সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্য সেরা বাস্তুশাস্ত্র গাইড

বাস্তুশাস্ত্রের উৎপত্তি প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে। মহাভারতে এর বর্ণনা পাওয়া যায়। মহাভারতে বাস্তুশাস্ত্রের আধারে চক্রব্যূহের নির্মান কৌশল ও পদ্ধতি ধর্মরাজ যুধিষ্টির পুত্র অর্জুন জানতেন। একদিন রাত্রে চক্রব্যূহের নির্মান কৌশল এবং প্রবেশ ও বাহির হওয়ার কৌশলাদি সুভদ্রাকে বলেছিলেন। সে সময়ে সুভদ্রা গর্ভবতী ছিল যার ফলে সুভদ্রার গর্ভস্থ শিশুও তা শুনতে পায়। 

বাস্তুশাস্ত্র pdf
বাস্তুশাস্ত্র


কিন্তু ঐ চক্রব্যূহ থেকে বের হওয়ার কথা যখন বলে তখন সুভদ্রা ঘুমিয়ে পড়ায় তা শুনতে না পাওয়ায় তার গর্ভস্থ শিশুও তা শুনতে পায়নি। সুভদ্রার সেই গর্ভস্থ শিশু হল অভিমন্যু। তাইতো মহা ভারতের যুদ্ধের সময় অভিমন্যু চক্রব্যূহে ঢুকে আর বেরোতে পারেনি ফলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। তাছাড়া সত্য যুগে লঙ্কার রাজা রাক্ষস রাজ রাবনের ইচ্ছাতেই বিশ্বকর্মা লঙ্কায় স্বর্ণপুরী নির্মান করেন। দ্বাপর। যুগে বিশ্বকর্মা সমুদ্রের তলদেশে দ্বারকা নগরী নির্মান, বেদ, প্রাচীন মৎস পুরান প্রভৃতি গ্রন্থে বাস্তুচর্চা। ও বাস্তু শান্তির বিভিন্ন তন্ত্র মন্ত্রের উল্লেখ রয়েছে। ঐ চক্রব্যূহ, ভবন নির্মান, বেদ ও পূরানাদী গ্রন্থ। থেকে পাওয়া তথ্যাদিতে বাস্তুশাস্ত্রের গুরুত্বের ভূয়সী প্রশংসা পাওয়া যায়।

সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিতে বাস্তুশাস্ত্র 

বর্তমান যুগে এই বাস্তুশাস্ত্রের প্রতি বিশ্বাস আকর্ষন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনতো বাস্তু ও ফেংশুই বিদ্যার নীতি আদর্শ মেনে আজ বিশ্বের বুকে প্রতিষ্ঠা ও মহানুভবতায় সুদৃঢ় ভিত গড়তে সক্ষম হয়েছে। বাস্তুশাস্ত্রের একাংশের উৎপত্তি চীনে এবং চীনে এর বেশী প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া প্রাচীন কালের নির্মিত মহেঞ্জো দারো, হরপ্পো, নালন্দা প্রভৃতির ধ্বংসাবশেষ দেখে বোঝা যায় যে তৎকালীন সময়েও বাস্তুশাস্ত্রের প্রতি মানুষের প্রবল আগ্রহ ছিল এবং বাস্তু ও ফেংশুই শাস্ত্র সম্মত। উপায়েই সেই সব ভবন নির্মিত হয়েছিল। এসব স্থাপনার দরজা, জানালা, রান্নাঘর, শয়নকক্ষ, শৌচালয় ইত্যাদির স্থিতিও বাস্তুশাস্ত্র মোতাবেক সঠিক স্থানেই ছিল। বর্তমানে বিভিন্ন গৃহবাড়ি, অফিস আদালত, কল কারখানা, ফ্লাটবাড়ি প্রভৃতি কোটি কোটি টাকা খরচ করে তৈরী করা হচ্ছে। তাই কেউ-ই তো চাইবেনা যে এত টাকা খরচ করে তৈরী অফিস আদালত কল কারখানা গৃহবাড়ীতে ভবিষ্যতে সমস্যা হোক। তাইতো এই সকল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাস্তুবিদ বা বাস্তুশাস্ত্রের এতটাই গুরুত্ব। বাস্তুশাস্ত্রের নির্দেশনা মোতাবেক কোন দিক শুভ কোনদিক অশুভ ছাড়াও ঘরের দরজা, জানালা, আসবাব পত্র কোথায় কোন জিনিষ রাখলে তা আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভ দায়ক বা মঙ্গল জনক হবে তার দিক নির্দেশনা দিতে সক্ষম একমাত্র শাস্ত্র তা হল বাস্তুশাস্ত্র।

প্রায়ই দেখা যায় অনেক প্রতিষ্ঠান খুব অল্পদিনেই মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বা সফলতার মুখ দেখতে সক্ষম হয়েছে ছাড়াও দেশ বিদেশে তার শাখা প্রশাখার বিস্তার ঘটিয়েছে। আবার কোন প্রতিষ্ঠান লাভ জনক হওয়া সত্ত্বেও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা কুড়িতেই মুখ থুবড়ে পড়ছে। আবার অনেক সময় দেখা যায় প্রধান রাজ পথের উপর জন বহুল স্থানে একটি একটি সুরম্য শো-রুম নির্মান করা হল। অথচ এটি বাস্তুদোষ যুক্ত হওয়ায় অট্টালিকাটি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষন। আকর্ষন করলেও খরিদ্দারের অভাবে তা লোকসানে চলতে লাগল। ব্যবসায়ীরা । ব্যবসায়ীরা টাকা পয়সা বিনিয়োগ করে লাভবান হতে পারল না। ধীরে ধীরে তারা। এই ভবন ছেড়ে ব্যবসা বানিজ্যকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গেল। ভবন হয়ে পড়ল শুন্য। বিপরীতে দেখা যায় কোন নির্জন গলির মধ্যে একটি শো-রুম এটি তেমন সুন্দর ও সুরম্য না হয়েও তা অধিক খরিদ্দারের আকর্ষণ ঘটাতে সক্ষম হল। ব্যবসায়ীরা দিন দিন ফুলে ফেঁপে উঠতে লাগল। অতএব এটি ছিল বাস্তুদোষ মুক্ত। তাহলে দেখা যাচ্ছে বহু টাকা পয়সা খরচ করে নির্মিত শো-রুম সুন্দর ও সুরম্য হলেও আর্থিক দিক থেকে কোন রূপেই লাভবান হতে পারছেনা অথচ তদপেক্ষা নির্জন জায়গায় কম পয়সায় নির্মিত শো-রুম অধিক খরিদ্দার এর আকর্ষন ঘটিয়ে আর্থিক ভাবে অধিক লাভবান হতে সক্ষম হচ্ছে। এর একমাত্র কারণ হল ঐ জন বহুল রাজপথের শো-রুমটি বাস্তুশাস্ত্রের বিধি বিধান মেনে নির্মিত হয়নি এবং গলির মধ্যকার শো-রুমটি বাস্তুশাস্ত্রের বিধি বিধান মোতাবেক তৈরী হয়েছে। তাইতো কোন গৃহবাড়ি কল কারখানা বা ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান তৈরীর সময় বাস্তুশাস্ত্রের বিধি বিধান মেনে তৈরী করা উচিৎ।

বিভিন্ন ব্যাংক বীমা সহ অর্থকরী সংস্থার নির্মানের সময় সঠিক দিক বা কোন নির্ণয় করে মূল দরজা স্থাপন করা উচিৎ। সেই সঙ্গে ঐ ভবনের পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করে তার সঠিক রং উচ্চতা নির্ণয় ছাড়াও বাস্তুশাস্ত্র মোতাবেক আসবাব পত্র স্থাপন করা উচিৎ। অবশ্য এখনকার যুগে গৃহবাড়ী অফিস আদালত, কল কারখানা, সপিংমল প্রভৃতি নির্মানের আগে আর্কিটেকচার এর পরামর্শ মোতাবেক করেন। তার কারণ মানুষ তার নির্মিত গৃহবাড়ির স্থায়িত্ব চায়। এছাড়া চায় তা যেন লাভদায়ক ও সুখ শান্তি প্রদ হয়। বর্তমানে যে কোন প্রতিষ্ঠানের নির্মান ব্যয় অত্যন্ত বেশী তাই বাস্তুশাস্ত্রের কদর ও দিন দিন বেড়ে চলেছে। তাছাড়া বাস্তুশাস্ত্রের সাহায্যে কোন ত্রুটিমুক্ত নির্মিত ভবনেরও সংস্কার সাধন করে বাস্তু দোষমুক্ত করা সম্ভব। বাস্তুশাস্ত্র শুধুমাত্র নির্মান কৌশল দিক, কোন, রং ইত্যাদি নির্বাচন করে না। যে ভূমিটায় অট্টালিকা নির্মিত হবে সেটা ত্রুটি যুক্ত না ত্রুটিমুক্ত এমনকি ঐ জায়গা কখন কিনতে হবে কখন কিনলে তা লাভদায়ক ছাড়াও ঝামেলা মুক্ত থাকা যাবে। কবে কখন কোন সময় গৃহারম্ভ শুভ ফলদায়ক। তাছাড়া মুখ্যদ্বার, খিড়কি, দরজা, জানালা, প্রভৃতি বাস্তুশাস্ত্র মোতাবেক স্থাপন করলে সেই ভবন আপনার জীবনে পরম সহায়ক হবে তাতে সন্দেহ নেই। এছাড়া বাড়ির জল নিষ্কাশন ব্যবস্থা, সড়ক যোগাযোগ বাড়ির ছাদ, দেওয়াল প্রভৃতির ক্ষেত্রে বাস্তুশাস্ত্রের বিধির উপর দৃষ্টি রাখলে পরবর্তীকালে কোনরূপ ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবেনা এটা আমার বিশ্বাস।

দেখেছি মানব জীবনের যে কোন ছোট বড় সমস্যার জন্য বাস্তুশাস্ত্র পরিপূর্ণ রূপে সহায়তা করতে পারে। আমি দীর্ঘদিন যাবৎ জ্যোতিষ হস্তরেখা সংখ্যাতত্ত্ব ও বাস্তুশাস্ত্রের গবেষনা ও প্রয়োগ কালে দের গৃহবাড়ির শাস্ত্র সম্মত ভাবে আসবাব পত্রাদি না রাখলে পদে পদে নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। যেমন রান্নাঘরে গ্রানাইট পাথর লাগালে যিনি রান্না করবেন বা বেশীক্ষন থাকবেন তার স্বাস্থ্য ভাল যাবে না ছাড়াও দীর্ঘস্থায়ী রোগভোগের সম্ভাবনা এটা পরীক্ষিত সত্য। আবার কোন ঘরের জানালা, দরজা অবস্থিতি সঠিকরূপে না হলে বা খাট, পালঙ্ক, আলমারী, ড্রেসিং টেবিল, ডাইনিং টেবিল প্রভৃতি বাস্তুশাস্ত্র মোতাবেক সঠিক জায়গায় না রাখলে ঐ গৃহবাড়িতে অবস্থানরত প্রত্যেককে জীবনে নানান প্রকার দুর্ভোগ পোহাতে হবে। ব্যক্তি জীবনে এর ফলে ঘটতে পারে নানান প্রকার রোগ, শোক ও দুর্ঘটনা। তাছাড়া ব্যবসা বানিজ্যে লোকসান অর্থনাশ অনিদ্রা, আপনজনের সঙ্গে নিত্য মতান্তর গৃহে চুরি ডাকাতি হওয়া লেখাপড়াও কাজ কর্মে মন না বসা, সময় মত বিবাহ না হওয়া বা বার বার আসন্ন বিবাহ ভেঙ্গে যাওয়া প্রভৃতি অঘটন ঘটতে পারে ঐ গৃহস্বামীর সহ পরিবারের সকলের জীবনে। এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গৃহ মধ্যের আসবাব পত্রাদির স্থানান্তর করে সঠিক স্থানে বসিয়ে বাস্তুদোষ খন্ডন করে নিশ্চিন্তে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধিময় জীবন যাপন সম্ভব। এটিই হল বাস্তুশাস্ত্রের একমাত্র মহত্ত্ব।

