লক্ষ্মী দেবীর প্রতি বৃহস্পতিবারের ব্রতকথা

লক্ষ্মী ব্রতকথাঃ এক গ্রামে প্রাচীনকালে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবার বসবাস করিতেন সেই পরিবার ছিল অত্যন্ত ভক্তিময় এবং তাদের সংসার ছিল ও অভাব অনটনে পরিপূর্ণ।সেই ব্রাহ্মণের স্ত্রী প্রতি বৃহস্পতিবারে ভক্তি সহকারে নিয়মিত লক্ষী পূজা ও লক্ষীর ব্রত কথা পাঠ করতেন। হঠাৎ একদিন লক্ষ্মী দেবী বৃদ্ধ বেশে সেই ব্রাহ্মণের স্ত্রীর ভক্তি ভালবাসা পরীক্ষার জন্য তার ঘরে আসেন। লক্ষী দেবী তার কাছে কিছু খাবার চাইলে ব্রাহ্মণের স্ত্রী তার সাধ্যমত সামান্য কিছু ভাত ও দই দিয়ে আপ্যায়নের  চেষ্টা করেন। অনেক কষ্টে থেকেও ব্রাহ্মণের স্ত্রীর আতিথিয়তা দেখে লক্ষ্মী দেবী তুষ্ট হয়ে তাকে আশীর্বাদ  করেন। তিনি বলেন তোমাদের ঘরে কখনো অভাব থাকবে না ভক্তি  ও সততার মাধ্যমে সর্বদা তোমরা সুখে থাকবে। তারপর থেকে ব্রাহ্মণের ঘরে আর অভাব অনটন থাকল না তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলো। 

লক্ষ্মীদেবীর ধ্যান-ও পাশাতমালিকান্তোজ-সৃণিডির্যামাসৌম্যয়োঃ। পদ্মাসনাস্থাং ঝঝায়েত প্রিয়ং ত্রৈলোক্যমাতরম্ । গৌরবর্ণীং সুরপাক সর্ব্বালঙ্কার-ভূষিতম। রৌক্সপর-ব্যগ্রকরাং বরদাং দক্ষিণেনতু। পুজামন্ত্র-স্ত্রীং লক্ষ্মীদৌরা নমঃ।

মা লক্ষ্মী ছবি
মা লক্ষী


পুষ্পাঞ্জলী মন্ত্র-নমন্তে সফাদেবানাং বরদাসি হরিপ্রিয়ে। যা গতিত্তৎ প্রপন্নানাং সা মে ভূয়দের্চ্চনাৎ।

প্রণাম মন্ত্র ও বিশ্বরূপধ্য ডার্য্যাসি পরে পদ্মালয়ে শুভে। সাতঃ পাহি মাং দেবি মহালক্ষ্মী নমোহস্তুতে ।


স্তব-ও ত্রৈলোকম পুড়িতে দেবি কমলে বিয়াবরচে। যথ্য ত্বং সুস্থিরা কৃষ্ণে তথা স্তব সয়ি স্থিরা। ঈশ্বরী কমলা লক্ষ্মীশ্চলা ভূতিঃরিপ্রিয়া। পদ্মাপদ্মালয়া সম্পদ রমা শ্রীঃ পরধারিণী। জাণশৈতানি নামানি লক্ষ্মীং। সংপূজা যঃ পঠেৎ। স্থিরা লক্ষ্মীর্ভবেস্তস্য পুত্রদারাদিত্তিঃ সহ।


ব্রতকথা- নিশি নির্মল আকাশ দোল পূর্ণিমার।  মলয় বাতাস ধীরে ধীরে বহিতেছে। নারায়ণ লক্ষ্মীদেবী বামে করি বসি । নানা কথা সুখে আলাপন করিতেছে ।  নারদ মুনিবর সেইকালে বীণা হস্তে। লক্ষ্মী নারায়ণে নমি কহিল বিস্তর। খুবি বলে মাগো তব কেমন বিচার। সর্বন চঞ্চলা হয়ে ফির দ্বারে দ্বার। মর্ত্যবাসী সঙ্গ তাই ভূগিছে দুর্গতি। ক্ষণেকের তরে তব নাহি কোথা স্থিতি । প্রতিদিন অগ্নভাবে সবে দুঃখ পার। প্রতি গৃহে অনশন জীর্ণ-শীর্ণকায় এ নারদের যাক্য শুনি লক্ষ্মী ঠাকুরাণী। সঘনে নিঃশ্বাস ত্যজি কহে মৃদুবাণী। কচুনা কাহার প্রতি আমি করি রোষ। নরনারী দূঃখ পায় নিজ কর্মদোষ। যাও তুমি ঋষিবয় ত্রিলোক ভ্রমণে। ইহার বিধান আমি করিব যতনে। অতঃপর চিন্তি লক্ষ্মী নারায়ণে কর। কিরূপে হরিব দুঃখ কহ দয়াময়। হরি কহে শুন সতী বচন আমার। মর্ত্যধামে লক্ষ্মী ব্রত করহ প্রচার। বৃহস্পতিবারে


