চোখের গঠন অনুযায়ী নর-নারীর ভাগ্যফল

চোখের গঠন অনুযায়ী নর-নারীর ভাগ্যফল: প্রাচীন শাস্ত্রের আলোকে বিস্তৃত বিশ্লেষণ

মানুষের চোখ তার মনের প্রতিচ্ছবি। চোখের গঠন অনুযায়ী ভাগ্যফল নির্ণয় করার ধারণা বহু প্রাচীন। চোখের আকার, রং, দৃষ্টি এবং গঠন একজন মানুষের স্বভাব, চরিত্র ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ধারণা দেয়। যেহেতু. মানুষের চোখকে বলা হয় ‘মনের দর্পণ’ তাই প্রাচীন শাস্ত্র থেকে শুরু করে আধুনিক মুখাবয়ব বিশ্লেষণ পর্যন্ত—চোখের গঠন, আকার, রং ও দৃষ্টি একজন মানুষের স্বভাব, চরিত্র ও সম্ভাব্য ভাগ্য সম্পর্কে অনেক ইঙ্গিত দেয়। নর-নারীর ব্যক্তিত্ব বোঝার ক্ষেত্রে চোখের বৈশিষ্ট্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চোখের গঠন অনুযায়ী ভাগ্যফল
চোখ দেখে মানুষ চিনুন


এই লেখায় চোখের বিভিন্ন গঠনের ভিত্তিতে নর-নারীর স্বভাব ও ভাগ্যফল সহজ ভাষায় তুলে ধরা হলো।

জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী মানবদেহের মুখমন্ডলে ৯টি গ্রহের অবস্থান বিদ্যমান তন্মধ্যে বাম চোখে চন্দ্র আর ডান চোখে রবি বা সূর্য অবস্থান করছে। মানুষের চোখ হল দেহের প্রদান অংশ। মানব মুখের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলতে যেমন সাহায্য করে তেমনি চোখের দৃষ্টি শক্তি ছাড়া দুনিয়াটাই অন্ধকার। তাইতো মানবজীবনে চোখের গুরুত্ব যেমন অপরিসীম তেমনি চোখের গঠন অনুযায়ী জাতক জাতিকার সুখ, দুঃখ, হাসি, কান্না, অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবন নির্ণয় হয়। তাইতা নিম্নে-মানব দেহের চোখের আকৃতি অনুযায়ী ভাগ্য, ভুত, ভবিষ্যৎ তুলে ধরা হল।

১। যে সকল জাত ব্যক্তিদের চোখ গভীর এবং বর্ণ হলুদ তারা। জীবনে অপরিসীম ধন ঐশর্য লাভ করে জগতের বুকে সম্মানের। সুউ'চ আসন লাভ করে। অবশ্য এদের জীবনে উন্নতি একটু বেশি বয়সে। অর্থাৎ ৩৩শের পর হয়ে থাকে। পরিবারের সাহায্য ছাড়া নিজস্ব মেধা প্রযুক্তি শ্রম ও অধ্যাবসায়ের বলে শুধু দেশ নয় বিশ্বনন্দিতও হয়ে থাকে।

২। যে সকল নর নারীদের চোখ হাতির চোখের ন্যায় দেখতে তারা ও সর্বদাই সৎ, নিষ্ঠাবান, ধার্মিক, উদার, পরোপকারী যেমন হয় তেমনি এ প্রতিষ্ঠা যশ সম্মানের সুউচ্চ আসন লাভ করে। বহুদেশ বিদেশ ভ্রমণ করে তথা শেষ জীবন বিদেশে কাটে।

৩। বাঘের চোখের মত চোখ বিশিষ্ট জাত ব্যক্তিদের জীবনে লেখাপড়ায় বাধা আসে যার ফলে অল্প বয়সে গৃহবাড়ি ত্যাগ করে নির্জনে বাস্ করার প্রবণতা জাগে। দূর্দান্ত সাহসী হওয়ায় ছোট থেকে একেবারে শীর্ষস্থান দখল করে নেয়। ছোট খাট কোন পদের কর্ম থেকে একেবারে ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তি বনে যান। রাজনৈতীক জীবন শুভ হয় সেই সঙ্গে মৃত্যুটা স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