আমাদের এই দৈনন্দিন ব্যস্ততম জীবনের টানা পোড়েনের পিছনে উদ্দেশ্য কি? কোন ব্যক্তিকে এই প্রশ্নটি করলে তার একটাই উত্তর তাহল অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থান। এটা আমাদের এই মনুষ্য জন্মের বহু আশ্চার্যজনক অভিজ্ঞতাবদ্ধ জ্ঞানের ফসল। আমাদের মূলগত চাহিদা হল ঐ অন্ন বস্ত্র এবং বাসস্থান। এছাড়া একটু গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন করলে দেখা যাবে এই চাহিদার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করার পেছনে আমাদের একটাই উদ্দেশ্য তা হল মানসিক ও আত্মিক শান্তি লাভ। বাস্তবিক দৃষ্টিতে দেখা যায় অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের মত সাংসারিক প্রয়োজনীয়তা গুলি পূরন না হলে পরিপূর্ণ রূপে মানসিক শান্তি পাওয়া যায়না। তবুও একটি কথা সত্য তাহল যতক্ষন না পর্যন্ত আমরা শান্তি পাই ততক্ষন পর্যন্ত আমাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান প্রভৃতির মত অতি প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলি পূরনের পথে বাঁধা আসতেই থাকবে। আমাদের এই মানসিক ও আত্মিক ভাব শান্ত হলেই আমরা ভৌতিক প্রয়োজনীয়তা গুলো যথাযথ ভাবে লাভ করতে সক্ষম হব। মোট কথা মানসিক শান্তি বা তৃপ্তি পাওয়াটাই হল আমাদের সবচেয়ে বড় প্রয়োজনীয়তা। তাহলে শান্ত সবল মানব মন সংসার জীবনের সকল প্রকার জুরা, ব্যাধি; দুঃখ, দৈন্য প্রভৃতির সমাধান করতে সক্ষম হবে।

প্রাচীন মুনি ঋষিরা মানসিক শান্তি লাভের অনেক উপায় ব্যক্ত করেছেন তার মধ্যে অন্যতম হল বাসস্থান। এই বাসস্থানই হল মানসিক শান্তি এবং সাংসারিক সুখের একমাত্র মুখ্যস্থান। বিশ্বমিত্র, বশিষ্ট, নারদ, অগস্থ্য, বিশ্বকর্মা, জমদগ্নি এবং বৃহস্পতি প্রভৃতি বিশিষ্ট মুনি ঋষিগন উপলদ্ধি করেছিলেন, এই জগতে বেশ কিছু শক্তি আছে যা মানব জীবনে নিরন্তর ক্রিয়াশীল। এই ক্রিয়াশীল শক্তিগুলো আমাদের জীবনকে প্রতিনিয়ত প্রভাবিত করে চলছে। ঐ সমস্ত ক্রিয়াশীলতাকে গভীর ভাবে পর্যবেক্ষন ও অধ্যায়ন করে কিছু পদ্ধতি খুজে পেয়েছেন। তন্মধ্যে প্রধান তম নিয়মই হল বাস্তুশাস্ত্র। আর এই বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম নীতি অনুসরন করে যদি গৃহবাড়ী অফিস আদালত কল কারখানা ইত্যাদি নির্মিত করলে তা মানবজাতীর জন্য সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধিশালী হবে তাতে সন্দেহ নেই। যার দ্বারা মানুষ অবলীলাক্রমে পৌছাবে সাফল্যের শীর্ষে এবং গার্হস্থ্য জীবন পরিপূর্ণ হবে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধিতিতে। বিপরীতে বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম লঙ্ঘন করলে বা বাস্তুদোষ যুক্ত হলে জীবনের সকল সুখ শান্তি বিনষ্ট ছাড়াও জীবনের সকল প্রকার পরিশ্রম, চিন্তা, চেতনা, ক্রিয়াশীলতা সকল কিছুই বিনষ্ট হতে পারে। মানব জীবন হয়ে উঠতে পারে কলুষিত।

বাস্তুশাস্ত্রের সকল নিয়ম নীতির মধ্যে প্রধানতম সূত্রের সাথে এক সঙ্গে গাঁথা তাহল বিশ্বনিয়ামক ঐ নৈসর্গিক ও সমতা বজায় রাখা। আর তা হল সংসার নির্মান কারী শক্তি অর্থাৎ মূল কারিগর।

মানুষের সংসার জীবনে সমন্বয় সাধন করে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি আনতে ঐ শক্তি তা হল বাস্তুশাস্ত্রের নিয়মনীতি বিষয়ক শক্তি। বিপরীতে যদি অসমতার পরিস্থিতি তৈরী বা সমন্বয় এবং সমতা যদি না থাকে (জাষ্ট দাড়িপাল্লার একদিকে ভারি) তাহলে ঐ শক্তি অপশক্তিতে পরিনত হয়ে সংসার জীবনের বিনাশকারী বা উপদ্রব্যের কারন হয়। মানব জীবন অতিবাহিত হয় নিত্য দুর্বিসহ যন্ত্রনার মধ্যে।

