শনিদেবের ব্রতকথা | শ্রী শ্রী শনিদেবের পূজা ও মাহাত্ম্য
শনিদেবের ব্রতকথা বা শনিবারের ব্রতকথা হিন্দু ধর্মে একটি উপবাস ও পূজার প্রথা। এই ব্রত পালন করা হয় শনিদেবকে সন্তুষ্ট করার জন্য, যাতে তাঁর কৃপা পাওয়া যায়। শনিদেবকে ন্যায়ের দেবতা মনে করা হয় এবং মানুষের কর্মফল প্রদান করেন। অনেকেই তাঁর কোপ থেকে রক্ষা পেতে বা শনির অশুভ প্রভাব কাটাতে এই ব্রত পালন করেন।
ব্রতের নিয়ম -শনিবার সন্ধ্যায় বাইরে উঠানে এই ব্রত করেন। এখানে সত্যনারায়ণ পুজার মতো সিন্নি দেওয়া হয়। সারাদিন উপবাস থাকার পর সন্ধ্যায় শনিদেবের পূজা শেষে ব্রতকথা বলে নির্মাল্য প্রসাদ খাবেন।
ব্রতের উপকরণ- নীল বা কৃষ্ণবর্ণের ঘট, ফুল, কাপড়, লোহা, মাষ কলাই, কালো তিল, দুধ, গঙ্গাজল, এবং সরষের তেল এসব জিনিস শনিদেবের পুজোর জন্য লাগে। এই ব্রত পালনের সময় নির্জলা উপবাস বা একসময় একবারের খাবার খেয়ে পুজো করতে হয়। শ্রেষ্ঠ কিছু ফল যেমন পান, সুপারি, কালোপাড় ধূতি, লোহার আসন, অঙ্গুরীয়, মধুপর্কের বাটি, মাষকলাই, কালো তিল, নীল অপরাজিতা ফুল, মিষ্টান্ন, নৈবেদ্য, ধূপ, দীপ, সিন্নির জন্য আটা, দুগ্ধ, কলা, গুড়, বাতাসা, কালো মাটির ঘট বা লোহার ঘট, গঙ্গাজল, গঙ্গামাটি এবং কিছু ফুল ইত্যাদি।।
![]() |
শনিদেবের ব্রতকথা ও পূজা বিধি বাংলায় |
ব্রতের ফল-এই ব্রত করলে শনিদেব খুশি হন। জীবন থেকে সমস্যা, দুঃখ-বেদনা চলে যায় এবং সংসার শান্ত হয়। শনিদেবের দয়ার ফলে সব ধরনের গ্রহ সমস্যাও কাটিয়ে ওঠা যায়। পূজার কথা মাথায় রেখে, প্রথমে আচমন করবেন, তারপর গণেশসহ অন্যদের পূজা করবেন, এবং শেষে শনিদেবের ভাবনায় পূজা করবেন।
ধ্যান_সংস্কৃত মন্ত্র (বাংলা লিপিতে):
"ও সৌরাষ্ট্রং কাশ্যপং শূদ্রং সূর্যাস্যাং চতুরাসুলম্।
কৃষ্ণং কৃষ্ণাম্বরং গৃরগতং শৌরিং চতুর্ভুজম।
উদ্ববাণং শূলং ধনুর্হস্তং সমাহুয়েৎ।
যমাধিদৈবতং দেবং প্রজাপতি প্রত্যধিদৈবতম্।
পুজামন্ত্র-ও: ঐং হীং শ্রীং শনৈশ্চরায় নমঃ।"
প্রণাম মন্ত্র-ও নীলঞ্জনচয়ং প্রখ্যং রবিসূতঃ মহাগ্রহম্। ছায়ায়াং গর্ভসম্ভূতং বন্দে ভক্ত্যা শনৈশ্চরম্। অতঃপর নবগ্রহ, দশদিকপাল, ছায়া, সবর্ণা, কালী, শিব, যম ও প্রজাপতির পূজা করিয়া পরে শনির পূজা করিবেন। শেষে-ও গৃয়ায় নমঃ মন্ত্রে গৃহের পূজা করিবেন।
শনিদেব নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে ভয়ের একটু আবহ থাকলেও, মৎস্য পুরাণে তাঁকে ভালো গ্রহ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিভিন্ন পুরাণে শনি দেবতা সম্পর্কে কি বলা হয়েছে তা এখন জানবো;
