দেবদেবীর পূজার সাধারণ ক্রম –পূজার সম্পূর্ণ নির্দেশিকা

দেবদেবীর পূজা কী?

দেবদূতের পূজা বলতে সাধারণত হিন্দু ধর্মীয় প্রথাকে বোঝায়, যেখানে বিভিন্ন দেবদেবীর উপাসনা করা হয়। এটি একটি আধ্যাত্মিক অনুশীলন যার মাধ্যমে ভক্তরা ঈশ্বরের সাথে সংযোগ স্থাপন করে, আশীর্বাদ প্রার্থনা করে এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। পূজার মধ্যে বিভিন্ন রীতিনীতি অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যেমন- মন্ত্র উচ্চারণ, প্রার্থনা করা, ফুল, ফল, মিষ্টি ইত্যাদি নিবেদন করা এবং আরতী করা। এটি ব্যক্তিগতভাবে বাড়িতে বা মন্দিরে সম্পাদন করা যেতে পারে। বিশ্বাস করা হয় যে পূজা করা মন ও আত্মাকে শান্তি দেয়, পাশাপাশি ধর্মীয় চেতনা বজায় রাখতে সহায়তা করে। এটি হিন্দু সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে চলে আসছে।

দেবদেবীর পূজা


পৌরাণিক বিধানে পূজার ক্রম

প্রতিমা পূজা, দ্বিবিধ : পৌরাণিক ও তান্ত্রিক, পৌরাণিক পূজা বৈদিক ও পৌরাণিক বিধানে এবং তান্ত্রিক পূজা তান্ত্রিক বিধানে করতে হয়। এখানে পৌরাণিক বিধানে পূজার ক্রম লেখা হল। অন্যান্য পূজাও প্রায় এই রূপ। বিশেষ বিধি পরবর্তী পদ্ধতিতে দ্রষ্টব্য।

অনেক বিষয়ই এ পঞ্জিকায় "সাধারণ পূজা পদ্ধতি” তে লিখিত আছে। অলিখিত বিষয়গুলি যেকোন মূলগ্রন্থে দ্রষ্টব্য।

প্রতিমা থাকলে প্রতিমাকে পশ্চিম মুখে বা দক্ষিণ মুখে বসিয়ে তার চারকোণে চারটি তীর পুতে সুত্র বেষ্টনে করবে। প্রতিমার সম্মুখে ঘটস্থাপন করবে এবং ঘটের বামদিকে কুগুহাঁড়ী বসাবে। পরে পূর্ব বা উত্তর মুখে শুদ্ধাসনে বসিয়া নিম্নোক্ত ক্রমে পূজা করবে।

(১) আচমন 

(২) বিষ্ণুস্মরণ 

(৩) স্বস্তিবাচন 

(৪) স্বস্তিসুক্ত 

(৫) সাক্ষ্যমন্ত্র 

(৬) গন্ধাদির অর্চ্চনা 

(৭) সূর্য্যার্য্যদান 

(৮) নারায়ণাদি অর্চনা 

(৯) সঙ্কল্প 

(১০) সঙ্কল্পসুক্ত

(১১) বরণ- গন্ধাদির দ্বারা প্রীতি উৎপাদন পূর্ব্বক কর্ম করতে নিযুক্ত করাকে বরণ বলে। স্বয়ং পূজা করলে অথবা পুরোহিত নিজেই যজমানের নামে সঙ্কল্প করলে বরণ করতে হয় না। যজমান স্বয়ং সঙ্কল্প করে পুরোহিত দ্বারা পূজা করালে তাকে বরণ করবে। পুরোহিত বৃত হওয়ার পর নিজে আচমনাদি করে নিম্নোক্ত ক্রমে যজমানের পক্ষে পূজা করবে।

(১২) ঘটস্থাপন 

(১৩) সামান্যার্ঘ্যস্থাপন 

(১৪) জলশুদ্ধি 

(১৫) আসনশুদ্ধি 

(১৬) করশুদ্ধি

 (১৭) পুষ্পশুদ্ধি

(১৮) গুরু পংক্তি প্রণাম 

(১৯) ঘন্টাস্থাপন 

(২০) দ্বারদেবতা পূজা 

(২১) বিঘ্নাপসারণ 

(২২) ভূতাপসারণ বা মাষভক্ত বলিদান 

(২৩) প্রাণায়াম 

(২৪) অঙ্গন্যাস 

(২৫) করন্যাস। ধ্যান, মানসপূজা, পুন্যান, আবাহন পূর্বক দশোপচারে বা পঞ্চোপচারে অভাবে কেবল গন্ধপুষ্প দ্বারা যথাক্রমে 

(২৬) গণেশ 

(২৭) শিবাদি পঞ্চ দেবতা (শিব, সূর্য্য বহ্নি, কেশব, কৌশিকী) 

