মা কালীর পায়ের নিচে শিব - পৌরাণিক কাহিনী ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
কালী মায়ের পায়ের নিচে শিব ঠাকুর হলেন হিন্দু ধর্মের একটা দারুণ ছবি। এটা দক্ষিণ কালিকা রূপে মায়ের মূর্তিতে দেখা যায়। সেখানে কালী মা মুখ ভেংচি কেটে শিবের বুকের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। এই গল্পের শুরু দেবী মহাত্ম্য-এর একটা ঘটনা থেকে। কালী মা রক্তবীজ নামের অসুরকে মারতে গিয়ে খুব রেগে গিয়েছিলেন। তিনি রেগে গিয়ে পুরো পৃথিবী ধ্বংস করতে যাচ্ছিলেন। তখন দেবতারা শিবের কাছে সাহায্য চাইলেন। শিব মায়ের রাগ কমানোর জন্য তার সামনে মড়ার মতো শুয়ে রইলেন। কালী মা খেয়াল না করে তার উপর পা রাখলেন। তখনই তিনি বুঝতে পারলেন ভুল হয়েছে। লজ্জায় জিভ বের করে নিজেকে সামলালেন। এখান থেকেই কালী মায়ের জিভ বের করার ভঙ্গি আর শিবের উপরে দাঁড়ানোর ছবিটা আসে।
![]() |
মা কালীর পায়ের নিচে শিব |
উপাখ্যান: কালীর
পায়ের তলে শিব শুয়ে
আছেন, এটা হিন্দু কল্পকথার
খুবই দরকারি আর গভীর একটা
ব্যাপার। এই গল্পের শুরুটা
হলো দেবীর মহিমা বা চণ্ডীতে। গল্পটা
হলো, এক সময়ে অসুরদের
শেষ করতে কালী মায়ের
জন্ম হয়। তিনি ছিলেন
চণ্ডিকা রূপে, যিনি মহিষাসুর আর
অন্য রাক্ষসদের মেরেছিলেন। তিনি অসুরদের মারতে মারতে
তান্ডব নিত্য করতে লাগলেন মা কালী যখন নাচছিলেন, অসুরদের অবস্থা খারাপ, তখনই শুম্ভ
নিশুম্ভের এক সেনা রক্তবীজ যুদ্ধের জন্য আসে। সে তপস্যা করে ব্রহ্মার কাছ থেকে একটা
কঠিন জিনিস চেয়ে নিয়েছিল। সেই বর ছিল তার শরীর থেকে একটু রক্ত মাটিতে পড়লে, তার মতোই
আরেক জন রক্তবীজ তৈরি হবে। রক্তবীজকে দেখা মাত্র দেবী কালী মারতে যান। রক্তবীজের রক্ত
মাটিতে পড়ার সাথে সাথে, মাটি থেকে আরও অসুর বের হতে থাকে। যতবার তাদের মারা হয়, ততবারই
তারা জন্ম নিয়ে দেবীকে মারতে আসে। তখন উপায় না দেখে দেবী কালী রক্তবীজকে মেরে তার সব
রক্ত খেয়ে ফেলেন।
যুদ্ধ করার সময় অসুরদের
মারতে মারতে কালী এমন ক্ষেপে
গিয়েছিলেন যে নিজের ভেতরের
শক্তিকে সামলাতে পারছিলেন না। তার এমন
ভয়ংকর কাণ্ডে পৃথিবী আর মহাবিশ্ব প্রায়
শেষ হতে যাচ্ছিল। তখন
দেবতারা ভয় পেয়ে শিবের
কাছে সাহায্য চাইলেন। পৃথিবীকে বাঁচাতে শিব নিজেই কালীর
সামনে গিয়ে শুয়ে পড়লেন।
কালী যখন হাঁটছিলেন, তখন
হঠাৎ করে তার পা
শিবের বুকের উপর পড়ল। সঙ্গে
সঙ্গেই তিনি বুঝতে পারলেন
ভুল হয়ে গেছে। শিবের
গায়ে পা দিয়ে কালী
লজ্জা পেয়ে জিভ কেটে
ফেললেন। সেই মুহূর্তেই তার
রাগী চেহারা শান্ত হয়ে যায়, আর
তিনি আগের মতো হয়ে
যান। এই ঘটনা দিয়ে
বোঝানো হয়, যখন শক্তি
(কালী) নিজের কন্ট্রোলে থাকে না, তখন
জ্ঞান (শিব) তাকে শান্ত
করে। এটা শুধু একটা
গল্প নয়, এর মধ্যে
জীবনের অনেক গভীর কথা
আছে— কী করে নিজের
শক্তিকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে হয়। এভাবেই
কালী আর শিবের এই
গল্প হিন্দু দর্শনে একটা অনেক বড়
চিহ্ন হয়ে আছে।
মা কালীর উপাখ্যানের ব্যাখ্যা: স্বামীর
বুকে লাথি মারা বোঝায়,
রেগে গেলে লোকে কী
করে, রাগের চোটে স্বামীকেও ছাড়ে
না। আর জিভ কাটার
মানে হল, রাগ কমার
পরে খুব লজ্জা পাওয়া,
নিজেকে ছোট মনে হওয়া,
আসলে রাগে কী ভুল
করেছে, সেটাই বুঝতে না পারা। স্বামীর
বুকে লাথি মারার জন্য
সে তখন লজ্জিত। দেবীর
রাগ অসুর মারার সময়
এতটাই বেড়েছিল যে, তিনি পুরো
