"সতীর দেহত্যাগ ও একান্ন শক্তিপীঠ: পৌরাণিক কাহিনী, ইতিহাস ও তাৎপর্য

আদ্যা শক্তি মহামায়া কে কন্যা রূপে পাওয়ার জন্য ব্রহ্মার পুত্র দক্ষ প্রজাপতি শুরু করেছিলেন এক কঠিন তপস্যা। আর এই তপস্যায় তুষ্ট হয়ে মহামায়া দক্ষ প্রজাপতির ঘরে অপরূপ এক কন্যা রূপে আসবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিলেন কিন্তু যদি কোনদিন কোনরকমভাবে তাঁর অনাদর হয়, তিনি দেহত্যাগ করবেন। কার্যতঃ- হলোও তাই। দক্ষনন্দিনী সতীর বিবাহ হলো দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে। দক্ষের প্রবল অহঙ্কার আধিপত্যের জন্য মহাদেবের সঙ্গে হলো দক্ষের বিবাদ। একবার দক্ষ বিরাট এক যজ্ঞের আয়োজন করেন। সেই অনুষ্ঠানে নিজ কন্যা ও জামাতাকে তিনি আমন্ত্রণ জানালেন না। কিন্তু সতী পিতৃগৃহে এতবড় যজ্ঞের আয়োজন শুনে যাবার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলেন। মহাদেবের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও সান্তী সেই যজ্ঞানুষ্ঠানে হাজির হলেন। দীর্ঘদিন পর পিতা পুত্রী সাক্ষাৎ হলেও দক্ষ নিজ কন্যাকে কোন আদর আপ্যায়ণ করলেন না, পরন্ত শিব নিন্দায় মুখর হয়ে উঠলেন। পিতার মুখে এরূপ স্বামী নিন্দা সহ্য করতে না পেরে সতী দেহত্যাগ করলেন। এদিকে মহাদেব সতীর দেহত্যাগের সংবাদে প্রচণ্ড ক্ষুত্ত হয়ে নিজের জটাজাল ছিন্ন করে সৃষ্টি করলেন শক্তিশালী বীরভদ্রকে। বীরভদ্র মহাদেবের নির্দেশে লণ্ডভণ্ড করলেন দক্ষের যজ্ঞানুষ্ঠান। তৎপরে সতীর নিথর দেহটাকে নিজ স্কন্ধে তুলে নিয়ে বেরোলেন বিশ্বপরিক্রমায়। মহাদেবের রণং দেহি রূপ দেখে ও তাকে শান্ত করবার উদ্দেশ্যে বিষ্ণু নিজ চক্র দ্বারা সতীর দেহ খণ্ড-বিখণ্ড করগেন। সতীর সেই দেহখণ্ড যে সকল স্থানে পতিত হয়েছিল, সেই স্থানগুলিতে গড়ে উঠল শক্তিপীঠ।

সতীর দেহত্যাগ ও একান্ন শক্তিপীঠ pdf
সতীর দেহত্যাগ ও একান্ন শক্তিপীঠ

৫১ টি শক্তি পিঠ সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো:

১। হিঙ্গুলা বা হিদুলোটি পাকিস্তানের করাচির উত্তর-পূর্বে মরুভূমির ওপর দিয়ে ১২৮ কিলোমিটার দূরে। এখানে সতীর রমারন্ধ্র পতিত হয়, আর পাহাড়ের মাথায় কালীমন্দির রয়েছে। এখানে দেবী কোটারী, খ্যাত ভৈরব তীমলোচন। অনেকে তাকে নানী বা মহামারী বলেও ডাকেন।

২। করবীর বা শর্করার পাকিস্তানের করাচী থেকে সুত্তর স্টেশনের কাছে। এ জায়গায় সতীর ত্রিনেত্র পতিত হয়। দেবী মহিষমর্দিনী এবং ভৈরব ক্রোধীশ।

