সাধন ভজনে সঠিক আসন: কোনটি সেরা ও কেন? নির্দেশিকা

বেদ, পুরান ও তন্ত্রশাস্ত্রে সাধন ভজনে আসনের গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সাধন ভজনে কোন আসন কিরূপ ফলদান করে তা নিম্নে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হল।
সাধন ভজনে আসন: কোনটি সেরা? pdf
সাধন ভজনে আসন: কোনটি সেরা?


সাধন ভজনে আসন ও ফুল রহস্য

সাধন ভজনে আসন ও ফুল—দুটিই আধ্যাত্মিক জীবনের অপরিহার্য উপাদান। শাস্ত্রে বলা হয়েছে, সাধকের মন যেন স্থির, পবিত্র ও সুগন্ধিময় হয়; সেই জন্যই আসন ও ফুল একসঙ্গে ব্যবহৃত হয়। সঠিক আসনে বসলে শরীর অচঞ্চল থাকে এবং মন দ্রুত স্থিরতা লাভ করে। কুশাসন, উল আসন বা পরিচ্ছন্ন কাপড়ের উপর বসা সাধনার শক্তিকে বৃদ্ধি করে, কারণ এটি দেহের শক্তিক্ষেত্রকে ভারসাম্যপূর্ণ রাখে ও নাড়িচক্র সমতল করে। অপরদিকে ফুলের রয়েছে নিজস্ব সূক্ষ্ম শক্তি। প্রতিটি ফুলের সুগন্ধ, রং ও নির্মলতা মানুষের চিত্তকে প্রশান্ত করে এবং দেবতাতত্ত্বকে আহ্বান করে। যেমন—পদ্ম পবিত্রতার প্রতীক, বেলফুল শিবতত্ত্ব জাগ্রত করে, আর মালতী বা জুঁই মন ও ইন্দ্রিয়কে শুদ্ধ করে। সাধনীর সময় ফুলের উপস্থিতি মনকে কোমল, ভক্তিময় ও ঈশ্বরভাবনায় স্থির করে তোলে। তাই সাধনা বা ভজন করার সময় সঠিক আসনে বসে দেবতার প্রিয় ফুল অর্পণ করলে ভক্ত ও ঈশ্বরের মধ্যে এক বিশেষ শক্তিসূত্র তৈরি হয়, যা সাধনার ফল দ্রুততর ও গভীরতর করে। আসন শরীরকে স্থিরতা দেয়, এবং ফুল মনকে পবিত্রতা দেয়—এই দুইয়ের মিলনেই সাধন ভজনে সৃষ্টি হয় এক অনন্য আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা।

কাঠের আসন পিঁড়ি বা কাঠের চেয়ারে বসে জপ

কাঠের আসন পিঁড়ি বা কাঠের চেয়ারে বসে জপ সাধনা সর্বদাই নিষ্ফল হয়। এরূপ আসনে বসে পূজা পার্বন প্রভৃতি করলেও দেবতারা সেই পূজা গ্রহণ করেনা। উক্ত আসনে বসে মন্ত্রজপ, সাধনা বা পূজা পার্বন করলে জপকারীর জীবনে শোচনীয় পরাজয় ছাড়াও দুর্ঘটনায় জীবনাবসান এর যোগ থাকে এক্ষেত্রে কাঠের আসনের উপর যে কোন পরিস্কার কাপড় বা কাপড় দ্বারা সেলাই করে তৈরী আসন ব্যবহার করলে অশুভ দোষ নাশ হয়। অভাবে কাগজ লাগানো যেতে পারে। তবে রং বেরঙের কাঠের আসন সর্বদা পরিত্যাগ করবেন।

মাটিতে বা ফ্লোরে বসে জপ

মাটিতে বা ফ্লোরে বসে জপ, তপ বা পূজা পার্বন করলে সেই জপকারীর জীবনে মানসিক, শারীরিক, আর্থিক ও সাংসারিক নানান ক্লেশ গ্লানি ছাড়াও অশুভ শক্তিতে জীবন বিপন্ন হয়। দেহমনে সর্বদা অপআত্মা ভর করে চলে। পাতার তৈরী আসনে বসে সাধন ভজন ও পূজাপার্বন করলে মানসিক একাগ্রতা নষ্ট হয়। তবে পদ্ম পাতার আসনে বসে জপ সাধনা করলে জপ কারী সহজে সিদ্ধিলাভ করে এবং পুজারী দেবতাদেরও বরনীয় হয় ও দেবতারা তুষ্ট হয়। পাথরের আসনে বসে জপ সাধনা ও পূজা পার্বন করলে জপকারী অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়ে ক্রমান্নয়ে মৃত্যুর দিকে অগ্রসর হয়। বাঁশের তৈরী আসনে বসে জপসাধনা ও পূজাপার্বন করলে স্বাস্থ্যহানী, মানসিক নসিক অশান্তি অশান্তি ছাড়াও ছাড়াও দাম্পত্য অসন্তোষ চিরস্থায়ী বিচ্ছেদে পরিণত হয়। সন্তানগন জপ কারীর অজ্ঞাবহ থাকে না।