৪। হরিণের চোখের ন্যায় চোখ বিশিষ্ট জাত ব্যক্তিদের জীবন চঞ্চলতায় ভরা, স্থিরতা যেন যে এদের জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে। বারংবার কর্মপরিবর্তনের যোগ যেমন রয়েছে তেমনি উ”চুশিক্ষা। কর্ম ও ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাপদেশে বিদেশে বসবাস এর প্রবণতা প্রবল। বিদ্যা কর্ম শিল্প ও শিল্পী বৃত্তিতে কোন অপরিসীম ছাপ রেখে যাবেন।

৫। যেসকল জাতব্যক্তিদের চোখ দেখতে ছাগলের চোখের ন্যায় তারা সর্বদাই শান্ত নম্র স্বভাব ধীর স্থির প্রকৃতির। ব্যবসায়ী মনভাবাপন্ন দাম্পত্য জীবনে সুখী তথা সুসন্তান লাভের অধিকারী হয়ে থাকে। শিক্ষার ব্যাপারে এরা উচ্চ শিক্ষা লাভ করে থাকে এবং সমাজে সহজে সুউ”চ আসন লাভ করে নেয়।

৬। মহিষের চোখের মত জাতব্যক্তিদের জীবনে প্রতিষ্ঠা যশ সম্মান পায় ঠিকই কিন্তু অল্পতে ধ্বংসও করে ফেলে। নারী ঘটিত বা পুরুষঘটিত ব্যপারে সুনাম যশ প্রতিষ্ঠা ধুলায় মিশে গেলেও খ্যান্ত হয় না হঠাৎ করে একাধিক বিবাহ করে বসে। আর প্রেম জীবনে যে কত আসে তার ইয়াত্বা নেই। এদের বেশিরভাগই আত্মহত্যার দিকে ধাবিত হয়।

৭। যে সকল জাত ব্যক্তিদের চোখ কোটরগত তাদের জীবনে প্রতিষ্ঠা খুব কমই হয়। দুষ্টচরিত্রের হওয়ায় ক্ষমা দয়া মায়া কম দেখা যায়। এরা সামান্যতম রেগে গেলেও রাগ থামাতে অক্ষম হয়। এমনকি পিতামাতার প্রতি অভিমান করে গৃহবাড়ি ত্যাগ করে থাকে। হাত টান, ডাকাতি, ছিনতাইকারী, চটকেনেতা, পরিবহন শ্রমিক ও খুনিদের চৌখ বেশির ভাগই কোটরগত হয়ে থাকে।

৮। যেসকল জাতব্যক্তিদের চোখ অত্যাধিক উচু বা ভাষা তাদের মধ্যে মানসিক দুর্বলতার প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা যায়। এরা চলে অত্যন্ত সংগোপনে যেন পায়ের শব্দ-কেউই টের না পায়। অর্থাৎ ধরি। মাছ না ছুঁই পানি অবস্থা। এরা চটজলদী বিপরীত লিঙ্গের সাথে বন্ধুত্বে এবং কাজ শেষ বা স্বার্থ পুরালেই। কেটে পড়তে দ্বিধা করে না।

৯। টানা ও সমতল চোখ বিশিষ্ট জাতব্যক্তিরা হয় পরিশ্রমী, মিত্যব্যয়ী, সঞ্চায়ী, বন্ধুবৎসল সৎ, উদার, পরোপকারী ভোজন রসিক ও ভ্রমণ প্রিয়। এরা নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষনতার বলে জগতের বুকে মাথা তুলে দাড়ায়। অবশ্য কখনও কখনও সৎ চরিত্রের জন্য কুটভাষীত্ত হতে হয়। অর্থাৎ বিনা দোষে দন্ডিত হবার সম্ভবনা থাকে।