এই নিখিল বিশ্ব ব্রক্ষ্মান্ডে যা সত্য তা আমাদের এই মানব শরীরের ক্ষেত্রেও সত্য হবে। তাইতো প্রাচীন মুনি ঋষিরা বলতেন যা নেই পিন্ডতে বা বিন্দুতে তা নেই ব্রহ্মান্ডে বা সিন্ধুতে। অর্থাৎ আমাদের এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে যা কিছু আছে তা একটা পিন্ডের মধ্যেও বর্তমান। তাইতো তারা বিবিধতার মধ্যে একতার দর্শন করেছেন যাকে আমরা বলি বিন্দুতে সিন্ধু দর্শন। আমাদের এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডে যে শক্তি সক্রিয় সেই শক্তিই একটা পিন্ডের মধ্যে একই নিয়মে সমান গতিতে নিরন্তর

ক্রিয়াশীল। আর সেই শক্তি বিশ্ব নির্মানের জন্য যেমন প্রয়োজন তেমনি বিশ্ব ধ্বংসের জন্যও দায়ী। তদ্রুপ আমাদের এই মানব শরীর ও একটি লঘু ব্রহ্মান্ড। আর এই মানব শরীর বা লঘু ব্রহ্মান্ডে যাতে সামঞ্জস্যতা বা সমন্বয় বজায় থাকে তার জন্য আমাদের দেহের মধ্যে এই শক্তির সমন্বয় বা নিয়ন্ত্রন থাকা একান্ত প্রয়োজন। আর বাস্তুশাস্ত্র দেয় সেই সমতা বা সমন্বয় বজায় রাখার ক্ষমতা। মানব শরীরের বাত, পিত্ত ও কফের সমতা বা অসমতার উপরই স্বাস্থ্যের ভাল মন্দ নির্ভর করে। সেই প্রকারে প্রাকৃতিক বা নৈসর্গিক শক্তির সমতা বা অসমতাও একদিকে আমাদের মানব দেহ তথা জীবনকে সুস্থ সবল কিংবা অসুস্থ বা বিকলাঙ্গ করে দিতে পারে। মানব জীবন সফল করার জন্য যেমন শরীর সুস্থতার প্রয়োজন তেমনি বাত, পিত্ত, কফের ভার সাম্যতাকে বজায় রাখা ঠিক একই ভাবে সুস্থ সবল ও সফল জীবন বা সমৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন। পরিবেশের বা বিশ্ব সংসারের নিয়ামক এই শক্তি সমূহকে যথাযথ ভাবে সক্রিয় ও সামঞ্জস্য পূর্ণ করে রাখা। এটা রাখতে একমাত্র সহায়ক শক্তি হল বাস্তুশাস্ত্র বাস্তুশাস্ত্র বাস্তুশাস্ত্র। এছাড়া বিকল্প নেই।

বাস্তুশাস্ত্রের শুভ ও অশুভ দিক

প্রাচীন মুনি ঋষিরা কখনও পাঁকা গৃহবাড়ি বা অট্টালিকায় বসবাস করতেন না। অথচ তারা নিজেদের জীবন সমর্পন করে মনুষ্য জাতীর হিতার্থে বাস্তবাড়ি এবং বাস্তুভিটা সম্পর্কে নানান প্রকার নিয়মনীতি শুভ দিক নির্দেশনা ও অশুভ দোষত্রুটি নির্ণয় করে এবং তা থেকে পরিত্রান পাওয়ার যে পরামর্শ দিয়ে গেছেন তা সংক্ষেপে নিম্নে বর্ণনা করা হল।

সহৃদয় পাঠক বৃন্দ সর্বদা মনে রাখবেন নিম্নে বর্ণিত দু-একটি লক্ষণ মিলিয়ে কোনরুপ শুভত্ব অথবা অশুভত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে হটকারী সিদ্ধান্তনেওয়াটা সমীচিন হবে না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়

বাস্তুর কোন একটি বিচার্য বিষয়ের ভাল বা মন্দ প্রভাব সেটা অন্যান্য কোন প্রভাব হেতু কখনও কখনও কোনও ক্ষেত্রে হয়তোবা প্রকট আকার ধারণ করেনা। সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে সামগ্রিক ভাবে বাস্তুশাস্ত্রের অধিকার ভুক্ত বিভিন্ন দিকের সাথে বিচার বিশ্লেষন করে তবেই স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব। সুতরাং নিম্নের আলোচ্য বিষয়ের অশুভত্ব নিয়ে আতঙ্কিত হবার কোন কারন নেই। বরং যতটা সম্ভব শুভত্ব গ্রহন ও অশুভত্ব বর্জন করতে পারলে মানব জীবন অনেক বেশী সুখ, শান্তি ও অর্থবহ হবে তাতে সন্দেহের কোনরুপ অবকাশ নেই।

মানব জীবনে শরীর স্বাস্থ্য, অর্থ সম্পদ, সন্তান সন্তুতি ছাড়াও সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে বাস্তুশাস্ত্রের অবদান অনস্বীকার্য। বাস্তুর বিভিন্ন প্রকার অশুভত্বের কারনে মানব জীবন তথা সংসার জীবনে নেমে আসে শোক, দুঃখ দুর্দশা, মানসিক অশান্তি হতাশা ব্যর্থতা, দাম্পত্য অসন্তোষ, মামলা মকদ্দমা সহ নানান প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনার বহি প্রকাশ।

বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম নীতি

বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম নীতি মেনে নির্মিত বাসস্থানের পূর্বদিকটা নিচু বা ঢালু হলে সেই গৃহে বসবাস কারীদের দিন দিন আর্থিক উন্নতি, বংশ বৃদ্ধি ছাড়াও ভূমি সম্পত্তি ও যানবাহনাদী লাভ হয়। বিপরীত দিকে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে নিচু হলে সেই গৃহে বসবাস কারীদের নিত্য রোগ ব্যাধির প্রকোপ অপ্রত্যাশিত অর্থনাশ ছাড়াও ঝনভার বর্ধিত হয়। উত্তর দিকটা নিচু হলে সেই গৃহে বসবাস কারীরা। আজীবন অর্থলাভ করে বিশেষ করে জন্ম থেকে বয়স বৃদ্ধির সাথে তাল মিলিয়ে অর্থ যশ, সম্মান, প্রতিপত্তি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। দক্ষিন দিকে নিচু থাকলে সেই গৃহে বসবাসকারীগনের মধ্যে কোনরুপ মনের মিলন থাকেনা। উপরন্তু তারা সর্বদাই মানসিক আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করে। এছাড়া ঐ গৃহে বসবাস কারী গৃহস্বামীর আকস্মিক মৃত্যু, সন্তান নাশ ছাড়াও ঐ গৃহে কেউ বা কেউ আত্মহত্যায় মারা যায়। ঈশান কোন নিচু থাকলে অর্থ সম্পদ, সম্পত্তির সাথে সাথে বিদ্যা বুদ্ধির তীক্ষ্মতা বৃদ্ধি পায় ছাড়াও সাংসারিক সুখ শান্তি বজায় থাকে। অগ্নিকোন নিচু থাকলে সেই বাড়িতে অপশক্তির আশ্রয় থাকে তথা গৃহ বাড়িতে ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করে। কোন প্রকার কল্যাণ তো হয়ই না বরং উপার্জিত অর্থের সিংহ ভাগই চিকিৎসার্থে ব্যয় হয়। নৈঋত কোন নিচু থাকলে গৃহে হিংস্র ও বিষধর জন্তুর আক্রমনে কারো বা কারো মৃত্যু হয়। এবং বায়ুকোন নিচু হলে ঝড়, ঝঞ্জা, জলোচ্ছাস, ভূমিকম্প প্রভৃতিতে সেই গৃহ ধ্বংস হয় ছাড়াও গৃহে অগ্নিকান্ড ঘটার সম্ভাবনা থাকে। তবে এরা পূণরায় মাথা তুলে দাঁড়ায় ও প্রতিষ্ঠিত হয়।

বাসগৃহের পূর্বদিকের জমি উচু থাকলে সন্তানের কারনে মনকষ্ট ছাড়াও সন্তান নাশের সম্ভাবনা থাকে। আর নিচু হলে পারিবারিক কলহ, দাম্পত্য অসন্তোষ সহ মামলা মকদ্দমায় সর্বশান্ত হতে হয়। সমান থাকা শুভ। পশ্চিম দিকের জমি উচু থাকলে সেই গৃহে বসবাস কারীরা ধর্মের প্রতি বিশেষ ভাবে অনুরক্ত থাকে। আর নিচু হলে শারীরিক, পারিবারিক ও মানসিক অশান্তিতে জীবনটাকে অতিষ্ট করে তোলে। উত্তর দিকের জমি উচু হলে মাতুল কুলের ক্ষতি ছাড়াও অপরিনত বয়সে মাতা বা মাতৃ স্থানীয়ের মৃত্যু হয়। আর নিচু হলে অর্থ সম্পদ বৃদ্ধি পেলেও চারিত্রিক কলুষতায় সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। দক্ষিন দিকের জমি উচু হলে সেই গৃহে বসবাস কারীগন পাপ কার্যে লিপ্ত হয়। আর নিচু হলে জ্ঞানের ভান্ডার খুলে যায়, ফলে এরা বিদ্যান হিসাবে জগৎখ্যাত হয়। ঈশান কোন উচু হলে শরীর ক্লেশ, অগ্নিকোন উচু হলে অর্থ সম্পদ বৃদ্ধি, নৈঋত কোন উচু হলে গৃহশান্তি নষ্ট হয় এবং বায়ুকোন উচু হলে সেই গৃহে বসবাস কারীগন স্বপরিবারে বিদেশে স্থানান্তরিত হয়। এছাড়া ঈশান, অগ্নি নৈঋত ও বায়ুকোন নিচু হলে ঠিক বিপরীত ফল প্রদান করে। অবশ্য এগুলো সংশোধন করলে ঐ সকল কু-প্রভাব থেকে মুক্তি লাভ করা সম্ভব হয়।

তিন মাথা পথের মাথার বাড়ি শুভকর নয়। এদের অর্থের অপ্রতুলতা থাকলেও মানসিক শান্তি থাকে না। উপরন্তু ঐ বাড়ির কোন সদস্যের কোন এক সময় দুর্ঘটনা জনিত, বিষপান, গলায় দড়ি অথবা যে কোন উপায়ে আত্মহত্যা জনিত কারনে অপমৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে। এই প্রকার বাড়িতে বসবাস কারীদের কারও সঙ্গে কারও প্রীতির সম্পর্ক থাকেনা। আপন জনদের সহিত কলহ বিবাদ ও বিচ্ছেদ ঘটে ছাড়াও বসবাস কারীদের শরীর স্বাস্থ্যের কারনে প্রচুর অর্থ বিনষ্ট হয়।

