সোমবার কে শিবের সেবার দিন বলার কারণ

শিবের পূজায় সোমবার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চন্দ্রদেব (চন্দ্র)-এর সাথে সম্পর্কিত একটি দিন, এবং চন্দ্রের সঙ্গে শিবের গভীর যোগসূত্র রয়েছে।সোমবার কে শিবের সেবার দিন বলা হয়।।এই দিনের কি কোন বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে? সোমবার শৈবদের কাছে অতন্ত গুরুত্বপূর্ন এক দিন। সোমবারকে মহাদেবের আরাধনার এক বিশেষ দিন হিসেবে গণ্য করা হয়। সৃষ্টির আদিতে একমাত্র শিবই বিদ্যমান ছিলেন। লীলার মাধ্যমে তিনি ব্রহ্মারূপে সৃষ্টি করেন, বিষ্ণুরূপে পালন করেন এবং রুদ্ররূপে সংহার সম্পন্ন করেন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও হর — এই তিন রূপ একই শিবসত্তার সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের অভিব্যক্তি মাত্র। এই তিন রূপের মধ্যে মূলত কোনো ভেদ নেই, কারণ পরম শিবই তাঁদের উৎস ও সনাতন রূপ। এইজন্যই দেবাদিদেব মহাদেবের সঙ্গে সোমবারের এক গভীর, আধ্যাত্মিক যোগ রয়েছে।

সোমবার শিবের দিন  hd
সোমবার শিবের দিন 
আশ্চর্যের বিষয় হল সপ্তাহের সাতটি দিনের মধ্যে এই সোমবার দিন মহাদেবের অত্যন্ত প্রিয় দিন। আর এই জন্যই মহাদেব এই দিনটি থেকে পুজো পেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। জীবনের সমস্ত সংকট ও দুঃখ থেকে মুক্তি পেতে চাইলে প্রতি সোমবার নিষ্ঠা ও নিয়ম মেনে ভগবান শিবের পূজা করা উচিত। পূণ্যার্থীদের কাছে সোমবারের গুরুত্ব অত্যন্ত গভীর, তাই তাঁরা এই দিনটিকে শিবপুজোর জন্য বিশেষভাবে পালন করেন। ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, সোমবার শিবের পূজা করলে সব দুঃখ-কষ্ট দূর হয়। বিশেষ করে শ্রাবণ মাসের সোমবার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ভক্তিভরে শিবের আরাধনা করেন। সোমবারে সাধারণত উপোস করেই পুজো দেন পূণ্যার্থীরা। অনেক ভক্তই উপবাস পালনকালে শুধুমাত্র জল ও ফল গ্রহণ করেন। সোমবার, যা ভগবান শিবের প্রিয় দিন হিসেবে গণ্য, সেই দিনে দুধ, ঘি, দই, মধু ও গঙ্গাজল মিশিয়ে শিবের পুজো সম্পন্ন করা হয়। এদিন পূণ্যার্থীরা আমিষ আহার থেকে বিরত থাকেন এবং নিষ্ঠার সঙ্গে উপবাস, ব্রত ও পূজা পালন করেন। শিব হিন্দুধর্মের অন্যতম প্রধান দেবতা এবং সনাতন শাস্ত্র অনুযায়ী তিনি পরমসত্ত্বা রূপে পূজিত। জীবনের জটিলতম সমস্যাগুলোর সহজ সমাধানের জন্য মহাদেবের আশ্রয় নেওয়া হয়, কারণ বিশ্বাস করা হয়—তাঁকে স্মরণ করলেই শান্তি ও সমাধান মিলতে পারে।

এই জন্য প্রতি সোমবার মহাদেব-কে তুষ্ট করতে মেনে চলতে হবে কিছু নিয়ম। জেনে নেওয়া যাক সেই নিয়মগুলি কী কী-  শাস্ত্র মতে,সোমবার শিব পূজার নিয়মঃ  

১) বিশ্বাস করা হয়, কালো তিল দিয়ে স্নান করলে দেহ ও মন পবিত্র হয়। তাই সোমবার সকালে ঘুম থেকে উঠে স্নানের জলে কালো তিল মিশিয়ে স্নান করা শুভ বলে মনে করা হয়।

২) যদি শিবলিঙ্গ থাকে, তবে পূজার প্রস্তুতি শুরু করুন। শিবলিঙ্গটি ভালোভাবে পরিষ্কার করে প্রথমে দুধ দিয়ে অভিষেক করুন।

৩) শিবলিঙ্গে মধু ও ঘি একসাথে প্রয়োগ করে পুনরায় সুন্দরভাবে স্নান করান।  

৪) শিবলিঙ্গকে গঙ্গাজল দিয়ে পুনরায় স্নান করান। সুন্দর বেলপাতা ও ফুল দিয়ে পূজা সম্পন্ন করুন, অপরাজিতা ফুল যেন অবশ্যই থাকে।
 
৫) ধূপ-ধুনো জ্বেলে মহাদেবের পূজা শুরু করুন। 'ওম নমঃ শিবায়' মন্ত্র জপ করতে থাকুন। শিবলিঙ্গে চন্দনের ফোঁটা দিন, তারপর বাতাসা, প্রিয় ফল ও মিষ্টি নিবেদন করে পূজা সম্পন্ন করুন। 