মিলি যত এয়োগণে। সন্ধ্যাকালে পুজি কথা শুনি ভক্তিমনে। বাড়িবে ঐশ্বর্য্য তাছে তোমার কৃপায়। দুঃখ কষ্ট দূরে যাবে। তোমার দয়ায়। শ্রীহরির বাক্য শুনি আনন্দিত মনে। মর্তো চলিলেন লক্ষ্মী ব্রত প্রচারণে। অবস্তী নগরে লক্ষ্মী হ'ল উপনীত। দেখিয়া শুনিয়া হ'ল বড়ই স্তম্ভিত। নগরের লক্ষপতি ধনেশ্বর রায়। অগাধ ঐশ্বর্যা তার কুবেরের প্রায় : সোনার সংসার তার শূনা হিংসা দ্বেষ। প্রজাগণে পালিত সে পুত্র নির্বিশেষে । এক পুত্রের পিতা ছিলেন ধনেশ্বর, যথাসময়ে সম্মানে গেলেন লোকান্তর। পিতার মৃত্যুর পরে সাত ভাই একসাথে, খায় আলাদা অন্ন, নয় আর একাথে। ধাপে ধাপে লক্ষ্মীও তাঁদের ত্যাগ করিল, সোনালি সংসার ধ্বংসের পথে চলিল। বৃদ্ধা ধনেশ্বর পত্নী না পারি তিষ্ঠিরে। গহণ কাননে যায় জীবন। ত্যজিতে। হেনকালে হয়বেশে দেবী নারায়ণী। বন মাঝে উপনীত হলেন আপনি। মধুর বচনে দেবী জিজ্ঞাসে বৃদ্ধরে। কিজন্য এসেছ তুমি গহণ ঝস্তারে। কাঁদিতে কাঁদিতে বৃদ্ধা অতি দুঃখভরে। তাহার ভাগোর কথা বলিল লক্ষ্মীরে সহিতে না পারি আর সংসার যাতনা। তাজিব জীবন আমি করেছি বাসনা। লক্ষ্মীদেবী বলে শুন আমার বচন। মহাপাপ আল্লহত্যা, মরকে যাই যে জন,তাই আমি বলি সাধনী, কর লক্ষ্মীব্রত মন। দুঃখ রবি অন্তে খাবে, হবে পূর্বমত,মনেতে লক্ষ্মী স্মরণে করো পবিত্র ব্রত। একাগ্র মনে চিন্তন করো লক্ষ্মীর নাম ব্রতকথা পাঠে থাকবে না আর অবসাদ-গ্রাম। যেই গৃহে হয় লক্ষ্মীব্রত প্রতি বৃহস্পতিবারে,সেই গৃহে সুখ নামে নিত্য আশীর্বাদে। বাঁধা থকে লক্ষ্মী তথা জানিও নিশ্চয় বলিতে বলিতে দেবী নিজ মূর্তি ধরি। দরশন দিল তারে লক্ষ্মী লক্ষ্মী কৃপা করি। মূর্তি হেরি বৃদ্ধা তাঁরে প্রণাম করিল। আনন্দিত হয়ে বৃদ্ধা গৃহেতে ফিরিল গৃহেতে ফিরিয়। বৃদ্ধা করিল বর্ণন। যেরূপে ঘটির তার বেনী দরশন। ব্রতের বিধান সব বধূদের বলে। শুনি বযুগণ রত করে কৌতূহলে। বধূগণ লয়ে বৃদ্ধা করে লক্ষ্মীরত। হিংসা দ্বেষ-স্বার্থ ভাব হৈল তিরোহিত। মালক্ষ্মী করিল তথা পুনরাগ্যমন। অচিরে হইল গৃহ শান্তি নিকেতন ও দৈবযোগে একদিন বৃদ্ধার আলছে। উপনীত এফ-মারী ব্রতের সময়ে। ব্রতকথা শুনি তার ভক্তি উপজিল। লক্ষ্মীব্রত করিবারে মানস করিল ও স্বামী তার চিররুগ্ন অক্ষম অর্জনে। ভিক্ষা করি যাহা পার খায় দুইজনে। এই কথা চিন্তি নারী করিছে কামনা। নিরোগ স্বামীরে কর চরণে বাসনা। ঘরে গিয়ে এয়ো লরে কর লক্ষ্মীব্রত। ভক্তিসহ সাধবী নারী পুজে বিধিমত দেলীর কৃপায় তার দুঃখ হলো। দূর। পতি হলো সূহ দেহ ঐশ্বর্য্য প্রচুর এ কালক্রমে শুভদিনে জন্মিল তনয়। সংসার হইল তার সুখের আলয়। রাময়ী। লক্ষ্মীমাতা সদয় হইল। রূপবান পুত্র এক তাহার জন্মিল। এইরূপে লক্ষ্মীরত করে ঘরে ঘরে। প্রচারিত হয় ক্রমে অবন্তী। নগরে। শুন শুন এয়োগণ এক অপূর্ব ব্যাপার। রতের মাহায়া হ'ল যে ভাবে প্রচার অবন্তী নগয়ে এক গৃহস্থ ভবনে।। এয়োগণ লক্ষ্মীব্রত করে একমনে। সহসা সেখানে এলো বণিক তনয়। উপনীত হলো তথ্য রতের সময় এ ধনরত্ব আনি করি ভাই পঞ্চক্ষন। পরস্পর অনুগত রয় সর্বজন। ব্রত দেখি হেলা করি সাধুর তনয়। 