১০। যদি কোন নারী পুরুষের বাম চোখে দৃষ্টি না থাকে তাহলে সেই জাতব্যক্তির সর্বদাই বিপরীত। লিঙ্গের প্রতি তীব্র আকর্ষণ থাকে। এদেরকে প্রায়ই চরিত্র ভ্রষ্ট হতে দেখা যায়। লেখা পড়া শিখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলেও অল্প বয়সে বিবাহ করে এবং প্রথম বিবাহ ভেঙ্গে যায়। প্রায়ই দুটি হতে দেখা যায়। নিজেকে খুবই আত্মপূর্বের এবং দাম্ভিক বলে মনে করে সর্বশেষে সব হারিয়ে ঠুটো জগন্নাথ হয়ে থাকতে দেখা যায়।
১১। বিপরীতে যদি কোন নরনারীর দক্ষিন বা ডানচোখে দৃষ্টি শক্তি না থাকে তাহলে তারা জীবন ব্যাপিয়া সংগ্রাম চালিয়ে যায় ঠিকই কিন্তু কোনরূপ প্রতিষ্ঠা পায় না। পূর্ব পুরুষের সম্পদ সম্পত্তি হারিয়ে ফেলে। এদের জীবনে সন্তানহীনতার দরুন দাম্পত্য জীবনে অসন্তোষ ঘটে। নারীদের মধ্যে বন্ধাত্ব আর পুরুষের মধ্যে শুক্রানু শূন্যতা দেখা দেয়।
১২। যদি কোন নরনারীর চোখ সর্বদাই রক্তবর্ণের হয় তাহলে তারা প্রায়ই শূন্য থেকে উঠে এসে প্রচুর অর্থ সম্পদ ও সম্পত্তির মালিক হয়। চুরি ডাকাতি ছিনতাইকারী অজ্ঞানপার্টি লুটতরাজ অপরের সম্পদ আত্মসাৎকারী তথা স্বার্থপর স্বভাবের হয়ে থাকে।

১৩। যে সকল জাত ব্যক্তিদের চোখ সাদাবর্ণের হয় তাদের মন সর্বদাই সরল। এই সরলতার জন্য লোকে তাকে ঠকায় এমনকি পিতৃমাতৃ সম্পদ সম্পত্তি থেকে বিতাড়িত হয়। অবশ্য নিজস্ব ক্ষমতায় ডালভাত খেয়েই তুষ্ট তুষ্ট থাকে। পরিণত বয়সে রক্ত শূন্যতায় ভোগে। এরা হয় সমাজের সবচেয়ে বুদ্ধিমান ব্যক্তি তবে তা সহসা প্রকাশ পায় না। ঠিক লেখকের কলমের ধার দেখা যায় কিন্তু লেখককে দেখা বা চেনা যেমন দুষ্কর হয়ে পড়ে। এরা শিক্ষা জীবনে আজীবন ছাত্রই থেকে যায় কখন শিক্ষক বা প্রফেসর হবার স্বপ্ন দেখেনা। অথচ এদের জ্ঞানের সীমাহীন তবুও চেয়ার নয় সামান্য টুল পেয়ে সন্তুষ্ট থাকে।

১৪। যেসকল নরনারীর চোখ পিঙ্গল বর্ণের তাদের দ্বারা সংসার সমাজের কোনরূপ উন্নতি হতে দেখা যায় না বরং এরা সংসার সমাজের অনিষ্টকারী হয়ে থাকে। যেকাজে হাত দেয় তাতেই ব্যর্থ হওয়ায় জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। গুপ্ত ও প্রকাশ্য শত্রুর তৎপরতা জীবন ব্যপিয়া ভোগ করে চলতে হয়। এমনকি জন্মস্থান ছেড়ে বহুদুরে বা বিদেশে বসবাস করতে হয়।

