পৃথিবী সৃষ্টির মূল কারণ ঈশ্বর নাকি প্রকৃতি
![]() |
সৃষ্টির মূল কারণ |
পৃথিবী সৃষ্টির আসল কাহিনী কি? জানতে হলে সনাতন ধর্ম মতে পৃথিবী সৃষ্টির তথ্য জানতে হবে আসুন জেনে নেই সেই তথ্য......
দু’রকমের মতবাদ রয়েছে সৃষ্টির কারণ সম্বন্ধে । একটি মত হচ্ছে যে, সৎ, চিৎ ও আনন্দময় পরমেশ্বর ভগবান থেকে এ জড়জগৎ গৌণভাবে সৃষ্ট এবং মুখ্যভাবে চিৎজগতের প্রকাশ, যা অনন্ত বৈকুন্ঠলোক এবং তাঁর স্বীয় ধাম গোলক বৃন্দাবন। পক্ষান্তরে, ভগবানের সৃষ্টির দুটি প্রকাশ- জড়-জগৎ ও নক্ষত্র ও ব্রহ্মান্ড রয়েছে, চিৎ-জগতেও তেমন গোলক, বৈকুণ্ঠ আদি অসংখ্য চিন্ময় লোক রয়েছে। পরমেশ্বর ভগবান জড়-জগৎ ও চিৎ-জগৎ উভয়েরই কারণ। অপর মতবাদটি হচ্ছে যে, এক অব্যক্ত অপ্রকাশ শূন্য থেকে সবকিছু সৃষ্টি হয়েছে। এই মতবাদটি সম্পূর্ণ অর্থহীন। বেদান্ত দার্শনিকেরা স্বীকার করেন প্রথম সাতটি এবং দ্বিতীয় মতবাদটি বেদান্ত সিদ্ধান্তের প্রতিপক্ষ হিসেবে পরিচিত 'সাংব্যস্মৃতি' নামক নাস্তিক্য দর্শন। জড়বিজ্ঞান-অনুসন্ধানকারী গবেষকগণ কোনো চৈতন্যময় সত্তাকে সৃষ্টির মূল কারণরূপে স্বীকার করেন না। এই নাস্তিক্যবাদী সাংখ্য চিন্তাবিদদের মতে, অসংখ্য জীবের মধ্যে প্রকাশিত জীবনীশক্তি ও চৈতন্য-লক্ষণ প্রকৃতিরই তিন গুণ (সত্ত্ব-রজস-তম) থেকে উদ্ভূত। তারা দাবি করেন যে চেতনা প্রকৃতিরই একটি গুণজাত বিশেষ বিকাশমাত্র, স্বতন্ত্র সত্তা নয়। এভাবেই সাংখ্য মতাবলম্বীরা সৃষ্টির কারণ সম্বন্ধে বেদান্ত সিদ্ধান্তের বিরোধী। বাস্তবিকপক্ষে, সমস্ত সৃষ্টির কারণ পরম পূর্ণ আত্মাই এবং তিনি শক্তি ও শক্তিমান উভয়রূপে সর্বদাই পূর্ণ। সমস্ত শক্তি যাঁর মধ্যে নিহিত রয়েছে, সেই পরম পুরুষের শক্তি থেকেই জড়জগতের সৃষ্টি। যেসমস্ত দার্শনিক বিশ্বসৃষ্টির কারণ সম্বন্ধে জল্পনা-কল্পনার দ্বারা এক-একটি মতবাদ সৃষ্টি করেন, তাঁরা কেবল জড় শক্তির চমৎকারিত্বই উপলব্ধি করেন। ভ্রান্তিবশত মনে করেন একধরনের দার্শনিকেরা যে, এ জগতের সমস্ত জীব জড়শক্তি থেকে উদ্ভূত। এতএব, পরম চৈতন্যময় পুরুষও নিশ্চয়ই জড় শক্তিসম্ভূত। জড় দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকেরা যেহেতু তাঁদের ভ্রান্ত ইন্দ্রিয়গুলো অত্যন্ত ব্যস্ত ইন্দ্রিয়গুলো নিয়ে , তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত করেন স্বাভাবিকভাবেই,নিশ্চয়ই জীবনীশক্তিও উদ্ভূত জড় পদার্থের সমস্বয়ের ফলে উদ্ভূত। তার ঠিক বিপরীত কিন্তু প্রকৃত তত্ত্বটি - জড় পদার্থ চেতনাশক্তি থেকে উদ্ভূত। ভগবদ্গীতায় বলা হয়েছে যে, পরম আত্মা পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন সমস্ত শক্তির উৎস। কেউ যখন দেশ ও কালের দ্বারা সীমিত বিষয়বস্তু অধ্যয়ন করে গবেষণা করে, তখন তিনি প্রকৃতির বৈচিত্র্য দর্শন করে বিস্ময়ান্বিত হন এবং স্বাভাবিকভাবেই স্বপ্নাবিষ্টের মতো আরোহ পন্থার গবেষণা করতে তৎপর হন। সেই পন্থার ঠিক বিপরীত হচ্ছে আবরোহ পন্থা। আর এই আবরোহ পন্থায় পরম পুরুষ ভগবানকে সর্ব কারণের পরম কারণরূপে জানা যায়; তাঁর মধ্যে অনন্ত শক্তি বর্তমান এবং তিনি নিরাকার নন, শূন্যও নন। তাঁর নির্বিশেষ প্রকাশ তাঁরই একটি শক্তির প্রকাশ। এতএব, জড়পদার্থ থেকে জড়জগৎ সৃষ্টি হয়েছে বলে যে মতবাদ, তা প্রকৃত সত্যের সম্পূর্ণ বিপরীত মতবাদ। অনন্ত শক্তিমান পরমেশ্বর ভগবানের দৃষ্টিপাত হচ্ছে জড় সৃষ্টির মূল কারণ। আমরা জানি,প্রকৃতি সর্বশক্তিমান থেকে প্রাপ্ত শক্তি লাভ করে জীবের জড় ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য দেশ-কালের অন্তর্গত জড়জগৎ নির্মাণ করেন। পক্ষান্তরে, পরমেশ্বর ভগবান তাঁর জড় শক্তির প্রকাশের দ্বারাই জড় দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক আদি বদ্ধজীবদের কাছে উপলব্ধ হন। শক্তির সঙ্গে শক্তিমানের সম্পর্ক হৃদয়ঙ্গম করতে না পারার ফলে, যিনি পরমেশ্বর ভগবানের ক্ষমতা এবং তাঁর বিভিন্ন শক্তি সম্বন্ধে অবগত নন, তাঁর বিচারে সর্বদাই ভ্রান্তির সম্ভাবনা থাকে এবং তাকে বলা হয় বিবর্ত। যতক্ষণ পর্যন্ত জড় দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিকেরা প্রকৃত সিদ্ধান্তে উপনীত না হচ্ছেন, ততক্ষণ তাঁরা অবশ্যই পরমতত্ত্ব সম্বন্ধে অজ্ঞতাবশত জড়জগতে ইতস্তত বিচরণ করতে থাকবেন। কপিল নিরীশ্বরের মতে, জড়াপ্রকৃতি নিত্য এবং সর্ব শক্তিশালী। চেতন বলতে কিছু নেই এবং জড়ের কোনো কারণ নেই। জড়প্রকৃতিই সমস্ত অস্তিত্বের মূল ভিত্তি। এটি সর্বত্র ব্যাপ্ত এবং সমস্ত কার্যকারণের উৎস। শ্রেষ্ঠ বৈষ্ণব দার্শনিক শ্রীল বলদেব বিদ্যাভূষণ তাঁর 'গোবিন্দ-ভাষ্য' গ্রন্থে বেদান্ত সূত্রের ব্যাখ্যায় জড়বাদী দর্শনের সমস্ত সিদ্ধান্তকে যুক্তিপূর্ণভাবে বিশ্লেষণ ও খণ্ডন করেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, সাংখ্য দর্শনের জগৎ সৃষ্টি সংক্রান্ত সমস্ত যুক্তি ভ্রান্ত। কারণ, সৃষ্টিতত্ত্বের তাদের প্রস্তাবিত কারণসমূহের অস্তিত্ব যখনই অযৌক্তিক প্রমাণিত হয়, তখন