তর্পণ বিধি: পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধে জলের অর্ঘ্য প্রদানের পদ্ধতি

তর্পণ দুই প্রকার-নিত্য ও স্নানাঙ্গ। স্নানের পর যে তর্পণ করা হয় তাহা স্নানাঙ্গ, তদ্‌ভিন্ন অন্যকালের তর্পণ নিতা। স্নানাঙ্গ তর্পণ করিলে আর নিত্য তর্পণ করিতে হয় না, কিন্তু নিত্য তর্পণের পর তীর্থপ্রাপ্তি বা গ্রহণাদিযোগে স্নান করিবার পর পুনশ্চ স্নানাঙ্গ তর্পণ করিতে হয়। উপনীত দ্বিজাতি ও বিবাহিত শূদ্র পিতৃহীন হইলে (সপিগুনের পর) তর্পণ করিবেন, দেহাশৌচে পিতৃতর্পণ নিষিদ্ধ। কিন্তু প্রেততর্পণে সকলের সব সময় অধিকার আছে। বিধবা স্ত্রীলোক, পুত্র, পেত্র, প্রপৌত্রের অভাবে স্বামী, শ্বশুর ও আর্যশ্বশুরের মাত্র তর্পণ করিবেন। ভিজা কাপড়ে জলে দাঁড়াইয়া ও শুষ্ক বস্ত্রে স্থলে বসিয়া এক পা জলে ও অপর পা স্থলে রাখিয়া পূর্ব বা উত্তর মুখে দুইবার আচমন পূর্বক পূর্বমুখে উপবীতী (বাম কাঁধে যজ্ঞোপবীত রাখিয়া) হইয়া দেবতর্পণ করিবেন। যথা-ওঁ ব্রহ্মা তৃপ্যতাম (শূদ্র সর্বত্র ও স্থলে নমঃ এবং ঋগবেদী ব্রাহ্মণ তৃপ্যতাম্ স্থলে। তৃপ্যতু বলিবেন)। ও বিষ্ণুস্তূপ্যতাম্, ও রুদ্রস্তূপ্যতাম্, ও প্রজাপতিস্তূপ্যতাম্ মন্ত্রে দেবতীর্থ (সমস্ত অঙ্গুলির অগ্রভাগ) দ্বারা দুই হাতে এক এক অঞ্জলী জল দিবেন। এইরূপে ও দেবাযক্ষান্ত থানাগা গন্ধর্বাপসরসোহসুরাঃ। ক্রুরাঃ সর্পাঃ সুপর্ণাশ্চ তরবো জিম্মগাঃ খগাঃ। বিদ্যাধরা জলা-ধারাস্তথৈবাকাশগামিনঃ। নিরাহারাশ্চ যে জীবাঃ পাপে ধর্মে রতাশ্চ যে। তেষামাপ্যায়নায়ৈতদ্‌ দীয়তে সলিলংময়া-মন্ত্রে আর এক অঞ্জলী জল দিবেন। পরে-

পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধে জলের অর্ঘ্য প্রদান
পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধে জলের অর্ঘ্য প্রদান

মনুষ্য তর্পণ: উত্তরমুখে (সামবেদী ব্রাহ্মণ পশ্চিমমুখে) নিবীতা হইয়া (গলায় মালার মত উপবীত রাখিয়া) কায়তীর্থে (অঙ্গুষ্ঠ ও কনিষ্ঠাঙ্গুলীর মূল প্রদেশ দ্বারা কোলের দিকে) দুই দুই অঞ্জলি জল দিবেন। মন্ত্র যথা-ও সনকশ্চ সনন্দশ্চ তৃতীয় সনাতনঃ। কপিলশ্চাসুরিশ্চৈব বোঢ়ঃ পঞ্চশিখস্তথা। সর্বেতে তৃপ্তিমায়ান্ত মদ্দত্তেনাম্বুনা সদা।

ঋষি তর্পণ: পূর্বমুখে উপবীত হইয়া দেবতীর্থে এক এক অঞ্জলি জল দিবেন। মন্ত্র যথা-ও মরীচিভূপ্যতাম্, ও অত্রিভৃতৃপ্যতাম্, ও অঙ্গরাতৃপ্যতাম, ও পুলস্ত্যস্তূপ্যতাম্, ও পুলহস্তূপ্যতাম্, ও কুতুভূপ্যতাম, ও প্রচেতাস্তূপ্যতাম, ও বশিষ্টতৃপ্যতাম, ও ভৃগুস্তূপ্যতাম্, ও নারদস্তূপ্যতাম্, (ঋগ্বেদী ব্রাহ্মণ সর্বত্র স্তূপ্যতাম্ স্থলে তৃপ্যতু বলিবেন)।

