শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর? হিন্দু ধর্মে শ্রীকৃষ্ণের অবস্থান ও মহিমা
শ্রীকৃষ্ণ হিন্দু সংস্কৃতিতে খুব পরিচিত আর সম্মানিত এক নাম, তিনি বিষ্ণুর রূপ বলে সবাই জানে। অনেক হিন্দু মনে করে, কৃষ্ণ শুধু বিষ্ণুর রূপ না, তিনি নিজেই সব থেকে বড় ঈশ্বর। গীতায় কৃষ্ণ নিজের মুখে বলেছেন তিনি আসল সত্য আর সব ক্ষমতার মালিক, তিনি নাকি সব কিছুর শুরু আর সব কিছু তার থেকে এসেছে। যারা বিষ্ণুকে মানে, বিশেষ করে গৌড়ীয় সম্প্রদায়ে, তারা কৃষ্ণকে সবচেয়ে বড় ভগবান মানে, আর অন্য সব রূপকে তার অংশ বলে। কৃষ্ণের জীবন আর তার কথাগুলো, যা মহাভারত আর গীতায় আছে, তা অনেক মানুষের জীবনে আলোর পথ দেখায় আর ভাল শিক্ষা দেয়।
![]() |
শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর |
কেউ কেউ কৃষ্ণকে শুধু একজন জ্ঞানী লোক বা বড় শিক্ষক মনে করে, তবে যারা হিন্দু, তাদের কাছে তিনি ঈশ্বরের মতো আর তাদের ভক্তির কেন্দ্র। তাই, কৃষ্ণ ভগবান কিনা, এটা আসলে নির্ভর করে কে কিভাবে বিশ্বাস করে, ধর্মের প্রতি তার কেমন ধারণা, আর সে আধ্যাত্মিক দিক থেকে কতটা বোঝে তার ওপর।
শ্রীকৃষ্ণ কি ঈশ্বর
এই ধাঁধার উত্তর পেতে হলে আমাদের ধর্মীয় বইগুলোর নানা পথঘাট ঘুরে দেখতে হবে। তাই একটু সময় নিয়ে এই লেখাটা পড়তে থাকুন। আশা করি এই লেখাটি পড়লে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আর মাথা হেঁট করতে হবে না। কাজেই আর্য সমাজ ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে আপনার সম্মান বাড়বে, এটা হলফ করে বলা যায়। প্রতিটি সনাতনী এই বিষয়ে কথা উঠলে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলতে পারবেন যে শ্রীকৃষ্ণই ভগবান। আজকাল কিছু বোকা মানুষ শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান মানতে চায় না, এমনকি কিছু বোকা হিন্দুও শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান মানে না, গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে ভগবান বলেছেন, সেটাও তারা বিশ্বাস করে না। তারা বলে যে গীতা নাকি শ্রীকৃষ্ণের কথা নয়, কোনো ধর্মীয় বইয়ে নাকি শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান বলা হয়নি এইসব মনগড়া ও পাগলের মতো কথা বলে তারা। এইসব কথা বলে তারা বোঝাতে চায় যে--- "শ্রীকৃষ্ণ ভগবান নন"। নিচে গীতা ও পুরাণ ছাড়া আর কোন বইয়ে শ্রীকৃষ্ণকে "ভগবান" বলা হয়েছে, সেই বিষয়ে আলোচনা করা হলো: ভগবান হলেন "সব ক্ষমতার মালিক"। তিনি যেমন একদিকে নিরাকার, তেমনই তিনি অন্যদিকে সাকারও। "তবে ভগবান আসলে সাকার" এর অনেক প্রমাণ প্রাচীন বইগুলোতে আছে। হিন্দুদের নানা ধর্মীয় বইয়ে শ্রীকৃষ্ণকে "ভগবান" বলা হয়েছে। পবিত্র বেদে যিনি "বিষ্ণু/নারায়ণ" নামে পরিচিত, তিনিই হলেন "শ্রীকৃষ্ণ"। শ্রীবিষ্ণু ও শ্রীকৃষ্ণ আলাদা কেউ নন। শ্রীবিষ্ণু নিজেই শ্রীকৃষ্ণের রূপে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। যেসব ধর্মীয় বইয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান বলা হয়েছে, সেগুলো হলো ঋগ্বেদ, মহাভারত (পঞ্চম বেদ), ব্রহ্মসংহিতা। এই বইগুলো ছাড়াও "শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত" নামের বইয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান বলা হয়েছে। যদিও শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত বইটিতে কিছু ভুল থাকতে পারে।
এই ধাঁধার উত্তর পেতে হলে আমাদের ধর্মীয় বইগুলোর নানা পথঘাট ঘুরে দেখতে হবে। তাই একটু সময় নিয়ে এই লেখাটা পড়তে থাকুন। আশা করি এই লেখাটি পড়লে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের আর মাথা হেঁট করতে হবে না। কাজেই আর্য সমাজ ও ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কাছে আপনার সম্মান বাড়বে, এটা হলফ করে বলা যায়। প্রতিটি সনাতনী এই বিষয়ে কথা উঠলে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে বলতে পারবেন যে শ্রীকৃষ্ণই ভগবান। আজকাল কিছু বোকা মানুষ শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান মানতে চায় না, এমনকি কিছু বোকা হিন্দুও শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান মানে না, গীতায় শ্রীকৃষ্ণ নিজেকে ভগবান বলেছেন, সেটাও তারা বিশ্বাস করে না। তারা বলে যে গীতা নাকি শ্রীকৃষ্ণের কথা নয়, কোনো ধর্মীয় বইয়ে নাকি শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান বলা হয়নি এইসব মনগড়া ও পাগলের মতো কথা বলে তারা। এইসব কথা বলে তারা বোঝাতে চায় যে--- "শ্রীকৃষ্ণ ভগবান নন"। নিচে গীতা ও পুরাণ ছাড়া আর কোন বইয়ে শ্রীকৃষ্ণকে "ভগবান" বলা হয়েছে, সেই বিষয়ে আলোচনা করা হলো: ভগবান হলেন "সব ক্ষমতার মালিক"। তিনি যেমন একদিকে নিরাকার, তেমনই তিনি অন্যদিকে সাকারও। "তবে ভগবান আসলে সাকার" এর অনেক প্রমাণ প্রাচীন বইগুলোতে আছে। হিন্দুদের নানা ধর্মীয় বইয়ে শ্রীকৃষ্ণকে "ভগবান" বলা হয়েছে। পবিত্র বেদে যিনি "বিষ্ণু/নারায়ণ" নামে পরিচিত, তিনিই হলেন "শ্রীকৃষ্ণ"। শ্রীবিষ্ণু ও শ্রীকৃষ্ণ আলাদা কেউ নন। শ্রীবিষ্ণু নিজেই শ্রীকৃষ্ণের রূপে এই পৃথিবীতে এসেছিলেন। যেসব ধর্মীয় বইয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান বলা হয়েছে, সেগুলো হলো ঋগ্বেদ, মহাভারত (পঞ্চম বেদ), ব্রহ্মসংহিতা। এই বইগুলো ছাড়াও "শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত" নামের বইয়ে শ্রীকৃষ্ণকে ভগবান বলা হয়েছে। যদিও শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত বইটিতে কিছু ভুল থাকতে পারে।
তবে সেই গ্রন্থে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর নিজের ভাষ্যে যা বলা হয়েছে, তা ছাড়া অন্য কোনো বক্তব্যকে একেবারে নিঃসন্দেহে সঠিক বলা বেশ কঠিন।
