নিত্য কর্ম পদ্ধতি : ব্রাহ্মমুহূর্ত থেকে রাত্রিশয্যা পর্যন্ত পালনীয় নিয়ম ও গুরুত্ব
নিত্য কর্ম পদ্ধতি
যাহা না করিলে পাপী হইতে হয় তাহার নাম নিত্যকর্ম। যেমন-সন্ধ্যা, তর্পণ, শ্রাদ্ধ প্রভৃতি। তিথি, বার, মাস ও নক্ষত্রাদি নিমিত্ত, পিতৃমরণাদি নিমিত্ত, গ্রহদোষ নিমিত্ত এবং দুঃস্বপ্ন দর্শনাদি নিমিত্ত যে সকল কার্য শাস্ত্রবিহিত আছে তাহা নৈমিত্তিক। নিত্যকর্ম নিত্যই অনুষ্ঠান করিতে হয়।
অহোরাত্রের মধ্যে ছয়টি কৃত্য আছে। যথা-(১) প্রাতঃকৃত্য, (২) পূর্বাহ্নকৃত্য, (৩) মধ্যাহ্নকৃত্য, (৪) অপরাহকৃত্য, (৫) সায়াহ্নকৃত্য, (৬) রাবিকৃত্য।
হিন্দু ধর্মালম্বীদের দৈনন্দিন কাজের সঠিক নিয়ম
প্রাতঃকৃত্য: সূর্যোদয়ের পূর্বে চারিদণ্ডকাল দিবাভাগের মধ্যে গণ্য, তন্মধ্যে প্রথম দই দণ্ড ব্রাহ্মমুহূর্ত, শেষ দুই দণ্ড রৌদ্রমুহূর্ত। ব্রাহ্মমুহূর্তে উঠিয়া সকল জাতিই শয্যার উপর বসিয়া পূর্ব। বা উত্তরমুখে নিম্নোক্ত শ্লোকগুলি পাঠ করিবেন। যথা-
![]() |
নিত্য কর্ম পদ্ধতি |
(১) ব্রহ্মামুরাধী ত্রিপুরাস্তকারী ভানুঃ শশী ভূমিসুতো বধণ্ড। গুরুশ্চ শুক্রঃ শনিয়াহুকেতু কুর্বঘ্ন সর্বে মম সুপ্রভাতম্।
(২) প্রভাবে যঃ স্বরেন্নিত্যং দুর্গাদুণাক্ষরদ্ব্যাম্। আপদস্তস্য নশ্যন্তি তমঃ সূর্যোদয়ে যথা।
(৩) কালীতারা মহাবিদ্যা ষোড়শী ভুবনেশ্বরী। ভৈরবীচ্ছিন্নমাস্তাচ বিদ্যা স্বমাবতী তথা। বগলা সিদ্ধবিদ্যাচ মাতঙ্গী কমলাত্বিকা। এতাদশ মহাবিদ্যাঃ সিদ্ধবিদ্যাঃ প্রকীতিতাঃ।
(৪) অহল্যা দৌপদী কুন্তী তারা মন্দোদরী তথা। পঞ্চকন্যাঃ স্মরেন্নিত্যং মহাপাতকনাশনম্।
(৫) কার্তবীর্যাজুনো নাম রাজা বাহুসহস্রভুৎ। যোহস্য সম্পূর্ভয়েন্নাম প্রাতরুথায় মানবঃ। ন তস্য বিত্তনাশঃ স্যান্নষ্টঞ্চ লভতে ধ্রুবমা
(৬) পুণ্যশ্লোকো নলোরাজা পুণ্যশ্লোকো যুধিষ্ঠিরঃ। পুণ্যশ্লোকো চ বৈদেহী পুণ্যশ্লোকো জনার্দনঃ।
(৭) লোকেশ চৈতন্যময়াধিদেব শ্রীকান্ত বিষ্ণো ভবদাঞ্জয়ৈব। প্রাতঃ সমুথায় তব প্রিয়ার্থং সংসারযাত্রাননুবর্তয়িয্যো।
(৮) জানামি ধমংনচমে- প্রভৃত্তির্জানা-ম্যধর্মং ^ন চ মে নিবৃত্তিঃ। ত্বয়া হৃষীকেশ হৃদিস্থিতেন যথা নিযুক্তোহস্মি তথা করোমি।