৩। সুগন্ধা বাংলাদেশে বরিশাল শহর থেকে ১৩ মাইল দূরে শিকারপুরে সোন্ধ নদীর ধারে। এখানে সতীর নাসিকা পতিত হয়, আর দেবীর নাম সুনন্দা, ভৈরব ত্র্যম্বক।

৪। অমরনাথ কাশ্মীরের অমরনাথ গুহায় অবস্থিত। গুহার মধ্যে তুষারলিঙ্গের ডানদিকে একটি ছোট ডিমের মতো তুবারপিণ্ড আছে, যা পার্বতী বা মহামায়া বলে পরিচিত। এখানে পতিত হয় সতীর কণ্ঠ, আর দেবীর নাম মহামায়া, ভৈরব বিসদ্যেশ্বর।

৫। জ্বালামুখী পাঠানকোট থেকে ১৩ মাইল দূরে পাহাড়ের উপর একটি ভৈরব মন্দির। এখানে কোনো মূর্তি নেই, তবে পাথরের ফাটল দিয়ে অগ্নিশিখা বের হচ্ছে। এই শিখাতেই মায়ের জ্যোতিরূপ রয়েছে। সাতটি শিখার মধ্যে একটিরই পূজা হয়, এখানে পতিত হয় সতীর জিহা। দেবীর নাম সিদ্ধিদা, ভৈরবী উন্মত্ত।

৬। জলন্ধর পাঞ্জাবের জলন্ধর ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নেমে জলন্ধর পীঠে যেতে হয়। সেখানে ফালভৈরব এবং মহাবীরের মন্দির আছে। এখানে বিন্ধ্যেশ্বরীর মন্দিরও রয়েছে। এখানে পতিত হয় সতীর এক স্তন, দেবীর নাম ত্রিপুরমালিনী, ভৈরব ভীষণ।

৭। বৈদ্যনাথ বিহারে বৈদ্যনাথ ধাম বা দেওঘরে সতীর হৃদয় পতিত হয়েছে। এখানেই রাবণ শিবকে রেখেছিলেন। তাই বৈদ্যনাথ শুধু শৈবপীঠ নয়, শক্তিপীঠও। দেবীর নাম দুর্গা, ভৈরব বৈদ্যনাথ।

৮। নেপাল-এ এখানে সতীর পفيতারে পতিত হয়। নেপালের পশুপতিনাথ মন্দিরের পাশে গুজ্যেশ্বরী মন্দির আছে। নেগালের বিভিন্ন স্থানে সতীর আকৃতি সম্পর্কে সঠিক তথ্যের অভাব থাকার কারণে কিছু বিভ্রান্তি আছে। এখানকার দেবী মহাশিরা ভৈরব কপালী।

৯। মানস-তিব্বত থেকে কৈলাস পর্বতের পাদদেশে মানস সরোবর আছে। এখানে একটি শিলায় দেবীর অবস্থান। তবে দেবী কটি জায়গায় অবস্থান করছে তা নিয়ে মতভেদ আছে। কিছু বিশেষজ্ঞ মানস সরোবরকে একান্নপীঠের একটি বলে মনে করেন। এখানে দেবীর দক্ষিণহস্ত পতিত হয়, দেবী দাক্ষায়ণী। ভৈরব অমর।

১০। বিরল্লাক্ষেত্র (উৎকল)- পুরীর মন্দিরের চত্বরেই এই স্থান রয়েছে। এখানে সতীর নাতি পতিত হন। দেবীর নাম বিমলা ও ভৈরব জগন্নাথ। জগন্নাথ মন্দিরের দ্বিতীয় প্রাচীর পার হলেই এই মন্দিরকে দেখা যায়।

১১। গণ্ডকী- এই স্থানটি নিয়ে নানা মত আছে। কেউ বলেন, শালগ্রামের কাছে গণ্ডক নদীর উৎপত্তিস্থলে এই পীঠ। আবার কিছু লোক মনে করেন, এটা নেপালের মুক্তিনাথ তীর্থ। নেপাল এবং ভারত সীমান্তে কালী গণ্ডকীর উৎস মাসতং এই পীঠস্থান। এখানে আছে চণ্ড নামের এক অনাদি লিঙ্গ। নদীর উৎসমুখের কুণ্ডে দেবী অবস্থান করেন। এখানে কোন মূর্তি নেই। শিলাখণ্ডে পূজা করা হয়। পতিত হয় সতীর গণ্ডদেশ এখানে

