শ্রীমদ্ভগবদগীতা প্রতিটি অধ্যায় পাঠের ফলাফল

গীতার প্রতিটি শ্লোক পাঠ করলে মানুষ তার পূর্বকৃত পাপ থেকে মুক্তি পায়। শ্রীমদ্ভগবদগীতা মানুষের চিত্তকে শুদ্ধ করে এবং তাকে সংসার বন্ধন থেকে মুক্তি দেয়।গীতা পাঠ করলে মানুষের অন্তঃকরণ শুদ্ধ হয়, বুদ্ধি প্রসারিত হয়, এবং জীবনের সঠিক অর্থ উপলব্ধি হয়। তার শিক্ষায় মানুষ ধৈর্যশীল হয়, দুঃখ-সুখে সমভাব রাখে, এবং চিত্তে পরম শান্তি লাভ করে।

একজন বাঙালি মেয়ে সন্ধ্যেবেলা গীতা পাঠ করতেছে hd
একজন বাঙালি মেয়ে সন্ধ্যেবেলা গীতা পাঠ করতেছে


শ্রীমদ্ভগবদগীতার প্রতিটি অধ্যায় পাঠের আধ্যাত্মিক ফলাফল

১. প্রথম অধ্যায় (অর্জুন-বিষাদ যোগ) পাঠের ফলে জীবনের সমস্ত দুঃখ, ক্লেশ ও মানসিক অস্থিরতা দূর হয়। মানসিক ভারমুক্তি এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। জীবনের দ্বন্দ্বে সাহসী হয়ে ওঠা যায়। যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে, মহাযোদ্ধা অর্জুন যখন উভয় পক্ষের সৈন্যদের দেখছিলেন, তখন তিনি দেখলেন তার নিকট আত্মীয়, গুরু এবং বন্ধুদের সবাই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। এ দৃশ্য দেখে তিনি এতটা দুঃখিত হলেন যে, যুদ্ধ করার চিন্তা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন।

২. দ্বিতীয় অধ্যায় (সাংখ্য যোগ) পাঠের ফলে জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি হয়, আত্মা-শরীরের ভেদবোধ স্পষ্ট হয়, এবং মৃত্যুভয় দূর হয়। এই অধ্যায় জীবনের প্রতি সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি ও জ্ঞানদৃষ্টি প্রদান করে। অর্জুন কৃষ্ণের কাছে নিজের শিক্ষার্থী হয়ে আত্মসমর্পণ করেন। তারপর কৃষ্ণ অর্জুনকে সঠিক দেহ আর চিরকালের আত্মার মধ্যে পার্থক্য বোঝাতে শুরু করেন। কৃষ্ণ দেহ পরিবর্তনের প্রক্রিয়া, পরমেশ্বরের জন্য নিঃস্বার্থ সেবার গুরুত্ব এবং আত্মার সঠিক জ্ঞান অর্জন করা মানুষের বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেন।

৩. তৃতীয় অধ্যায় (কর্ম যোগ) পাঠ করলে মানুষের মধ্যে কর্তব্যবোধ জাগ্রত হয়, অহংকার লুপ্ত হয়, এবং নিষ্কাম কর্মের মাহাত্ম্য বোঝা যায়। কর্মফলের প্রতি আসক্তি হ্রাস পেয়ে ঈশ্বরপ্রেম বৃদ্ধি পায়। এই পৃথিবীতে সবাই কোথাও না কোথাও কাজ করে। কাজ কখনও আমাদের আটকে রাখে আবার কখনও আমাদের মুক্তি দেয়। যদি আমরা স্বার্থের চিন্তা না করে, ঈশ্বরকে খুশি করার জন্য কাজ করি, তাহলে আমরা আমাদের কাজের ফলের বোঝা থেকে মুক্তি পেতে পারি এবং আমাদের আত্মিক ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান বাড়াতে পারি।

