সন্তানকে কৃষ্ণভক্ত করবেন কেন ?

সন্তানকে কৃষ্ণভক্ত কৃষ্ণের প্রতি ভক্তি ও প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে, যা আত্মিক, নৈতিক ও মানসিক বিকাশের জন্য সহায়ক হতে পারে।

১. নৈতিক ও চারিত্রিক গুণাবলি গঠন

কৃষ্ণভক্তি শিশুকে সততা, দয়া, ক্ষমাশীলতা, ধৈর্য ও বিনয় শেখায়। গীতার শিক্ষা অনুসারে কৃষ্ণভক্ত ব্যক্তি সত্যনিষ্ঠ, অহংকারহীন ও আত্মনিয়ন্ত্রণে সক্ষম হয়ে ওঠে।

২. মানসিক শান্তি ও স্থিরতা

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি চর্চার মাধ্যমে শিশুদের মনে আধ্যাত্মিক শান্তি ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। সংকট বা দুঃখেও তারা ধৈর্য ধরতে শেখে এবং ভয় কমে যায়।

৩. কর্মফল ও দায়িত্ববোধের শিক্ষা

ভগবদ্‌গীতার শিক্ষা অনুসারে, "কর্ম কর, কিন্তু ফলের আশায় নয়"—এই নীতি শিশুকে দায়িত্ববান ও পরিশ্রমী করে তোলে।

সন্তানকে কৃষ্ণভক্ত করবেন কেন ? hd
 সন্তানকে কৃষ্ণভক্ত করবেন কেন ?

৪. আসক্তি থেকে মুক্তি ও আত্মনিয়ন্ত্রণ

কৃষ্ণভক্তি চর্চার মাধ্যমে শিশুরা মোহ, লোভ ও অহংকার থেকে দূরে থেকে সংযমী জীবনযাপন শিখতে পারে।

৫. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সার্বজনীনতা

শ্রীকৃষ্ণের শিক্ষা সর্বজনীন, যা জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি প্রেম ও মৈত্রীর বার্তা দেয়। ফলে সন্তান মানবিক ও উদার মনের অধিকারী হয়।

৬. সংগীত ও সংস্কৃতির সাথে সংযোগ

কীর্তন, ভজন ও গীতাপাঠের মাধ্যমে শিশুদের সৃজনশীলতা বাড়ে এবং তারা সনাতন সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হয়।

৭. প্রকৃত সুখ ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান

কৃষ্ণভক্তি শিশুকে শিখায় যে প্রকৃত সুখ বাইরের জিনিসে নয়, ভগবানের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনেই নিহিত। এতে তারা জীবনের গভীর অর্থ বুঝতে শেখে।

৮. পরিবারে শুভ ও পবিত্র পরিবেশ সৃষ্টি

যদি সন্তান কৃষ্ণভক্ত হয়, তবে পরিবারের পরিবেশও শান্ত ও কল্যাণময় হয়ে ওঠে। এতে পারস্পরিক ভালোবাসা ও সম্মান বৃদ্ধি পায়।

কলিকালে অতি সুখলাভে উৎসাহী মানুষেরা কখনোই কৃষ্ণ সেবা করার কথা চিন্তা না করে নিজের ও সন্তানদের কথা ভাবে। 

পিতা-মাতার চিরন্তন উদ্বেগ ও ভাবনা — সন্তানকে ঘিরে কিছু সাধারণ প্রশ্ন


পিতা-মাতারা সারাজীবন সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা রকম ভাবনায় বিভোর থাকেন। তাঁদের চিন্তা-চেতনার কিছু সাধারণ রূপ নিচে তুলে ধরা হলো:


▪️ আমার সন্তান কি ভালো চাকরি বা ব্যবসা করে জীবনে উন্নতি করতে পারবে?

▪️ সে কি একটি সুস্থ, সুশীল ও উপযুক্ত পরিবারে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে?

▪️ বার্ধক্যে আমার ভরণ-পোষণের দায়িত্ব কি সে নেবে?

▪️ আমার মৃত্যুর পর সে কি যথাযথভাবে শ্রাদ্ধাদি ও পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পাদন করবে?

▪️ সে কি আদৌ এই গুরুদায়িত্ব পালনের অধিকার রাখে বা উপযুক্ত?

▪️ সন্তান কি কোনো ভাবে আমার জীবনের ক্ষতি বা সর্বনাশ ডেকে আনবে না তো?

▪️  আমি কীভাবে এই পার্থিব দায় থেকে মুক্তি পাব? কোথায় আমার নিস্কৃতি?

এই সমস্ত অভক্তিময় মায়াচিন্তা যা শুভ নয় । কিন্তু একটিবার কেউ কি চিন্তা করেন যে, আমার এই সন্তানটি ভগদ্বামেযেতে তার কি কি করা উচিত বা সেই বিষয়ে আমি তাকে কতটুকু সাহায্য সহযোগিতা করছি। 

সন্তানকে কৃষ্ণজ্ঞান দেওয়া উচিত কিনা?

আমরা দেখি যে, কোন পরিবারের মধ্যে একজন যদি ভক্ত হয় , তবে পরিবারের অন্যান্যরা কিংবা ঐ স্থানের লোকেরা স্বাভাবিকভাবে ভক্তি অনুশীলনের অনুপ্রেরণা পেয়ে থাকে ।

কিভাবে কৃষ্ণভক্ত করবেন?