গৃহবাড়ির প্রবেশদ্বার অর্থাৎ গেট দু'পাল্লার না হয়ে এক পাল্লার হলে সেই গৃহে বসবাস কারীদের জীবনে সফলতা আসে না। পদে পদে বাঁধা খায় ছাড়াও প্রায়ই অশান্তি লেগে থাকে। অবশ্য স্লাইডিং বা সাইডে ঠেলা দরজায় বাস্তুদোষ থাকে না। আজকাল অবশ্য শহরে জায়গার সঙ্কুলান ঘটাতে সাইড ঠেলা গেট লাগানো হয়। গৃহ বাড়ির প্রধান দরজার উপর বীম থাকলে সেই গৃহে বসবাস কারী গৃহস্বামীর অকল্যান হয় ছাড়াও ছাড়াও ব্যবসা ব্যবসা ব বানিজ্যে লোকসান ও কর্মে অসন্তোষ বা কর্মোন্নতিতে তীব্র বিঘ্ন পেতে হয়। গৃহ মধ্যে বীমের নিচে শয়ন করলে নানান অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। এছাড়া ঐ বীম পায়ের সোজা উপরে থাকলেও অবধারিত পায়ের রোগে ভুগবে তাতে সন্দেহ নেই। কুমারী বা বিবাহ যোগ্য মেয়েরা বীমের নিচে শয়ন করলে বিবাহে বিলম্ব ঘটে বা বার বার বিবাহ। ভেঙ্গে যায়। ডাইনিং টেবিলের উপর বীম থাকলে ঋনভার বর্ধিত হয় ছাড়াও ন্যায্য প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হয়। রান্না ঘরে চুলার উপরে বীম থাকলে অর্থ, সম্পদ ও সম্পত্তিনাশ ছাড়াও গৃহবাড়িতে চোর ডাকাতের উপদ্রব বৃদ্ধি পায় ও প্রচুর ক্ষতিগ্রস্থ হতে হয়।

গৃহবাড়ির এক লাইনে তিনটি দরজা বা জানালা থাকা মোটেও শুভকর নয়। এরুপ গৃহে বসবাস কারীদের সঙ্গে অন্যান্যদের নিত্য কলহ ছাড়াও পারিবারিক কলহ লেগে থাকে। অহেতুক অর্থনাশ নিত্য রোগ ব্যাধির প্রকোপ দেখা দেয়। অবশ্য এরুপ ঘরের মাঝখানের দরজা বা জানালা সরিয়ে দিলে বা পর্দা টানিয়ে দিলে কু প্রভাব নষ্ট হয়। বাস্তুশাস্ত্রের সবচেয়ে গুরুত্ব পূর্ণ হল রান্নাঘর। রান্না ঘরটি দক্ষিন দিকে অথবা দক্ষিন পূর্ব কোনে অবস্থান করা প্রশস্ত। খেয়াল রাখবেন রান্না ঘরটি যেন কোন ভাবেই পূর্বদিকের দেয়াল স্পর্শ না করে। এরুপ হলে সেই গৃহে বসবাস কারী সকলেরই স্বাস্থ্য অনিন্দনীয় থাকে, সেই সঙ্গে সুখ শান্তি ও সমৃদ্ধি আনয়ন করে। ঈশান ও নৈঋত কোনে রান্নাঘর করা মোটেও শুভকর নয়। এতে যিনি রান্না। করেন তার শরীরে নানান প্রকার রোগভোগ, স্বাস্থ্যহানী, চিকিৎসা ছাড়াও নানান পথে অর্থব্যয়, মানুসিক প্রশান্তি নষ্ট হয়। এছাড়া ঐ গৃহে বসবাসরত প্রত্যেকের সঙ্গে অদ্ভুত রকমের অস্থিরতা। তৈরী হয়। এরা বাইরে থাকলে বেশ আনন্দ স্ফুর্তির মধ্যে কাঁটায়, আর ঘরে ঢুকলেই যেন শুরু হয়। মানসিক অশান্তি কলহ বিপদ এমন কি হাতাহাতি পর্যন্ত ঘটে যায়।

। নৈঋত কোনে শোয়ার ঘর হলে সেই গৃহে বসবাসরত গৃহ কর্তার সার্বিক মঙ্গল হয়। পশ্চিম ও দক্ষিন দিকে শোয়ার ঘর থাকলে তারা জীবনে প্রচুর সুখ শান্তি ভোগকরে ও স্বাচ্ছন্দে জীবন কাঁটায়। ইশান। কোনে শোয়ার ঘর মোটেই শুভ প্রদ নয়। এই. ঘরে আত্মহত্যায় জীবনাবসান এর যোগ থাকে। অগ্নিকোনে শোয়ার ঘর থাকলে সেই ঘরে বসবাসকারীদের জীবনে কখনই সুখ শান্তি থাকেনা। উপরন্তু নিত্য অর্থকষ্টে ভুগতে হয়। ঋনের জালে আটকা পড়ে বাড়ী নিলামে বিক্রয় হয়ে যায়।

গৃহবাড়ির পিছন ঘেসে লম্বা যাতায়াতের রাস্তা থাকা অশুভ। এতে ঐ বাড়িতে বসবাস কারীদের জীবনে তাঁদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্ম এবং পরিশ্রম অনুপাতে অর্থ লাভ হয় না। শত্রু ও গুপ্তশত্রুর প্রভাবে ভয় ও হতাশায় ভুগতে হয়। এ সব গৃহবাড়িতে চুরি ডাকাতি প্রভৃতিতে প্রচুর ক্ষতি হয়। জীবনাবসান ঘটে। এক কথায় লম্বা সোজা রাস্তার মুখে সরাসরি দরজা রেখে গৃহনির্মান করা উচিৎ নয়।