(১) ঋগ্বেদ ১/২২/১৭:
মূল মন্ত্র:
ইদং বিষ্ণুর্বিচক্রমে ত্রেধা নিদধে পদম্।
সমূলহনস্য পাংসুরে।।
বিশ্লেষণ:
ইদং — এই
বিষ্ণু — পরমেশ্বর ভগবান শ্রীবিষ্ণু
র্বি — বিবিধভাবে
চক্রমে — গঠন বা বিস্তার করিয়েছেন
ত্রেধা — তিনভাবে / তিন রূপে
নিদধে — প্রতিষ্ঠা বা ধারণ করেছেন
পদম্ — পা বা পদচিহ্ন
স — তিনি
অস্য — এই (জগতের)
পাংসুরে — ধূলিকণাপূর্ণ স্থানে
অনুবাদ (পুনর্লিখিত):
শ্রীবিষ্ণু এই জগতকে তিনভাবে বিবিধ রূপে বিস্তার করেছেন এবং তাঁর ধূলিকণাপূর্ণ পদচিহ্ন দ্বারা এই জগৎকে ধারণ ও প্রতিষ্ঠা করেছেন।
(২) ঋগ্বেদ ১/২২/২০-এ বলা হয়েছে:
"ওঁতদ্বিষ্ণোঃপরমংপদংসদাপশ্যন্তিসূরয়ঃ। দিবীবচক্ষুরাততম্।।"
এই মন্ত্রে ‘পদ’ শব্দটি ‘পা’ নয়, বরং ‘স্থান’ বা ‘চূড়ান্ত অবস্থান’ বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, ধার্মিক ও জ্ঞানী ব্যক্তিরা তাদের ‘দিব্য চক্ষু’ দ্বারা সর্বদা শ্রীবিষ্ণুর সেই ‘পরম পদ’ বা সর্বোচ্চ অবস্থান দর্শন করে থাকেন, যেটি সূর্যের আলোর মতো দিব্য ও উজ্জ্বলভাবে প্রকাশিত। এ থেকে বোঝা যায়, শ্রীবিষ্ণুর পরম পদ বা চরম অবস্থা শুধু বাহ্য চোখে নয়, অন্তর্দৃষ্টি বা আধ্যাত্মিক জ্ঞানের মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়।
মহাভারতের (৬/৬৫/৬–৭) শ্লোকে বর্ণিত হয়েছে:
যে পরমতত্ত্ব অতীতে, বর্তমান ও ভবিষ্যতে একইরূপে বিরাজমান, যিনি ত্রিভুবনের প্রভু এবং ব্রহ্ম নামেও পরিচিত, সেই পরমেশ্বর শ্রীবিষ্ণুই বিশ্ব কল্যাণের জন্য মানবরূপে অবতরণ করেন। ব্রহ্মা নিজে তাঁকে পৃথিবীতে আগমনের জন্য আহ্বান করেন যাতে তিনি অসুর ও অধর্মকে বিনাশ করে পৃথিবীকে শান্তি দেন। পরবর্তী শ্লোকে (মহাভারত ৬/৬৫/৮) ব্রহ্মা শ্রীবিষ্ণুকে বলেন, "আপনি মনুষ্যলোকে গমন করুন এবং 'বাসুদেব' নামে প্রসিদ্ধ হোন", যার দ্বারা বোঝানো হয়েছে শ্রীবিষ্ণুই শ্রীকৃষ্ণরূপে অবতরণ করবেন। এই বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, জগৎপতি শ্রীবিষ্ণু নিজেই শ্রীকৃষ্ণরূপে পৃথিবীতে অবতরণ করেছিলেন এবং তিনিই হলেন পরমেশ্বর ভগবান।
তাৎপর্য:
ঋগ্বেদ ও মহাভারতের এই শ্লোকগুলির মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, শ্রীবিষ্ণুর পরম অবস্থানই পরমেশ্বরত্বের প্রতীক, এবং সেই পরমেশ্বর শ্রীবিষ্ণুই শ্রীকৃষ্ণরূপে মর্ত্যে অবতরণ করেন। অতএব, শ্রীকৃষ্ণ কেবল একজন অবতার নন, তিনি স্বয়ং পরমেশ্বর, যিনি যুগে যুগে ধর্ম প্রতিষ্ঠা ও অধর্মের নাশের জন্য অবতরণ করেন।
(৩) মহাভারত ৬/৬৫/১৩-এ বলা হয়েছে:
"তস্যাহমগ্রজঃ পুত্রঃ সর্বস্য জগতঃ প্রভুঃ।
বাসুদেবোহর্চ্চনীয়ো বঃ সর্বলোকমহেশ্বরঃ।।"
এই শ্লোকে ব্রহ্মা নিজে বলেন, "আমি সেই সর্বজগতের প্রভু নারায়ণের জ্যেষ্ঠপুত্র। অতএব বাসুদেব (অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ)–ই সর্বলোকের মহেশ্বর এবং তিনিই পূজনীয়।"