শনিদেব সম্পর্কে স্কন্দ পুরাণঃ
স্কন্দ পুরাণের আবন্ত্য খণ্ডে বলা হয়েছে, শনি শিপ্রা ও ক্ষাতা নদীর মিলনস্থলে জন্মেছিলেন। সেখানে শনির জন্মের একটা চিত্তাকর্ষক কাহিনীও আছে: শনি জন্ম নাতেই ত্রিলোক আক্রমণ করে বসল এবং রোহিণীকে পেরিয়ে গেল। পুরো ব্রহ্মাণ্ড টেনশন হয়ে গেল। ইন্দ্র মুশকিলে পড়লেন, তাই ব্রহ্মার কাছে ছুটলেন সাহায্য চাইতে। ব্রহ্মা সূর্যের কাছে গিয়ে শনিকে সামলাতে বললেন। কিন্তু তখনই শনির দৃষ্টিতে সূর্যের দুই পা পুড়ে গেছে। কিছুই করতে না পেরে, সূর্য ব্রহ্মার কাছে ফিরে গিয়ে শনিকে সামলাতে বললেন।
ব্রহ্মা তখন বিষ্ণুর কাছে গেলেন, কিন্তু তিনি নিজেও বলতে পারলেন না। তাই তারা দুজনে শিবের কাছে গিয়ে হাজির হলেন। শিব শনিকে ডাকলেন। শনি বাধ্য ছেলের মতো মাথাটি নিচু করে নিচু মাথায় শিবের কাছে এলেন। শিব তাকে অত্যাচার না করার জন্য বললেন। তখন শনি শিবকে বললেন তাঁকে কীভাবে খাবার, পানীয় ও থাকার জায়গা দেবে তা সামলাতে। শিব তখন ঠিক করলেন—শনি মেষ রাশিতে তিরিশ মাস কাটিয়ে মানুষের পেছনে লাগবে। আর অষ্টম, চতুর্থ, দ্বিতীয়, দ্বাদশ ও জন্মরাশিতে থাকলে সবসময় বিরূপ হবে। কিন্তু তৃতীয়, ষষ্ঠ বা একাদশ স্থানে গেলে মানুষকে সহায়তা করবে, তখন তার পূজা হবে। পঞ্চম বা নবম স্থানে গেলে তিনি উদাসীন থাকবেন।এছাড়া, অন্যান্য গ্রহগুলোর তুলনায় তিনি বেশি পূজা পাবেন। পৃথিবীতে স্থির গতির জন্য তাঁর নাম হবে স্থাবর এবং মন্দ গতির জন্য শনৈশ্চর। তাঁর রং হবে হাতির বা মহাদেবের গলার মতো। চোখ থাকবে নিচের দিকে। তিনি সন্তুষ্ট হলে লোকদের রাজ্য দেবেন এবং অসন্তুষ্ট হলে তাদের প্রাণ নেবেন। যার উপর শনির দৃষ্টি পড়বে, সে দেবতা হোক বা দৈত্য, সবাইকে বিপদে পড়তে হবে। এই কথা বলে শিব তাঁকে মহাকালবনে থাকার নির্দেশ দিলেন।
শনিদেব সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণঃ
ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে গণেশের জন্মের কাহিনী শুনে অনেকেই জানেন যে শনির সঙ্গে এর যোগ আছে। তবে সেটা উল্লেখ না করলে পুরো গল্পই অসম্পূর্ণ থাকবে। পুরাণ অনুযায়ী, শনি আগে কুদৃষ্টি নিয়ে জন্মাননি; আসলে তাঁর স্ত্রীর অভিশাপই এর কারণ। একদিন শনি ধ্যান করছিলেন, তখন তাঁর স্ত্রী সুন্দরী বেশে এসে সঙ্গমের অনুরোধ করলেন। কিন্তু ধ্যানে মগ্ন শনি স্ত্রীর দিকে একবারও ফিরে তাকালেন না। এতে হতাশ হয়ে শনি পাণী তাকে অভিশাপ দিলেন, “তুমি আমাকে দেখলে না, এখন থেকে যার দিকে তাকাবে, সে ভস্ম হয়ে যাবে।”