সমগ্র সাংখ্য দর্শনের ভিত্তিই ধ্বসে পড়ে। জড়বাদী চিন্তাবিদগণ 'প্রধান'-কে (প্রকৃতি) জগতের উপাদান কারণ ও নিমিত্ত কারণ উভয়ই বলে দাবি করেন। তাঁদের কাছে প্রধানই হচ্ছে সবরকম সৃষ্টির কারণ। সাধারণত তাঁরা মাটি ও মৃৎপাত্রের দৃষ্টান্ত দেন। মাটি হচ্ছে মৃৎপাত্রের কারণ, কিন্তু মাটি সর্বত্রই দেখা যায়। গাছ জড়, কিন্তু গাছ ফল উৎপাদন করে। জল জড়, কিন্তু জল গতিশীল। এভাবেই সাংখ্য দার্শনিকেরা বলেন যে, জড় পদার্থ গতি ও সৃষ্টির কারণ। এতএব, প্রধানই জগতের উপাদান ও নিমিত্ত কারণ। এই মতবাদ খন্ডন করার জন্য শ্রীল বলদেব বিদ্যাভূষণ প্রধানের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বলেছেন-অচেতন জড়া প্রকৃতি এবং তাই তা জগতের উপাদান বা নিমিত্ত কারণ হতে পারে না। জড় জগতের বিচিত্র রচনা ও আয়োজন স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রমাণ করে যে, সেই আয়োজনের পেছনে একজন চেতন পরিচালক রয়েছেন, কেননা চেতন পরিচালক ব্যতীত এরকম সুসংবদ্ধ আয়োজন সম্ভবপর নয়। চেতনের পরিচালনা ব্যতীত এই রচনা হতে পারে বলে অনুমান করা সঙ্গত নয়। আমাদের ব্যবহারিক অভিঙ্গতায় আমরা দেখতে পাই যে, নিজে নিজেই একটি প্রসাদ তৈরি করতে পারে না অচেতন ইটগুলো। স্বীকার করা যায় না মৃৎপাত্রের দৃষ্টান্তকে , কেননা একটি মৃৎপাত্রের সুখ ও দুঃখের অনুভূতি নেই।
এধরনের অনুভূতিগুলো জড়াতীত চেতনাপ্রসূত। সুতরাং, স্থুল দেহ অথবা মৃৎপাত্রের দৃষ্টান্ত এই সূত্রে যথাযথ নয়। কখনো কখনো জড় বৈজ্ঞানিকেরা বলে যে, মালীর সহায়তা ছাড়াই মাটি থেকে গাছ গজায়, কেননা সেটি হচ্ছে জড়ের স্বাভাবিক প্রবণতা। তারা এও বলে যে, জন্ম থেকে জীবের যে স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞান, তাও জড়। কিন্তু দেহচেতনা আদি স্বতঃস্ফূর্ত জ্ঞানকে স্বতন্ত্র বলে স্বীকার করা যায় না, কেননা তাহলে দেহে আত্মার অস্তিত্ব স্বীকার করতে হয়। প্রকৃতপক্ষে, গাছ অথবা জীবদেহের কোনো প্রবণতা বা স্বতঃপ্রজ্ঞা নেই; এই প্রবণতা ও স্বতঃপ্রজ্ঞার প্রকাশ হয় দেহে আত্মার উপস্থিতির ফলে। এ বিষয়ে একটি গাড়ি ও তার চালকের দৃষ্টান্ত দেওয়া যায়। গাড়িটি নিজে নিজে চলতে পারে না, যদিও এটি বাম বা ডানদিকে মোড় নিতে পারে—কিন্তু এই মোড় নেওয়াটা তখনই সম্ভব, যখন চালক গাড়িটিকে সেইভাবে পরিচালনা করে। জড় পদার্থের এই গাড়ির যেমন নিজের কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা বা স্বাধীন প্রজ্ঞা নেই, তেমনই গাছপালার বৃদ্ধি ও বিকাশও আত্মার প্রভাবে ঘটে,