(৯) কর্কটোকস্য নাগস্য দময়ন্ত্যা নলস্য চ। ঋতুপর্নস্য রাজর্ষেঃ কীর্তনং কালিনাশনম। অথঃপর দীক্ষিত ব্যক্তি নমোহস্ত গুরুবে তম্মা ইষ্টদেব স্বরূপিণে। যস্য বাক্যমৃতং হন্তি বিষং সংসারসংজ্ঞকম্। অখণ্ডমাণ্ডলাকারং ব্যাপ্তং যেন চারচরম্। তঃপদং দর্শিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরুবে নমঃয়-মন্ত্রে, গরু প্রণাম করিয়া ওঁ প্রিয়দায়ৈ ডুবে নমঃ বলিয়া পৃথিবী নমস্কার পূর্বক ভূমিতে পদস্থাপন করিবেন। প্রাতঃকালে নিম্নোক্ত দ্রব্যগুলি দর্শন করিলে সেইদিন শুভভাবে কাটে। যথা-দর্পণ, গাভী, ইষ্টদেবতা, বেদজ্ঞব্রাহ্মণ ও সৌভাগ্যবী রমনী। পরে মলমূত্রত্যাগান্তে শৌচ সমাপন পূর্বক দন্তধাবন করিবেন।
স্নান: প্রাতঃমানে, পিতৃশ্রাদ্ধে, ষষ্ঠী, দ্বাদশী তিথিতে তিলতৈল ব্যবহার নিষিদ্ধ। যদিও স্নান বহুপ্রকার আছে তথাপি সুস্থ ব্যক্তির পক্ষে অবগাহন স্নানই প্রধান। স্রোতজলে, স্রোতের অভিমুখে, স্রোতহীন জলে, সূর্যের অভিমুখে নাভি পরিমাণ জলে দাঁড়াইয়া মুখ, চক্ষু ও কর্ণদ্বয় রোধ করিয়া স্নান করিতে হয়। অপরের জলাশয়ে 'উত্তিষ্ঠোত্তিষ্ট পঙ্ক ত্বং ত্যজ পূর্ণং পরস্য চ। পাপানি বিলয়ং যাঘ্র শান্তিং দেহি সদা মম'-এই মন্ত্র পাঠ করিয়া পাঁচটি মৃত্তিকাপিণ্ড উঠাইয়া তীরে ফেলিবেন।
স্নান তিন প্রকার: নিত্য, নৈমিত্তিক ও কাম্য। নিতস্নানে ও অশৌচনিমিত্তক স্নানে সঙ্কল্প বাক্য পাঠ করিতে হয় না। কাম্য ও গ্রহণাদি নিমিত্তক বা গঙ্গাদিতীর্থ প্রাপ্তি নিমিত্তক স্নান করিতে হইলে সঙ্কল্প করিবেন। যথা-প্রথমে আচমন করিবেন, দ্বিজাতিগণ-ওঁ বিষ্ণু মন্ত্র তিনবার পড়িয়া তিন বিন্দু জল ব্রাহ্মতীর্থে পান করিয়া, ও তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সুরয়ঃ দিবীব চক্ষুরাততম্ মন্ত্র পাঠ পূর্বক ওষ্ঠাধর মার্জন, হস্তপ্রক্ষালন, দক্ষিণ হস্তের তর্জনী, মধ্যমা, অনামা দ্বারা মুখ স্পর্শ, তর্জনী, অঙ্গুষ্ঠ দ্বারা দক্ষিণ ও বাম নাসিকারন্ধ্র স্পর্শ, অঙ্গুষ্ঠ ও অনামা দ্বারা দক্ষিণ ও বাম চক্ষুদ্বয় স্পর্শ (সামবেদী