৬) মহাদেবের পূজার দিন অবশ্যই নিরামিষ আহার করুন।  প্রতি সোমবার, বিশেষ করে শ্রাবণ মাসের সোমবারে, এই নিয়মে পূজা করলে ভগবান শিব সন্তুষ্ট হন এবং জীবনের সমস্ত জটিল সমস্যা দূর হয়।  সুখী দাম্পত্য ও পারিবারিক শান্তির জন্য স্বামী-স্ত্রীসহ সকলের একসাথে এই নিয়মগুলি পালন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  এমনকি যাদের এখনও বিবাহ হয়নি, তারাও এই নিয়ম মেনে চললে ভবিষ্যতে তাদের সংসার জীবন সুখময় হয়ে উঠবে।

শিব পূজা করার জন্য সোমবার কেন গুরুত্বপূর্ণ?
সোমবার শিব পূজার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হয় হিন্দু ধর্মে। এর পেছনে ধর্মীয়, পৌরাণিক ও জ্যোতিষশাস্ত্রের কিছু ব্যাখ্যা রয়েছে। নিচে কিছু প্রধান কারণ তুলে ধরা হলো:
শিবের পূজায় সোমবার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চন্দ্রদেব (চন্দ্র)-এর সাথে সম্পর্কিত একটি দিন, এবং চন্দ্রের সঙ্গে শিবের গভীর যোগসূত্র রয়েছে। হিন্দু পুরাণ ও শাস্ত্রে এর পেছনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে:

চন্দ্রের সঙ্গে শিবের সম্পর্ক:
পুরাণ অনুসারে, চন্দ্র দেবতা দক্ষ প্রজাপতির অভিশাপে ক্ষয়রোগে (ক্ষয়প্রাপ্তি) আক্রান্ত হয়েছিলেন। তখন তিনি শিবের আরাধনা করেন এবং শিব তাকে তাঁর জটায় (চুলে) স্থান দেন। এর ফলে চন্দ্রের ক্ষয়রোগ দূর হয়, এবং শিব চন্দ্রশেখর ("চন্দ্র যাঁর মস্তকে") নামে পরিচিত হন।

সোমবার (চন্দ্রের দিন) শিবের পূজা করলে চন্দ্রের শুভ প্রভাব বৃদ্ধি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়।

সোমবারের তাৎপর্য:
সোম শব্দের অর্থ চন্দ্র, এবং এটি অমৃত (দেবতাদের পানীয়) এর প্রতীক। শিবকে সোমেশ্বর বা সোমনাথ নামেও পূজা করা হয়, যা চন্দ্রের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নির্দেশ করে।

সোমবারে শিবের পূজা করলে ভক্তের মানসিক শান্তি, সুখ ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায় বলে বিশ্বাস রয়েছে।

শিবের সঙ্গে সোমবারের পৌরাণিক কাহিনি:
কিছু মতে, সমুদ্র মন্থনের সময় উত্থিত হলাহল (বিষ) পান করার পর শিবের শরীর উত্তপ্ত হয়ে উঠলে, চন্দ্র তাঁর শীতলতা দিয়ে শিবের তাপ প্রশমিত করেছিলেন। তাই সোমবার শিবের পূজা বিশেষ ফলদায়ক।

বিবাহিতদের জন্য মঙ্গলকর:
সোমবার শিব-পার্বতীর পূজা বিবাহিত জীবনে শান্তি ও দাম্পত্য সুখ আনতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়, কারণ শিব ও পার্বতী আদর্শ দম্পতি হিসাবে পূজিত হন।

শিব পুরাণ অনুযায়ী
শিব পুরাণে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি নিষ্ঠাভরে সোমবার ব্রত ও শিব পূজা করে, তার সকল ইচ্ছা পূর্ণ হয়। বিবাহ, শান্তি, রোগমুক্তি, বা সন্তান লাভের জন্য এই দিন শিবের পূজা বিশেষভাবে ফলপ্রসূ।

সোমব্রত (Somvar Vrat)
সোমবার উপবাস (সোমব্রত) পালন করা হয় শিবের কৃপা লাভের আশায়। অনেক নারী এই ব্রত পালন করেন স্বামী-সুখ বা ভালো পাত্র পাওয়ার আশায়।

জ্যোতিষ মতে চাঁদের দিন
চাঁদ মন এবং আবেগের প্রতীক, আর এটি সোমবারে প্রভাবশালী থাকে। শিব মাথায় চাঁদ ধারণ করেন, এবং বিশ্বাস করা হয় সোমবার শিব পূজা করলে মানসিক শান্তি ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

ধারণা অনুযায়ী দ্রুত ফল:
অন্যান্য পূজার তুলনায়, শিব পূজা করলে দ্রুত ফল মেলে—এই বিশ্বাস প্রচলিত। তাই যেকোনো সংকট বা মনস্কামনা নিয়ে লোকজন সোমবার শিবের শরণাপন্ন হন।

কীভাবে সোমবার শিব পূজা করা হয়?
ভক্তরা এই দিনে উপবাস রাখেন, শিবলিঙ্গে দুধ, জল, বেলপাতা ও ধুতুরা ফুল অর্পণ করেন এবং ওম নমঃ শিবায় মন্ত্র জপ করেন। কিছু লোক সোমবার ব্রত পালন করে ১৬ বা ৩২ সোমবার ধারাবাহিকভাবে পূজা করেন।

সোমবার শিবের আরাধনা করলে কর্মসংক্রান্ত সমস্যা, শারীরিক ও মানসিক কষ্ট দূর হয় বলে প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে। এই দিনে শিবের কৃপা সহজলভ্য বলে ধরা হয়।
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url