১৫। যে সকল জাত ব্যক্তিদের চোখ সবুজ বর্ণের হয় তারা প্রকৃত সৌভাগ্যবান বলে জানবে ঠিক যেন গোবরে পদ্মফুলের ন্যায় অবস্থা। সামান্য কুড়ে ঘরে জন্মগ্রহণ করে এক সময়ে স্বীয় গুণ যোগ্যতা ও প্রতিভার বলে অট্টালিকার মালিক হন। অনেক সময় বড় বড় রাজনীতিবিদ বিজ্ঞানী অভিনেতা অভিনেত্রী এমনকি যে বিভাগেই যান না কেন সে সুনাম ধন্য হবেই হবে।

১৬। স্বচ্ছ তাম্রবর্ণের চোখ বিশিষ্ট নরনারীর সর্বদাই রাগী জেদ একরোখা হয় যার ফলে আকস্মিক ভাবে আত্ম ধ্বংসের দিকে ঝুকতে দেখা যায়। এদের জীবনে অহংকারী ভাব প্রবল থাকায় সমাজে প্রায় আসন থেকে বঞ্চিত হয়। এদের জীবনে প্রায় দাম্পত্য অসন্তোষ সন্তানের কারণে মনকষ্ট ও অর্থকষ্ট লেগে থাকে। ঋণ থাকতে জীবনাবসান ঘটে।

১৭। পটল চেরা সবুজাভাব চোখ বিশিষ্ট নরনারীরা সুনাম যশ খ্যাতি প্রতিষ্ঠায় সমজের স্বর্ণশিখরে পৌঁছে যায়। এদের জীবনে একাধিকবার রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক পুরুষ্কার প্রাপ্তি সম্ভবনা থাকে বিশ্বের বুকে যত শূন্য থেকে জগৎ ব্যক্তি দেখা যায় তাদের চোখ প্রায় একই। এরা অনেক কিছু প্রতিষ্ঠা করে জগতের বুকে অপরিসীম ছাপ রেখে যায়।

১৮। ঘনঘন যাদের চোখের পাতা কাপে অর্থাৎ ঠিক পলক মারার মত সে সকল নরনরীর শারীরিক বল শক্তিতে, শক্তিমান হয়ে থাকে ঠিকই কিন্তু বল প্রয়োগ করার কোন জায়গা পায়না। এরা সর্বদাই মারামারি লাঠালাঠিতে ওস্তাদ। অবশ্য পরিণত বয়সে বিদেশে পাড়ী জমায়। দাম্পত্য জীবনে খুবই কষ্ট ভোগ করতে দেখা যায়।

FAQ – সাধারণ প্রশ্নোত্তর

১. চোখ দেখে কি সত্যিই ভাগ্য জানা যায়?

চোখ মানুষের স্বভাব ও চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে; তবে ভাগ্য পুরোপুরি নির্ভর করে ব্যক্তির কর্ম ও সিদ্ধান্তের উপর।

২. বড় চোখওয়ালা মানুষের চরিত্র কেমন হয়?

তারা সাধারণত আবেগপ্রবণ, দয়ালু ও কল্পনাপ্রবণ।

৩. ছোট চোখ মানেই কি কঠোর স্বভাব?

না, ছোট চোখ মানসিক একাগ্রতা ও বুদ্ধিমত্তার প্রতীক।

৪. কোন চোখের গঠনে নেতৃত্বগুণ বেশি দেখা যায়?

তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ও লম্বাটে চোখে নেতৃত্বগুণ বেশি পাওয়া যায়।

উপসংহার

চোখের গঠনের মাধ্যমে নর-নারীর স্বভাব ও সম্ভাব্য ভাগ্যফল সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। তবে মনে রাখতে হবে—মানুষের প্রকৃত ভাগ্য তার কর্ম, ইচ্ছাশক্তি ও সিদ্ধান্তের উপরই সবচেয়ে বেশি নির্ভর করে। চোখ শুধু একটি নির্দিষ্ট দিক নির্দেশ করে।




Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url