বলে একি ব্রত? ইহা কিরূপ ফলদায়ী?সদাগর শুনে বামাগণ বলে আশাবাদী। “করি লক্ষ্মীব্রত, পূরণ হবে কামনা, ধনে-জনে হবে জীবন, যাবে না বৃথা যামনা।”* যে এই ব্রত করে, তার হয় সোনার সংসার, লক্ষ্মীর কৃপায় খুলে যায় সৌভাগ্যের দ্বার। সেই সদাগর বলে গর্বে অংকারে, “আমার আছে সব, আর কী হবে কারে? ভাগ্যে না থাকিলে লক্ষ্মীও কিছু দেয় না, তাই আমি শুনি না কারো অহংকার কথা!” এই অহংকার লক্ষ্মী সহ্য করতে না পারে,গর্বে বিভোর সদাগরকে ত্যাগ করিল তারে। ধনমদে অন্ধ হয়ে, বুঝিল না সে কথা, লক্ষ্মী রুষ্ট হলে জীবন যায় নির্থকতা। নক্ত হয়ে লক্ষ্মী ফরি হেলা। নানা রত্ন পূর্ণ তরী বাণিজ্যেতে গেলার দৈবযোগে লক্ষ্মী কোপে সহ যনজন। সংতেরী জলমধ্যে হইল নির্মান ও গৃহমধ্যে ধনৈশ্বর্য যা ছিল তাহার। বজ্রাঘাতে দগ্ধ হয়ে হলো ছারখার। দূরে গেল ভ্রাতৃভাব হলো ভিন্ন ২০। সোনার সংসারে তার সকলে বিপন্ন ॥ ভিক্ষাজীবী হয়ে সবে পির ঘরে ঘরে। পেটের জ্বালায় ঘোরে দেশ দেশান্তরে এরূপ হইল কেন বুঝিতে পারিল: কেঁদে কেঁদে লক্ষ্মীস্তব করিতে লাগিল। সদয়া হইল লক্ষ্মী তাহার উপরে। পুনরায় কৃপা দৃষ্টি দেন সদাগরে। মনে মনে মা লক্ষ্মীরে করিয়া প্রণাম। ব্রতের সঙ্কল্প করি আসে নিজ ধাম। লক্ষ্মীব্রত করে সং লরে বধূগণ। সাধুর সংসার হলো পূর্বের মতন । এইভাবে লক্ষ্মীব্রত মর্ত্যেতে প্রচার। 

সল মনে রেখো সবে লক্ষ্মীব্রত সার। এই ব্রত যেই নারী করে একমনে। লক্ষ্মীর কৃপায় সেই বাড়ে বনে জনে। করযোড় করি হাত ভক্তি যুক্ত মনে। করহ প্রণাম এবে যে থাক যেয়ানে। যে এই ব্রতকথা পাঠ করে শ্রদ্ধাভরে,বা রাখে নিয়ম মেনে নিজ নিজ ঘরে—লক্ষ্মীর কৃপায় তার পূর্ণ হয় মনোবাঞ্ছা,জীবনে আসে সুখ, মিটে দুঃখ-ব্যাঞ্জনা।লক্ষ্মীর ব্রতের কথা অতি মধুময়, প্রণাম করিয়া যাও, করো হৃদয় জয়। আজ এই ব্রতকথা হইল সমাপন, মনের আনন্দে বল— ‘জয় লক্ষ্মীনারায়ণ!’এভাবেই প্রতি বৃহস্পতিবারে, পবিত্র আশয়,লক্ষ্মীদেবীর ব্রত হোক সকলের আশ্রয়।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url