১২। বহুলা- পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার কাটোয়া থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে কেতুগ্রামে অজয় নদীর কিনারায় এই স্থান রয়েছে। এখানে দেবীর বাম বাহু পতিত হয়। দেবীর নাম বছলা। ভৈরবের নাম ভৈরব ভীরুক।

১৩। উজ্জয়িনী বা উজানী- বর্ধমান জেলার গুসকরা স্টেশন থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে উজানী বা কোগ্রাম আছে। এখানে সতীর কনুই পতিত হয়। দেবী মঙ্গলচণ্ডিকা, আর ভৈরব কপিলেশ্বর।

১৪। চট্টগ্রাম-সীতাকুণ্ডে, চন্দ্রনাথ পাহাড়ের পাশে ভবানী মন্দির। এখানে একটি আগুনের শিখা জ্বলছে, অনেকের মতে, এটা দেবী ভবানী। এখানে পতিত হয় সতীর দক্ষিণ হাত। দেবী হন ভবানী এবং ভৈরব হলেন চন্দ্রশেখর।

১৫। ত্রিপুরা-ত্রিপুরা রাজ্যের উয়দয়পুর শহরের কাছে মাতাবাড়িতে একটি টিলায় এই পীঠস্থান। এখানে দেবীর দক্ষিণ পা পতিত হয়েছে। দেবীর নাম ত্রিপুরসুন্দরী এবং ভৈরব হলেন ত্রিপুরেশ।

১৬। ত্রিস্রোতা-পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার বোদা অঞ্চলের শালবাড়ী গ্রামে তিস্তা নদীর পাশে এই পীঠস্থান। এখানে দেবীর বাম পা পতিত হয়েছে। দেবীর নাম ভ্রামরী, আর ভৈরব হলেন ঈশ্বর।

১৭। কানগিরি বা কামরূপ কামাখ্যা-আসামের গুয়াহাটির কাছে নীলাচল পাহাড়ে কামাখ্যা মন্দির। এখানে দেবীর যোনিদেশ পড়েছিল, তার নাম কুব্জিকা। এই স্থানে দেবী কামাখ্যায় প্রস্তরীভূত। দেবীর কোন মূর্তি নেই, দেবীর গন্তব্য গহ্বরে। লাল শালুতে ঢাকা। এখানে দেবী কামাখ্যা এবং ভৈরব উমানন্দ। কথিত আছে যে, কেউ যদি এই শিলা স্পর্শ করে, সে দেবত্ব লাভ করে।

১৮। যুগাদ্যা বা ক্ষীর গ্রাম-বর্দ্ধমানের কাটোয়ার কাছে ক্ষীরগ্রাম। এখানে ক্ষীরদীঘির জলে বিগ্রহ সারাবছর থাকে। বৈশাখ সংক্রান্তিতে তুলে এনে পূজা ও মহামেলা হয়। এখানে দেবীর ডান পায়ের আঙুল পতিত হয়েছে। দেবীর নাম যুগাদ্যা বা যোগদ্যা এবং ভৈরব হলেন ক্ষীরশুশুক।

১৯। কালীঘাট- কলকাতার কালীঘাটে এই মন্দির আছে। এখানে কালী দেবী সবসময় জাগ্রত থাকেন। ভাদ্র, পৌষ এবং চৈত্র মাসে দেবীর দর্শন খুবই পুণ্যজনক বলে মনে করা হয়। মূর্তির মুখ কালো পাথরের তৈরি, আর জিভ, দাঁত ও মাথার মুকুট সোনার। গলার মুণ্ডমালা সোনা ও রূপার তৈরি। এখানে দেবীর দক্ষিণ পায়ের ৪টি অঙ্গুলী পতিত হয়। দেবীর নাম কালিকা এবং ভৈরবের নাম নকুলীশ। প্রতি বছর স্নানযাত্রার দিনে এক রুদ্ধদ্বার ঘরে চোখ বাঁধা অবস্থায় মূর্তিকে স্নান করানো হয়।