শ্রীকৃষ্ণের লীলাকথা ও মহাভারতের শিক্ষামূলক গল্প বলুন।

ভগবদ্‌গীতা ও শ্রীমদ্ভাগবত পাঠে উৎসাহ দিন।

কৃষ্ণের ভজন ও কীর্তনে অংশ নিতে দিন।

মন্দির পরিদর্শন ও সাধু-সঙ্গের সুযোগ করে দিন।

কৃষ্ণের প্রসাদ ভোজন ও নিরামিষ আহার গ্রহণে উৎসাহ দিন।

শিশুদের সৎ ও নৈতিক জীবনযাপনের শিক্ষা দিন।

সন্তানকে কৃষ্ণজ্ঞান দান; আবার এর বিপরীতও লক্ষ করা যায় যে, একজন ভক্ত হলেই পরিবারেরঅন্য সবাই ভক্ত হয়ে যাবে এরকম কোনও নিশ্চয়তা নেই । কেননা একই পরিবারভুক্ত হলেও প্রত্যেকের চেতনা , সঙ্গ প্রভাব , শিক্ষা মনোভাব একই রকমের হয় না । কখনও কখনও একমুখী মানসিকতা যেমন হতে পারে , আবার বিপরীতমুখী মানসিকতাও হতে পারে। যেমন,

▪️অসুর বংশে পুত্ৰ প্ৰহ্লাদ ছিলেন মহান ভক্ত । কিন্তু তার পিতা হিরণ্যকশিপু প্ৰচণ্ড ভক্তিবিরোধী ।

▪️যখন কোনও পরিবারের কোন কোন সদস্য মনস্থ করেন যে , আমরা কৃষ্ণভক্তি অনুশীলন করে শুদ্ধ জীবনযাপন করব , তাতে আমাদের ঐহিক এবং পারমাৰ্থিক নিত্য কল্যাণ সাধিত হবে । কিন্তু যখন পরিবারের অন্যান্য সদস্য ও পাড়াপড়শিরা দেখতে পান যে, কেউ আর নেশা করে না, জুয়া, তাস কিংবা লুডুর মতো বাজে আসক্তিতে জড়ায় না, নিরামিষ আহার গ্রহণ করে, গল্প-গুজব, সিনেমা বা ভোগবিলাসে আগ্রহী নয়—বরং সে ভক্তিসাধনায় মনোনিবেশ করেছে, হরিনাম জপ করে, গলায় তুলসীর মালা পরে, কপালে তিলক পরিধান করে, গীতা ও ভাগবত পাঠে সময় দেয়—তখন তারা তাকে অকারণে উপহাস করতে থাকে, যেন সে কোনো উন্মাদ ব্যক্তি। আরও দুঃখজনক হলো, তখন তারা অতীতের কোনো তুচ্ছ ভুল কিংবা জন্ম, জাত, পেশা এসব টেনে এনে তার চরিত্রহানি করার চেষ্টা করে। যদি বর্তমানে ভক্তটি কখনও সামান্য কোনো ভুলও করে ফেলে, তবে তা নিয়ে চারদিকে হাসাহাসি শুরু হয়.সবাই বলে, “দেখো! এই-তো সেই ভক্ত, এটা করেছে, ওটা করেছে। ছিঃ! ছিঃ!▪️অতএব একজন ভক্ত হলে অন্যান্যরা যে ভক্তি অনুশীলনে অনুপ্ৰাণিত হবে , তা ঠিক নয় । তবুও ভক্ত সবকিছু সহ্য করে অন্যদের ভক্তিপস্থায় আনার চেষ্টা করেন ।কারণ ভক্ত বোঝেন জড় জাগতিক লোকেরা যতই উন্নত ধনী হোক না কেন , তার জীবন বৃথা । জড় জগৎ অনিত্য , জীবন ক্ষণিক , জাগতিক বৈভবও ক্ষণস্থায়ী কিন্তু কৃষ্ণভক্তি নিত্য শাশ্বত ।

▪️শ্রীকৃষ্ণ গীতায় বলেন (গীতা ৮/১৫):

"মামউপেত্য পুনর্জন্মদুঃখালয়ম অশাশ্বতম -ন অপ্নুবন্তি মহাত্মানঃসংসিদ্ধিং পরামগতাঃ।"

অর্থাৎ:

"মহাত্মা বা শুদ্ধ ভক্তরা যখন আমাকে (ভগবৎস্বরূপ) লাভ করেন, তখন আর তারা এই দুঃখে ভরা, অনিত্য জগতের পুনর্জন্মে ফিরে আসেন না। কারণ, আমার সান্নিধ্যই তাঁদের পরম সিদ্ধি।

পরিশেষে এ কথাটি বলতে চাই,সন্তানকে কৃষ্ণভক্ত করলে সে শুধু ধর্মীয়ভাবে নয়, মানবিকভাবেও উন্নত চরিত্রের অধিকারী হবে। তার জীবন হবে সুশৃঙ্খল, শান্তিপূর্ণ ও সুখী। কৃষ্ণভক্তি কেবল আধ্যাত্মিক অনুশীলন নয়, এটি মানবজীবনের পরিপূর্ণতা অর্জনের পথও বটে।আপনাদের প্রিয় সন্তান দেরকে সুশিক্ষিত করার পাশাপাশি স্বশিক্ষিত তথা কৃষ্ণ জ্ঞানে জ্ঞানান্বিত করুন। তাহলেই আপনি ও আপনার সন্তান উভয় পরকাল এবং ইহকালের জন্য মঙ্গলময় হয়ে উঠবেন। 

Comments

  1. ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট লেখার জন্য

    ReplyDelete

Post a Comment