পশুর চামড়ার আসনে বসে জপ

পশুর চামড়ার আসনে বসে জপ সাধনা ও পূজাপার্বন করলে মনের একাগ্রতা নষ্ট হয় ছাড়াও সাধন ভজন হয় কিন্তু ফল হয় না। বাঘের চামড়ার আসনে বসে জপ সাধনা করলে যাবতীয় ভৌতিক ও পারলৌকিক বিষয়ে সিদ্ধিলাভ করা যায়। এছাড়া মারন, উচ্চাটন, স্তম্ভন প্রভৃতি ক্রিয়ায় উত্তম ফল লাভ হয়। মৃগ বা হরিনের চামড়ার আসনে বসে সাধন ভজন ও পূজা পার্বন করলে সার্বিক সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধিসহ সাধনকারী সহজে সিদ্ধিলাভকরে। দেবতারা সহজে সাধন কারীর প্রতি সুপ্রসন্ন হয়। ভেড়ার লোম দ্বারা তৈরী আসনে বসে সাধন ভজন করলে দ্রুত মানসিক চঞ্চলতা দুর হয়। দেহ মনে প্রশান্তি আসে ও সাধন ভজন জীবনের সার্বিক ও উন্নতিতে সহায়ক হয়। তন্ত্রশাস্ত্রে একে শুদ্ধ ও লাভদায়ী আসন বলা হয়।

বেতের আসনে বসে সাধন

বেতের আসনে বসে সাধন ভজন ও পূজাপার্বন করলে শীঘ্রই মানসিক শান্তি আসে ও সংসার সুখ সম্পদে পরিপূর্ণ হয়। কুশাসনে বসে সাধন ভজন করলে ভূত, প্রেত, জ্বীন, অশুভ আত্মার প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া যায়। সাংসারিক ও মানসিক অশান্তি বিদুরিত হয়। শ্রাদ্ধ, তর্পন, পিন্ডদান তথা সকল প্রকার পারলৌকিক ক্রিয়াকলাপে কুশাসন শ্রেষ্ঠ আসন। উক্ত প্রকার কর্মাদিতে শীঘ্রই শুভফল প্রাপ্তি ঘটে। এছাড়া তন্ত্রশাস্ত্রে কুশাসনকে শুদ্ধ ও পবিত্রতার প্রতীক বলে কল্পনা করা হয়। পাট বা পাটবস্ত্রের আসনে বসে সাধন ভজন ও পূজাপার্বন ফলহীন হয়। তবে খোলা আকাশের নিচে পাহাড়, পর্বত, জঙ্গল প্রভৃতি স্থানে পাটের আসনে বসে সাধন ভজন শুভফল প্রদান করে। পাট বস্ত্রের উপর কাপড় দ্বারা সেলাই করা আসুন ব্যবহার করা চলে তবে এ আসন শুদ্র বর্ণের। হরিণের চামড়া ও পদ্ম পাতার আসন ব্রাহ্মণ বর্ণের। ব্যাঘ্রাসন ক্ষত্রিয় বর্ণের। ভেড়ার লোম ও কুশাসন বৈশ্য বর্ণের।

ভুল আসনের ক্ষতি

ভুল আসনে সাধনা বা ধ্যান করলে মন ও শরীর উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সঠিক ভঙ্গিতে না বসলে মনোযোগ সহজেই নষ্ট হয়ে যায়, ফলে জপ বা ধ্যান গভীর হয় না এবং চিত্ত বারবার বিচলিত হতে থাকে। ভুল ভঙ্গি পিঠে অস্বস্তি ও ব্যথা সৃষ্টি করে, যা দীর্ঘমেয়াদে মেরুদণ্ডে চাপ ফেলতে পারে। এছাড়া শ্বাসপ্রশ্বাসের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত হয়—গভীর শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে, ফলে প্রাণশক্তির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এসব কারণে ধ্যানে অস্থিরতা তৈরি হয় এবং মন স্থির না থেকে ছটফট করতে থাকে। তাই নিয়মমাফিক, আরামদায়ক ও শাস্ত্রসম্মত আসনে বসে সাধনা করা অত্যন্ত জরুরি।

আসন সম্পর্কে আধুনিক বিজ্ঞান কি বলে?