তাৎপর্য:
এই উক্তিতে ব্রহ্মা নিজেকে নারায়ণের জ্যেষ্ঠপুত্র বলে উল্লেখ করেছেন। কারণ, হিন্দু শাস্ত্রমতে, দেবতা ও অসুরদের মধ্যে প্রথম সৃষ্ট সত্তা হলেন ব্রহ্মা, যিনি শ্রীবিষ্ণুর নাভিপদ্ম থেকে উদ্ভূত। শ্রীবিষ্ণুই সর্বপ্রথম তাঁকে সৃষ্টি করেন এবং তারপর তাঁর মাধ্যমে সৃষ্টি করেন সমগ্র জগৎ ও বিশ্বব্রহ্মাণ্ড। এ থেকেই বোঝা যায়, ব্রহ্মা সৃষ্টির উৎস নন—তাঁরও উৎস হলেন পরমেশ্বর শ্রীবিষ্ণু। এই শ্লোকে ব্রহ্মা যেহেতু শ্রীকৃষ্ণকেই "বাসুদেব", "সর্বলোকমহেশ্বর" এবং "অর্চনীয়" (পূজনীয়) হিসেবে উল্লেখ করেছেন, তাই এ থেকে স্পষ্ট হয়—শ্রীকৃষ্ণই সর্বজগতের একমাত্র প্রভু। এই বক্তব্যের সমর্থনে গীতার শ্রীকৃষ্ণের নিজস্ব ঘোষণাও গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে তিনি বলেন (গীতা ৫/২৯ ও ৯/১১): তিনি সর্বভূতের এবং সর্বলোকের মহেশ্বর।
সারাংশে, মহাভারত ও গীতার বক্তব্য অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ শুধুমাত্র একজন মহাপুরুষ বা অবতার নন, তিনি হলেন সর্বজগতের স্বামী, জগদীশ্বর—স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান। তাঁরই ইচ্ছায় সৃষ্টি, পালন ও লয় ঘটে, এবং তিনি একমাত্র পূজ্য ও অর্চনীয় সত্তা।
(৪) মহাভারত ৬/৬৫/১৪–১৫-এ বলা হয়েছে:
"তথা মনুষ্যোহয়মিতি কদাচিৎ সুরসত্তমাঃ।
নাবজ্ঞেয়ো মহাবীর্য্যঃ শঙ্খচক্রগদাধরঃ।।
এতৎ পরমকং গুহ্যমেতৎ পরমকং পদম্।
এতৎ পরমকং ব্রহ্ম এতৎ পরমকং যশঃ।।"
অনুবাদ:
হে দেবশ্রেষ্ঠগণ! কখনও এই চিন্তা করো না যে, “ইনি তো একজন সাধারণ মানুষ।” কারণ যিনি শঙ্খ, চক্র ও গদা ধারণ করেন, যিনি পরম বীর এবং অসীম শক্তিধর—তাঁকে কখনো অবজ্ঞা করো না। তিনি স্বয়ং নারায়ণ। ইনি পরম গোপনীয় সত্তা, পরম পদ, পরম ব্রহ্ম এবং পরম যশস্বী।
তাৎপর্য:
এই শ্লোকগুলোয় মহাভারত স্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, শ্রীকৃষ্ণকে কেবল একজন সাধারণ মানুষরূপে দেখা এক মারাত্মক ভুল। তিনি শঙ্খ, চক্র ও গদাধারী নারায়ণ স্বয়ং—যিনি অসীম শক্তির অধিকারী, যাঁর প্রকৃত স্বরূপ সাধারন চোখে ধরা পড়ে না। তিনি গোপনীয় কারণ তাঁর পরমতত্ত্ব উপলব্ধি করা সহজ নয়। তাঁকেই বলা হয়েছে পরম পদ (চূড়ান্ত গন্তব্য), পরম ব্রহ্ম (চরম সত্য), এবং পরম যশ (সর্বোচ্চ গৌরবের আধার)। এই শ্লোকের মাধ্যমে মহাভারত সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করে—শ্রীকৃষ্ণ শুধু এক মহাপুরুষ নন, তিনি পরম ব্রহ্ম, পরমেশ্বর, যাঁর মধ্যে ঈশ্বরত্বের সকল গুণ বিদ্যমান। তাই তাঁকে অবজ্ঞা করা মানে ঈশ্বরকে অস্বীকার করা।
সারকথা, যিনি মানবরূপে দেখা দেন, তিনিই প্রকৃত পরমেশ্বর। শ্রীকৃষ্ণের মানবলীলা যেন আমাদের বিভ্রান্ত না করে, কারণ সেই লীলার অন্তরালে আছেন স্বয়ং নারায়ণ, যিনি পরম গোপন তত্ত্ব, পরম সত্য এবং পরম গৌরবের আধার।
(৫) মহাভারত ৬/৬৫/১৮–১৯-এ বলা হয়েছে:
"তস্মাৎ সেন্দ্রৈঃ সুবৈঃ সর্বৈর্লোকৈশ্চামিতবিক্রমঃ।
নাবজ্ঞেয়ো বাসুদেবো মানুষোহয়মিতি প্রভুঃ।।
যশ্চ মানুষমাত্রোহয়মিতি ব্রূয়াৎ স মন্দধীঃ।
হৃষীকেশমবিজ্ঞানাত্তমাহুঃ পুরুষাধমম্।।"
অনুবাদ:
অতএব, ইন্দ্রসহ সকল দেবতা, সূর্য, বায়ু ও অন্যান্য লোকের উচিত নয়—শ্রীবাসুদেব (শ্রীকৃষ্ণ) কে সাধারণ মানুষ মনে করে অবজ্ঞা করা। কারণ তিনি অমিত শক্তিসম্পন্ন, জগদীশ্বর। আর যে ব্যক্তি অজ্ঞতা ও কূপমণ্ডূক জ্ঞান থেকে তাঁকে শুধুই মানুষ বলে মনে করে, সে মন্দবুদ্ধিসম্পন্ন, এবং সমাজ তাকে "পুরুষদের মধ্যেও অধম" বলে গণ্য করে।
তাৎপর্য:
এই শ্লোকগুলির মাধ্যমে মহাভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ সত্য তুলে ধরছে—শ্রীকৃষ্ণের মানবরূপ দেখে কেউ যেন তাঁকে হেয় না করে। তিনি কেবল একজন মানবসন্তান নন, বরং সর্বলোকের অধীশ্বর, হৃষীকেশ (ইন্দ্রিয়ের ঈশ্বর), যাঁর বিক্রম ও মহিমা অসীম। ইন্দ্রের মতো দেবতাদেরও উচিত তাঁকে যথাযথ সম্মান ও পূজা করা, কারণ তিনি স্বয়ং নারায়ণ। যে ব্যক্তি অজ্ঞতাবশত শ্রীকৃষ্ণকে কেবল একজন মানুষ বলে মনে করে, সে নিজের মূঢ়তা ও সংকীর্ণ বোধের পরিচয় দেয়। শাস্ত্র স্পষ্টভাবে জানায়—এমন ব্যক্তি "পুরুষাধম", অর্থাৎ নিকৃষ্ট মানুষের মর্যাদা পায়।
সারকথা, শ্রীকৃষ্ণের বাহ্যিক মানবরূপের অন্তরালে যিনি আছেন, তিনি পরমেশ্বর। তাঁকে অবজ্ঞা করা মানে ঈশ্বরতত্ত্বকে অস্বীকার করা। তাই জ্ঞানী ব্যক্তির দায়িত্ব—শ্রীকৃষ্ণকে যথাযথ ভক্তি, শ্রদ্ধা ও উপলব্ধির সঙ্গে পূজা করা, কারণ তিনি সর্বসত্তার একমাত্র নিয়ন্তা ও পালনকর্তা।
(৬) মহাভারত ১২/৪৬/১০৬-এ বলা হয়েছে:
"সারথ্যমর্জুনস্যাজৌ কূর্ব্বনু গীতামৃতং দদৌ।
লোকত্রয়োপকারায় তস্মৈ ব্রহ্মাত্মনে নমঃ।।"
অনুবাদ:
যিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে অর্জুনের সারথি রূপে অবস্থান করে, সমগ্র ত্রিভুবনের কল্যাণের জন্য তাঁকে "গীতামৃত" দান করেছিলেন—আমি সেই পরম ব্রহ্ম স্বরূপ শ্রীকৃষ্ণকে নমস্কার জানাই।
তাৎপর্য:
এই শ্লোকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি সরাসরি শ্রীকৃষ্ণকে "পরম ব্রহ্ম" বলে ঘোষণা করছে। এখানে উল্লেখ আছে—শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের সারথি হয়েও কেবল যুদ্ধ পরিচালনায় সহায়তা করেননি, বরং সমগ্র লোকত্রয়ের (তিনটি জগতের) উপকারার্থে অর্জুনকে উপদেশ দিয়ে ভগবদ্গীতা প্রদান করেন। আর সেই গীতা কেবল যুদ্ধসংক্রান্ত কথাবার্তা নয়—তা চিরন্তন আত্মজ্ঞান, কর্মযোগ, ভক্তিযোগ ও সর্বোচ্চ আধ্যাত্মিক সত্যের অপূর্ব সংকলন।
এখানে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো, যিনি অর্জুনের সারথি রূপে সাধারণ মানুষের মতো কাজ করলেন, তিনি কেবল মানুষ নন—তিনি পরমাত্মা, পরম ব্রহ্ম, স্বয়ং ভগবান। তাই কেউ যদি বলে—“শ্রীকৃষ্ণ কেবল একজন যোগযুক্ত মানুষ ছিলেন” বা “তিনি ঈশ্বর নন”—তাহলে তারা শাস্ত্রের মূল বাণীকে অস্বীকার করছে। এই শ্লোক স্পষ্টভাবে বলে দেয়, গীতার বক্তা শ্রীকৃষ্ণই সর্বোচ্চ ঈশ্বর।
