হরি নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য: হরি নামের গুরুত্ব ও প্রভাব
হরি শব্দের অর্থ ও মাহাত্ম্য: কেন বলা হয় ‘হরি বল’?
‘হরি’ শব্দের অর্থ ‘হরি’ (সংস্কৃত: हरि) হিন্দু ধর্মে ভগবান বিষ্ণুর একটি পবিত্র নাম। বেদে ‘হরি’ মানে হলো সেই পরম সত্ত্বা, যিনি অন্ধকার, মায়া এবং দুঃখ দূর করেন। ‘হরি’ শব্দের মূল অর্থ হচ্ছে ‘হরণকারী’, মানে যিনি আমাদের জন্ম-মৃত্যু, বার্ধক্য, রোগ এবং দুঃখ থেকে মুক্তি দেন।
![]() |
হরি নামের অর্থ ও মাহাত্ম্য |
হরি বল বা হরি বোল কেন বলা হয়?
‘হরি বল’ এর মানে হচ্ছে সবাইকে ‘হরি’ নাম নিতে বলা। বিশেষ করে মৃত্যুর সময় বা শবযাত্রায় এটি বলা হয়, যেন আমরা মনে রাখতে পারি যে এই দেহ সাময়িক। এই জীবনকে সার্থক করতে হরিনামের কীর্তন করা উচিত। কারণ, হরি নাম শুধুমাত্র শব্দ নয়, এটি আত্মার মুক্তির পথ।
অনেক বছর আগে, এই পৃথিবী ছিল খুবই ব্যস্ত আর অস্থির। মানুষ নানা কাজে মগ্ন ছিল, কিন্তু কেউই সত্যিই খুশি ছিল না। লোভ, হিংসা আর ঝামেলায় ভরা এক কঠিন সময় ছিল। মানুষ ভগবানকে ভুলে যাচ্ছিল, ঈশ্বরের ভালোবাসা হারিয়ে যাচ্ছিল। স্বর্গে বসে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই পরিস্থিতি দেখে ভাবলেন, “মানুষ তো আমার কাছে ফিরতে পারছে না, তাহলে আমি তাদের কাছে চলে আসি। আমি এমন কিছু দেব, যা সবার জন্য সহজ আর আনন্দের হবে।” তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন—তিনি নতুন রূপে আসবেন, ভক্ত হিসেবে, যেখানে তিনি নিজেই ভগবানের প্রেমে মগ্ন থাকবেন।
এক চাঁদনী পূর্ণিমা রাতে...
১৪৮৬ সালে নবদ্বীপ নামে এক পবিত্র শহরে, যখন সবাই গঙ্গায় স্নান করে “হরি! হরি!” বলছিল, তখন জন্ম নিল এক বিশেষ শিশু—বিশ্বম্ভর। তাকে নীমাই বলে ডাকতো, কারণ তার জন্ম হয়েছিল একটি নিমগাছের নিচে। ছোটবেলাতেই নীমাই খুব বুদ্ধিমান ছিল, কিন্তু বড় হয়ে সে বুঝতে পারল—এই জ্ঞান নয়, ঈশ্বরপ্রেমই জীবনযাপনের আসল লক্ষ্য। তখন সে সব কিছু ছেড়ে দিয়ে একজন ভক্ত হয়ে উঠল। তার নতুন নাম হল—শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু।
হরি নামের মাহাত্ম্য: দেবর্ষি নারদের অভিজ্ঞতা
একদিন দেবর্ষি নারদ ভাবলেন — আমি সারাক্ষণ ‘হরি নাম’ করি, কিন্তু এ নামের মাহাত্ম্য কী? সত্যিই কি কিছু হয়? তিনি ব্রহ্মার কাছে গেলেন। ব্রহ্মা বললেন, “আমি বলতে পারব না, কারণ বললেই এটা কম হবে।” পরে নারদ মহাদেবের কাছে গেলেন। তিনিও একই কথা বললেন। শেষে তিনি শ্রীনারায়ণের কাছে গেলেন। নারায়ণ বললেন, “আমি তোমাকে উত্তর দেব, তবে আগে যমালয় ঘুরে এসো।”