দিব্য পিতৃতর্পণ: দক্ষিণ মুখে দক্ষিণ হাঁটু তুলিয়া প্রাচীনাবীতী (ডান কাঁধে পৈতা ও উত্তরীয় রাখিয়া) হইয়া এক এক এক অঞ্চলি জল পিতৃতীর্থে (দক্ষিণ হস্তের তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠের মূল প্রদেশ দ্বারা) দিবেন। মন্ত্র যথা-ও অগ্নিযথাত্তাঃ পিতরস্তূপ্যস্তামেতৎ উদকং তেভ্যঃ স্বধা (তিল যোগ করিলে) সতিলোদকং গঙ্গাজলে সতিলগঙ্গোদকং বলিবেন, ঋগবেদী ব্রাহ্মণ তৃপ্যন্ত বলিবেন সতিলগঙ্গোকে ও চন্দন দ্বারা তর্পণ প্রশস্ত। এইরূপে ও সৌম্যাঃ পিতরস্তূপ্যস্তামেতৎ সতিলগঙ্গোদকং বা উদকং অথবা সতিলোদকং তেভ্যঃ স্বধা। ও হবিশ্বস্তঃ পিতর ইত্যাদি। ও উম্মপাঃ ইত্যাদি। ও সুকালিন ইত্যাদি। ও বর্হিষদঃ ইত্যাদি। ও আজ্যপাঃ ইত্যাদি। শূদ্রেরা সর্বত্র স্বধা ছলে নমঃ বলিবেন। যথা-নমঃ অগ্রিয়াত্তাঃ পিতরস্তূপ্যন্তামেতৎ সতিলোদকং তেভ্য নমঃ ইত্যাদি পূব্বৎ।

যমতর্পণ: পূর্ববৎ দক্ষিণ মুখে পাচীনাবীতী হইয়া ও বাম হাঁটু মাটিতে পাতিয়া পিতৃতীর্থে নিম্নোক্ত মন্ত্রে তিনবার তিন অঞ্জলী জল দিবেন। ও যমায় ধর্মরাজায় মৃত্যবে চান্তকায় চ। বৈবস্বতায় কালায় সর্বভূতক্ষয়ায় চ। উড়ম্বরায় দন্নায় নীলায় পরমেষ্টিনে। বৃকোদরায় চিত্রায় চিত্রগুপ্তায় বৈ নমঃ। পরে পিতৃ আবাহন-সামবেদী ব্রাহ্মণ ও শূদ্র কৃতাঞ্জলি হইয়া ও আগচ্ছন্ত মে পিতর ইমং গৃহস্তপোহঞ্জলিম। ঋগবেদী ও যজুর্বেদী ব্রাহ্মণ ও উশস্তত্ত্বা নিধীমহ্যশন্তঃ সমিধীমহি। উশন্ন শত আবহ পিতৃন হবিষে অত্তবে। ও আয়ান্ত নঃ পিতরঃ সৌম্যাসো অগ্নিস্মাত্তাঃ পথিভির্দেবযানৈঃ। অস্নিন্ যজ্ঞে স্বধয়া মদন্তোহধিক্রবস্তু তে অবস্তুস্নান।

