ঈশ্বর সাকার নাকি নিরাকার? হিন্দু ধর্মমতে সঠিক ব্যাখ্যা ও প্রমাণ
প্রথমে আমরা জেনে নেই সাকার কি -সাকার কথাটি হিন্দীতে ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত হয় ।
'সাকার' শব্দের অর্থ ও ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ
সাকার শব্দটি গঠিত হয়েছে দুটি অংশে— ‘স’ (উপসর্গ) এবং ‘আকার’। অর্থাৎ, স + আকার = সাকার, যার অর্থ দাঁড়ায় “আকার সহ” বা “আকারযুক্ত”।
![]() |
ঈশ্বর সাকার নাকি নিরাকার |
বাংলা ভাষায় আমরা 'সস্ত্রীক' (স্ত্রীর সহিত) বা 'সপুত্র' (পুত্রের সহিত) শব্দগুলোর সঙ্গে পরিচিত। একইভাবে, 'সাকার' মানে যার আকার আছে বা যাকে দেখা যায়। 'আকার' বলতে আমরা বুঝি একটি রূপ বা আকৃতি— প্রতিটি বস্তু বা ধারণারই একটি নির্দিষ্ট আকার থাকে।
'সাকার' শব্দের ব্যবহার হিন্দি ভাষায় ভিন্ন একটি প্রসঙ্গে হয়। হিন্দিতে ‘সাকার পরিকল্পনা’ বলতে বোঝানো হয় এমন একটি পরিকল্পনা, যা বাস্তব রূপ পেয়েছে বা যার দৃশ্যমান আকার গঠিত হয়েছে। যেমন, কোনো চিন্তাধারাকে (idea) বাস্তব রূপ দেওয়া— চিন্তাকে আকার দেওয়া মানেই তাকে সাকার করা।
বাংলায় আমরা যেটিকে “বাস্তবায়ন” বলি, হিন্দিতে সেটাকেই বলা হয় “সাকার করা”। অর্থাৎ কোনো ভাবনা বা পরিকল্পনাকে কার্যকরভাবে রূপ দেওয়া।
তবে মনে রাখতে হবে, ‘আকার’ এবং ‘সাকার’ শব্দ দুটি সম্পর্কযুক্ত হলেও তাদের অর্থ আলাদা:
‘আকার’ একটি নামপদ বা noun। যেমন— “রসগোল্লার আকার গোল”।
‘সাকার’ একটি বিশেষণ বা adjective, যার অর্থ “যার আকার আছে”।
‘সাকার’ শব্দটির বিপরীত হলো ‘নিরাকার’— অর্থাৎ যার কোনো আকার নেই বা অবয়বহীন।
সারাংশ
আকার = একটি রূপ বা আকৃতি
স + আকার = সাকার = যে রূপ বা আকারসহ
সাকার = আকারযুক্ত, দৃশ্যমান
নিরাকার = যার কোনো আকার নেই
সাকার করা (হিন্দি) = বাস্তবায়িত করা, রূপ দেওয়া
এখন আমরা জানবো নিরাকার কি -
সৃষ্টিকর্তা নিরাকার এবং তার কোন আকার নেই ও তার সমতুল্য কিছুই নেই জগতে।নিরাকার ১. /বিশেষণ পদ/ আকারহীন, নিরবয়ব।আবার আমরা এটুকু বলতে পারি নিরাকার হলো নিরাকার, অমূর্ত, অপরিণত, অগঠিত, অসৃজিত, মূর্তিহীন, অবর্ধিত, অবৃদ্ধিপ্রাপ্ত, নির্দিষ্ট আকারহীন, যথাযথভাবে বিকাশপ্রাপ্ত হয়নি এমন, বাড় নেই এমন।
ঈশ্বর সাকার নাকি নিরাকার সঠিক তথ্যঃ