আধুনিক বিজ্ঞানও সঠিক আসনে বসে সাধনা বা ধ্যান করার গুরুত্বকে স্বীকার করে। গবেষণায় দেখা গেছে, সোজা হয়ে বসলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন প্রবাহ স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায়, ফলে মন আরও সতেজ ও সক্রিয় থাকে। দীর্ঘ সময় স্থির হয়ে বসার অভ্যাস মনোযোগ বৃদ্ধি করে এবং মস্তিষ্কের কনসেনট্রেশন-সংক্রান্ত কার্যক্ষমতা উন্নত করে। পাশাপাশি, সঠিক বসার ভঙ্গি মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে—কারণ শরীর স্থির থাকলে স্নায়ুতন্ত্র শান্ত হয় এবং স্ট্রেস হরমোনের মাত্রাও কমে আসে। তাই আধুনিক বিজ্ঞান শাস্ত্রের কথাই প্রমাণ করে: সঠিক আসন শুধু আধ্যাত্মিক সাধনাই নয়, মন ও শরীরেরও উপকার সাধন করে।

FAQ 

১. সাধনায় কোন আসন সবচেয়ে ভালো?

উত্তর: সিদ্ধাসন ধ্যানের জন্য সর্বোত্তম। তবে নবীনদের জন্য সুখাসন ব্যবহারযোগ্য।

২. পদ্মাসন কি সব ধরনের সাধনার জন্য ব্যবহার করা যায়?

উত্তর: না, মূলত গভীর ধ্যানের জন্য আদর্শ। জপ বা ভজনের জন্য অন্য আসন আরও উপযোগী।

৩. সাধনায় কোন দিক মুখ করে বসা উচিত?

উত্তর:পূর্বমুখী বসা সর্বোত্তম।

৪. কেন কুশাসন ব্যবহারের কথা বলা হয়?

উত্তর: কুশ শরীরের বিদ্যুৎশক্তি স্থিতিশীল করে ও মনোসংযোগ বাড়ায়।

৫. নবীন সাধক কোন আসন বেছে নেবেন?

উত্তর: সুখাসন অথবা অর্ধপদ্মাসন।

আসন অবস্থায় পূজোতে কি কি করণীয়

গৃহের নিত্যপূজাতে পূজকের মনের প্রফুল্লতা জন্মে এমন যে কোন পুষ্প দেবতাদের অর্পন করা যায়। মনে রাখবেন পুষ্পের বিচার শুধুমাত্র কাম্যপূজা সম্বন্ধে নিত্যপূজা সম্বন্ধে নয়। নিত্য পূজায় দেবদেবীর গলায় পরানো ফুলের মালা প্রত্যহ পরিবর্তন করা বা পরের দিন খুলে ফেলা কর্তব্য। দিনের পর দিন শুকনা মালা পরিধানে থাকলে পূজারীর অপ্রত্যাশিত অর্থনাশ, শুভকাজ তথা প্রায় শেষ হয়ে আসা কাজ পন্ড, পারিবারিক সুখ শান্তি বিনষ্ট তথা চিকিৎসার্থে প্রচুর অর্থব্যয় হয়। গৃহে অলক্ষ্মী বাসা বাঁধে।

জল দ্বারা ধৌত করা ফুল কখনই দেবদেবীর পূজায় নিবেদন করা উচিৎ নয়। জলে ধোয়ামাত্রই সেই ফুল নির্মাল্য অর্থাৎ আশীর্বাদী ফুল বা প্রসাদ হয়ে যায়। ধৌত করা ফুল দ্বারা পূজা করলে সেই পূজায় দেবতারা তুষ্টতো হয়ইনা বরং ক্ষিপ্ত হন। নারায়ন পূজায় উগ্রগন্ধ বা গন্ধহীন পুষ্প ও জবা ফুল দেওয়া অনুচিৎ। এতে নারায়ন ক্ষিপ্ত হয়ে অভিশাপ প্রদান করেন। ফলে গৃহ শান্তি বিনষ্ট হয়।