২০। প্রয়াগ- উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদের প্রয়াগ সঙ্গমের কাছে এই পীঠস্থান অবস্থিত। এখানে দেবীর হাতের অঙ্গুলি পতিত হয়। দেবীর নাম ললিতা এবং ভৈরবের নাম ভব।

২১। জয়ন্তী- বাংলাদেশে শ্রীহট্ট জেলার জয়ন্তীয়া পরগণায় খাসিয়া পাহাড়ের কলজোর বাউরভোগ গ্রামে এই পীঠস্থান রয়েছে। এর সম্পর্কে কিছু বিতর্ক আছে। এখানে পতিত হয় সতীর বাইজঙ্ঘা। দেবী নাম জয়ন্তী এবং ভৈরবের নাম ক্রমদীশ্বর।

২২। কিরীট বা কিরীটকোণা- মুর্শিদাবাদে লালবাগ কোর্ট রোড স্টেশন থেকে প্রায় ৩ মাইল পশ্চিমে বটনগর গ্রামে অবস্থিত। এখানে দেবীর অঙ্গের নাম কিরীট। দেবী নাম বিমলা বা কিরীটশ্বরী এবং ভৈরব হলেন সংবর্ত। পৌষ মাসে প্রতি মঙ্গলবার এখানকার মেলায় যাওয়া যায়।

২৩। বারাণসী- উত্তরপ্রদেশে বারাণসীর গঙ্গার ধারে মণিকর্ণিকা ঘাটে এই পীঠস্থান রয়েছে। এখানে পতিত হয় সতীর কর্ণকুণ্ডল। দেবীর নাম বিশালাক্ষী এবং ভৈরবের নাম কাল।

২৪। ন্যাশ্রম- তামিলনাডুতে কুমারী মন্দিরের ভিতরে ভদ্রকালী মন্দির আছে। তবে কিছু মতে এই পীঠস্থান বাংলাদেশে চট্টগ্রাম জেলার কুমারীকুণ্ডেও থাকতে পারে। এখানে দেবীর পৃষ্ঠদেশ পতিত হয়। দেবী নাম সর্বানী এবং ভৈরব হলেন নিমিষ।

২৫। কুরুক্ষেত্র, হরিয়ানায় একটা ছোট জীর্ণ মন্দিরে দেবী লাল কাপড়ে ঢাকা এক পাথরের ওপর বসে আছেন। এখানে দেবীর গুলফ বা গোঁড়ালী আছে। দেবী সাবিত্রী, আর ভৈরব স্থানু।

২৬। রাজস্থানমণিবেদ বা মণিবেদিক এর কাছে গায়ত্রী পর্বতে এই পীঠ আছে। এখানে দেবীর মনিবন্ধ, বা কজি আছে। দেবী গায়ত্রী, আর ভৈরব সর্বানন্দ।

২৭। শ্রীশৈল বা শ্রীহট্ট বাংলাদেশের শ্রীহট্ট শহরে গোত্রাটিকর জৈনপুরে এই পীঠ রয়েছে। সুরমা নদীর পাশে মন্দিরে দেবী আছে। এখানে সতীর গ্রীবা রয়েছে। দেবী মহালক্ষ্মী, আর ভৈরব সম্বরানন্দ।

২৮। কাঞ্চী-বোলপুর স্টেশন থেকে ৪ মাইল উত্তরপূর্বে কোপাই নদীর পাশে পীঠস্থান। এই জায়গা কঙ্কালীতলা নামে পরিচিত। মন্দিরের কাছে একটা কুণ্ড আছে, আর সেখানে দেবী আছে। এখানে দেবীর কঙ্কাল পতিত হয়েছে। দেবী দেবগর্তা, আর ভৈরব রুরু।

