১৪৩২ সনের বৃষ্টিপাতের হিসাব ও পূর্বাভাস; পঞ্জিকা অনুসারে

মদন গুপ্তের পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৪৩২ সনের বৃষ্টিপাতের গণনা ও সঠিক তথ্য জেনে নিন, নিচে কোন মাসে কি রকম বৃষ্টি হবে বা বৃষ্টি হবে কিনা সে সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো:

বৈশাখ— স্বাভাবিক কারণেএই মাসে। বৈশাখ মাসে প্রচুর রোদ পড়ে, আর মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়। এই সময়ে বুধ আর শুক্রও কিছু পরিবর্তন ঘটে।

জ্যৈষ্ঠ—–সৌর জ্যৈষ্ঠ মাসে গ্রীষ্মের প্রখরতা অনুভূত হয়। জ্যৈষ্ঠ মাসে গরম বেশি ওঠে। এই সময়ে মঙ্গল, বুধ, রাজ, কেতু, এবং শুক্রের মধ্যে কিছু পরিবর্তন হয়। এছাড়া বৃষ্টির আশা থাকে যখন বত্রুী বুধ ওঠে এবং বুধের কিছু বদল ঘটে।
১৪৩২ সনের বৃষ্টিপাতের গণনা
 ১৪৩২ সনের বৃষ্টিপাতের গণনা


আষাঢ়- এই মাসের ৭ তারিখে আর্দ্র নেওচে প্রবেশ করবে। মঙ্গল, বুধ ও শুক্রের অবস্থানের কারণে বৃষ্টি হতে পারে, বিশেষ করে বুধের জন্য।

শ্রাবণ– এই মাসে সাধারণত বেশি বৃষ্টি হয়, কিন্তু বুধ, মঙ্গল, এবং শুক্রের রাশি পরিবর্তনের জন্য এবং বুধের ওঠা, গুরুর বত্রুী, আর শুক্রের বৃদ্ধির কারণে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।

ভাদ্র- এই মাসে বুধ ও শুক্রের রাশি বদল হবে এবং বুধের বক্রী অবস্থার পাশাপাশি শুক্রেরও কিছু পরিবর্তন থাকবে। এর ফলে বৃষ্টির সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

আশ্বিন— এই মাসে বুধের উদয়, সাথে বুধ ও শুক্রের রাশির বদল এবং বুধ ও শনির গতিব্যাপারে কিছু বৃষ্টি হতে পারে।

কার্তিক- এই মাসে বুধ ও শুক্রের রাশি বদল আর মঙ্গল পিছিয়ে যাওয়ার কারণে সামান্য বৃষ্টি হতে পারে।


 অগ্রহায়ণ- এই মাসে বুধ ও শুক্র ওঠার জিনিস চলছে, এবং শুক্রের কিছু পরিবর্তন হচ্ছে। বৃহস্পতিও কিছু বদলাচ্ছে, তাই মাঝে মাঝে বৃষ্টির আভাস থাকতে পারে।

পৌষ- এই মাসে শুক্রর রাশি পরিবর্তন, মদের বক্রী ও বুধের অস্তোদয়, আর মঙ্গলের বক্রত্যাগের জন্য সামান্য বৃষ্টি ও ঠান্ডা বাতাস আসছে।

মাঘ- এই মাসে বুধ, শনি, আর শুক্রের রাশি পরিবর্তন হচ্ছে এবং বুধ কিছুদিনের জন্য পিছনে যাবে। এছাড়া, শনিগ্রহের অবস্থানও বদলাচ্ছে, তাই মাঝে মাঝে বৃষ্টি হতে পারে।

ফাল্গুনঃ এই মাসে বুধ এবং শুক্রের রাশির পরিবর্তন হবে। শনিগ্রহের পূর্ব দিকে বুধ উঠবে আর বুধ অস্ত যাবে। ৩০ তারিখের পরে রাত ২টা ৫ মিনিট ১০ সেকেন্ডে বৃহস্পতির বয়স বাড়বে, ফলে বৃষ্টির সম্ভাবনা এবং শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আসতে পারে।