পিতৃতর্পণ: পূর্ববৎ প্রাচীনাবীতি পাতিতবামজানু ও দক্ষিণাভিমুখ হইয়া পিতৃতীর্থে পিতা, পিতামহ, প্রপিতামহ, মাতামহ, প্রমাতামহ, বৃদ্ধপ্রমাতামহ, মাতা, পিতামহী, মাতামহী, প্রমাতামহী, বৃদ্ধপ্রমাতামহীকে, যথাক্রমে নিম্নোক্ত স্ব স্ব বেদীর মন্ত্র তিনবার পড়িয়া তিনবার। জলাঞ্জলি দিবেন। মন্ত্র যথা-সামবেদী ব্রাহ্মণের পক্ষে-বিষ্ণুরোম্ অদ্যেত্যাদি অমুকগোত্রঃ পিতা অমুক দেবশর্মা তৃপ্যতামেতৎ সতিলগঙ্গোদকং তস্মৈ স্বধা। এইরূপ অমুক গোত্রঃ পিতা অমুক দেবশর্মা তৃপ্যতামেতৎ সতিল গঙ্গোদকং তস্মৈ স্বধা। এইরূপ অমুক গোত্রঃ পিতামহঃ, প্রপিতামহঃ প্রমাতামহঃ, বৃদ্ধপ্রমাতামহঃ বলিয়া সর্বত্র নামান্তে দেবশর্মা সতিলগঙ্গাজল বা কেবল জল দিবেন। পরে অমুক গোত্রা মাতা অমুকী দেবী তৃপ্যতামেতৎ সতিলোদকং তস্মৈ স্বধা। এইরূপ অমুক গোত্রা 'পিতামহী অমুকী দেবী ইত্যাদি অমুক গোত্রা প্রপিতামহী অমুকী দেবী ইত্যাদি বলিয়া তর্পণাস্তে মাতামহী, প্রমাতামহী, বৃদ্ধপ্রমাতামহী এবং সমর্থ পক্ষে অন্যান্য আত্মীয়ের উদ্দেশ্যে নাম গোত্র প্রথমা বিভক্তিযুক্ত করিয়া এক এক অঞ্জলি জল দিবেন। যথা-কাকা-পিতৃব্যঃ, জ্যেঠা-জ্যেষ্ঠতাতঃ, ভাই-ভ্রাতা, মামা-মাতুলঃ, বিমাতা-বিমাতা, ভগিনী-ভাগিনী, পীসী-পিতৃযুসা, মাসী-মাতৃমুসা, শাশুড়ি-শ্বশ্রূঃ, শ্বশুড়-শ্বশুরঃ, গুরু-গুরু, শিক্ষক-উপাধ্যায়ঃ, মামী-মাতুলানীঃ, জ্যেঠি-জ্যেষ্ঠতাতপত্নী, খুড়ী-পিতৃব্যপত্নী, স্ত্রী-পত্নী এইরূপ সম্বন্ধ উল্লেখ করিয়া পুরুষকে দেবশর্মা, স্ত্রীলোককে নামান্তে দেবী বলিয়া পূর্বোক্ত মন্ত্রে তর্পণ করিতে হয়। যজুর্বেদী ব্রাহ্মণগণ নিম্নোক্ত মন্ত্রে তর্পণ করিবেন। বিষ্ণুরোম্ অমুক গোত্র পিতঃ অমুক দেবশর্মন্ নামান্তে তৃপ্যস্বৈতত্তে সতিলগঙ্গেদকং স্বধা। এইরূপ পিতামহ প্রভৃতির সম্বোধনান্ত পদে তর্পণ কর্তব্য। স্ত্রীলোকের উদ্দেশ্যে বিষ্ণুরোম্ অমুক গোত্রে মাতঃঅমুকী দেবী তৃপ্যস্বৈতত্তে সলিলগঙ্গোদকং স্বধা। এইরূপ সম্বোধনান্তে গোত্রেও দেবী বলিয়া পিতামহী প্রভৃতিরও তর্পণ কর্তব্য।

শূদ্রতর্পণ: বিষ্ণুর্নমঃ অমুক গোত্র পিতঃ অমুক দত্তদাস বা বসুদাস (উপাদি উল্লেখান্তে দাস বলিয়া) তৃপ্যস্বৈতত্তে সতিলগঙ্গোদকং নমঃ-অন্যান্য সমস্তই যজুর্বেদীয় তর্পণের মত সম্বোধনান্তে অমুক গোত্র বলিয়া তর্পণ করিবেন।