(২৮)আদিত্যাদি নবগ্রহ (আদিত্য, সোম, মঙ্গল, বুধ, বৃহস্পতি, শুক্র, শনি, রাহু, কেতু) 

(২৯) ইন্দ্রাদিদশদিক পাল (ইন্দ্র, অগ্নি, যম, নৈঋত, বরুণ, বায়ু, কুবের ঈশান, ব্রহ্ম, অনন্ত), 

(৩০) মৎস্যাদি দশাবতার (মৎস, কুর্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, পরশুরাম, শ্রীরাম, বলরাম, বুদ্ধ, কঙ্কি) 

(৩১) সর্বদেব 

(৩২) সর্বদেবী 

(৩৩) শ্রীগুরুর আর্চনান্তে 

(৩৪) ভূতশুদ্ধি 

(৩৫) মাতৃকান্যাস 

(৩৬) বীজমন্ত্রে প্রাণায়াম 

(৩৭) পীঠন্যাস 

(৩৮), ঋষ্যাদিন্যাস 

(৩৯) করন্যাস 

(৪০) অঙ্গন্যাস 

(৪১) ব্যাপকন্যাস 

(৪২) ধ্যান 

(৪৩) মানস পূজা 

(৪৪) বিশেষার্ধ্যস্থাপন 

(৪৫) পীঠপূজা 

(৪৬) পুনধ্যান 

(৪৭) আবাহন 

(৪৮) চক্ষুদান (প্রাণ প্রতিষ্ঠা) 

(৪৯) অধিবাস 

(৫০) দশোপচারে পূজা (পাদ্য, অর্ঘ্য আচমনীয়, স্নানীয়, পুনরাচমনীয়, গন্ধ, পুষ্প, ধূপ দীপ, নৈবেদ্য)।

(৫১) ষোড়শোপচারে পূজা- (আসন, স্বগত, পাদ্য, অর্ঘ্য, আচমনীয়, মধুপর্ক, পুনরাচমনীয়, স্নানীয় বসন, আভরণ, গন্ধ, পুষ্প, ধুপ, দীপ, নৈবেদ্য, তাম্বুল ও বন্দনা। এ সময় নৈবেদ্যের পরে ফলমুলাদি ও অন্যান্য উপাচার উৎসর্গ করে দিতে হবে এবং পানার্থ জল দিতে হবে।

(৫২) আবরণ পূজা (সরস্বতী পূজার ক্ষেত্রে যথাশক্তি বিষ্ণু ও লক্ষীর পূজা করে লেখনী মস্যাধার পুস্তক ও বাদ্যযন্ত্রের পূজা করবে। লক্ষী পূজার ক্ষেত্রে যথাশক্তি নরায়ণ, ইন্দ্র ও কুবেরের পূজা করবে।

(৫৩) পুষ্পাঞ্জলিদান- যে পূজায় বলির বিধান আছে সে স্থলে এ সময়ে বলি উৎসর্গ করে বলির ব্যবস্থা করতে হবে।

(৫৪) পঞ্চোপচারে পূজা (গন্ধ, পুষ্প, ধুপ, দীপ, নৈবেদ্য) 

(৫৫) পুষ্পাঞ্জলি, (৫৬) প্রাণায়াম, (৫৭) অঙ্গন্যাস, (৫৮) করন্যাস 

(৫৯) মূলমন্ত্র যথাশক্তি জপ 

(৬০) জপ বিসর্জন 

(৬১) প্রাণায়াম 

(৬২) অঙ্গন্যাস 

(৬৩) করন্যাস 

(৬৪) আরতি 

(৬৫) প্রদক্ষিণ 

(৫৬) স্তবপাঠ 

(৬৭) প্রণাম 

(৬৮) ভোগদান 

(৬৯) হোম 

(৭০) দক্ষিণা 

(৭১) অচ্ছিদ্রাবধারণ 

(৭২) বৈগুণ্য সমাধান। সায়ংকালে আরতি ও বৈকালিক দান। পরদিন প্রাতঃকালে পঞ্চোপচারে পূজা করে দধিকড়ম্ব নিবেদন করে আরতি সমাপনান্তে বিসর্জন করবে পরে নির্মাল্য বাসিনীর পূজা, সর্ব্বশেষে শান্তিকর্ম।

সাধারণ প্রশ্নোত্তর (FAQ)

প্রশ্ন: বাড়িতে পূজা করতে কি ব্রাহ্মণের প্রয়োজন?
উত্তর: সাধারণ ধর্মীয় পূজা যে কেউ শুদ্ধ মনে করতে পারেন।

প্রশ্ন: কোন সময় পূজা করা উত্তম?
উত্তর: প্রভাতকাল বা সন্ধ্যা সবচেয়ে শুভ।

প্রশ্ন: মেয়েরা কি পূজা করতে পারেন?
উত্তর: অবশ্যই, শাস্ত্রে এর কোন নিষেধ নেই।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url