পরে গণেশের জন্ম হয়। সকল দেবতার সঙ্গে শনি গণেশকে দেখতে যান। কিন্তু স্ত্রীর অভিশাপ মনে করে তিনি গণেশের মুখের দিকে তাকাননি। পার্বতী তার অদ্ভুত আচরণের কারণ জিজ্ঞাসা করলে শনি অভিশাপের কাহিনী বলেন। কিন্তু পার্বতী তা মানতে পারেননি। তিনি বারবার অনুরোধ করতে থাকলেন। শেষে শনি কেবল আড়চোখে একবার গণেশের দিকে তাকালে, তাতেই গণেশের মাথা তার শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
শনিদেব সম্পর্কে কালিকা পুরাণঃ
কালিকা পুরাণে শনির ধ্যানমন্ত্রে এমন লেখা আছে:
ইন্দ্রনীলনিভঃ শূলী বরদো গৃধ্রবাহনঃ।
পাশবাণাসনধরো ধ্যাতব্যোহর্কসুতঃ।।
সতীর মৃত্যুতে মহাদেব খুব কেঁদেছিলেন, আর তাঁর চোখ থেকে প্রচুর জল বের হচ্ছিল। এই জল যদি পৃথিবীতে পড়ে, তাহলে সেখানকার সব কিছু পুড়ে যেত। তাই দেবতারা শনি থেকে জল নিতে বলেন। কিন্তু শনি ঠিকমতো জল ধরে রাখতে পারেননি, যার পর তিনি সেই জল জলধার নামক পর্বতে ফেলে দেন। পরে সেই জল বৈতরণী নদী হয়ে প্রবাহিত হয়।
শনিদেব সম্পর্কে কৃত্তিবাসী রামায়ণ:
কৃত্তিবাসী রামায়ণে রাজা দশরথ ও শনির দেখা হওয়ার একটি কাহিনী আছে। কৃত্তিবাস এটি স্কন্দ পুরাণের নাগর ও প্রভাস খণ্ড থেকে নিয়েছেন, কিন্তু একটু ভিন্ন ভাবে। পুরাণ অনুযায়ী, অযোধ্যার জ্যোতিষীরা দশরথকে জানালেন যে, শনিগ্রহ খুব শীঘ্রই রোহিণীকে ভেদ করবে, ফলে রাজ্যে বারো বছর ধরে প্রচণ্ড অনাবৃষ্টি হবে। শুনে, রাজা ইন্দ্রের দেওয়া রথে চড়ে শনি কে ধরতে ছুটলেন। সূর্য ও চন্দ্রের পথ পেরিয়ে নক্ষত্রমণ্ডলে শনি র কাছে গিয়ে রাজা বললেন, “তুমি রোহিণীর পথ ত্যাগ কর, নইলে আমি তোমাকে মারব।” দশরথের এই সাহস দেখে শনি কিছুটা হতবাক হলেন।
ব্রতকথা- এক ব্রাহ্মণ ছিল, নাম শ্রীহরি। সে সবসময় ভিক্ষা করে খেত। দিনে রাতে কৃষ্ণের নাম নিতো। মনে মনে সে সবসময় খুশি ছিল, কিন্তু পেটে তেমন খাবার ছিল না। একসময় তার একটা ছেলে হল। ছেলেকে দেখে ব্রাহ্মণের মন খারাপ হয়ে গেল। ভিক্ষা করে যে সন্তানকে পালন করছে, তার জন্য নাম রাখল সুমঙ্গল। ছেলেটা খুব মেধাবী ছিল, সবাই তাকে নিয়ে কথা বলত। সেদিনের মধ্যে শিশুটা সবকিছু শিখে ফেলল। শাস্ত্র বিষয়ে আলোচনা করে সে জ্ঞানী হয়ে উঠল। তখন সবাই তাকে পণ্ডিত বলে চিনত। কিন্তু মনে মনে সুমঙ্গল হরিকে ডাকত। একসময় সে মাতা-পিতাকে ছেড়ে চলে গেল। এক স্থানে গিয়ে শুনতে লাগল। তার পিতামাতা আর নেই, পরলোকে চলে গিয়েছে। অবশেষে গয়াধামে এলাম। বিষ্ণুপাদপদ্মে পয়সা দিতে গেলাম। সময়ের কারণে যা ঘটল, তা কে জানে। শনির নজরে পড়ল দ্বিজের কপাল। ভ্রমণ করতে করতে দূরে চলে গেল। শেষে দিবর্ত