২৯। ঝালমাধব মধ্যপ্রদেশের অমরকন্টকের কাছে এক গুহায় এই মহাপীঠ। কথিত আছে, এখানকার দর্শন করলেই মন্ত্রসিদ্ধি হয়ে যায়। এখানে দেবীর দক্ষিণ নিতম্ব পতিত হয়। দেবী কালী, আর ভৈরব অসিতাঙ্গ।

৩০। শোন বা শৈল-মধ্যপ্রদেশের অমরকন্টক তীরের নর্মল নদীর উৎসে এই মহাশক্তি পীঠ আছে। এখানে দেবীর বাম নিতম্ব পতিত হয়। দেবী নর্মদা, আর ভৈরব ভদ্রসেন।

৩১। রামগিরি-উত্তরপ্রদেশের ঝাঁসি মানিকপুর রেলপথে চিত্রকূট স্টেশন থেকে ২ মাইল দূরে। এখানে দেবীর দক্ষিণ স্তন পতিত হয়। দেবী শিবানী, আর ভৈরব চণ্ড।

৩২। বৃন্দাবন, মথুরার রাস্তায় যমুনার কাছে ভূতেশ্বর মহাদেবের মন্দিরে দেবীর সতীর কেশজাল পতিত হয়। দেবী উমা, আর ভৈরব ভূতেশ।

৩৩। শুচি বা অনল-কন্যাকুমারী ত্রিবান্দ্রমের ১১ কি.মি. দূরে শিবমন্দির আছে। এখানে দেবীর ঊর্দ্ধদন্ত পতিত হয়। দেবী নারায়ণী, আর ভৈরব সংহার।

৩৪। পঞ্চসাগরের সঠিক জায়গা জানি না। এখানে দেবীর অধোদন্ত পতিত হয়। দেবী বারাহী, আর ভৈরব মহারুদ্র।

৩৫। করতোয়াতট-বাংলাদেশের বগুড়া জেলার ভবানীপুর গ্রামে পীঠস্থান আছে। এখানে দেবীর পৃষ্ঠদেশের অংশ পতিত হয়েছে। মূর্তি নেই, কিন্তু ভক্তদের জন্য একটা সোনার কালীমূর্তি রয়েছে। দেবী অপর্ণা, আর ভৈরব বামেশ।

৩৬। শ্রীপর্বত-কাশ্মীরের এলাকা শ্রীপর্বত আছে। এখানে দেবীর দক্ষিণ পায়ের গুলফ ও দক্ষিণ কর্ণ পতিত হয়েছে। দেবী শ্রীসুন্দরী, আর ভৈরব সুন্দরানন্দ।

৩৭। বিচাষ-পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার তমলুকে পীঠস্থান। উঁচু একটা ভিতের ওপর মন্দির রয়েছে। এখানে মৎস্যপ্রিয়ার অবস্থান। দেবী বাম গুলফ পতিত হয়। দেবী ভীমরূপা বা কপালিনী, আর ভৈরব সর্বানন্দ।

৩৮। প্রভাস-কাথিয়াওয়ারে সোমনাথ মন্দিরের কাছে তিনটি নদীর সঙ্গমে পীঠস্থান আছে। এখানে দেবীর উদর পতিত হয়েছে। দেবী চন্দ্রভাগা, আর ভৈরব বক্রতুণ্ড।

৩৯। ভৈরব পর্বত-মধ্যপ্রদেশের উজ্জয়িনী শহরের কাছে শিপ্রা নদীর তীরে ভৈরব পর্বত। এখানে দেবীর পীঠস্থান রয়েছে। দেবীর উর্দ্ধওষ্ঠ পতিত হয়েছে। দেবী অবন্তী, আর ভৈরব লম্বকর্ণ।

৪০। জনস্থানে বা জলেস্কুলে-মহারাষ্ট্রের নাসিকের কাছে গোদাবরী উপত্যকায় পীঠস্থান। এখানে দেবীর চিবুক পতিত হয়েছে। দেবী ভ্রামরা, আর ভৈরব বিকৃতাক্ষ।