বিল্বপত্র, তুলসীপাতা, দুর্বা পলাশ ফুল ও পদ্মফুল কখনই বাসি হয়না। এগুলো একদিন সংগ্রহ করে কয়েকদিন পরও দেবতাদের উদ্দেশ্যে নিবেদন করা যায়। মনে রাখবেন বৃন্তহীন তুলসী পাতা দেবতারা গ্রহণ করেন না। নখ দ্বারা তুলসী পাতা, বেল পাতা ও দুর্বা উদ্দেশ্যে নিবেদন বদন করলে ক্ষমাহীন পাপ হয়। পূজারী উৎকট উদ্ভট ঝামেলায় পড়ে ছাড়াও অজ্ঞাত রোগে ও দুর্বা কাঁটলে তা পরিশুদ্ধ থাকেনা। এগুলি দেবতাদের আক্রান্ত হয়। শিব পূজায় ছেড়া, কাঁটা, একফলক, দ্বিফলক, ত্রিফলক যেকোন বিল্বপত্রই শুদ্ধ। এগুলি দেবাদিদের শিব সহজেই গ্রহণ করে থাকেন। এক মাত্র দূর্গা পূজা ব্যতিত সকল পূজায়ই দুর্বা প্রধান উপকরণ। দেবী দূর্গা বাদে সকল দেবতারাই দুর্বায় সন্তুষ্ট হন। দূর্গা পূজার অর্থে শুধুমাত্র দুর্বার ব্যবহার

প্রশস্তদুর্বা যেকোন দেবার্চনায় শুকনা বাসি হলেও নিবেদন করা চলে এতে কোন রূপ দোষ নেইগনেশসূর্য্য পূজায় বিল্বপত্র লাগেনাঅন্য সকল পূজা পার্বনে বিল্বপত্র দেওয়া যায়অপ্রস্ফুটিত ফুল বা কড়ি, অপরিপক্ক ফল দেবতাদের পূজায় নিবেদন করতে নেই। দেবতারা এসব পূজা গ্রহণ করে না। তবে শষা, সুপারী, আম্রগুটি, চালকুমড়ী সহ বলির ফলসমূহ কাচা নিবেদন করা চলে।

করবী ফুল সাদা, হলুদ বা রক্ত করবী যাই হোক এটি নারায়ন পূজার সর্বোৎকৃষ্ট ফুল। করবীফুলের পূজায় সকল দেবদেবী তুষ্ট হন। এছাড়া নারায়ণ পূজায় কবরীফুল প্রদান করলে সমস্ত দেবদেবীর পূজার ফল লাভ করা যায়। নারায়ন বলেছেন একশত করবীফুল দ্বারা আমার পূজা অর্চনা করলে আমার মতন রূপ ও শক্তিধর হবে। আমি একমাত্র করবী ফুলের মধ্যেই অবস্থান করি এবং তুষ্ট হই।

বাজার থেকে কিনে আনা যে কোন ফুল, ফল, মিষ্টি, দধি, ঘৃত, মধু পথে যে কোন রূপ ছোয়া ছুয়িতে দোষ নেই। এগুলি পথে বাতাসেই পরিশুদ্ধ হয়। এগুলি দেবদেবীর উদ্দেশ্যে নিবেদন করায় কোনরূপ দোষনেই। তবে বাড়ীতে আনার পর ছোয়াছুয়ি বা পায়ে লাগলে তা পরিত্যাগ করা উচিৎ। শিউলি ফুল রাস্তার উপর পড়ে থাকলেও তা কুড়িয়ে এনে পূজায় দেওয়া চলে। কিন্তু ধৌত করলে তা নির্মাল্য বা প্রসাদি হয়ে যায়।

আম্রপল্লব সহ পঞ্চপল্লব ধৌত না করে দেবদেবীর পূজায় দেওয়া উচিৎ নয়। হোমের কাঠ ও পাতা ধুয়ে শুকিয়ে তারপর হোমযজ্ঞে নিবেদন করতে হয়। দেবদেবীর পূজার সামনে নৈবিদ্যাদি সহ যে কোন প্রসাদ উপুড় করা কলার পাতার উপর সজ্জিত করলে দেবতারা দ্রুত স্থান ত্যাগ করে অর্থাৎ সেই পূজা নিষ্ফল হয়। কলার পাতা ধৌত করে এবং চিৎকরে পাততে হয়।

পূজা অন্তে মন্দির বা পূজার ঘর থেকে পিছন ফিরে বের হতে নেই। এতে দেবতাগন তৎক্ষনাৎ স্থান ত্যাগ করে। ফলে পুজারী সহ সকলের অমঙ্গল হয়। দেবতাদের দিকে মুখকরে মন্দির ত্যাগ করতে হয়। প্রত্যান্তরে তিন পা পিছিয়ে পিছন ঘোরা চলে। অনেক বড় বড় মন্দিরে এসব নিয়ম প্রচলিত আছে।

উপসংহার: সাধন ভজনে সঠিক আসন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি নবীন হন, সুখাসন বা অর্ধপদ্মাসন বেছে নিন। অভ্যস্ত হলে সিদ্ধাসন ও পদ্মাসনে ধ্যান করলে সর্বোত্তম ফল লাভ হয়।​ 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url