সিডিশ্রী হর পার্বতী সংবাদ রাজাদি আনয়ন ও বর্ষ চক্র গণনা
হিন্দু পুরাণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো হরপার্বতী সংবাদ" (Har-Parvati Sambad) , যেখানে ভগবান শিব কে হর রূপে এবং দেবী পার্বতীকে সংবাদ রূপে প্রকাশ করা হয়েছে । হর পার্বতী সংবাদ সাধারণত শিব পুরাণ এসকুন্দপুরাণ বা অন্যান্য তন্ত্র গ্রন্থ গুলিতে পাওয়া যায় এবং এই সংলাপ গুলি ধর্মীয় আধ্যাত্মিক এবং দার্শনিক জ্ঞান সমৃদ্ধ হয়ে থাকে।
![]() |
হর-পার্বতী |
ওঁ নমঃ শ্রী সূৰ্য্যায় নমঃ। শুভমন্ত্র। শকাব্দাঃ ১৯৪৭। সংবৎ ২০৮২-৮৩। বাংলা সন ১৪৩২। ইংরাজী ২০২৫-২৬। ভারতীয় শকাব্দাঃ ১৯৪৭-৪৮। ফসলী ও আমলী ১৪৩২-৩৩। হিজরী ১৪৪৬-৪৭। অসমীয়া (ভাস্করাব্দাঃ) ১৪৩২। ত্রিপুরাব্দাঃ ১৪৩৫। মগী ১৩৮৭-৮৮। বুদ্ধাব্দাঃ ২৫৬৮-৬৯। শ্রীশঙ্করাব্দাঃ ৫৭৬-৭৭। শ্রী নানকাব্দাঃ ৫৫৬-৫৭। শ্রীশ্রীচৈতন্যাব্দাঃ ৫৪০-৪১। কল্যাব্দাঃ ৫১২৬। কোল্লামাব্দাঃ ১২০০-১২০১। অনুকূলাব্দাঃ ৭৯-৮০, মহাবীর নির্বাণাব্দাঃ ২৫৫১-৫২। নিম্বার্কান্দাঃ ৫১২০-২১।
শ্রীশ্রীহরপার্ব্বতী সংবাদ
কৈলাস শিখরে রম্যে গৌরী পৃচ্ছতি শঙ্করম্।
অধুনা রুহি মে নাথ নবপল্লী ফলাফলম্ ॥
হর প্রতি প্রিয়ভাবে কন হৈমবতী।
কোন্ গ্রহ রাজা হৈল কেবা মন্ত্রীবর।
ভব কন্ ভবানীকে কহি বিবরণ।
রাজাদি আনয়ন
বৃহস্পতি রাজা, রবি মন্ত্রী, বুধ জলাধিপতি।
প্রবহ হন পবনাধিপতি, কর্কট নাগনায়ক।
বিন্ধ্য হন পর্ব্বতাধিপতি, প্লক্ষ হলেন দ্বীপপতি।
অশ্বিনীকুমারদ্বয় হলেন এই বৎসর বৈদ্যরাজ।
আঢ়কেশ হন হনুমান পাই গণনাতে।
সাগরে হন গুটিকাপাত জানিহ নিশ্চয়।
দেবগুরু হবেন বর্ষপতি, ধরায়জ' হন মাসপতি।
অব্দপাল মাসপাল, হলেন মাঙ্গলিক।
বৎসরের ফলাফল কহ পশুপতি।
প্রকাশ করিয়া কহ শুনি দিগম্বর ॥
বৎসরের ফলাফল করহ শ্রবণ।
শনি হন শস্যাধিপতি, সংবর্ত মেঘনায়ক।
অঞ্জন হন গজপতি, ঈক্ষু হন সাগরনায়ক ॥
কুবের হলেন কুড়বেশাধিপতি ভুল নাই তাতে।
ঘোরনামা হলেন এই বৎসর রৌদ্রপতি।
যার তরে রহে সুখে মানব সমাজ।
একশত আঢ়ক জল গণনাতে হয়।
সাবনাব্দপতি ভৌম তথা সাবন মাসপতি।
উনিশশত সাতল্লিশ শকে কহেন বুধোগণ।
এই বর্ষে ১০০ আঢ়ক জল-সমুদ্রে ৫০, পৰ্ব্বতে ৩০, পৃথিবীতে ২০।
অথ বিশ্বাঃ- (জ্যোতিষতত্ত্বমতে) বর্ষা ১১, ধান্য ১৭, তৃণ ৯, গ্রীষ্ম ১৫, শীত ৭, বায়ু ১৩, প্রজাবৃদ্ধি ১৯, প্রজাক্ষয় ১২. রাজবিগ্রহ ১৮, রোগ ১০, আরোগ্য ১৬, ধনবৃদ্ধি ১৪, ধনক্ষয় ৮, রৌদ্র ২০, বস্ত্র ১৩, সুধা ১৯, সর্প ১১, কৃমি ১৭, ধৰ্ম্ম ৯, অধৰ্ম্ম ১৫, দর্প ২১, মৎস্য ১৪. কুৰ্ম্ম ২০, শিলা ১২, জলশোষক ১৮, প্লক্ষ১০, আপ্লব ১৬।