সারকথা, যিনি সারথি হয়ে থেকেও গীতার মতো শাশ্বত ও বিশ্বজনীন জ্ঞান প্রদান করেছেন, তিনিই পরম ব্রহ্ম। শ্রীকৃষ্ণের এই ভূমিকা সাধারণ নয়—এটি ঈশ্বরীয়। সুতরাং, শ্রীকৃষ্ণ কেবল একজন ঐতিহাসিক পুরুষ নন, তিনি স্বয়ং পরমেশ্বর ভগবান।
মহাভারতের একটা অংশে বেশ জোর দিয়ে বলা হয়েছে, কুরুক্ষেত্র নামের এক জায়গায় অর্জুনের রথের চালক ছিলেন যিনি, তিনিই অর্জুনকে গীতার আসল জ্ঞান দিয়েছিলেন। তিনিই নাকি সব থেকে বড় ঈশ্বর। যদি আমরা এটা বিশ্বাস করি, তাহলে বলা যায় শ্রীকৃষ্ণ শুধু একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন—এটা ভুল। কারণ, যদি শ্রীকৃষ্ণ ভগবান না হয়ে শুধু একজন ভালো যোগী হতেন, তাহলে মহাভারতের মতো বইতে এটা লেখা থাকত না। আমাদের পুরনো বইগুলো তো আর মিথ্যে কথা বলে না। যদি শ্রীকৃষ্ণ সাধারণ কেউ হতেন, তাহলে এই কথাটা মিথ্যে হয়ে যেত যে, অর্জুনের রথের চালকই গীতা শুনিয়েছিলেন আর তিনিই ভগবান। কিন্তু "যাকে দেখা যায় না" এমন ঈশ্বর তো আর যুদ্ধক্ষেত্রে রথ চালাতে আসেননি। রথ চালিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। তাই এটা একদম পরিষ্কার যে, গীতার জ্ঞান দিয়েছিলেন শ্রীকৃষ্ণ নিজেই, আর তিনি শুধু জ্ঞানী বা যোগী নন, তিনিই সব থেকে বড় ভগবান। কেউ যদি বলে "শ্রীকৃষ্ণ যোগ করে গীতা বলেছিলেন", সেটাও ভুল। কারণ, শ্লোকে বলা আছে, যিনি গীতা দিয়েছেন, তিনিই "ব্রহ্ম", মানে স্বয়ং ঈশ্বর। তাই শ্রীকৃষ্ণই যে গীতার জ্ঞান দিয়েছেন এবং তিনিই পরম ব্রহ্ম, এটা একদম সত্যি। নিরাকার ঈশ্বর নিশ্চয়ই যুদ্ধে অর্জুনের সারথি হননি। যুদ্ধে অর্জুনের সারথি ছিলেন শ্রীকৃষ্ণই। তাই এই শ্লোক থেকে স্পষ্ট প্রমাণ হয়—শ্রীকৃষ্ণই পরম ব্রহ্ম, শ্রীকৃষ্ণই ঈশ্বর। তিনি কোনো সাধারণ মানুষ নন।
(৭) মহাভারত ১২/৪৬/১১৮-এ বলা হয়েছে:
"ত্বং হি কর্ত্তা হৃষীকেশ! সংহর্ত্তা চাপরাজিতঃ।
নহিপশ্যামি তেভাবং দিব্যংহি ত্রিষুবর্ত্মসু।।"
অনুবাদ:
হে হৃষীকেশ (শ্রীকৃষ্ণ)! আপনি এই জগতের সৃষ্টি ও সংরক্ষণকারী, সর্বদা অপরাজিত। দুঃখের কথা, আমি জ্ঞান, কর্ম ও ভক্তি—এই তিনটি পথে আপনার ঐশ্বরিক রূপটি দেখতে পারি না।
(৮) মহাভারত ১২/৪৬/১১৯-এ বলা হয়েছে:
"তচ্চ পশ্যামি তত্ত্বেন যত্তপ রূপং সনাতনম্।
দিবং তে শিরসা ব্যাপ্তং পদ্ভ্যাং দেবী বসুন্ধরা।
বিক্রমেণ ত্রয়ো লোকাঃ পুরুষোহসি সনাতনঃ।"
অনুবাদ:
হে নারায়ণ (শ্রীকৃষ্ণ)! গুরুের উপদেশে আমি আপনার সেই চিরন্তন ও মহৎ রূপটি বুঝতে পারি—যেখানে আপনার মস্তকে আছেন স্বর্গলোক, পদ্মপদে বিস্তৃত ভূমি তথা পৃথিবী, এবং আপনার শক্তিতে বিস্তৃত তিনি লোকের সমগ্র বিশ্ব। তাই আপনি হলেন সনাতন বিরাট পুরুষ।
(৯) মহাভারত ১২/৪৬/১২৩-এ বলা হয়েছে:
"একোহপি কৃষ্ণস্য কৃতপ্রণামো দশাশ্বমেধাবভূথেন তুল্যঃ।
দশাশ্বমেধী পুনরেতি জন্ম কৃষ্ণপ্রণামী ন পুনর্ভবায়।।"
অনুবাদ:
শুধুমাত্র একবার শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করলেই তা দশটি অশ্বমেধ যজ্ঞ সমপরিমাণ ফল দেয়। দশজন অশ্বমেধ যজ্ঞকারীকে পুনর্জন্ম নিতে হয়, কিন্তু যিনি শ্রীকৃষ্ণকে প্রণাম করেন, তাকে পুনর্জন্ম নিতে হয় না।
(১০) মহাভারত ১২/৪৬/১২৬-এ বলা হয়েছে:
"নমো ব্রহ্মণ্যদেবায় গোব্রাহ্মণহিতায় চ।
জগদ্ধিতায় কৃষ্ণায় গোবিন্দায় নমো নমঃ।।"
অনুবাদ:
ব্রাহ্মণদের আরাধ্য দেবতা নারায়ণ, গো ও ব্রাহ্মণদের কল্যাণকর্তা এবং সমগ্র জগতের কল্যাণসাধক কৃষ্ণ—গোবিন্দকে আমি বারবার নমস্কার করি।
(১১) মহাভারত ১৪/৬৭/৮-৯-এ বলা হয়েছে:
"বিশ্বকর্ম্মন্! নমস্তেহস্তু বিশ্বাত্মন্! বিশ্বসত্তম!।
তথা ত্বামভিজানামি যথা চাহং ভবান্ মতঃ।।
ত্বত্তেজঃসম্ভবো নিত্যং হুতাশো মধুসূদন।
রতিঃ ক্রীড়াময়ী তুভ্যং মায়া তে রোদসী বিভো!।।"
অনুবাদ:
হে বিশ্বকর্ম্মন! হে বিশ্বাত্মা! হে বিশ্বসর্বশ্রেষ্ঠ! তোমাকে নমস্কার। আমি অন্তরে যেমন তোমাকে ধারণ করি, বাহ্যতেও তোমাকে তেমনই জানি। হে প্রভু মধুসূদন (শ্রীকৃষ্ণ)! অগ্নি সর্বদা তোমার তেজ থেকে উৎপন্ন হয় এবং রতি তোমার ক্রীড়াময় রূপ, আর স্বর্গ-মর্ত্য সবই তোমার মায়া।
তাৎপর্য:
এই শ্লোকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অনেকেই শুধু অশ্বমেধিক পর্বের একটি শ্লোক দেখিয়ে বলে যে শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে গীতা বলেছেন, তিনি ঈশ্বর নন। কিন্তু তারা সেই শ্লোকটির পুরো প্রসঙ্গ ও এই শ্লোকটি দেখেন না।
যদি তারা ওই শ্লোকটি পড়ত, তাহলে তারা বলত না যে শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে গীতা বলেছে। অশ্বমেধিকপর্বের ১৭তম অধ্যায়ের ১৩ নম্বর শ্লোকে স্পষ্ট বলা হয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে গীতা যোগযুক্ত হয়ে বলেছেন। তাহলে প্রশ্ন আসে, কেন অশ্বমেধিকপর্বের ৬৭তম অধ্যায়ের ৮-৯ নম্বর শ্লোকে অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে “হে বিশ্বকর্ম্মন, হে বিশ্বাত্মন, হে বিশ্বশ্রেষ্ঠ” বলে সম্বোধন করল? এ বিষয়ে আপনি কি ভাবছেন? এখন এখানে শেষ নয়, অর্জুন শ্রীকৃষ্ণকে আরও বলেন — “অগ্নি সব সময় তোমার তেজ থেকে আসে এবং রতি তোমার ক্রীড়াময় রূপ, আর স্বর্গ ও মর্ত্য সবই তোমারই মায়া।” এই কথাগুলো প্রমাণ করে যে শ্রীকৃষ্ণ সাধারণ মানুষ নন, তিনি পরম ঈশ্বর। বাস্তবিক, অশ্বমেধিকপর্বের ১৭তম অধ্যায়ের ১৩ নম্বর শ্লোকে “শ্রীকৃষ্ণ যোগযুক্ত হয়ে গীতা বলেছেন”—এটার মানে ভিন্ন কিছু বোঝানো হয়নি। যদি এখানে “যোগযুক্ত” মানে পরমাত্মার সঙ্গে মিলন বুঝানো হতো, তাহলে অর্জুন কেন ৬৭তম অধ্যায়ের ৮-৯ নম্বর শ্লোকে শ্রীকৃষ্ণকে এত মহানভাবে সম্মোধন করতেন? “যোগ” শব্দের অনেক অর্থ আছে। এখানে “যোগ” শব্দটি যে অর্থে ব্যবহার হয়েছে তা স্পষ্ট। আসলে ওই শ্লোকে “যোগযুক্ত” বলতে বোঝানো হয়েছে “একাগ্রচিত্ত হওয়া” (যোগযুক্তেন ঐক্যাগ্রসমন্বিতেন — ভারতকৌমুদী টীকা)। অর্থাৎ, শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধে যাওয়ার আগে অর্জুনকে মনদিকে একাগ্রভাবে গীতা বলেছিলেন। আবার একই গীতাজ্ঞান পুনরায় বলার প্রয়োজন কি? অর্জুন হয়তো তার দুর্বল স্মৃতির কারণে গীতা ভুলে গেছেন—এমন কিছু নিশ্চিত নয়। তাই শ্রীকৃষ্ণ ইতিহাসের গল্পের মাধ্যমে গীতার শিক্ষা আবার তুলে ধরছেন। কারণ কঠিন বিষয়ও গল্পের মাধ্যমে সহজে বোঝানো যায়।
তবে এটি খুব সহজেই মনে রাখা যায়।
এছাড়াও মহাভারতে অনেক মজার শ্লোক আছে, যেগুলোতে একদম জলের মতো বলা হয়েছে— শ্রীকৃষ্ণ আসলে বাসুদেব, শ্রীকৃষ্ণ হলেন এই পৃথিবীর মালিক, শ্রীকৃষ্ণই সব কিছুর ঈশ্বর, শ্রীকৃষ্ণই এই বিশ্বের আত্মা, শ্রীকৃষ্ণই দেখান তাঁর আসল রূপ, আর শ্রীকৃষ্ণই সবচেয়ে বড় আর মহান।
ব্রহ্মসংহিতায় বলা হয়েছে—
১|
ঈশ্বরঃ পরমঃ কৃষ্ণঃ সচ্চিদানন্দবিগ্রহঃ।
অনাদিরাদির্গোবিন্দঃ সর্ব্বকারণকারণম্।।
(ব্রহ্মসংহিতা- ৫/১)
অনুবাদঃ
শ্রীকৃষ্ণই পরম ঈশ্বর, যিনি সচ্চিদানন্দরূপ। তিনি অনাদির আদি এবং গোবিন্দ নামেও পরিচিত, সমস্ত কারণের পরম কারণ।
২|
অদ্বৈতম-অচ্যুতম-অনাদিম-অনন্তরূপম
আদ্যং পুরাণপুরুষং নবযৌবনঞ্চ।
বেদেষু দুর্লভম-অদুর্লভম-আত্মভক্তৌ
গোবিন্দম আদি পুরুষং তমহং ভজামি।।
(ব্রহ্মসংহিতা- ৫/৪২)
অনুবাদঃ
যিনি অদ্বৈত, অচ্যুত, অনাদি ও অনন্তরূপ, আদিপুরাণপুরুষ, নবযৌবনসম্পন্ন। যাকে বেদাদিতেও পাওয়া দুর্লভ, কিন্তু শুদ্ধ আত্মভক্তির মাধ্যমে লাভ করা যায়— সেই গোবিন্দ আদিপুরুষকে আমি ভজনা করি।
৩|
রামাদিমূর্ত্তিষু কলানিয়মেন তিষ্ঠন্
নানাবতারমকরোদ্ভূবনেষু কিন্তু।
কৃষ্ণ স্বয়ং সমভবৎ পরমঃ পুমাণ্
যো গোবিন্দমাদিপুরুষং তমহং ভজামি।।
(ব্রহ্মসংহিতা- ৫/৪৮)
অনুবাদঃ
রাম আদিসহ নানা মূর্তিতে অংশবিশেষে অবতীর্ণ হলেও, যিনি পরম পুরুষ শ্রীকৃষ্ণরূপে স্বয়ং প্রকাশ পেয়েছেন, সেই আদিপুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
শ্রীচৈতন্য চরিতামৃতে বলা হয়েছে—
১|
স্বয়ং ভগবান কৃষ্ণ, কৃষ্ণ সর্বাশ্রয়।
পরম ঈশ্বর কৃষ্ণ সর্বশাস্ত্রে কয়।।
(চৈঃ চঃ আদি- ২/১০৬)
অনুবাদঃ
শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং ভগবান, তিনিই সমস্ত কিছুর পরম আশ্রয়। সকল শাস্ত্রতেও তিনিই পরম ঈশ্বর বলে স্বীকৃত।
২|
কৃষ্ণ এক সর্বাশ্রয়, কৃষ্ণ সর্বধাম।
কৃষ্ণের শরীরে সর্ব-বিশ্বের বিশ্রাম।।
(চৈঃ চঃ আদি- ২/৯৪)
অনুবাদঃ
শ্রীকৃষ্ণই একমাত্র সর্বাশ্রয় ও সর্বধাম, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড তার শরীরেই অবস্থিত।
পরিশেষে, বেদ থেকে শুরু করে গীতা পর্যন্ত সকল গ্রন্থেই স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় যে শ্রীকৃষ্ণই পরমেশ্বর।