গৃহবাড়িতে প্রবেশ পথের উপর লাইট পোষ্ট ট্রান্সফরমার, বড় কোন গাছ গর্ত বা মাটির স্তম্ভ থাকলে ঐ বাড়িতে বসবাস কারী কারও শরীর স্বাস্থ্য ভাল থাকেনা উপরন্ত এরা মামলা মকদ্দমায় পড়ে সর্বশান্ত হয়ে যায়। এছাড়া আয় উন্নতিতে তীব্র বাঁধা পড়ে অযথা অর্থনাশ হয়। সন্তান সন্তুতি নিয়ে তীব্র মনোকষ্ট ছাড়াও সন্তানের কারনে মান মর্যাদা নষ্ট হয়।

বাড়ির পূর্ব দিক ফাঁকা থাকলে সেই বাড়িতে বসবাস কারী গৃহস্থের সর্বাঙ্গীন মঙ্গল হয়। গৃহকর্তার বা পিতার স্বাস্থ্য ভাল থাকে ও দীর্ঘায়ু পায়। পূর্বদিক হল পিতৃস্থান আর উত্তর দিক হল মাতৃস্থান।। মাতৃস্থান ফাঁকা থাকলে মাতার স্বাস্থ্য ভাল থাকে ছাড়াও প্রফুল্ল মনে জীবন কাঁটায়। গৃহ বাড়িতে কেনিরুপ অশান্তি থাকেনা। উত্তরোত্তর সংসারের শ্রীবৃদ্ধি লাভ হয়। মোট কথা গৃহবাড়ির পূর্ব ও উত্তর দিক খোলা থাকা শুধু পিতা মাতা নয় সবার জন্য মঙ্গল কর।

গৃহবাড়ির নৈঋত কোনে জলাধার কুয়ো বা জলের ট্যাঙ্ক থাকলে সেই গৃহে বসবাসকারী গৃহকর্তার যৌনক্ষমতা দিন দিন লোপ পায় ছাড়াও তার স্ত্রীর শরীর স্বাস্থ্যের দরুন প্রচুর অর্থব্যয় হয়। অগ্নি অথবা বায়ুকোনে সেপটি ট্যাঙ্ক করা উত্তম। এছাড়া অন্য জায়গায় করলে সেই সংসারে নিত্য অশান্তি নিত্য রোগ অর্থনাশ ছাড়াও আয় উন্নতি শুভকাজে বার বার বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। বসতবাড়ির ঠিক মাঝখানকে ব্রহ্মস্থান বলে। এই ব্রহ্মস্থান সর্বদা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন ও ফাঁকা রাখা উচিৎ। এই স্থানে গর্ত বা কুয়ো, স্তম্ভ, পাম্প, ময়লা আবর্জনার স্তুপ এমনকি কোনরুপ ভারী জিনিষ পত্র ইঞ্জিন মটর স্থাপন করা উচিৎ নয়। এক কথায় ব্রহ্ম স্থানের ব্যবহার গৃহকর্তা সহ বাড়িতে বসবাসরত সকলের অশান্তি মনকষ্ট ও দুর্ভোগের কারন হয়'।

পূজার ঘর বা ঠাকুর ঘর সব সময় ঈশান কোনে করা শ্রেয়। যদি একই ঘরে পুজার ঘর করার প্রয়োজন পড়ে তাহলে তা উত্তর অথবা পূর্ব দেয়াল বরাবর করাই উত্তম। এতে সংসারের সুখ স্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পায় পায় ও সকলেরই শরীর স্বাস্থ্য উত্তম থাকে। এছাড়া তা গৃহ গৃহ বাড়ির ঈশান কোন সব সময়। ফাঁকা রাখা উচিৎ। মনে রাখবেন উত্তরে ধনপতি কুবের এবং পূর্ব দিকে দেবাদিদেব মহাদেব বা শিবের অধিষ্ঠান। তাই এই কোন যতই পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা যায় ততই সেই সংসারের আয়, উন্নতি, প্রতিষ্ঠা, যশ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।

বাড়ির দক্ষিন দিকে অথবা নৈঋত কোনে ভাড়ার ঘর করা উচিৎ। ঐ ভাড়ার ঘরে ভারী জিনিষ পত্র, থালা, বাসন, গামলা, ডেচকি, হাড়ি, কড়াই, খোস্তা, কোদাল, দুরমুজ, দাঁ, কুড়াল, মেশিনারিজ, যে কোন ভাঙ্গা বা খারাপ যন্ত্রাংশ রাখা মঙ্গলকর। এতে ঐ গৃহে বসবাসরত সকলেরই আর্থিক অবস্থান। তেরছা করে ঝুলানো আয়নায় মুখ দেখলে তার জীবনে চারিত্রিক কলঙ্ক অবধারিত। টিভি কম্পিউটার এর মুখ পূর্বমুখী থাকলে সেই গৃহে কারও সঙ্গে কারও মতের মিল থাকে না উপরন্ত স্বামী স্ত্রীর মধ্যকার অশান্তিতে পারিবারিক জীবন বিষময় হয়ে ওঠে।

বাড়ির প্রবেশ দ্বারে জুতা রাখা অমঙ্গলকর। এতে অযথা অর্থব্যয় ছাড়াও ঋনভার বর্ধিত হয়। পূর্বমুখী হয়ে রান্না করলে সেই রান্না অত্যন্ত সুস্বাদু হয়। পশ্চিম বা উত্তর মুখী হয়ে রান্না করলে তাদের সংসারে কখনই অভাব ঘোচেনা। নানান কলহ বিবাদ ছাড়াও মামলা মকদ্দমায় পড়ে গৃহবাড়ি ভূমি সম্পত্তি নাশ হয়। পূর্ব বা উত্তর মুখী বসে পড়াশুনা করলে সেই শিক্ষার্থীদের মনের একাগ্রতা বৃদ্ধি পায় ও স্মৃতিশক্তি বাড়ে মনের অস্থিরতা কমে।