ঋগ্বেদী ব্রাহ্মণ: বিষ্ণরোম্ অমুক গোত্রং পিতরম্ অমুক দেবশর্মাণম্ তর্পয়ামি এতৎ প্রতিলগঙ্গোদকম্ তস্মৈ স্বধা নমঃ। এইরূপ পিতামহাদি পুরুষপক্ষে দ্বিতীয়ান্ত নাম গোত্র উল্লেখ করিয়া তর্পণ কর্তব্য। স্ত্রীপক্ষে-অমুকগোত্রাং মাতরম্ অমুকী দেবীং তর্পয়ামি এতৎ সতিলগঙ্গোদকং তস্যৈ স্বধা নমঃ। অন্যান্য বিধি পূর্বোক্ত সামবেদীয় তর্পণবৎ জানিবেন।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: পূর্বোক্ত পিতা হইতে বৃদ্ধাপ্রমাতামহী পর্যন্ত দ্বাদশ পুরুষের মধ্যে কেহ জীবিত থাকিলে তাহাকে ছাড়িয়া উর্ধ্বতন পুরুষ ধরিয়া সংখ্যা পূরণ করিবেন। যেমন পিতামহ বাঁচিয়া থাকিলে পিতা, প্রপিতামহ, বৃদ্ধ প্রপিতামহ। পিতামহ, প্রপিতামহ উভয়ই বাঁচিয়া থাকিলে পিতা, বৃদ্ধপ্রপিতামহ, অতিবৃদ্ধঃ প্রপিতামহ। মাতা জীবিতা থাকিলে পিতামহী, প্রপিতামহী বৃদ্ধপ্রপিতামহী। মাতামহ বর্তমানে প্রমাতামহ, অতিবৃদ্ধঃ প্রমাতামহ এইরূপ মাতামহী প্রভৃতির পক্ষেও জানিবেন। আর কাহারও নাম জানা না থাকিলে সম্বন্ধের উল্লেখ করিয়া তর্পণ করিবেন। যথা-অমুক গোত্রঃ পিতামহ, পিতামহ দেবশর্মা, অমুক গোত্রা পিতামহী, পিতামহী দেবী ইত্যাদি।

পিতৃপুরুষের তর্পণ মন্ত্রই বেদী বিশেষে বিভিন্ন, নতুবা অন্যান্য সমস্ত বিধিই সাধারণজা নিবেন।

ভীষ্মতর্পণ: ভীষ্মতর্পণ নিত্য করিতে হয় না, কেবল ভীষ্মাষ্টমীর দিন কর্তব্য। দ্বিজাতিগণ পিতৃতর্পণের পর এবং শূদ্রগণ পিতৃতর্পণের পূর্বে ভীষ্মতর্পণ করিবেন। পিতৃতর্পণের মতই দক্ষিণমুখে প্রাচীনাবীতী হইয়া পিতৃতীর্থে এক অঞ্জলি জল দিবেন। মন্ত্র যথা-ও বৈয়াঘ্রপদ্যগোত্রায় সাস্কৃতিপ্রবরায়চ। অপুত্রায় দদাম্যেতৎ সলিলং ভীষ্মবর্মণে।

প্রণাম মন্ত্র: ও ভীষ্মঃ শান্তনবো বীরঃ সত্যবাদী জিতেন্দ্রিয়। আভিরন্তি রবাপ্নোতু পুত্রপৌত্রোচিতাং ক্রিয়াম্।