যমালয়ে হরি নামের প্রভাব
নারদ যমালয়ে পৌঁছলে, যমরাজ অবাক হয়ে তাকে অভিবাদন জানালেন। নারদ বললেন কেন এসেছেন। যমরাজ বললেন, “যেতে পারো, কিন্তু ‘হরি নাম’ উচ্চারণ করবে না।” নারদ রাজি হলেন। তারা বিভিন্ন দরজা ঘুরে দক্ষিণ দরজায় গেলেন। সেখানে ভয়ঙ্কর দৃশ্য ছিল — পাপীদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। এই দৃশ্য দেখে নারদের মুখ থেকে বেরিয়ে আসল — “হরি হরি!” অবাক কাণ্ড! পাপীরা সঙ্গে সঙ্গে মুক্তি পেল। যমরাজ বললেন, “দেবর্ষি, আপনি হরি নাম করছেন কেন? এতে তো সব পাপী মুক্তি পাচ্ছে!” নারদ হাসলেন এবং বললেন, “এতদিনে আমি আমার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছি।”
হরি নামের শক্তি ও উপকারিতা
একবার ‘হরি’ নাম উচ্চারণেই যদি একজন চরম পাপী মুক্তি পায়, তাহলে যদি কেউ প্রতিদিন ভক্তি ও শ্রদ্ধা নিয়ে হরি নাম জপ করে বা কীর্তনে অংশ নেয়, তার জীবন কত মহান হতে পারে — সেটা ভাবা যায় না।
TABLE OF CONTENT
- হরি শব্দের অর্থ
- হরি বল কেন বলা হয়
- হরি নামের মাহাত্ম্য
- হরিনাম কীর্তনের উপকারিতা
- মৃত্যুর সময় হরি বল বলার কারণ
- হিন্দু ধর্মে হরি নামের গুরুত্ব
- হরি নাম শুনে পাপ মুক্তি
হরি শব্দের অর্থ
- হরি = "যিনি হরণ করেন"
- মায়া, দুঃখ, পাপ ও অন্ধকার চিরতরে দূর করেন
- ভক্তকে পরম গতি প্রদান করেন
‘হরি বল’ কথাটির তাৎপর্য
- সকলকে হরি নাম স্মরণ করার আহ্বান
- মৃত্যুর সময় বলা হয় — এই দেহ ক্ষণস্থায়ী
- হরিনাম কীর্তনই আত্মার পরম মুক্তির পথ
নারদ মুনির প্রশ্ন
- “হরি নাম করলে কী হয়?”
- ব্রহ্মা ও মহাদেব উত্তর দিতে পারলেন না
- নারায়ণ বললেন — "যাও, যমালয় ঘুরে এসো"
যমালয়ে কী ঘটলো?
- দক্ষিণ দরজায় পাপীদের কঠোর শাস্তি
- নারদ মুখে বলে উঠলেন — “হরি হরি”
- সাথে সাথে সব পাপী বৈকুণ্ঠে চলে গেল!
হরি নামের অসীম শক্তি
- একবার নাম শুনেই পাপী মুক্তি পায়
- নিয়মিত জপ করলে মেলে আত্মিক শান্তি ও মোক্ষ
- হরিনাম = পরম ভক্তি + মুক্তির নিশ্চয়তা
কেন হরি নাম করা উচিত?
- পাপ মোচন
- মানসিক শান্তি
- ভক্তি বিকাশ
- ঈশ্বরের সান্নিধ্য লাভ
- জন্ম-মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্তি
শেষ কথা:
‘হরি বল’ শুধু ধর্মীয় বাক্য নয় — এটি মুক্তির আহ্বান। হরিনাম শুধু মুখে বলার জন্য নয়, এটি হৃদয়ে ধারণ করার জন্য। একবার হলেও এই নামের গুরুত্ব অনুভব করুন — হরি নামের সঙ্গে আছে মুক্তির আশীর্বাদ।