দুইবার), এইরূপে কর্ণদ্বয় স্পর্শ (সমবেদী দুইবার), কনিষ্ঠা, অনামা দ্বারা নাভিস্পর্শ, হস্ত প্রক্ষালন, করতল দ্বারা হৃদয় স্পর্শ, সবাঙ্গুলীর দ্বারা মস্তক স্পর্শ, অঙ্গুলির অগ্রভাগ দ্বারা দক্ষিণ ও বাম বাহুর মূলদ্বয় স্পর্শ করিবেন। উপনয়ন না হইলে অথবা স্ত্রী ও শূদ্র নমো বিষ্ণু বসিয়া তিনবার মুখে জলের ছিটা দিবেন।
অপবিত্রঃ পবিত্রোবা সর্বাবস্থাং গতোহপিবা।
যঃ স্মারেৎ পুণ্ডরীকাক্ষাং স বাহ্যাভিস্তর শুচিঃ।
সঙ্কল্পবাক্য: বিষ্ণুরোম তৎসদস্য (স্ত্রী ও শূদ্র বিষ্ণুর্নমোহদ্য) অমুকে মাসি অমুকে পক্ষে অমুক তিথৌ অমুক গোত্রঃ (স্ত্রী লোক অমুকী গোত্রা) শ্রীঅমুক দেবশর্মা (স্ত্রী অমুকী দেবী, শূদ্র অমুক বসু দাসঃ ইত্যাদি, শূদ্রী অমুকী বসু দাসী ইত্যাদি) শ্রীবিষ্ণু প্রীতিকামঃ (স্ত্রী বিষ্ণুপ্রীতিকামা) অস্মিনজলে (গঙ্গাস্নানে গঙ্গায়াং এইরূপে যমুনায়াম্ ইত্যাদি) স্নানমহং করিষ্যে। পরে তীর্থাবাহন কর্তব্য।
নমো বিষ্ণোঃ পাদপ্রসূতাসি বৈষ্ণবী বিষ্ণুপূজিতা। পাহি ন ডেন সন্তস্মাদাজন্মং মরণান্তি কাঃ। তিঃ কোট্যোহর্ষকোটি চ তীর্থানাং বায়ুরব্রবীৎ। দিবিভূব্যস্তরীক্ষেচ তানি তে সন্তু জাহ্নবি। নন্দিনীত্যেব তে নাম দেবেঘু নলিনীতি চ। বৃন্দা পৃথ্বীচ সুডগা বিশ্বকায়া শিবামৃতা। বিদ্যাধরী সুপ্রসন্না তথা লোক প্রসাদিনী ক্ষেমাচ জাহ্নবী চৈব শান্তা শান্তিপ্রদায়িনী। তানি পুণ্যনামানি স্নানকালে চ যঃ পঠেৎ। ভবেৎ সন্নিহিতা তত্র গঙ্গা ত্রিপথগামিনী। পরে গাত্রে মৃত্তিকা লেপন করিবেন। মন্ত্র যথা-ও অশ্বক্রান্তে রথক্রান্তে বিষ্ণুংক্রান্তে বসুন্ধরে মৃত্তিকে হর মে পাপং যন্ময়া দুষ্কৃতং কৃতম। উধৃতাসি বরাহেন কৃষ্ণেন শতবাহুনা। নমস্তে পুণ্ডরীকাক্ষ প্রভবারিণি সুব্রতে। আরুহ্য মম গাত্রাণি সবং পাপং প্রমোচর। পরে নমো নারায়ণায় মন্ত্র সাতবার জপ করিয়া স্নান করিবেন।
