমুখ হয়, তখনই সে মায়ার বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে জন্ম-মৃত্যুর চক্রে ঘুরতে থাকে। তাই বৈষ্ণব মত মতে, ঈশ্বরের নামগান, শাস্ত্রপাঠ, ও সৎকর্মের মাধ্যমে ভগবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে, যাতে জীব মোক্ষলাভ করে।

শাস্ত্রীয় ভিত্তি:
শ্রীমদ্ভাগবত ও গীতা অনুসারে বলা হয়েছে —

"সর্বধর্মান্ পরিত্যজ্য মামেকং শরণং ব্রজ।"
অর্থাৎ, সকল ধর্ম ত্যাগ করে শুধুমাত্র ভগবানের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। বৈষ্ণব মতের প্রচারে মূল উদ্দেশ্য হল এই শরণাগতি বা ভক্তির দর্শন মানুষকে শেখানো।

প্রচারের কারণ:
বৈষ্ণব দর্শন বলে, যতদিন জীব ভগবানকে ভুলে থাকবে, ততদিন তার দুঃখ ও পাপমোচন হবে না। তাই বৈষ্ণবগণ মনে করেন, পৃথিবীতে ভগবান বিষ্ণুর নাম, লীলা, গুণ, এবং তাঁর ভক্তির মাহাত্ম্য প্রচার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাতে প্রত্যেক মানুষ শ্রীকৃষ্ণ বা শ্রীবিষ্ণুর প্রেম ও আশ্রয় গ্রহণ করে জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন ছিন্ন করে।


বৈষ্ণব ধর্মের প্রবর্তক/প্রতিষ্ঠাতা কে?

এই প্রসার সম্ভব হয়েছিল ১৯৬৬ সালে, যখন অভয়চরণারবিন্দ ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদ ইসকন আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। ভাগবত বা বৈষ্ণব ধর্মের আদি প্রতিষ্ঠাতারা মোট ১২ জন। এঁদের বলা হয় দ্বাদশ মহাজন। যমরাজ একদিন তার দূতদের বললেন—"শোনো, ভাগবত বা বৈষ্ণব ধর্মের ১২ জন প্রতিষ্ঠাতার নাম তোমাদের বলছি। লিখে রাখ খাতায় নয়, হৃদয়ে লিখে রাখ। নয়তো ভুলে যাবে। যখন জপ করতে বসবে, তখন এঁদের নাম জপ করে বসবে। কারণ, এঁরাই হলেন বৈষ্ণব ধর্মের আচার্যগণ। এঁদের স্মরণ না করে কোনো কাজেই সফল হতে পারবে না।  

(১) সয়ম্ভু: সয়ম্ভু মানে হল প্রজাপতি ব্রহ্মা, যিনি নিজের শক্তিতে স্বয়ং-উৎপন্ন এবং সমগ্র সৃষ্টি পরিচালনার দায়িত্বপ্রাপ্ত।

(২) নারদ মুনি: যিনি দিনরাত নিরন্তর ভগবানের নাম প্রচার করে বেড়ান এবং ভক্তির বার্তা ছড়িয়ে দেন।

(৩) শম্ভু: শম্ভু মানে হল দেবাদিদেব মহাদেব শিব, যাঁর উপর ধ্বংস ও প্রলয়ের দায়িত্ব অর্পিত।

৪ কুমার: অর্থাৎ সদাচারী চার ঋষি – সনক, সনন্দন, সনাতন ও সনৎকুমার – যাঁরা জ্ঞান, যোগ ও বৈরাগ্যের আদর্শ রূপ।

(৫) কপিল: মানে কপিল মুনি, যাঁর নামে বাংলায় আজও গঙ্গাস্নান (গঙ্গা মেলা) অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের বহু মানুষ ভারতের বিভিন্ন তীর্থে দর্শন করতে যান, আবার ভারতের মানুষও কপিল মুনির গঙ্গা মেলায় অংশ নিতে বাংলায় আসেন।

(৬) মনু: মানে হল সপ্তর্ষিদের একজন সতর্বত মনু, যিনি মানবজাতির পূর্বপুরুষ।

(৭) প্রহ্লাদ: হিরণ্যকশিপুর পুত্র, যিনি ভক্তির মহিমায় নৃসিংহদেবের দর্শন পেয়েছিলেন।

(৮) জনক রাজা: সীতা দেবীর পিতা এবং রামের শ্বশুর, জনক রাজা এক আদর্শ রাজর্ষি ছিলেন।

(৯) ভীষ্ম: মহাভারতের গঙ্গাপুত্র ভীষ্ম, যিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের তীরে বিদ্ধ হয়ে শয্যাশায়ী হন এবং যাঁর জীবন থেকে মহান শিক্ষার উদাহরণ পাওয়া যায়।

(১০) বলি মহারাজ: যিনি বামন অবতারকে সর্বস্ব দান করে নিজেই পাতালে গমন করেন। বলি মহারাজের মত মহান বৈষ্ণব আর কেউ নেই।

(১১) বৈয়াসখি: মানে হল বেদব্যাসের পুত্র শুকদেব গোস্বামী, যিনি রাজর্ষি পারিক্ষিতকে সাত দিন ধরে ভাগবত পাঠ করেছিলেন।

(১২) অহম: সংস্কৃত ভাষায় ‘অহম’ মানে “আমি”, ‘অস্ম’ বা ‘অস্মান’ মানে “আমরা দুইজন”, আর ‘বয়ম’ মানে “আমরা সবাই”।

তাই যমরাজ যখন ১২ জন আচার্যের নাম ঘোষণা করলেন, তখন ১২তম নামের স্থানে আর কাউকে না পেয়ে নিজের দিকে হাত দেখিয়ে বললেন—"অহম। ১২ নম্বরে আমার নামটাই লিখে রাখ।"

এখানে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। দেখো, ৩ নম্বরে কাহার নাম লেখা আছে?