৪. চতুর্থ অধ্যায় (জ্ঞানকর্মসংন্যাস যোগ) পাঠের ফলে কর্ম ও জ্ঞানের সমন্বয়ের প্রকৃত অর্থ বোঝা যায়। আত্মজ্ঞানের প্রতি আকর্ষণ বৃদ্ধি পায় এবং জীবনের সকল কাজ ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার অনুপ্রেরণা মেলে। আত্মার চিন্ময় তত্ত্ব, ভগবৎ-তত্ত্ব, আর ভগবান ও আত্মার সম্পর্ক নিয়ে কথা বললে, এটা দেখা যায় যে এসব শিক্ষা খুবই গভীর এবং মুক্তির পথ দেখায়। এই ধরনের জ্ঞান সাধারণত নিঃস্বার্থ ভক্তির কাজের ফল হয়। গীতায় পরমেশ্বর ভগবান তার দীর্ঘ ইতিহাস, জড়িয়ে থাকা জগতের মাঝে তার অবতরণের কারণ এবং আত্মজ্ঞান অর্জনের জন্য গুরুর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

৫. পঞ্চম অধ্যায় (সংন্যাস যোগ) পাঠের ফলে মানুষের মধ্যে ত্যাগবৃত্তি বৃদ্ধি পায়। ইন্দ্রিয়সংযম, ধৈর্য ও শান্তি লাভ হয়। জীবনের জটিলতা সহজ মনে হয়। শান্তি, নিরাসক্তি, অন্তর্দৃষ্টি ও আনন্দ পেতে হলে, বাইরের কাজগুলো করতে হবে, কিন্তু তার ফল থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে। এভাবে একজন জ্ঞানী মানুষ মানসিকভাবে পরিশুদ্ধ হয়।

৬. ষষ্ঠ অধ্যায় (ধ্যান যোগ) পাঠ করলে ধ্যানের শক্তি ও একাগ্রতা বৃদ্ধি পায়। মনসংযমে পারদর্শিতা আসে। ধ্যানের মাধ্যমে অন্তরাত্মার সঙ্গে সংযোগ স্থাপন হয়। নিয়মিত ধ্যানের মাধ্যমে অষ্টাঙ্গযোগ অনুশীলন করে, মন ও ইন্দ্রিয়গুলোকে শান্ত করা হয় এবং মনকে পরমাত্মার চিন্তায় নিয়ে যাওয়া হয়। এই চর্চার ফলে, পরমেশ্বরের সঙ্গে গভীর সংযোগ তৈরি হয়।

৭. সপ্তম অধ্যায় (জ্ঞান-জ্ঞেয় যোগ) পাঠের ফলে জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয় ঘটে। ঈশ্বরকে সর্বত্র উপলব্ধি করা যায় এবং প্রকৃতি ও পরমেশ্বরের সম্পর্ক স্পষ্ট হয়। শ্রীকৃষ্ণ হলেন সবার মূল এবং পরম সত্য। উন্নত আত্মারা তাকে ভক্তি দিয়ে আত্মনিবেদন করেন, তবে যারা ধর্মপরায়ণ নন, তারা নানা বিষয়ের প্রতি মনোযোগী হন।

৮. অষ্টম অধ্যায় (অক্ষর ব্রহ্ম যোগ) পাঠ করলে মৃত্যুর সময় ঈশ্বরের নাম স্মরণে আসার শক্তি অর্জিত হয়। পরকাল ভয়ের বিনাশ ঘটে এবং পরম গন্তব্যে পৌঁছানোর পথে সাহায্য হয়। মানুষ কৃষ্ণের চিন্তা থেকে চিরকাল ভগবানের কাছে পৌঁছাতে পারে, বিশেষ করে মৃত্যুর সময় তাকে মনে রেখে।