নগরে পৌঁছাল। রাজার দরবারে। সেখান গিয়ে দেখল রাজা তাকে স্বাগত জানাল। একে একে দ্বিজ নিজের পরিচয় দিল। বলল, 'আমার নাম সুমঙ্গল। খুব দুঃখী, মা-বাবা নেই। দেশের বাইরে থাকি।' শ্রীবৎস রাজা বলল, 'চিন্তা কোরো না। আমার পাশে থাকো, আমার উপকার করো।' পণ্ডিত তুমি তো বুঝতে পারো। শাস্ত্র পড়ে সভার সবাইকে খুশি করো। দুই ছেলে আছে আমার, শুনো ব্রাহ্মণ। আমি সেখানে পড়াচ্ছি তাদের। রাজার কথায় ব্রাহ্মণ খুশি হলো। রাজা তাদের জন্য আশ্রয় দিল। দুই রাজপুত্রকে ব্রাহ্মণ খুব যত্নে পড়ায়। প্রতিদিনই ব্রাহ্মণ রাজকুমারদের পড়ায়। এরকম কিছুদিন পরে, শনির আগমন হলো। ব্রাহ্মণ শনিকে জিজ্ঞাসা করল, 'তুমি এখানে কেন এসেছ?' শনি বলল, 'আমি এসেছি শাস্ত্র পড়ার জন্য।' ব্রাহ্মণ বলল, 'আমি তোমায় যত্ন করে পড়াব।' কিছুদিন পরেই শনি দক্ষ হয়ে উঠল।
সুমঙ্গল শনিদেবের পরিচয় জানতে চাইল। তখন শনি বললেন, “আর কীই-বা পরিচয় দিব? আমার নাম শনৈশ্চর, আমি সূর্যদেবের পুত্র। হে সুমঙ্গল! তুমি যখন আমার দর্শনে এসেছ, তাহলে বলো—তোমার দুঃখ কীভাবে দূর হবে? তোমার চোখে আমার প্রতি কটাক্ষ রয়েছে, তবুও বলো, কিভাবে তুমি আমার অনুকূল হতে পারো?” শনি আবার বললেন, "তোমার ভোগকাল এখনো ছয় মাস বাকি। এই সময়ের মধ্যে দশ দণ্ড দূরেও তুমি আমার কাছাকাছি আসতে পারবে না। তবে এক কাজ করো—সপ্তম দিনে গঙ্গার তীরে, অর্থাৎ ভাগীরথীর পারে গিয়ে, মনোযোগ দিয়ে কোনো ব্রাহ্মণকে সঙ্গে নিয়ে ভজনা কর মুরারির—ভগবান শ্রীহরির। এই কথা বলে শনিদেব অন্তর্ধান হয়ে গেলেন। আর সুমঙ্গল তার দেখা আর পেল না। শনি আজ্ঞামতে দ্বিজ গেল ভাগীরথীর তীরে, নিশ্চিন্ত মনে নারায়ণ ভজে ধ্যানে স্থির হয়ে। দশ দণ্ড পূর্ণ হতেই মনে করল চিন্তা, দণ্ড পূর্ণ, এবার তবে উঠি করিয়া কৃতজ্ঞতা। উঠে দাঁড়িয়ে দ্বিজ কহে, "জয় হোক শ্রীহরি", কিন্তু ঠিক দশ দণ্ড পূর্ণ তখনও হয় নি। তার আগেই দ্বিজ ঘরে ফিরিল, কিছু না বুঝিয়া, সেই দেখে শনিদেব রুষ্ট হইল অন্তরিয়া। ক্রোধে দুই রাজপুত্রে হরণ করিল শনি, তারপর মায়াবলে শিশু মূর্তি করিল গড়নি। ত্বরায় সেই শিশু মূর্তি দিল দ্বিজের হাতে, সেইরূপ খেলা করে ভাগ্য শনের সাতে। চক্ষু বুঝিয়া দ্বিজ ভাবে কোলে শ্রীহরি, ভক্তিভাবে রাখে দুই শিশুমূর্তি তার উরু উপরি। এদিকে রাজা দেখেন ভয়ঙ্কর এক দুঃস্বপ্ন, উঠেই পুত্রসহ বন্ধু লয়ে যায় গঙ্গাতীরে দ্রুত। দেখে দ্বিজের কোলেতে দুই মূষল পুত্র, বেদনাতে কাঁদে রাজা, পড়ে ধূলায় মুখপাত্র। রাজাদেশে দূতগণ ধরিল সেই দ্বিজেরে, শৃঙ্খলে বেঁধে রাখে কারাগারের