শুধুমাত্র জড় পদার্থের প্রভাবে নয়। অনেক সময় কিছু মূর্খ লোক চালের স্তূপে বৃশ্চিক জন্ম নিতে দেখে মনে করে চাল থেকেই বৃশ্চিকের সৃষ্টি হয়। কিন্তু বাস্তব হলো—স্ত্রী বৃশ্চিক সেখানে ডিম পাড়ে এবং অনুকূল পরিবেশে সেই ডিম থেকেই শিশু বৃশ্চিক জন্ম নেয়। তাই এটিকে চালের স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি বলা একেবারেই ভুল। একইভাবে বিছানা থেকে ছারপোকা বের হতে দেখা গেলেও, তা মানে এই নয় যে বিছানাই ছারপোকার জন্মদাতা। প্রকৃতিতে বিভিন্ন প্রকার প্রাণীর জন্ম হয়—কেউ জরায়ুজ (গর্ভজাত), কেউ অন্তুজ (ডিমজাত), আবার কেউ স্বেদজ (আর্দ্র স্থান থেকে উদ্ভূত)। প্রত্যেকের জন্মের উপায় আলাদা হলেও, জড় বস্তু থেকেই জীবের উৎপত্তি হয়—এই ধারনাটি অমূলক ও ভুল। জড়বাদীরা অনেক সময় বলে, মাটি থেকেই গাছ জন্মায়, তাই জীবের উৎস জড় পদার্থ। কিন্তু উপরের উদাহরণগুলো এই যুক্তিকে খণ্ডন করে। বিশেষ পরিস্থিতিতে মাটি থেকে জীবের উদ্ভব ঘটলেও, সেই প্রক্রিয়ার পেছনে রয়েছে আত্মার কার্যকারিতা ও দৈব পরিচালনা। বৃহদারণ্যক উপনিষদের বর্ণনা অনুযায়ী, প্রতিটি জীব তার পূর্বজন্মের কর্ম অনুযায়ী এক একটি নির্দিষ্ট শরীর লাভ করে। সেই শরীরের বৈচিত্র্য আসে দৈব পরিচালনার মাধ্যমেই। তাই জীবের উৎপত্তি ও বিকাশ একান্তই চৈতন্যশক্তি ও আত্মার নিয়ন্ত্রণে ঘটে,যখন কেউ বলে, "আমি এই কাজটি করছি", তখন 'আমি' বলতে সে দেহকে বোঝায় না। এখানে 'আমি' বলতে বোঝানো হয় দেহের অন্তর্নিহিত আত্মাকে—যা দেহের বাইরের কোনো বস্তু নয়, আবার শুধুমাত্র শারীরিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও নয়। সেই কারণেই বলা যায়, দেহের নিজস্ব কোনো প্রবণতা বা জ্ঞান নেই; এগুলো সবই আত্মার বৈশিষ্ট্য, দেহ তার বাহ্যিক বাহনমাত্র। জড়বাদী বিজ্ঞানীরা অনেক সময় বলেন, নারী ও পুরুষ শরীরের প্রাকৃতিক আকর্ষণের ফলে মিলন ঘটে এবং তার মাধ্যমে সন্তান জন্মায়। কিন্তু সাংখ্য দর্শন অনুযায়ী, পুরুষ সর্বদা নিরপেক্ষ, অক্রিয় (অবিচলিত); তাহলে প্রশ্ন আসে—এই প্রজননের প্রবণতা বা কর্ম-প্রেরণা আসে কোথা থেকে? এখানেই আত্মার উপস্থিতি ও দৈব-চেতনার ভূমিকা অনস্বীকার্য। আবার অনেক সময় বলা হয়, দুধ নিজে নিজেই দধিতে পরিণত হয়, কিংবা বৃষ্টির জল মাটিতে পড়লে তা থেকে নানা ধরনের গাছপালা, ফুল-ফল এবং তাদের গন্ধ ও স্বাদ সৃষ্টি হয়। কিন্তু