৯. নবম অধ্যায় (রাজবিদ্যা-রাজগুহ্য যোগ) পাঠের ফলে ঈশ্বরের প্রতি পরম ভক্তি জন্মে, গোপন তত্ত্বের বোধ হয়, এবং সমস্ত কর্ম সহজে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করার অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। কৃষ্ণ আমাদের পরমেশ্বর এবং অভিভাবক। সব প্রাণীই তার সঙ্গে নিত্য যোগাযোগে রয়েছে ভগবৎ সেবার মাধ্যমে। যদি মানুষ তার সত্যিকারের ভক্তি আবার জাগ্রত করতে পারে, তবে শ্রীকৃষ্ণের ধামে ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে।

১০. দশম অধ্যায় (বিভূতি যোগ) দশম অধ্যায় পাঠ করলে ভক্তের হৃদয়ে স্পষ্ট হয়ে ওঠে, ঈশ্বরের অসীম শক্তি, তাঁর অসীম গৌরব এবং সর্বব্যাপী উপস্থিতি। কৃষ্ণের মহিমা, তাঁর গুণগান, এবং কীর্তির প্রতি জন্ম নেয় গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি। জড় জগতের যা কিছু মহান, যা কিছু গৌরবান্বিত — সবই তাঁর অসীম শক্তির সামান্য প্রকাশ মাত্র। তিনিই সমগ্র সৃষ্টির উৎস, সমস্ত জীবের আশ্রয়, এবং সকলের পরম প্রিয়।

১১. একাদশ অধ্যায় (বিশ্বরূপ দর্শন যোগ) পাঠ করলে ভগবানের বিশ্বময় মহিমা উপলব্ধি হয়। ভক্তের অন্তরে গভীর ভক্তি, বিস্ময় এবং পূর্ণ সমর্পণবোধের জন্ম হয়। কৃষ্ণ অর্জুনকে দিব্যদৃষ্টি দান করে তার অসীম, বিশ্বরূপ দর্শন করান, যা সমস্ত সৃষ্টির অন্তর্গত। এইভাবে কৃষ্ণ তার ঐশ্বরিক স্বরূপ স্পষ্ট করে তুলেন। কৃষ্ণ ঘোষণা করেন, তার এই অতুলনীয় মানবরূপী আকৃতি আসলে ঈশ্বরের মূল রূপ, যা কেবল শুদ্ধ ভক্তির মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়।

১২. দ্বাদশ অধ্যায় (ভক্তি যোগ) দ্বাদশ অধ্যায়ের মাধ্যমে ভক্তির সরল ও সহজ পথটি প্রকাশিত হয়। এই অধ্যায় পাঠ করলে মানুষের মনে বিনয়, সহিষ্ণুতা, এবং করুণার মতো গুণাবলী বৃদ্ধি পায়। ঈশ্বরপ্রেম অর্জনের জন্য ভক্তি যোগই এক অনন্য সহায়ক পথ। যারা এই পথে এগিয়ে চলেন, তারা বিনয়, সহিষ্ণুতা, ক্ষমাশীলতা, করুণাবোধ, অহিংসা, সরলতা এবং কৃষ্ণপ্রেমের মতো মহৎ গুণে সমৃদ্ধ হন। ভক্তির এই পথে মানুষ এক বিশেষ শান্তি ও আনন্দের অভিজ্ঞতা লাভ করে, যা অন্য কোনো পথে এত সহজে পাওয়া যায় না।

১৩. ত্রয়োদশ অধ্যায় (ক্ষেত্রক্ষেত্রজ্ঞ বিভাগ যোগ) পাঠের ফলে দেহ ও আত্মার প্রকৃত পার্থক্য বোঝা যায়। জীবনের সাময়িকতা ও আত্মার চিরন্তনতা উপলব্ধি হয়। যে কেউ আত্মা আর শরীরের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারে, সে এই সৃষ্টির জড়তার বাইরেও কিছু দেখতে পারে। আসলে, এই বুঝটা রাখলে মুক্তি পেতে পারে।