৪১। গোদাবরী তট-অন্তপ্রদেশের রাজমহেন্দ্রী জেলায় পীঠস্থান কোটিলিঙ্গেশ্বরের মন্দির আছে। এখানে দেবীর গণ্ড পতিত হয়েছে। দেবী বিশ্বেশী, আর ভৈরব দণ্ডপাণি।

৪২। রত্নাবলী—সঠিক জায়গা জানি না, কিন্তু অনেকের মতে হুগলী জেলার রত্নাকর নদীর কাছে খানাকুল কৃষ্ণনগরে পীঠস্থান। এখানে দেবীর দক্ষিণ স্কন্দ পতিত হয়েছে। দেবী কুমারী কুমারী, আর ভৈরব শিভ।

৪৩। মিথিলা-নেপালের তরাই অঞ্চলের জনকপুরে এটা পীঠস্থান। এখানে দেবীর বামস্কন্দ পতিত হয়েছে। দেবী উমা, আর ভৈরব মহোদর।

৪৪। নলহাটি-বীরভূম জেলার নলহাটি স্টেশন থেকে কিছু দূরে পাহাড়ের চূড়ায় ললাটেশ্বরী দেবীর মন্দির আছে। এখানে দেবীর নলা পতিত হয়েছে। দেবী কালী, আর ভৈরব যোগীশ।

৪৫। কর্ণাট—সঠিক জায়গা জানি না। এখানে দেবীর কর্ণদ্বয় পতিত হয়েছে। দেবী জয়দুর্গা, আর ভৈরব অভীক।

৪৬। বক্রেশ্বর কামাখ্যা বৃন্দাবনের কাছাকাছি দুবরাজপুর স্টেশনের পাশে একটা শ্মশান এলাকায় আছে। এখানে দেবীর মন পতিত হয়। দেবী হলেন মহিষমন্দিনী, আর ভৈরব হল বক্রনাথ।

৪৭। যশোর বাংলাদেশের খুলনা জেলার ঈশ্বরীপুরে অবস্থিত। এখানে দেবীর পাণিপদ্ম পতিত হয়। দেবী হলেন যশোরেশ্বরী, এবং ভৈরব চণ্ড।

৪৮। অট্টহাম লাভপুর স্টেশনের ২ কি.মি. দূরের একটি পীঠস্থান। কিছু লোক বলছেন এই পীঠস্থান বর্ধমান জেলার কেতুগ্রামে। এখানে দেবীর ওষ্ঠ পতিত হয়। দেবী ফুল্লরা আর ভৈরব হল বিশ্বেশ।

৪৯। নন্দীপুর সাঁইথিয়া স্টেশনের পাশে পাঁচিলের ভেতরে একটা বটগাছের নিচে দেবীপীঠ আছে। এখানে সতীর হার পতিত হয়। দেবী হলেন নন্দিনী, এবং ভৈরব নন্দিকেশ্বর।

৫০। লঙ্কার সঠিক অবস্থান জানা যায়নি। তবে রাক্ষসেম্বর নাম দেখে মনে হয়, এটা রাবণের লঙ্কা, যেটা এখন শ্রীলঙ্কা। এখানে দেবীর নুপুর পতিত হয়। দেবী ইন্দ্রাক্ষী আর ভৈরব রাক্ষসেম্বর।

৫১। বিরাটের ব্যাপারে সঠিক কিছু জানা যায়নি। তবে মহাভারতে বিরাটপুরী নামের উল্লেখ আছে। বিরাট রাজপুতানার জয়পুর, আলোয়ার ও ভরতপুর অঞ্চলে। অনেকের ধারনা, এটা উত্তরবঙ্গের কোথাও হতে পারে। এখানে দেবীর উত্তর পাদাঙ্গুলি পতিত হয়। দেবী হলেন অম্বিকা, আর ভৈরব অমৃতাক্ষ।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url