ঈশ্বর নিরাকার ই।বরং যে সকল ধর্ম মতে ঈশ্বরের আকার কল্পনা করা পাপ, সেই ধর্মাবলম্বীরা ও কিন্তু মনে মনে ঈশ্বরের একটা বিমূর্ত রূপ বা পার্থিব রাজা বা বিচারকের মতো রূপ কল্পনা করে নেয়! এই সম্পর্কে যেমন বাতাস কখনো সাকার আবার নিরাকার এটাই বেদ বলে , এমনকি জল বায়ুতে মিশ্রিত অবস্থায় নিরাকার (সাধারণ চোখে অদৃশ্য) আবার সমুদ্রে জল তরল এবং মেরু অঞ্চলে একই জল বরফ তেমনি ঈশ্বর যেমন অরূপ তেমনি ঈশ্বর স্বরূপ। এই অরূপ-স্বরূপ ও সাকার-নিরাকার উভয়বিদ্ কথা বেদে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বেদে সরাসরি প্রতিমা পূজার প্রসঙ্গ নেই এমনকি বিরোধিতাও নেই।
"ন -তস্যপ্রতিমা অস্তিযস্য নাম মহদ্ যশঃ।
হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা, যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ।।যজুর্বেদ, ৩২/৩
অনুবাদ:
মহতী কীর্তিতেই যাঁহার নামের স্মরণ হয়, যাঁহার গর্ভে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী স্থান পাইয়াছে বলিয়া প্রত্যক্ষ, আমাকে তোমা হইতে বিমুখ করিও না- এইরূপ ভাবে যাঁহার উপাসনা বিধেয় সেই পরমাত্মার কোন প্রতিকৃতি বা মূর্তি নাই।
আবার উপনিষদ বলেছে-
বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ২/৩/১ বলা হয়েছে, দ্বে বা ব্রহ্মণো রূপে মূর্তংচেব্যমূর্তং চামৃতংচস্থিতং চ যচ্চসচ্চত্যচ্চ।।
অনুবাদ:
দুইটি ব্রহ্মের অর্থ -অমূর্ত ও মূর্ত , অমৃত ও মর্ত্য ও, স্থিতিশীল ও গতিশীল, সত্তাশীল ও অব্যক্ত।
ব্রহ্মের রূপের বর্ণনা করেছে উপনিষদ যদিও সরাসরি ব্রহ্মের প্রতিমা বা মূর্তি নাই।
"এই পুরুষের রূপ কখনো হরিদ্রা (হলুদ)-রঞ্জিত বসনের মতো পীতবর্ণ, কখনো মেঘ-আচ্ছাদিত রোমের মতো ধূসর, কখনো ইন্দ্রগোপ পোকাদের মতো রক্তিম। তাঁর রূপ অগ্নিশিখার মতো দীপ্তিময়, শ্বেতপদ্মের মতো শুভ্র, আবার কখনো চমকিত বিদ্যুতের মতো উজ্জ্বল ও দ্যুতিময়।"
— বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ২.৪.৬
স্বয়ং বেদ ঘোষণা করে—
অমূর্ত ব্রহ্মের উপলব্ধি দুর্জ্ঞেয়, তাঁকে ইন্দ্রিয় বা যুক্তির মাধ্যমে লাভ করা যায় না। বহু তপস্যা, সাধনা, জ্ঞানচর্চার পরেও ব্রহ্মদর্শন তখনই সম্ভব হয়, যখন স্বয়ং ব্রহ্ম কৃপা করেন।
কঠ উপনিষদে (১.২.২৩) বলা হয়েছে—
"নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো, ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন।
যমৈবেষ বৃষ্ণুতে তেন লভ্যঃ, তস্যৈষ আত্মা বিবৃণুতে তনুং স্বাম্।।"
অর্থাৎ —
এই আত্মা বা ব্রহ্ম প্রবচন, পাণ্ডিত্য বা শ্রবণমাত্রে লাভযোগ্য নন।