১৪. চতুর্দশ অধ্যায় (গুণত্রয় বিভাগ যোগ) পাঠের ফলে মানুষের গুণজ্ঞান বৃদ্ধি পায়। সত্ত্ব, রজস, তমস এই তিন গুণের প্রভাব বোঝা যায়, এবং সত্ত্বগুণে প্রতিষ্ঠিত হতে অনুপ্রেরণা পাওয়া যায়। সত্ত্ব, রজ ও তম—এ তিনটা গুণের প্রভাব আমাদের জীবনে সর্বত্র। পরমেশ্বর কৃষ্ণ এসব গুণের স্বরূপ, আমাদের ওপর কিভাবে কাজ করে, মানুষ কিভাবে এগুলিকে পার করে, আর যিনি অস্বাভাবিক স্তরে আছেন, তার লক্ষণ কী তা তিনি বুঝিয়েছেন।

১৫. পঞ্চদশ অধ্যায় (পুরুষোত্তম যোগ) পাঠ করলে জীবনের মূল উদ্দেশ্য উপলব্ধি হয়। ঈশ্বরকে জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য হিসেবে স্বীকার করা যায়। মানুষের জীবনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জড়তার বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া এবং কৃষ্ণকে পরম জীবনসঙ্গী হিসেবে জানা। যারা কৃষ্ণের সত্যিকারের রূপ বুঝতে পারে, তারা তার কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং ভক্তি ও সেবার পথে এগিয়ে যায়।

১৬. ষোড়শ অধ্যায় (দৈবাসুরসম্পদ বিভাগ যোগ) পাঠের ফলে দৈব গুণাবলীর বিকাশ হয়, অসুরগুণ দূর হয়, এবং চরিত্রে শুদ্ধতা আসে। যারা খারাপ গুণগুলির সঙ্গে জীবন কাটায় এবং নিয়ম কানুন মানে না, তাদের জীবন সত্যি কঠিন হয়ে যায়। তারা ধীরে ধীরে খারাপ অবস্থায় পড়ে। আর যারা ভাল গুণের সাথে জীবন যাপন করে এবং নিয়ম মেনে চলে, তারা শান্তি খুঁজে পায় এবং উন্নতি করে।

১৭. সপ্তদশ অধ্যায় (শ্রদ্ধাত্রয় বিভাগ যোগ) পাঠ করলে মানুষের মধ্যে সৎ শ্রদ্ধার জন্ম হয়, খাদ্য, আচরণ, উপাসনা ও দানের সঠিক পদ্ধতি বোঝা যায়। মানুষের মন জড় প্রকৃতির তিন ধরনের গুণ থেকে তৈরি হয়, আর এই গুণের ভিত্তিতে শ্রদ্ধারও তিন রকম হয়। রাজসিক ও তামসিক শ্রদ্ধা থাকলে বেশি কিছু সময়ের জন্য অস্থায়ী ফল পাওয়া যায়। অন্যদিকে, যখন আমরা শাস্ত্রীয় নিয়ম মেনে চলি, সেটা আমাদের হৃদয়কে পরিষ্কার করে। সেটা আমাদের ভালো কাজ করতে সহায়তা করে এবং শেষে সত্যিকারের শ্রদ্ধা, শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি তৈরী করে।

১৮. অষ্টাদশ অধ্যায় (মোক্ষ সংন্যাস যোগ) পাঠের ফলে জীবনের সমস্ত বন্ধন কেটে যায়, আত্মসমর্পণবোধ জন্মে, এবং মুক্তির পথে অগ্রগতি হয়। এই অধ্যায় জীবনের পরম গন্তব্য স্পষ্ট করে তোলে। কৃষ্ণ বলেছেন ত্যাগ মানে আসলে কী এবং মানুষের চিন্তা ও আচরণ কেমন করে প্রকৃতির গুণের প্রভাব নেয়। তিনি ব্রহ্ম উপলব্ধির কথা বলেন, ভগবদগীতার গুরুত্ব বোঝাতে চেষ্টা করেন এবং দেখান যে কৃষ্ণের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ ধর্মের সেরা পন্থা। এর ফলে সব পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, চিরকালীন পরম ধামে ফিরে যেতে হয় এবং সত্যি জ্ঞান পাওয়া যায়।

