দেবী ত্রিপুরেশ্বরী: মন্দির, ইতিহাস, পূজা বিধি ও মহিমা বিস্তারিত
দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর ইতিহাস
সতীর দেহত্যাগের পর দেবাদিদের মহাদেব রণং দেহি মূর্তিতে সতীর নিথর দেহটাকে নিজ স্কন্ধে তুলে নিয়ে বেরোলেন বিশ্বপরিক্রমায়। স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল কেঁপে উঠল। সৃষ্টি বুঝি ধ্বংস হয়ে যায়। মহাদেবের রণং দেহি রূপ দেখে ও তাঁকে শান্ত করার উদ্দেশ্যে বিষ্ণু নিজ চক্র দ্বারা সতীর দেহ খণ্ড বিখণ্ড করলেন। সতীর দেহাংশগুলি যেখানে যেখানে পড়েছিল, সেইসব স্থানে এক একটি পীঠস্থান হলো। সতীর মনোবাঞ্ছা পূরণের জন্য শিবও বিভিন্ন নামে এইসব মহাপীঠে এক একটি ভৈরব্যগ্রপে আবির্ভাব হলেন।
![]() |
দেবী ত্রিপুরেশ্বরী |
ত্রিপুরাতেও শিব ত্রিপুরেশ ভৈরব রূপে আবির্ভূত হয়েছেন। আজও এই ত্রিপুরেশ ভৈরব ভক্তগণের নিকট মহাতীর্থস্থান। ত্রিপুরা রাজ্যের উদয়পুর শহরের অদূরে মাতাবাড়িতে অনুচ্চ ডিলার উপর অবস্থিত এই পীঠস্থান। এখানে পতিত হয় দেবীর দক্ষিণ পাদ। দেবীর নাম ত্রিপুরসুন্দরী। ভৈরব হলেন ত্রিপুরেশ।
ত্রিপুরেশ্বরী দেবীর প্রস্তরময় মূর্তিটি কষ্টিপাথরে খোদাই করা। তিনি শবহৃদি পরে দণ্ডায়মান। চারিখানি হাত। হাতে বরাভয়, অসি ও নরমুণ্ড শোভা পাচ্ছে। গলায় দোদুল্যমান নুমুণ্ডমালা। দেবীর জিয়াটি কিন্তু রক্তবর্ণের নয়। তার কারণ হলো-দেবীর কালী মূর্তি নয়, ষোড়শীমুর্তি। ইনি তৃতীয় মহাবিদ্যাররূপে পূজিতা হন। তন্ত্র মতে ষোড়শী রূপেই তাঁর গুজা চলে আসছে।
ত্রিপুরার শেষ স্বাধীন মহারাজ ছিলেন শ্রীযুক্ত বীরবিক্রম কিশোর মাণিক্য বাহাদুর। ইনি মহাপ্রয়াণ করার পূর্বে দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে ত্রিপুরেশ্বরীকে একটি রূপার ত্রিপুল প্রদান করে গেছেন। সেটি দেবীর দক্ষিণভাগে আজও বিদ্যমান। দেবীর দক্ষিণভাগে আরও একটি ছোট মূর্তি আছে। ইনি ছোট মা নামে সবার কাছে পরিচিত। মন্দিরের। পূজকগণ এঁকে চণ্ডীরূপেই পূজা করেন।
দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর পূজা বিধি
দেবী ত্রিপুরেশ্বরীর পূজা সম্পূর্ণ তন্ত্র মতেই হয়। দেবীকে তৃতীয় বিদ্যা অর্থাৎ ষোড়শীরূপে পূজা করা হইয়া থাকে, মায়ের বেদীপীঠে কালীমন্ত থাকায় দেবী কালিকার ধ্যান করা হয় এবং মায়ের কাছে দেবী চণ্ডীর ছোট মূর্তিটি আছে সেজন্য চণ্ডীর ধ্যান করা হয়। এখন ধর্মপ্রাণ ভক্তগণ মাকে যিনি যেরূপে কল্পনা করবেন, দেবী তক্তকে সেইরূপেই অভিষ্ট প্রদান করবেন। এখানে দেবী কালিকার ধ্যান ও মন্ত্র উল্লেখ করা হলো।