চৈত্র— এই মাসে মঙ্গল, শুক্র আর বুধের রাশির পরিবর্তন ঘটছে, আর বুধের উদয় ও বৃহস্পতির অস্তমিত হওয়ার কারণে মাঝে মাঝে বৃষ্টির পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।


সুত্রঃ©শ্রীমদন গুপ্তের ফুল পঞ্জিকার্ড

বাংলা বর্ষ ১৪২৪ (ইংরেজি এপ্রিল ২০১৭ – এপ্রিল ২০১৮) সালে বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সম্পর্কে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া কঠিন হতে পারে, কারণ ঐ সময়ের বিস্তারিত পরিসংখ্যান অনলাইনে সহজলভ্য নয়। তবে, বাংলাদেশের আবহাওয়ার সাধারণ ধারা অনুযায়ী কিছু তথ্য দেওয়া যেতে পারে:

বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের মতো উপমহাদেশীয় জলবায়ুতে প্রতি মাসে বৃষ্টিপাতের একটি মৌসুমি ছক থাকে। নিচে বাংলা মাস অনুযায়ী একটি সাধারণ বৃষ্টি গণনার ধারণা দেওয়া হলো, যা কৃষিকাজ, উৎসব, ও গ্রামীণ জীবনযাত্রার জন্য গুরুত্বপূর্ণ:

বাংলা মাস অনুযায়ী বৃষ্টির সাধারণ ধারা

বৈশাখে (এপ্রিল-মে) কালবৈশাখী ঝড় আর বৃষ্টি শুরু হয়, মাঝে মাঝে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি দেখা যায়। জ্যৈষ্ঠে (মে-জুন) বজ্রবৃষ্টির সঙ্গে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়, আর বর্ষার আগমনেরও নিশানা থাকে। আষাঢ়ে (জুন-জুলাই) বর্ষা শুরু হয় এবং ভারী বৃষ্টিপাত হয়, নদী-নালায় জল বাড়তে থাকে। শ্রাবণে (জুলাই-আগস্ট) বর্ষা পিক থাকে, টানা বৃষ্টি হয় আর বন্যার আশঙ্কা থাকে।

ভাদ্রে (আগস্ট-সেপ্টেম্বর) মাঝে মাঝে বৃষ্টি হয়, সময়ে ধান চাষের জন্য উপযুক্ত। আশ্বিনে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) বৃষ্টি কিছুটা কমে আসে এবং শীতের আগমনের অনুভূতি থাকে। কার্তিকে (অক্টোবর-নভেম্বর) হালকা বা খুব কম বৃষ্টি হয়, আকাশ পরিষ্কার হতে থাকে। 

অগ্রহায়ণে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) শুষ্ক মৌসুম শুরু হয়, এটা কৃষিকাজের মূল সময়। পৌষে (ডিসেম্বর-জানুয়ারি) শীতকাল আসে, বৃষ্টি একেবারেই হয় না বা খুব কম হয়। মাঘে (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি) কিছু জায়গায় হালকা কুয়াশার জন্য গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। ফাল্গুনে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ) মাঝে মাঝে কালবৈশাখীর আগমন ঘটে, ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়। চৈত্রে (মার্চ-এপ্রিল) গরম শুরু হয় আর ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে।

বিশেষ নোট:
আষাঢ় ও শ্রাবণ সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়।
কার্তিক থেকে মাঘ — শুষ্ক মৌসুম, কৃষিকাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
বৈশাখ ও ফাল্গুন — বজ্রঝড় ও কালবৈশাখীর সম্ভাবনা বেশি।

বাংলাদেশের বৃষ্টিপাতের মৌসুমি বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশে বৃষ্টিপাত মূলত তিনটি মৌসুমে ভাগ করা হয়: 

১. বর্ষা মৌসুম (জুন–অক্টোবর): এই সময়ে বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের ৭০–৮০% হয়। 