গঙ্গাস্নানে বিশেষ মন্ত্র: ও বিষ্ণু পদার্থ্যসম্ভূতে গঙ্গে ত্রিপথগামিনী। ধর্মপ্রবীতে বিখ্যাতে পাপং মে হর-জাহ্নবী। শ্রদ্ধয়া ভক্তিসম্পন্নে শ্রীমাতর্দেবি জাহ্নবী। অমৃতেনায়ুনা দেবী ভাগীরথি পুনীহি মাম্। সৌর বৈশাখের প্রাতঃস্নানে সঙ্কল্পবাক্যে বিশেষ-বিষ্ণুরোম্ তৎসৎ অদ্য বৈশাখে মাসি মেষরাশিস্থে ভাস্করে অমুকে পক্ষে অমুক তিথাবারভ্য মেষস্থ রবিং যাবৎ প্রত্যহং অমুক গোত্রঃ শ্রীঅমুকঃ শ্রীবিষ্ণুপ্রীতিকামঃ প্রাতঃস্নানমহং করিয্যে। 'গঙ্গাস্নানে-অদ্যেত্যাদি শ্রী অমুকঃ অর্ধপ্রসূত-গবীর্ণক্ষদানজন্যফলসমফল প্রাপ্তি কামঃ। শ্রীবিষ্ণুপ্রীতিকামো বা গঙ্গায়াং স্নানমহং করিষ্যে। অন্যান্য গঙ্গাস্নানবিধি করণীয়। বিশেষ মন্ত্র যথা-
ও বৈশাখং সফলং মাসং মেষসংক্রমণে রবেঃ। প্রাতঃ সনিয়মং স্নাস্যে প্রীয়তাং মধুসূদনঃ। মধুহন্তঃ প্রসাদেন ব্রাহ্মণানামনুজ্ঞায়া। নির্বিঘ্নমন্ত্র মে পুণ্যং বৈশাখস্নানমথহম্। মাধবে মেঘগে ভানৌ মুরারে মধুসূদন। প্রাতঃস্নানে যে নাথ যথোক্ত কামদো ভব। যথা মে মাধবো মাসো বল্লভো মধুসূদন। প্রাতঃস্নানেন মে তস্মিন্ ফলদা ভব প্রাপহা।
সৌর কার্তিক মাসের প্রাতঃস্নানে সংকল্প: বিষ্ণুরোম্ তৎসৎ অদ্য কার্তিকে মাসি তুলারাশিস্থে ভাস্করে অমুক পক্ষে অমুক তিথাবরভ্য তুলাস্থরবিং যাবৎ প্রত্যহং ইত্যাদি।
বিশেষ মন্ত্র: ও কার্তিকেহহং কারষ্যামি প্রাতঃস্নান জনার্দন। প্রীত্যির্থং তব দেবেশ দামোদর ময়া সহ।।
সৌর মাঘমাসের প্রাতঃস্নানে সঙ্কল্প: অদ্যেত্যাদি... মাঘে মাসি... মকররাশিস্থে ভাস্করে... তিথাবারভ্য মকরস্থরবিং যাবৎ প্রত্যহম্।
বিশেষ মন্ত্র: ও মাঘমাসমিমং পুণ্যং স্নানম্যহং দেব মাধব। তীর্থস্যাস্য জলে নিত্যং প্রসীদ ভগবন্ হরে। দুঃখে-দারিদ্র্যেনাশায় শ্রীবিষ্ণোন্তোষণায়চ। প্রাতঃস্নানং কারোম্যদ্য মাঘে পাপপ্রণাশনম্। মকরস্থ রবৌ মাঘে গোবিন্দচ্যুত মাধব। স্নাননেনানেন মে দেব যথোক্তফলদা ভব। দিবাকর জগন্নাথ প্রভাকর নমোত্তহতে। পরিপূর্ণং কুরুষেদং মাঘস্নানং মহাব্রতম্।
দশহরা স্নানে: বিষ্ণুরোম্ তৎসৎ অদ্য জ্যৈষ্ঠে মাসি শুক্লেপক্ষে দশম্যাং তিথৌ অমুক গোত্রঃ শ্রী অমুক দেবশর্মা (দাস বসুদাস বা) (অমুকী গোত্রা শ্রী অমুকী দেবী, দাসী বা বসুদাসী বা), দশবিধপাপক্ষয়কামঃ (কামা বা) (হস্তানক্ষত্রযোগ হইলে) হস্তানক্ষত্রযুক্ত দশম্যাং তিথৌ দশজন্মার্জিত দশবিধপাপক্ষয়কামঃ (মঙ্গলবারে হস্তানক্ষত্রযুক্ত দশমী হইলে)। কুজাবারাধিকারণক হস্তানক্ষত্রযুদ্ধ দশম্যাস্তিথৌ... দশবিধপাপক্ষয়পূর্বক শতগুণবাজিমেধাযুতজন্য-ফলসমফলপ্রাপ্তিকামঃ (শ্রীবিষ্ণুপ্রীতিকামো বা) গঙ্গায়াং স্নানমহং করিষ্যে।