৩ নম্বরে লেখা আছে দেবাদিদেব মহাদেবের নাম। কিন্তু মহাদেব ১ নম্বরে না থেকে ৩ নম্বরে কেন?

কারণ, আচার্য তালিকায় বৈষ্ণব হিসেবে মহাদেব তৃতীয়, কিন্তু বৈষ্ণবত্বের শুদ্ধতায় এবং মহিমায় তিনি সকলের শীর্ষে। মহাদেব বৈষ্ণবদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব।

ভাগবতের দ্বাদশ স্কন্ধে স্পষ্ট বলা আছে:

নদীগুলির মধ্যে গঙ্গা শ্রেষ্ঠ,

দেবতাদের মধ্যে বিষ্ণু শ্রেষ্ঠ,

আঠারোটি পুরাণের মধ্যে ভাগবত শ্রেষ্ঠ,

আর বৈষ্ণবদের মধ্যে মহাদেব শ্রেষ্ঠ।

অতএব, আমাদের মাথা যদি মহাদেব হয়, তাঁকে বাদ রেখে কিছু করা সম্ভব? না, কিছুই সম্ভব নয়।

তবুও, সর্বসাকুল্যে পৃথিবীতে বৈষ্ণব ধর্মের পূর্ণপ্রতিষ্ঠা করেছেন শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু। তাঁর কৃপা ও প্রচারেই বৈষ্ণব ধর্মের সর্বোচ্চ মহিমা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।

Frequently Asked Questions (FAQ Schema -
  • Q: বৈষ্ণব ধর্মের প্রধান উপাস্য দেবতা কে?

    A: বিষ্ণু ও তাঁর অবতার (কৃষ্ণ, রাম)। এছাড়াও তাঁর বিভিন্ন অবতার, যেমন কৃষ্ণ ও রাম, বৈষ্ণব ধর্মের উপাস্যরূপে পূজিত হন। বৈষ্ণব দর্শনে ভগবান বিষ্ণু হলেন সর্বোচ্চ ঈশ্বর, যিনি জীব ও জগতের রক্ষাকর্তা এবং প্রেমভক্তির মাধ্যমে যাঁর আরাধনা করা হয়।

  • Q: রামানুজ ও চৈতন্যের মধ্যে পার্থক্য কী?

    A: রামানুজের বিশিষ্টাদ্বৈত বনাম চৈতন্যের অচিন্ত্য ভেদাভেদ দর্শন। রামানুজ ও চৈতন্যের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল তাঁদের ধর্মীয় দর্শন ও ভক্তি-প্রচারের পদ্ধতি। রামানুজ ছিলেন বিশিষ্টাদ্বৈতবাদী দর্শনের প্রবর্তক, যিনি ভক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর নারায়ণের (বিষ্ণু) প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণের উপদেশ দেন। তাঁর মতে, জীব, জগৎ ও ঈশ্বর তিনটি স্বতন্ত্র সত্য, কিন্তু ঈশ্বরই সর্বোচ্চ, এবং জীব ও জগৎ তাঁর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অন্যদিকে, চৈতন্য মহাপ্রভু ছিলেন অচিন্ত্যভেদাভেদ দর্শনের প্রচারক, যেখানে জীব ও জগৎ ঈশ্বরের অংশ, কিন্তু তাঁর সঙ্গেই অভেদ এবং ভেদের সম্পর্ক বজায় থাকে। চৈতন্যের দর্শনে কৃষ্ণভক্তি ও প্রেমভক্তির উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সংক্ষেপে, রামানুজের দর্শন তুলনায় যুক্তিবাদী ও শাস্ত্রনির্ভর, আর চৈতন্যের দর্শন ছিল অধিকতর প্রেমমূলক, সহজিয়া ও সমর্পণশীল ভক্তি আন্দোলনের উপর নির্ভরশীল।

এতে বলা যায়, বৈষ্ণব নিজে কোনো ধর্ম নয়, বরং এটি সনাতন ধর্মের একটা অংশ। বৈষ্ণবরা ভগবান বিষ্ণুর উপাসনা করেন। পুরনো ভারতীয় উপাসকদের পাঁচটি সম্প্রদায় ছিল: বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, সৌর এবং গাণপত্য। বৈষ্ণবরা উপাসনা করেন বিষ্ণুর, শৈবরা শিবের, শাক্তরা শক্তির, সৌররা সূর্যের, আর গাণপত্যরা গণেশের। এই পাঁচটি দলকে একসাথে পঞ্চদেবতা বলা হয় এবং তাদের উপাসনাকে পঞ্চ উপাসনা বলা হয়। যারা সঠিকভাবে নিয়মিত হরিনাম বা কৃষ্ণনাম জপ করেন, তাদের মুখে এই নাম শোনা যায়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url