যাঁকে তিনি নিজে গ্রহণ করতে চান, তিনিই তাঁকে লাভ করেন।
তাঁর কৃপা ছাড়া কেউ তাঁকে উপলব্ধি করতে পারে না।
ব্রহ্মসূত্রের তৃতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় পাদে আছে, ‘‘অরূপবদেব হি, তৎপ্রধানত্বাৎ’’ অর্থাৎ ব্রহ্ম নিশ্চিতভাবেই নিরাকার, কারণ তিনি বেদ ও বেদান্তের প্রধান প্রতিপাদ্য (বর্ণনীয়) বিষয়। ব্রহ্ম নিরাকার ও সর্বব্যাপী: উপনিষদের দৃষ্টিতে
শাস্ত্রে বলা হয়েছে— "তদব্যক্তমুহ আহ হি", অর্থাৎ শাস্ত্রকারগণ ব্রহ্মকে অব্যক্ত, অর্থাৎ ইন্দ্রিয়াতীত ও রূপাতীত সত্তা হিসেবে উপদেশ দিয়েছেন।
‘কেন’ উপনিষদে বলা হয়েছে—
"চক্ষু ব্রহ্মে গমন করে না", অর্থাৎ চোখের দ্বারা তাঁকে দেখা যায় না।
"বাক্য তাঁকে প্রকাশ করতে পারে না"— ভাষা ও শব্দও তাঁর যথার্থ পরিচয় দিতে অপারগ।
"মন তাঁকে চিন্তা করতে পারে না"— মননের অতীত সেই ব্রহ্ম।
সরাসরি বললে, ব্রহ্ম চক্ষু, কর্ণসহ সকল ইন্দ্রিয় ও মন-বুদ্ধির নাগালের বাইরে। তাই তিনি নিরাকার।
অন্যদিকে, ঈশ উপনিষদে বলা হয়েছে—
"যিনি ব্রহ্ম থেকে তৃণ পর্যন্ত সমস্ত সত্তার মধ্যেই আত্মাকে দর্শন করেন এবং সমস্ত সত্তার মধ্যেই নিজের আত্মাকে অনুভব করেন, তিনি কারো প্রতি বিরূপতা অনুভব করেন না।"
এই উপদেশের মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে— ব্রহ্ম সর্বভূতে বিরাজমান।
এমন সর্বব্যাপী উপস্থিতি কেবলমাত্র নিরাকার সত্তার পক্ষেই সম্ভব। রূপ বা সীমার মধ্যবদ্ধ কিছু সর্বত্র অবস্থান করতে পারে না।
সাকার ঈশ্বরের ধারণা – এক বৈদান্তিক ব্যাখ্যা
বেদান্ত মতে, ঈশ্বর মূলত নির্গুণ, নিরাকার এবং অব্যক্ত। তবে প্রশ্ন ওঠে—
যদি তিনি স্বরূপে নিরাকার হন, তবে তাঁর সাকার রূপের কল্পনার কারণ কী?
এই প্রশ্নের উত্তরে ব্রহ্মসূত্র (৩.২.১৪)–এ বলা হয়েছে:
“বৃদ্ধ্যর্থঃ পাদবৎ”
— অর্থাৎ, উপাসনার সুবিধার্থে ব্রহ্মের পদ বা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ কল্পনা করা হয়েছে।
এই কল্পনা মূলত একটি সহজ উপায়— ব্রহ্মকে ধ্যান ও উপলব্ধির ক্ষেত্রে রূপ দিয়ে চেতনার ধ্যানগম্য করে তোলা।
ছান্দোগ্য উপনিষদে উল্লেখ আছে যে—
ব্রহ্ম চারটি ‘পাদ’ বা ভাগ এবং ষোড়শ (১৬টি) কলায় বিভক্ত।
এই চারটি পাদ হলো—
১. প্রকাশবান (যা আলোকিত করে),
২. অনন্তবান (যার কোনো সীমা নেই),
৩. জ্যোতিষ্মান (যিনি দীপ্তিমান),
৪. আয়তনবান (যাঁর আছে বিস্তার বা পরিসর)।
প্রতিটি পাদে চারটি করে কলা রয়েছে:
প্রকাশবানে: পূর্ব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ দিক;
অনন্তবানে: পৃথিবী, অন্তরীক্ষ, দ্যুলোক ও সমুদ্র;
জ্যোতিষ্মানে: অগ্নি, সূর্য, চন্দ্র ও বিদ্যুৎ;
আয়তনবানে: প্রাণ, চক্ষু, কর্ণ ও মন।
কিন্তু এই রূপ ব্যাখ্যাটি রূপক ও কাল্পনিক, বাস্তবে ব্রহ্মের এমন কোনো নির্দিষ্ট গঠন বা রূপ নেই। এসব কল্পনা তাঁকে সহজে অনুভব করার এক মানসিক মাধ্যম মাত্র।
আবার ব্রহ্মসূত্র (৩.২.১৮) বলছে:
“স্থানবিশেষাৎ, প্রকাশাদিবৎ”
— অর্থাৎ বিশেষ স্থান বা প্রেক্ষাপট অনুসারে ব্রহ্মকে সাকাররূপে কল্পনা করা হয়, যেমন—আকাশ বা আলো।
এই প্রসঙ্গে এক উৎকৃষ্ট উপমা হলো "ঘটাকাশ"—
একটি ঘটের (হাঁড়ি) ভেতরের আকাশ এবং বাইরের আকাশ মূলত এক ও অভিন্ন। পার্থক্য কেবল ঘট বা পাত্রের নামমাত্র উপাধিতে।
যখন ঘটটি ভেঙে যায়, তখন ভিতরের ও বাইরের আকাশের মধ্যে কোনো ভেদ থাকে না।
ঠিক তেমনি ঘরের আলো ও বাইরের আলোও অভিন্ন, পার্থক্য কেবল বেষ্টনী ও নামকরণে।
সুতরাং বলা যায়, নিরাকার ব্রহ্মকেই মানুষ ভেদাভেদের দৃষ্টিতে সাকার রূপে কল্পনা করে, নাম ও উপাধির কারণে।
মূলত এই কল্পনা ব্রহ্মতত্ত্বকে সহজে অনুভব করার জন্য মনের উপায়, যা শেষ পর্যন্ত সত্যরূপে নিরাকার ব্রহ্মেই বিলীন হয়।
ঈশ্বর সাকার না নিরাকার?—অদ্বৈত দর্শনের আলোকে বিশ্লেষণ
অদ্বৈত বেদান্ত মতে, জীব ও ঈশ্বরের মধ্যে কোনো প্রকার ভেদ নেই। জীবই ঈশ্বর, কেবল মায়ার আবরণে ঢাকা পড়ে এই সত্য গোপিত হয়, ফলে মনে হয় ঈশ্বর ও জীব আলাদা। ছান্দোগ্য উপনিষদে বলা হয়েছে—
“সর্বং খল্বিদং ব্রহ্ম”, অর্থাৎ এই জগতে যা কিছু আছে, সবই ব্রহ্ম।
কঠ উপনিষদে বলা হয়েছে—
“মনসৈবেদমাপ্তব্যং নেহনানাস্তি কিঞ্চন।
মৃত্যোঃ সমৃত্যুংগচ্ছতি য ইহ নানেবপশ্যতি।।”
অর্থাৎ, ব্রহ্ম থেকে পৃথক কিছুই নেই—এই তত্ত্ব মন দ্বারাই উপলব্ধি করতে হয়। যে ব্যক্তি এই জগৎকে ব্রহ্ম থেকে ভিন্ন মনে করে, সে বারংবার জন্ম-মৃত্যুর চক্রে আবদ্ধ থাকে।
এই উপদেশ থেকেই বোঝা যায়— যদি মানুষ প্রতিটি সত্তায় ঈশ্বরকেই দর্শন করে, তবে হিংসা, বৈরিতা, অহংকার প্রভৃতি দূর হয়ে যেতে বাধ্য। কারণ, যাকে হিংসা করা হচ্ছে, সেও তো ব্রহ্ম! সুতরাং, ব্রহ্ম হলেন অজ্ঞেয়, অচিন্ত্য এবং অসীম। তাঁকে চক্ষু, কর্ণ, মন ইত্যাদি সীমিত ইন্দ্রিয় দ্বারা প্রত্যক্ষ করা যায় না।
ঈশ্বরের সাকার রূপ: কাল্পনিক না বাস্তব?
প্রশ্ন আসে—তবে ঈশ্বরের সাকার রূপের অর্থ কী?