১। স্বর্গে ২১।২২।২৩ ফল-সুখ।
২। পৰ্ব্বতে ২৪।২৫।২৬ ফল-ধনাগম।
৩। চক্রে ২৭।১।২ ফল-দারিদ্র্যতা।
বর্ষচক্র গণনা
৪। সমুদ্রে ৩।৪।৫ ফল-ভাসন।
৫। পৃথিবীতে ৬।৭৮ ফল-পুত্র সম্পত্তি।
৬। রসাতলে ৯/১০/১১ ফল-মরণ।
৭। শব্দে ১২।১৩।১৪ ফল-মহতীলক্ষ্মী।
৮। গগনে ১৫/১৬/১৭ফল-মানভঞ্জন।
১। ক্রোড়ে ১৮।১৯/২০ ফল-সর্ব্বসুখ।
বর্ষদোষ শান্তি-জন্মনক্ষত্র চক্রে পতিত হইলে ছত্রদান, সমুদ্রে শস্যদান, গগনে রৌপ্য, স্বর্ণ, বস্ত্র ও তাম্রদান, রসাতলে ঘৃত, ততুল, স্বর্ণ ও পূর্ণকুম্ভ দান করিলে দোষ নষ্ট হয়।
মেষাদি দ্বাদশ রাশির আয়-ব্যয়-স্থিতি নির্ণয়।
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
রাশি===মেষ
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
রাশি===তুলা
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
রাশি===বৃশ্চিক
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
রাশি===মিথুন
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
রাশি===ধনু
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
রাশি===কর্কট
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
রাশি===মকর
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
রাশি===সিংহ
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
রাশি===কন্যা
আয়-৫ ব্যয়-3 স্থিতি ২
একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্যোতিষ শাস্ত্রীয় পদ্ধতি যা রাজাদি আনোয়ান ও বর্ষ চক্র গণনা করার ক্ষেত্রে কাজে আসে। এটি মূলত চান্দ্র বছর বা সূর্য বছর গণনার ভিত্তিতে ধর্মীয় উপাসনা, উৎসব এবং সামাজিক আচার-আচরণের সমান নির্ধারণে সহায়তা করে।
রাজাদি (Rājādi) এটি মূলত কি?
বর্ষের শুরু বা রাজ বর্ষের সূচনা হলো রাজাদি শব্দের মূল অর্থ। একটি নতুন সৌর বছর বা চান্দ্র বছর শুরু হয় যখন এটি মূলত সেই নির্দিষ্ট মুহূর্ত। বিভিন্ন প্রকার রাজাদি রয়েছে, যেমন:
চৈত্র মাস থেকে যেটি শুরু হয় তাকে সাধারণত চৈত্র রাজাদিবলা হয় (সাধারণত বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুসারে)।
কার্তিক রাজাদি: কার্তিক মাস থেকে শুরু হয়, বিশেষ করে কিছু প্রাচীন পঞ্জিকায়।
মেষ রাজাদি: সূর্য যখন মেষ রাশিতে প্রবেশ করে (মেষ সংক্রান্তি) – তখন থেকে সৌর বর্ষ শুরু হয়।
বর্ষ চক্র গণনা কীভাবে হয়?