যামতর্পণ: ও আব্রহ্মভুবনাল্লোকা দেবর্ষি পিতৃমানবাঃ। তৃপ্যস্ত পিতরঃ সর্বেমাতৃমাতামহাদয়ঃ। অতীতকুলকোটিনাং সপ্তদ্বীপনিবাসিনাম্। ময়া দত্তেন তোয়েন তৃপ্যন্ত ভুবনত্রয়ম্-এই মন্ত্রে তিন অঞ্জলি জল পিতৃতর্পণক্রমে দাতব্য। পরে ওঁ যেহবান্ধবা বান্ধবা বা যেহজম্মানি বান্ধবাঃ। তে তৃপ্তিমখিলাং যান্ত্র যে চম্মত্তোয়কাঙ্খিণঃ-মন্ত্রে এক অঞ্জলি জল দিয়া ও আব্রহ্মন্তস্বপর্যন্তং জগতৃপ্যতু-এই মন্ত্রে তিনবার জল দিবেন। অতঃপর ও অগ্নিদগ্ধাশ্চ যে জীবা যেহপ্যদগ্ধাৎ কুলে মম। ভূমৌ দত্তেন তোয়েন মৃপ্তা যাস্ত পরাং গতিম্-এই বলিয়া ভূমিতে জল দিয়া বস্তুনিপিড়ন জল লইয়া-ও যেচাম্মাকং কুলে জাতা অপুত্রা গোত্রিণো মৃতাঃ। তে তৃপ্যম্ভময়া দত্তং বস্তুনিষ্পীড়নোদকম্-মন্ত্রে মাটিতে ফেলিবেন। পরে পিতৃপ্রণাম-ওঁ পিতা স্বর্গঃ পিতা ধর্মঃ পিতাহি পরমস্তপঃ। পিতরি প্রিতীমাপন্নে প্রীয়ন্তে সর্বদেবতাঃ-এই পিতৃস্তুতি পাঠান্তে-ও পিতৃন্নমস্যে দিবি যে চ মূর্তাঃ স্বধাভুজঃ কাম্যফলাভিসন্ধৌ প্রদানশক্তঃ সকলেপ্সিতানাং বিমুক্তিদা যেহনভিসংহিতেষু। মন্ত্রে প্রণাম কর্তব্য। কেহ কেহ পিতৃতর্পণের পরে অগ্নিদগ্ধাশ্চ ইত্যাদি ও যেহবান্ধবা ইত্যাদি মন্ত্রদ্বয়ে তর্পণপূর্বক বস্ত্র নিষ্পীড়ন জল দেন। কেহবা তর্পণাস্তে আব্রহ্মস্তম্বপর্যস্তম্ ইত্যাদি মন্ত্রে তর্পণ করতঃ বস্ত্রনিষ্পীড়ন জল দেন। বস্তুনিস্পীড়নে নিষিদ্ধ, দিনাদি-সংক্রান্তি, পূর্ণিমা, অমাবস্যা, দ্বাদশী ও শ্রাদ্ধদিনে বস্ত্রনিষ্পীড়নে দ্বারা তর্পণ নিষিদ্ধ।। তিলতর্পণে নিষিদ্ধ বারাদি-রবিশুক্রদিনে চৈব দ্বাদশ্যাং শ্রাদ্ধবাসরে। সপ্তম্যাং জন্মদিবসে ন কুর্যাক্তিলতর্পণম্। সংক্রান্ত্যাং নিশিসপ্তম্যাং রবি-শুক্রদিনে তথা। শ্রাদ্ধে জন্মদিনেচৈব ন কুর্যান্ডিলতর্পণম। এই বচনানুসারে যদিও রবি ও শুক্রবার, দ্বাদশী ও সপ্তমী তিথি, সংক্রান্তি, রাত্রি, জন্মতিথি ও শ্রাদ্ধদিনে তিলতর্পণ নিষিদ্ধ বলিয়া অবগত হওয়া যায় তথাপি-তীর্থে তিথিবিশেষে চ গঙ্গায়াং প্রেতপক্ষকে নিষিদ্ধোহপি দিনে কুর্যাৎ তর্পণং তিলমিশ্রিতম্। উপাকর্মাণি চোৎসর্গে যুগদৌ মৃতবাসরে। রবিশুক্রাদি বারেহপি ন দোষন্তিলতর্পেণ। এই বচন দ্বারা-তীর্থক্ষেত্রে রামনবমী প্রভৃতি তিথিবিশেষে বিহিতস্থলে, গঙ্গায়, প্রেতপক্ষে (অপরপক্ষে), গ্রহণ, বেদারন্ত ও বেদসমাপ্তি দিনে, যুগাদ্যা তিথিতে এবং মৃতাহনিমিত্তক শ্রাদ্ধে ঐ সকল নিষিদ্ধ দিনেও তিলতর্পণ নিষিদ্ধ নহে বরং কর্তব্যই জানিবেন।

তর্পণের অন্যান্য জ্ঞাতব্য: অশৌচে পিততর্পণ নিষিদ্ধ (প্রেততর্পণ নহে)। বাম হস্তের লোমহীন স্থানে তিল রাখিয়া দক্ষিণ হস্তের তর্জনী ও অঙ্গুষ্ঠযোগে তিল লইয়া জলে দিয়া যুক্ত হস্তে তর্পণ করিবেন। তর্পণে সুবর্ণ রৌপ্যপাত্র ও গণ্ডারের নাসিকাপাত্র প্রশস্ত। তাম্রপাত্র নিষিদ্ধ নহে। সম্ভবস্থলে কুশাঙ্গুরীয় বাম ও দক্ষিণ অনামিকায় ধারণ করিয়া ত্রিপত্র ও যবযোগে দেবতর্পণ এবং মোটকযোগে পিতৃতর্পণ করিবেন।

তর্পণের কাল: যথাকালে প্রাতঃস্নানান্তে সন্ধ্যাকাল উপস্থিত হইলে সামবেদিগণ সন্ধ্যার সূর্যোপস্থাপনের পর উপজাত পর্যন্ত পাঠ করিয়া তর্পণ করিবেন। অন্য বেদিগণ সূর্যার্ঘ্যদানের পূর্বে করিবেন। প্রাতঃসন্ধ্যার কাল অতীত হইলে মধ্যাহ্ন সন্ধ্যায় ব্রাহ্মযজ্ঞের পর উক্ত সময়ে তর্পণ কর্তব্য.।



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url