ঈশ্বরের ধারণা মানুষের পাত্রভেদে আলাদা হয়। আমরা আমাদের জ্ঞান ও চিন্তার মধ্যে ঈশ্বরের বিভিন্ন রূপ কল্পনা করি। যদি কেউ বিশ্বাস করেন ঈশ্বর সাকার, তাহলে সাধনার মাধ্যমে তাঁকে দেখা সম্ভব বলে মনে করেন। এর ফলে, তাঁর মনে একটি শক্তিশালী বিশ্বাসভিত্তিক চিত্র তৈরি হয়।
মন ইন্দ্রিয়ের অধিপতি এবং বুদ্ধি মনেরও অধিপতি। এই বুদ্ধির নির্দেশেই ভক্তের মনে ঈশ্বরের সেই চিত্র আঁকা হয়। এরপর ভক্তের মন পঞ্চ-জ্ঞানেন্দ্রিয়কে (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহ্বা ও ত্বক) সক্রিয় করে। ভক্ত যে মায়াকে আত্মসাধনার মাধ্যমে বশীভূত করেছেন, সেই মায়া তাঁর ইন্দ্রিয়গুলির উপর প্রভাব বিস্তার করে, এবং সেই ইন্দ্রিয়-প্রভাবেই তিনি ঈশ্বরের সেই মায়াময় রূপ দর্শন করেন।
এইরূপ দর্শনের ফলে তাঁর চক্ষু হয়ে ওঠে দিব্য-চক্ষু। তবে এই সাকার রূপটি বাস্তবে মায়ার দ্বারা গঠিত, কারণ মায়া ক্ষণস্থায়ী, পরিবর্তনশীল। সেই জন্যেই বলা হয়, সাকার রূপ অস্থায়ী, এবং ঈশ্বর স্বরূপত নিরাকার।
জ্ঞানযোগীদের দৃষ্টিভঙ্গি
জ্ঞানযোগীরা ঈশ্বরকে সাধারণত জ্যোতি বা আলোকরূপে কল্পনা করেন, কিন্তু কখনোই তাঁকে দেহধারী, সাকার মূর্তিরূপে কল্পনা করেন না। তাঁদের মতে, যদি ঈশ্বরের দেহ থাকে, তবে তাঁর ইন্দ্রিয়, মন, বুদ্ধি ও চৈতন্য থাকবে। আর যদি মন থাকে, তবে থাকবে ইচ্ছা, রাগ, দ্বেষ, সুখ, দুঃখ ইত্যাদি মানসিক বৃত্তিও।
কিন্তু ঈশ্বর তো এসব দ্বন্দ্ববোধ ও গুণের ঊর্ধ্বে। কেননা, এই সকল গুণ থাকলে ঈশ্বর পক্ষপাতদুষ্ট হতেন এবং তাঁকেও নশ্বরের পর্যায়ে নামিয়ে আনা হতো। অথচ ঈশ্বর তো অবিনশ্বর, অনাদি এবং সর্বোচ্চ চেতন। তাই ঈশ্বরকে স্বরূপত সাকার ভাবা যায় না।
ব্রহ্ম কেন দুর্লভ?
যেহেতু ব্রহ্ম অব্যক্ত ও ইন্দ্রিয়াতীত, তাই তিনি সহজে প্রতক্ষ্য হন না। যদি ঈশ্বর খুবই সহজলভ্য হতেন, তবে তিনি সকলের পরম আরাধ্য হতেন না। তাঁর দুর্লভতা-ই তাঁকে শ্রেষ্ঠ করে তোলে।
উপসংহার
ব্রহ্ম বা ঈশ্বর প্রকৃত অর্থে অব্যক্ত, অরূপ এবং অনন্ত। তিনি সীমিত অনুভবযোগ্য বস্তু নন বলেই তাঁর উপলব্ধি দুর্লভ।
যদি ঈশ্বর সাধারণভাবে প্রত্যক্ষযোগ্য হতেন, তবে তিনি সকলের পরম আরাধ্য হয়ে উঠতেন না।
(বিঃ দ্রঃ- এটি আমার মৌলিক লেখা নয়, যেহেতু কয়েকজন অনুরোধ করেছেন তাই বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত বিভিন্ন ব্যক্তির লেখা থেকে সাহায্য নিয়েছি।)