বর্ষ চক্র বা বার্ষিক চক্র গণনা করা হয় মূলত সৌর ও চান্দ্র গতির উপর ভিত্তি করে। এটি তিন ধরনের হতে পারে:
১. সৌর বর্ষ (Solar Year):
সৌর বর্ষ হল সেই সময়কাল যখন সূর্য আবার একটি নির্দিষ্ট রাশিতে ফিরে আসে।
উদাহরণ: মেষ সংক্রান্তি হল সৌর বর্ষের সূচনা।
২. চান্দ্র বর্ষ (Lunar Year):
চান্দ্র বর্ষ হল ১২টি চন্দ্রমাস নিয়ে গঠিত, যা প্রায় ৩৫৪ দিন হয়। এটি পূর্ণ বা অমাবস্যার উপর ভিত্তি করে গণনা করা হয়।
৩. লৌকিক বা সমন্বিত বর্ষ (Lunisolar Year):
এখানে চান্দ্র মাসের সঙ্গে অতিরিক্ত মাস (অধিমাস বা মল মাস) যোগ করে সৌর বর্ষের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হয়। ধর্মীয় ক্যালেন্ডার এই পদ্ধতিতে চলে।
সিডিশ্রী হর পার্বতী পূজার নিয়ম
পূজার সরঞ্জাম:
- পঞ্চপত্র (দুধ, মধু, ঘি, চিনি, জল)
- লাল ফুল, চন্দন, কুমকুম, রক্তচন্দন
- ধূপ, মোমবাতি, মিষ্টান্ন বা ফল
- সাদা বা লাল কাপড় (দেবী ও দেবতার জন্য)
- তাম্রশ্রীচক্র বা ত্রিপুরেশ্বরী চক্র (যদি চান)
- শ্রীশক্তি (সিদ্ধি ও শ্রী চিহ্ন)
- স্নান জল ও পবিত্র জিনিস
পূজার Steps:
১. স্থান পরিষ্কার করা:
পূজার জায়গা বা মন্দিরকে পরিষ্কার করুন। গঙ্গাজল দিয়ে ধোয়া এবং “ওঁ হ্রীং শুদ্ধি হরে” মন্ত্র বলুন।
২. দেবী-দেবতার ধ্যান:
পূজা শুরুর আগে দেবী-দেবতাকে মনে করুন।
ধ্যানমন্ত্র:
ওঁ সিডিশ্রী হর পার্বতীং ভাবনা করি,
হৃদি পদ্মে আসীন,
শ্রীচক্রে ফুল নিবেদন করি।
৩. দেবী-দেবতাকে আহ্বান করা:
পূজা শুরু করতে দেবী-দেবতাকে ডাকুন।
আবাহন মন্ত্র:
ওঁ সিডিশ্রী হর পার্বতী নমঃ।
হে শিব শক্তি, আমার অন্তরে আসুন।
৪. পুষ্পাঞ্জলি বা নিবেদন:
লাল ফুল, চন্দন ও কুমকুম দেবী ও দেবতার সামনে দিন।
পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র:
ওঁ সিডিশ্রী হর পার্বতীyai নমঃ,
এটি পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করছি।
৫. দীপ, ধূপ ও নৈবেদ্য:
দেবী ও দেবতার সামনে ধূপ, মোমবাতি এবং নৈবেদ্য নিবেদন করুন। নৈবেদ্যে মিষ্টান্ন বা ফল রাখতে পারেন।
নৈবেদ্য নিবেদন মন্ত্র:
ওঁ সিডিশ্রী হর পার্বতী নমঃ,
ফুল, ধূপ, দীপ ও নৈবেদ্য
দেবী ও দেবতার জন্য নিবেদন করছি।
৬. প্রণাম ও প্রার্থনা:
পূজা শেষে দেবী ও দেবতাকে প্রণাম করে, তাদের কৃপা চান। আপনার চাহিদা বা বিশেষ প্রার্থনা জানান।
প্রণাম মন্ত্র:
ওঁ সিডিশ্রী হর পার্বতীyai নমঃ,
মায়া-মোহ-ভয়-জ্ঞান-ক্লেশ দূর হোক।
আমার জীবনে শান্তি, সম্পদ ও সিদ্ধি দিন।
৭. মন্ত্রজপ ও দান:
পূজার পর ওঁ সিডিশ্রী হর পার্বতী মন্ত্র ১১, ২১, বা ১০৮ বার উচ্চারণ করুন এবং যদি পারেন, দান করুন, যাতে পূজা সম্পন্ন হয়।
রাজাদি ও বর্ষ চক্রের ব্যবহার
উৎসব নির্ধারণ: রাম নবমী, কালীপূজা, হোলি ইত্যাদি কোন চান্দ্র বা সৌর মাসে পড়বে তা এই গণনার মাধ্যমে নির্ধারিত হয়।
পঞ্জিকা প্রণয়ন: পঞ্জিকা রচয়িতারা বর্ষচক্র অনুসারে তিথি, নক্ষত্র, এবং শুভ মুহূর্ত নির্ধারণ করেন।
জাতক ও রাশিচক্র: জ্যোতিষশাস্ত্রে জাতক নির্মাণেও বর্ষ চক্রের ভূমিকা রয়েছে।
সিডিশ্রী হর পার্বতী পূজা করলে জীবনের সব দুঃখ, অভাব আর মোহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে দেবী ও দেবতার আশীর্বাদে অনেক সফলতা ও ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব। এটা দাম্পত্য জীবন, ব্যবসা, আধ্যাত্মিকতার উন্নতি এবং মন দিয়ে থাকার জন্য খুবই কাজে লাগে।