ঘের। কারাগারে বসে দ্বিজ কাঁদেন নিরুপায়, ডাকে হৃদয় ভরে, “হে মধুসূদন, দাও আশ্রয়!” ঠিক তখনই ঘটে এক অদ্ভুত কাহিনী, দশ দণ্ড পূর্ণ হলো—শনি রাখে বিধিনি। যেখানে শোকে কাতর রাজা দিচ্ছিলেন হাঁসি-ধ্বনি, সেইখানে দুই রাজপুত্র ফিরল, যেন জীবন্ত দিব্য রত্নিনী! রাজা জিজ্ঞাসে, “কোথায় ছিলে হে হৃদয়ের ধন?” পুত্র বলে, “বাবা, শয্যাপরেই ছিলাম, গিয়েছিল না কখন।” এই কথা শুনে রাজা চমকিয়া উঠে দাঁড়ায়, কিছুই যেন বোঝে না—মনে দ্বন্দ্বের ছায়া ছায়। তখন মনে পড়ে সেই বন্দী ব্রাহ্মণের কথা, “না বুঝে তারে দিয়েছি কষ্ট, করেছি ব্যথা।” রাজাজ্ঞায় দূত পাঠায়, আনে দ্বিজকে কারাগার হতে, দেখে—জীর্ণ, শীর্ণ সেই মহাজন কাঁদে প্রভুর স্মৃতিতে।
বিনয়ী হয়ে রাজা তার স্তুতি করেন। সব ভুল ক্ষমা করো, মহামানব। তুমি কৃপা করে আমার সন্দেহ দূর করো। তোমার পদে যে আমি মাথা নুইয়েছি। দ্বিজ বলে, মহাশয় আমি কিছুই জানি না। শনি কোণের কষ্ট আমি এটাই মানি। রাজা বলে, যদি তোমার দেখা পাই, তাহলে শনি আমার পূজার জায়গায়। দ্বিজ এই কথা শুনে বেরিয়ে পড়ে। শনির কাছে গিয়ে সব কিছু নিবেদন করে। শুনে শনিদেব আসলেন। শনির দিকে দেখে রাজা প্রণাম করলেন। রাজা বলেন, প্রভু, আপনি এলেন, কৃপা করে কিছু বলুন। শনি বলেন, শুনো রাজা, তোমার পূজা কেমন হবে তা বলছি।
শুদ্ধ মনে আমি আমার পূজা করব। মনের সঙ্গে একান্তে। নীল বস্তু ও কৃষ্ণতিল তেল দেব। মোধ আর মাষকলাই সংগ্রহ করবো। কৃষ্ণবর্ণের একটি হাঁড়ি তৈরি করবো। পঞ্চজাতি ফল ও ফুল দিয়ে পূজা করব। এই হলো আমার পূজার নিয়ম। মনে রেখো, ভক্তিই আসল বিষয়। পূজা শেষে ভক্তির সঙ্গে প্রণাম করবে। নবগ্রহ ডোত্র পাঠ করে আমার নাম বলব। প্রসাদ খেতে ভুলবেন না। আমার কথা আছে, সব পাপ দূরে যাবে। যারা অবিশ্বাসে প্রসাদ খাবে, খুব একটা দেরি হবে না, তারা শমনপুরে যাবে। আমার পুজায় যেভাবে অদরকার হয়, সত্যি কষ্ট পেতে হয়। তারপর বলি, শনিদেব তো নেই। কিন্তু আমি ভক্তি দিয়ে শনির পুজা করি। প্রতি শনিবার পুজা করি আর ভিলম্ব করি। ধর্মীয় রীতি মানলে অনেক কিছু মেটানো সম্ভব। সুমঙ্গল রাজপাশে গিয়ে ঠিক করে ফিরি। এইভাবে শনিদেবের পুজা হয়। যার যা সামর্থ্য, সে তাই দেয়। শনির কাহিনী তো অনেক কথা, তবে কিছু বলা হলো। সাদা শনির প্রাসাদে যারা ভাবনা রাখে, বিপদ থেকে মুক্তি পায়। নিয়মিত পূজা করলে বিপদ দূরে থাকে। শনির প্রতি নমন করলে, রাজা-প্রজা সবাই সম্মান দেয়। স্কন্দপুরাণ বলছে, সব কথাই সত্য। তাই আর এই গ্রন্থে শেষ করছি। ভাই, বল হরি হরি!
-অথ শনিদেবের ব্রতকথা সমাপ্ত