ভগবদগীতা পাঠের সাধারণ উপকারিতা

১। প্রথম অধ্যায়ঃ
প্রথম অধ্যায় পাঠ করলে মানুষের মন শুদ্ধ ও পবিত্র হয়।

২। দ্বিতীয় অধ্যায়ঃ
দ্বিতীয় অধ্যায় পাঠ করলে অন্তরে নির্মলতা ও শান্তি আসে।

৩। তৃতীয়  অধ্যায়ঃ
তৃতীয় অধ্যায় পাঠে সমস্ত পাপ বিনষ্ট হয়।

৪। চতুর্থ অধ্যায়ঃ
চতুর্থ অধ্যায় পাঠ করলে ব্রহ্মহত্যা, নারীহত্যা ও গুরুতর পাপসমূহও দূর হয়।

৫। পঞ্চম অধ্যায়ঃ
পঞ্চম অধ্যায় পাঠ করলে চৌর্যপাপ (চুরি সম্পর্কিত পাপ) নাশ হয়।

৬। ষষ্ঠ অধ্যায়ঃ
ষষ্ঠ অধ্যায় পাঠে ধ্যান ও যোগের মাধ্যমে আত্মার শুদ্ধি হয়। (উল্লেখ: গীতার ৭০০ শ্লোক ১৮টি অধ্যায়ে বিভক্ত।)।

৭। সপ্তম অধ্যায়ঃ
সপ্তম অধ্যায় পাঠ করলে বুদ্ধি নির্মল ও তীক্ষ্ণ হয়।

৮। অষ্টম অধ্যায়ঃ
অষ্টম অধ্যায় পাঠ করলে অখাদ্য ও অপেয়জাত পাপ দূর হয়।

৯। নবম অধ্যায়ঃ
নবম অধ্যায় পাঠে পৃথিবী দানের মত মহান পূণ্য লাভ হয়।

১০। দশম অধ্যায়ঃ 
দশম অধ্যায় পাঠে সর্বপাপ বিনষ্ট হয়ে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান লাভ হয়।

১১। একাদশ অধ্যায়ঃ
একাদশ অধ্যায় পাঠে ব্রহ্মজ্ঞান ও পরম মুক্তি লাভ হয়।

১২। দ্বাদশ অধ্যায়ঃ
দ্বাদশ অধ্যায় পাঠ করলে ভগবানের প্রতি বিশুদ্ধ ভক্তি জন্মায়।

১৩। ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃ
ত্রয়োদশ অধ্যায় পাঠে জ্ঞানচক্ষু খুলে যায় এবং আত্মশক্তি জাগ্রত হয়।

১৪। চতুর্দশ অধ্যায়ঃ
চতুর্দশ অধ্যায় পাঠে অশ্বমেধ যজ্ঞের সমতুল্য ফল লাভ হয়।

১৫। পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ
পঞ্চদশ অধ্যায় পাঠে নির্মল জ্ঞান লাভ করে যোগী হয়ে ওঠা যায় অর্থাৎ সর্বোচ্চ জ্ঞানী ব্যক্তি হওয়ার জন্য জীবনের দরজা গুলো খুলে যায়।

১৬। ষোড়শ অধ্যায়ঃ
ষোড়শ অধ্যায় পাঠ করলে সংসারের বন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ও সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়।

১৭। সপ্তদশ অধ্যায়ঃ
সপ্তদশ অধ্যায় পাঠে রাজসূয় যজ্ঞের সমান ফল লাভ হয় এবং রাজ্যের ব্যাপক আয় উন্নতি হয়।

১৮। অষ্টাদশ অধ্যায়ঃ
অষ্টাদশ অধ্যায় পাঠে জ্ঞানরূপ অগ্নি দ্বারা সমস্ত পাপ দগ্ধ হয়, এবং দুঃখ-দুর্ভাগ্য দূর হয়।

গীতা পাঠের সর্বোত্তম সময় কোনটি? 