রটন্তীস্নানে: বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি কৃষ্ণে পক্ষে রটড্যাং চতুর্দশ্যাং না রটন্ত্যাখ্যচতুর্দশ্যাং তিথৌ যমলোকদর্শনকামঃ শ্রীবিষ্ণুপ্রীতিকামৌ বা (অরুণোদয় বেলায়াং) আনমহং করিয্যে। পরে যমতর্পণ কর্তব্য।
মাঘীসপ্তমীস্নানে: বিষ্ণুরোম্ তৎসদদ্য মাঘে মাসি শুক্লেপক্ষে সপ্তম্যাং তিপৌ (অরুণোদয়বেলায়াং) বহুশত সূর্যগ্রহণকারীন-গঙ্গাস্নানজন্যফল সমফল প্রাপ্তিকামঃ শ্রী বিষ্ণুপ্রীতিকামো বা স্নানমহং করিয্যে। গঙ্গাস্নানে-বহুশত সূর্যগ্রহণকালীন গঙ্গাস্নানজন্য ফলসমফলপ্রাপ্তিকামঃ গঙ্গায়াং স্নানমহং করিয্যে-মন্ত্রে স্নান করিয়া ও যদযজ্জন্মকৃতং পাপং ময়া সপ্তসু জন্মসু। তন্মে রোকঞ্চ শোকঞ্চ মাকরী হন্তু সপ্তমী।-মন্ত্রপাঠ পূর্বক সাতটি কুলপাতা ও সাতটি আকন্দপাতা মাথায় লইয়া পুনরায় স্নান করিবেন। পরে সূর্যার্ঘ্য দেয়। মন্ত্র যথা-জননীয় সর্বভূতানাং সপ্তমী সপ্তসপ্তিকে। সপ্তব্যাহৃতিকে দেবি নমস্তে রবিমণ্ডলে। নমো বিবস্বতে ইত্যাদি পাঠান্তে ইদমর্য্যং বা এযোহর্ঘ্যঃ ও শ্রীসূর্যায় নমঃ।
প্রণাম মন্ত্র: সপ্তসপ্তিবহ প্রীত সপ্তলোকপ্রদীপন। সপ্তম্যাং হি নমস্তুভ্যনমোহনস্তায় বেধসে।
মধুকৃষ্ণাত্রয়োদশীতে: বারুণীস্নানে-বিষ্ণুরোম তৎসদদ্য চৈত্রে মাসি কৃষ্ণেপক্ষে ত্রয়োদশ্যাং তিথৌ... শ্রীবিষ্ণুপ্রীতিকামঃ (শতভিযানক্ষত্রযোগ হইলে) শতভিষানক্ষত্রযুক্ত ত্রয়োদশ্যাং তিথৌ বারুণ্যাং বহুশতসূর্যগ্রহণকালীন গঙ্গাস্নানজন্যফলসমফলপ্রাপ্তিকামঃ (শনিবারে শতভিষানক্ষত্রযুক্ত ত্রয়োদশী হইলে) শনিবারাধিকরণক শতভিষানক্ষত্রযুক্ত ত্রয়োদশ্যাং তিথৌ মহাবারুণ্যাং বহুকোটিসূর্যগ্রহণকালীন গঙ্গাস্নানজন্যফলসম ফলপ্রাপ্তিকামঃ (শনিবারে শতভিষানক্ষত্র ও শুভযোগযুক্ত ত্রয়োদশী হইলে) শনিবারাধিকরণক শুভযোগ-শতভিষানক্ষত্রযুক্ত ত্রয়োদশ্যাং তিথৌ মহাবারুণ্যাং ত্রিকোটিকুলোদ্ধারণকামঃ (অথবা সর্বত্র শ্রীবিষ্ণুপ্রীতিকামঃ) স্নান মহং (গঙ্গাতীর্থে গঙ্গায়াং স্নানমহং) করিয্যে।