দক্ষিণাকালিকার ধ্যান-ধ -করালবদনাং ঘোরাংমুক্তাকেশীং ^চতুর্ভুজাম্। কালিকাং- দক্ষিণাং দিব্যাং মুণ্ডমালা বিভুষিতাম্। সদ্যস্থিরশিরা খড়গবামাযৌর্থকরামুজাম্। অভয়ং বরদজৈব দক্ষিণোছাধি পাণিকাম্। মহামেঘপ্রভাং শ্যামাং তথাচৈব নিগম্বরীম। কণ্ঠাবসক্ত মুণ্ডালীগলক্রধির চর্চ্চিতাম্। কর্ণাবিতংসতানীতশবযুগ্ম ভয়ানকাম্। ঘোরদ্রংষ্ট্রাং^ কয়ালাস্যাং পীনোন্নত পয়োধরাম্। শবানাং করসংঘাতৈঃ কৃতকাঞ্চীং হসম্মুখীং। সুক্তত্বয় গলফ্রক্ত ধারা বিচ্ছুরিতাননাম্। ঘোররায়াং মহারৌদ্রীং শশ্মশানালয়বাসিনীম। বালার্ক মণ্ডলাকাকার লোচনত্রিতয়ান্বিতাম্। দস্তুরাং দক্ষিণব্যাগীমুক্তা-লখিকঢোড়রাম। শবরূপ মহাদেব হহৃদয়োপরি সংস্থিতাম্। শিবাভির্যোররাবাভিশ্চতুর্দ্দিষ্ণু সমন্বিতাম্। মহাকালেন চ সমং,বিপরীত রতাতুরাম্। সুখপ্রসন্নবদনাং স্মেরানন লয়োরুহাম্। এবং সংচিস্তয়েৎ কালীং সকাকাম সমৃদ্ধিদাম্ সন্ত্রস্ত্রীস্ত্রী দক্ষিণে কালিকে ফ্রী স্ত্রী ফ্রী ईडीडी चादश।
দেবী ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির
প্রাচীন ও গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু তীর্থস্থান গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো দেবী ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির যা যেটি ভারতের উদয়পুর শহরে ত্রিপুরা রাজ্যে অবস্থিত। এই মন্দিরটি আবার মা ত্রিপুরেশ্বরী বা ত্রিপুরা সুন্দরী মন্দির হিসেবে অনেকে জানেন আবার এই দেবী দেবী দুর্গার একটি রূপ বটে।
মূল তথ্য:
অবস্থান: মায়ের মন্দিরের অবস্থান উদয়পুর ত্রিপুরা রাজ্য ইন্ডিয়া
দেবী: এই দেবী হলেন দশ মহাবিদ্যার একটি বিদ্যা
স্থাপিত: এই মন্দিরটি ইংরেজি ১৫০১ খ্রিস্টাব্দে রাজা ধনমানৈক্য তৈরি করেছিলেন
ধর্মীয় গুরুত্ব: এটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি ৫১ শক্তি পিঠের মধ্যে অন্যতম একটি শক্তিপিট।
অন্য নাম: এই মন্দিরটির একটি ভিন্ন নাম রয়েছে যেটি হল মাতাবাড়ি মন্দির
মন্দিরের বৈশিষ্ট্য:
এই মন্দিরটির রঙ হলো লালচে বর্ণের কাঠামো এবং মন্দিরটি দেখতে বাঙ্গালীদের ছোঁয়া রয়েছে। দেবী ত্রিপুরেশ্বরী মায়ের কালো পাথরের মূর্তিতে পূজিত হন এই মন্দিরে। এই দেবীর পায়ের নিচে মহিষাসুর বধ করার প্রতীক রূপে দেবী দুর্গার মূর্তিতে দেখা যায়।
ধর্মীয় গুরুত্ব ও পূজা:
শক্তিপীঠ: বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায় এখানে সতীর ডান পা পতিত হয়েছিল।
বার্ষিক উৎসব: হাজার হাজার ভক্ত মিলিত হন দীপাবলি বা কালী পূজার সময় এই স্থানে এবং এখানে একটি বিশাল মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
পূজার রীতি: এই মন্দিরে প্রতিদিন নিয়মিত দুর্গোপূজো কালীপুজো ও চণ্ডীপাঠ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে এটি প্রাচীনকাল থেকে এভাবেই পুজো হচ্ছে এই মন্দিরে।
ভ্রমণ নির্দেশিকা:
নিকটতম শহর: এটি ভারতের আগরতলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত
যোগাযোগ: বাস, টেক্সি, রেলসহ সব যানবাহনেই সহজেই পৌঁছানো যায় এই মন্দিরে।
থাকার ব্যবস্থা: এই মন্দিরে থাকার জন্য বিভিন্ন ধরনের হোটেল ও মোটেল সহ একটি ধর্মশালা ব্যবস্থা রয়েছে।