গীতা পড়ার জন্য সকালে ব্রাহ্মমুহূর্ত সবচাইতে ভালো সময়। এটা সাধারণত সূর্যোদয়ের প্রায় ১.৫ ঘণ্টা আগে হয়ে থাকে। এই সময় মন বেশ শান্ত থাকে আর পরিবেশও বেশি পবিত্র থাকে, তাই আধ্যাত্মিক কিছুর দিকে মনোযোগ দেওয়া সহজ হয়। ব্রাহ্মমুহূর্তে গীতা পড়ার ফলে এর প্রভাব আমাদের মনে ভালোভাবে কাজ করে, যা জীবনকে আরও শান্তি, ধৈর্য এবং জ্ঞান দেয়। সকালে সাধারণত অন্য পূজা ও সাধনাও করা হয়, তাই গীতা পড়ার জন্য এটা খুব ভালো সময়। সন্ধ্যায়ও গীতা পড়া যেতে পারে, কারণ কাজ-কর্মের পর এটি মানসিক শান্তি ও আত্মিক শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়মিত এবং ভক্তি নিয়ে যে কোনো সময় গীতা পড়লে তা আত্মিক জীবনের জন্য উপকারে আসে। সংক্ষেপে: ভোরবেলা ও সন্ধ্যায় গীতা পাঠ বিশেষ ফলপ্রদ তাই এই দুই সময়ে গীতা পাঠ করা আবশ্যক।

গীতা সম্পূর্ণ পাঠ করতে কতদিন লাগে?

গীতা পড়তে সাধারণত ৭ থেকে ১৮ দিন লাগে, যদি প্রতিদিন খানিকটা পড়া হয়। গীতার ১৮টা অধ্যায় আছে, আর প্রতিটি অধ্যায়ের আকার আলাদা, তাই কতটা পড়বেন তার ওপর সময় নির্ভর করে। যদি প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট করে পড়েন, তাহলে ৭ থেকে ১৮ দিনের মধ্যে পুরো গীতা পড়া সম্ভব। কিন্তু যদি আপনার সময় কম থাকে বা ধীরে ধীরে অর্থ বুঝতে চান, তাহলে এক মাসের বেশি সময়ও লাগতে পারে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিয়মিত পড়া এবং অর্থের প্রতি মনোযোগ দেওয়া। সংক্ষেপে: নিয়মিত দিনে ১ অধ্যায় পাঠ করলে ১৮ দিনে সকল অধ্যায় শেষ করা সম্ভব।

উপসংহার: গীতা পড়া আমাদের জীবনে অনেক গুরুত্ব রাখে। এটা শুধু ধর্মের বই নয়, বরং আমাদের জীবনের দিকনির্দেশনাও। গীতা আমাদের মনোবল বাড়ায়, সমস্যা সামলানোর শক্তি দেয় এবং নিজের সম্পর্কে সচেতন হতে সাহায্য করে। জীবনের নানা ঝামেলা আর সংঘর্ষের মাঝে আমরা গীতা পড়ে আমাদের দায়িত্ব আর ধৈর্যের বিষয়ে আরও পরিষ্কার হতে পারি। এর শিক্ষা অনুসরণ করলে আমরা অহংকার, মোহ ও লোভ থেকে মুক্ত হয়ে সততাময়, ধৈর্যশীল এবং সহিষ্ণু জীবন কাটাতে পারি। বিশেষ করে আজকালের দ্রুত পরিবর্তনের সময়ে, গীতার সবকিছু আমাদের মানসিক শান্তি আর নৈতিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই গীতা পড়া শুধু আধ্যাত্মিক উন্নতির জন্য নয়, বরং এক ভালো সমাজ ও সমৃদ্ধ জীবন গঠনের জন্যও জরুরি।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url