২. বর্ষাপূর্ব উষ্ণ মৌসুম (মার্চ–মে): এখানে মোট বৃষ্টির মাত্রা ১০–২৫% থাকে। 

৩. শীত মৌসুম (নভেম্বর–ফেব্রুয়ারি): এই সময়ে সাধারণত বৃষ্টির পরিমাণ ৪% এর বেশি হয় না। 

বিশেষ করে, সিলেট অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ৪১৮০ মিমি, সুনামগঞ্জে ৫৩৩০ মিমি এবং লালাখালে (জৈন্তিয়াপুর উপজেলা) প্রায় ৬৪০০ মিমি। 

১৪২৪ সালে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত ও বন্যার কথা বলা যায়। যদিও ওই বছরের নির্দিষ্ট তথ্য তেমন সহজ নয়, তবুও সিলেট ও সুনামগঞ্জের মতো উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে বেশি বৃষ্টি হলে প্রায়ই বন্যার ঘটনা ঘটে। এই অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে ফসল ও অবকাঠামোর ক্ষতির আশঙ্কা থাকে।

ভারত ও বাংলাদেশের বাংলা মাস অনুযায়ী বৃষ্টিপাতের সাধারণ চিত্র নিম্নে  ছক আকারে প্রকাশ করা হলো:

বৈশাখ (এপ্রিল-মে): এই সময় কালবৈশাখী তো আসে, মাঝে মাঝে বজ্রসহ বৃষ্টি হয়। গরমও দেখা যায়, সঙ্গে থাকে আদ্রতা অনেক বেশি।

জ্যৈষ্ঠ (মে-জুন): গরমটা বেড়ে যায়, মাঝে মাঝে বর্ষার আগে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হয়।

আষাঢ় (জুন-জুলাই): বর্ষা শুরু হয়, ভারী বৃষ্টির সঙ্গে নদী-নালা প্লাবিত হয়।

শ্রাবণ (জুলাই-আগস্ট): বর্ষার মাঝের সময়, খুব বেশি বৃষ্টি পড়ে, বন্যার শঙ্কা থাকে।

ভাদ্র (আগ্রাস্ট-সেপ্টেম্বর): বর্ষা কমতে শুরু করে, মাঝে মাঝে ভারী বৃষ্টি হয়।

আশ্বিন (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর): বৃষ্টি কম হচ্ছে, হালকা আবহাওয়া থাকে, ধানের ক্ষেতের কাজ শুরু হয়।

কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর): শুষ্ক মৌসুমের শুরু, পরিষ্কার আকাশ আর শীতের আগমন।

অগ্রহায়ণ (নভেম্বর-ডিসেম্বর): শীত শুরু, প্রায় শুষ্ক আবহাওয়া, ধান কাটার সময়।

পৌষ (ডিসেম্বর-জানুয়ারি): শীতকাল, ঘন কুয়াশা থাকে, খুব কম বৃষ্টি হয়।

মাঘ (জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি): তীব্র শীত, মাঝে মাঝে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি।

ফাল্গুন (ফেব্রুয়ারি-মার্চ): গরম শুরু, মাঝে মাঝে কালবৈশাখীর পূর্বাভাস।

চৈত্র (মার্চ-এপ্রিল): গ্রীষ্মের শুরু, ধুলাবালি, ঝড়বৃষ্টি আর বজ্রপাত হয়।

বিশেষ তথ্য (বাংলাদেশের জন্য): 
সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি পড়ে আষাঢ় আর শ্রাবণে, বিশেষ করে সিলেট আর সুনামগঞ্জ অঞ্চলে। 
বর্ষার মৌসুম আষাঢ় থেকে আশ্বিন পর্যন্ত। 
শুষ্ক মৌসুম কার্তিক থেকে ফাল্গুনে আসতে থাকে।

শ্রী মদন গুপ্তের ফুল পঞ্জিকা অনুযায়ী ১৪৩২ সালের বৃষ্টি গণনা করা হয়েছে, এটা আপনি নিশ্চয় বিশ্বাস করতে পারেন।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url