ব্রহ্মপুত্রস্নানে: অদ্যেত্যাদি অষ্টম্যাং তিথৌ অশোকায়াং... সর্বপাপক্ষয়পূর্বক, সর্বতীর্থস্নানজন্য ফলসমফলপ্রাপ্তিকামঃ অস্মিন্ ব্রহ্মপুত্রে স্নানমহং করিষ্যে। বিশেষ মন্ত্র দিন-প্রঞ্জিকা মধ্যে দ্রষ্টব্য। বুধবারে পুনর্বসুনক্ষত্রযুক্ত অষ্টমী হইলে সঙ্কল্পবাক্যে বিশেষ-বুধবারাধিকরণক পুনর্বসুনক্ষত্রযুক্তাষ্টম্যাং... ব্রহ্মপদগমনফলসমফলপ্রাপ্তিকামঃ ইত্যাদি পাঠ্য।
করতোয়ান্নানে : সোমবারে অরুণোদয়কালে অমাবস্যা হইলে অদ্যেত্যাদি সোমবারাধিকরণকামাবস্যায়াং তিথৌ (অরুণোদয়বেলায়াং) শতসূর্যগ্রহণকালীন স্নানজন্যফলসম ফলপ্রাপ্তিকামঃ করতোয়ায়াং স্নানমহং করিষ্যে। গ্রহণস্নানের সঙ্কাল্লাদি দিন-পঞ্জিকার মধ্যে লিখিত আছে। উক্ত যে-কোন স্নানের পর তিলকধারণ কর্তব্য। ব্রাহ্মণ অনামিকা দ্বারা মৃত্তিকায় ঊর্ধ্বপুণ্ড্র, ক্ষত্রিয় ত্রিপুঞ্জ, বৈশ্য অর্ধচন্দ্রাকৃতি, স্ত্রী ও শূদ্র গোলাকার তিলক করিবেন। ভস্মের দ্বারা ত্রিপুঞ্জ ও চন্দনের দ্বারা ইচ্ছামত তিলক করিতে হয়। মৃত্তিকাদির অভাবে কেবল জল দ্বারাও তিলক হয়।
তিলকধারণ মন্ত্র: ওঁ কেশবানন্ত গোবিন্দ বরাহ পুরুষোত্তম। পণ্যং যশস্যমায়ুষ্যং তিলকং মে প্রসীদতু।
চন্দনতিলকে: কান্তিং লক্ষ্মীং ধৃতিং সৌখ্যং সৌভাগ্যমতুলং মম। দদাতু চন্দনং নিত্যং সততং ধারয়াম্যহম্। তিলকের স্থান-ললাট, কন্ঠ, স্কন্ধ, নাসিকা, বক্ষ, কর্ণদ্বয়, বাহুমূলদ্বয়, পার্শ্বন্বয়, নাভি, পৃষ্ঠ, মস্তকমধ্য। পিতা জীবিত থাকিলে কেবল ললাটে তিলক কর্তব্য।
অতঃপর শিখাবন্ধন: দ্বিজাতির পক্ষে গায়ত্রী পাঠ সহকারে আড়াই পাক দিয়া শিখা ও তাহা অধঃজুটিকা বন্ধন করিবেন। স্ত্রী ও শূদ্র-নমো ব্রহ্মবাণী, সহস্রাণি শিববাণীশতানি চ। বিষ্ণোর্নামসহস্রেণ শিখাবন্ধনং করোম্যহম্। অতঃপর দ্বিজাতিগণ বৈদিক সন্ধ্যা, শূদ্রগণ তান্ত্রিক সন্ধ্যা করিয়া তর্পণ করিবেন। যথাকালে প্রাতঃস্নানান্তে তর্পণ না হইলে মধ্যাহ্ন সন্ধ্যার পর তপণ করণীয়।