এসব উদাহরণও প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে। বৃহদারণ্যক উপনিষদ এই ধারণাগুলো খণ্ডন করে বলে, এই সবকিছুই উচ্চতর শক্তির পরিচালনায় সংঘটিত হয়। প্রকৃতপক্ষে, আত্মা তার পূর্বকৃত কর্মের ভিত্তিতে দৈব নির্দেশনায় এক একটি শরীরে প্রবেশ করে এবং সেই অনুযায়ী তার আচরণ ও প্রবণতা প্রকাশ পায়। এভাবে প্রতিটি জীব পুনঃপুন জন্ম গ্রহণ করে, নতুন শরীর লাভ করে এবং নতুন প্রবণতা নিয়ে নিজ কর্মফল ভোগ করতে থাকে। এই চক্র চলতে থাকে—আত্মা, দৈব ও কর্মের গভীর যোগসূত্রে।
ভগবদগীতাতেও (১৩/২২) প্রতিপন্ন হয়েছে-
পুরুষঃ প্রকৃতিস্থো হি ভুঙক্তে প্রকৃতিজান্ গুণান্।
কারণং গুণসঙ্গোহস্য সদসদযোনিজন্মসু।।
এই জড় জগতে জীব আত্মা প্রকৃতির তিনটি গুণ—সত্ত্ব, রজ ও তম—এর প্রভাবে ক্রমাগত পরিচালিত হয়। জড় প্রকৃতির সংস্পর্শে থাকার ফলেই আত্মা এসব গুণের প্রভাব অনুভব করে এবং সেই অনুযায়ী তার ভবিষ্যৎ জন্ম নির্ধারিত হয়। এভাবেই সে কখনও সৎ (উন্নত), কখনও অসৎ (অবনমিত) যোনিতে জন্মগ্রহণ করে।
আত্মা বিভিন্ন ধরনের শরীর গ্রহণ করে থাকে, যা তার পূর্বকৃত কর্ম এবং প্রকৃতির গুণের সংমিশ্রণের ফল। যেমন, যদি আত্মা বিভিন্ন প্রকার গাছের শরীর না লাভ করত, তবে পৃথিবীতে এত বৈচিত্র্যময় ফুল ও ফলের সৃষ্টি হতো না। প্রতিটি গাছ তার নিজস্ব প্রকৃতিগত বৈশিষ্ট্য অনুসারে নির্দিষ্ট ফুল ও ফল উৎপন্ন করে; এক প্রজাতির গাছ অন্য প্রজাতির ফল বা ফুল কখনোই উৎপাদন করে না। এই ন্যায় মানুষ, পশু, পাখি ও অন্যান্য জীবজগতে একেকটি শ্রেণিভাগ ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। এই জড় জগৎ নিজেই কোনো স্বতঃস্ফূর্ত সত্তা নয়—এটি পরমেশ্বর ভগবানের এক বিশেষ শক্তির প্রকাশ। যেমন মাকড়সা তার লালা দিয়ে জাল তৈরি করে এবং শেষে সেই জাল নিজের শরীরেই ফিরিয়ে নেয়, তেমনিভাবে শ্রীবিষ্ণু তাঁর চিন্ময় (আত্মসঞ্জাত) শক্তি দ্বারা এই জড়জগৎ সৃষ্টি করেন এবং সময়ান্তে তা নিজ দেহেই সংবরণ করে নেন। বৈদিক জ্ঞান এবং তত্ত্ব অনুসারে, সমস্ত প্রাচীন ঋষি ও মুনিরা এই মতেই একমত হয়েছেন যে, পরমেশ্বর ভগবানই হচ্ছেন আদি স্রষ্টা—এই জগতের সকল জড় ও চেতনের উৎস।
যেহেতু পৃথিবীতে আমরা আসছি অল্প সময়ের জন্য তাই সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখে আমাদের মানতে হবে যে সৃষ্টিকর্তাই আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং এই মহাবিশ্ব বা পৃথিবী তিনি সৃষ্টি করেছেন।