প্রকল্প, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মুখ উত্তর বা পূর্বদিকে হওয়া মঙ্গল কর। দোকানে দেবদেবীর মূর্তি বা ছবি উত্তর পূর্ব পাশে বা ঈশান কোনে রাখা উত্তম এতে ব্যবসা বানিজ্যে প্রচুর লাভবান হওয়া যায়। বিপরীতে ঐ কোনে কোন ভারী মাল পত্র বা পুরানো বদলানো মাল জিনিস রাখলে বিপরীত ফল প্রদান করে। আশানুরুপ ব্যবসায়ীক শ্রীবৃদ্ধি হয়না। উপরন্তু এক সময় ব্যবসা বানিজ্য বন্ধ পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে। দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে দোকানী যদি উত্তর বা পূর্বমুখী বসে দোকানদারী করে তাহলে সেই ব্যবসায় সুনাম সুখ্যাতি ও অর্থলাভ হয়। ডাক্তার, উকিল, জ্যোতিষী, আর্কিটেকচারসহ যে কোন পেশাগত ব্যবসায়ীদের দক্ষিণ মুখী বসা শ্রেয়। এতে ঐ ব্যবসায় প্রচুর সুনাম, যশ ও অর্থলাভহয়। তাতে সন্দেহ নেই। অগ্নিকোনে মুখ করে বসে ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করলে সেই ব্যবসায়ীর স্বাস্থ্যহানী, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি-ডাকাতি, শত্রুর উৎপাতসহ আগুন লাগার ভয় থাকে। এ সকল বিষয়ের কোনটি না ঘটলেও ঐ ব্যবসায়ীর মনে আগুন লাগবে তাতে সন্দেহ নেই।

নারীর বসন, বিলাসদ্রব্য, গহনা সহ যে কোন নারীর ব্যবহার্য জিনিস পত্রের দোকান দক্ষিণমুখী হওয়া উত্তম। এছাড়া নারী ব্যবসায়ীদের জন্য দক্ষিণমুখী দোকান বিক্রয় বাণিজ্যের জন্য আদর্শ ও শুভমনে রাখবেন কোন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মালিক কর্মচারী কখনও মুখো মুখী অবস্থানে বসবেন না। এতে ঐ ব্যবসা বানিজ্য দ্রুত লাটে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। এমনকি এক অফিসে বড় বাবু এবং কর্মচারীগন কখনও মুখোমুখী বসতে নেই। এতে মালিক কর্মচারীর মধ্যকার মনের মিলন থাকেনা বরং এদের মধ্যকার প্রীতির সম্পর্কে ফাটল ধরে। এমনকি এক সময় এদের মধ্যে ঘোরতর শত্রুতা শুরু হয়। আর একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কথা তাহল কাঁটা গাছ যত সুন্দর ও মূল্যবান হোক না কেন এটা গৃহবাড়ি তথা ব্যবসা বানিজ্য স্থানে রাখা উচিৎ নয়। এটা শুধুমাত্র ব্যবসা বানিজ্য নয় বিদ্যা, কর্ম উন্নতিতে বাঁধা ছাড়াও সার্বিক প্রতিকুল এবং স্বাভাবিক সুন্দর জীবন বিকাশে একমাত্র রুদ্ধকারী।

ব্যবসা বানিজ্যের দেবতা বা সিদ্ধিদাতা গনেশের ছবি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রাখা মঙ্গল কর তবে সেই গনেশ মূর্তির ডান দিকে মোড়ানো হওয়া চাই। এতে অর্থ, সুনাম, যশ, খ্যাতি ও সমৃদ্ধি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়।

বাস্তুশাস্ত্রে আর একটি বিষয়ের গুরুত্ব সর্বাধিক তা হল গৃহবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রভৃতির রং। সাদা রং স্মিগ্ধ শুভ্র ও পবিত্রতার প্রতীক। এই রং বিদ্যা, জ্ঞান, শান্তি, শুদ্ধতা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া লাল রং যশ, পরাক্রম, তেজস্বীতা, ও গৌরবের অস্তিত্ব বহন করে। এছাড়া মানুষের মনে স্নেহ মমতা, শক্তি, সুস্বাস্থ্য, সানন্দ উৎসাহ ও স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দ প্রকাশের রং হল লাল। গৈরিক রং ত্যাগ, বৈরাগ্য, আধ্যাত্ম, সংযম এর প্রতীক। সবুজ রং মনের মাধুরী মিশানো অফুরন্ত, প্রশান্তি, অঢেল সুখ ও শীতল মানসিক শক্তির কারক। হলুদ রং জাগতিক ও পারমার্থিক জ্ঞান, সুখ, শান্তি, একাগ্রতা, উদ্ভাবনী শক্তি ও জ্ঞানের আগ্রহ বৃদ্ধি করে। বাসন্তী রং মানসিক মন প্রফুল্ল ও মস্তিস্ককে উত্তেজিত করে। নীল, কালো, খয়েরী, বাদামী, রং মানসিক অশান্তি দূর করে মনে প্রশান্তি আনে। পোষাক পরিচ্ছদে চড়া বা গাঢ় রং এবং পোষাকাদী পরিধান না করাই উত্তম।

উপসংহার: সর্বোপরি বলব বাস্তুশাস্ত্রের প্রাঞ্জল বিশাল, এত সংক্ষিপ্ত আকারে এ সব বিষয়ে আলোচনা সম্ভব নয়। তাই বিশদ রূপে জানতে এবং অশুভত্বের প্রতিকার করার প্রয়াসে আমার সাথে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে ছাড়াও আমার বাস্তুশাস্ত্র সম্পর্কীয় অবিশ্বরণীয় ফলদায়ী গ্রন্থ "সুখের মূলে বাস্তুশাস্ত্র" নামক গ্রন্থটি পড়লে বিস্তারিত জানতে বুঝতে ও অশুভ প্রতিকার করতে সক্ষম হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url