পৃথিবী ধ্বংস করতে যাচ্ছিলেন। তাঁর
রাগ থেকে কেউই বাঁচতে
পারেনি। তখন শিব ঠাকুর
কালীকে থামানোর জন্য মড়ার মতো
শুয়ে রইলেন। কালী তখন রাগের
চোটে শিবের বুকেই লাথি মারলেন। সঙ্গে
সঙ্গেই তিনি বুঝলেন, কী
সাংঘাতিক ভুল তিনি করেছেন।
লজ্জায় নিজের জিভ কাটতে লাগলেন।
এটা আরও একটা কথা
বলে, মেয়েরা সবসময় ছেলেদের থেকে নীচে থাকে।
হিন্দু ধর্মানুসারে, কালী হলেন প্রধান শক্তির শুরু, এক বিশাল ক্ষমতা। তার ভেতর জগৎ, শূন্যতা, জীবন আর বদলের খেলা চলে। কালীর নামেই লুকিয়ে আছে সময়, যা সব কিছু চালায়। সবকিছুই সময়ের হাতে বাঁধা, তাই কালী সময় হয়ে জন্ম, থাকা ও ধ্বংসের কথা কয়। কালীই যেহেতু সব কিছু বানিয়েছেন, তাই এটা বলা যায়। জগৎ তো শিব, আর তিনি থাকেন কালীর পায়ের নিচে, এটা পুরাণে আছে। দেবীর গায়ের রং কালো কেন, তারও একটা মানে আছে। অন্ধকার থেকেই নাকি আলো আসে, আর কালী হলেন সব কিছুর শুরু। তাই তিনি কালো। মায়ের গায়ের রং নিয়ে কালিকাপুরাণে যা বলা আছে, তা আমরা আগেও অনেক বইয়ে দেখেছি। এটা কি সেই কথাগুলোকেই মনে করিয়ে দেয়? বিজ্ঞান বলছে, বিগ ব্যাংয়ের ফলে জগৎ তৈরি হয়েছে। শুনেছেন তো? কী মিল, তাই না মায়ের এই যুক্তির সঙ্গে। সেই থিওরি অনুযায়ী, অন্ধকার মহাবিশ্ব থেকেই সব কিছু সৃষ্টি হয়েছে।
কালী ও শিবের সম্পর্ক: কালী ও শিবের সম্পর্ক আসলে শক্তি এবং চেতনার। তারা একে অপরের পরিপূরক। তাদের মিলেই পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় থাকে। এটা শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, দার্শনিক এবং মানসিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কালী ও শিবকে বোঝার জন্য তাদেরকে শুধু দেবতা হিসেবেই দেখা ঠিক নয়, বরং তারা একসাথে অসম্পূর্ণ। যেমন বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো যন্ত্র কাজ করে না, তেমনি শক্তি ছাড়া চেতনা কিছুই করে না। এই কারণেই কালীকে শিবের কর্মশক্তি বলা হয়।তন্ত্রশাস্ত্রে
কালী ও শিবের মিলন
কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ। যখন কালী (শক্তি)
মানবদেহের সহস্রার চক্রে এসে শিবের (চেতনা)
সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন সাধক
মুক্তি পায়। তাদের সম্পর্ক
কোনও সাধারণ পরিবারিক চিত্র নয়; এটি এক
গভীর আধ্যাত্মিক ঐক্যের চিত্র। লোককথায় ও পৌরাণিক কাহিনিতে
কালী ও শিবের সম্পর্ক
কখনও রোমান্টিক, কখনও বিপরীতধর্মী আবার
কখনও গভীর। তবে সবসময় তাদের
একে অপরকে কেন্দ্র করে। কালী কখনও
শক্তি, রক্ষা ও সংগ্রামের প্রতীক,
আর শিব সেই শক্তির
শান্তি ও আশ্রয়।
কালী
ও শিবের সম্পর্ক আসলে শক্তি এবং
চেতনার। তারা একে অপরের
পরিপূরক। তাদের মিলেই পৃথিবীর ভারসাম্য বজায় থাকে। এটা
শুধুমাত্র ধর্মীয় নয়, দার্শনিক এবং
মানসিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ। কালী ও শিবকে
বোঝার জন্য তাদেরকে শুধু
দেবতা হিসেবেই দেখা ঠিক নয়,
বরং তারা একসাথে অসম্পূর্ণ।
যেমন বিদ্যুৎ ছাড়া কোনো যন্ত্র
কাজ করে না, তেমনি
শক্তি ছাড়া চেতনা কিছুই
করে না। এই কারণেই
কালীকে শিবের কর্মশক্তি বলা হয়।
তন্ত্রশাস্ত্রে
কালী ও শিবের মিলন
কুণ্ডলিনী শক্তির জাগরণ। যখন কালী (শক্তি)
মানবদেহের সহস্রার চক্রে এসে শিবের (চেতনা)
সঙ্গে যুক্ত হয়, তখন সাধক
মুক্তি পায়। তাদের সম্পর্ক
কোনও সাধারণ পরিবারিক চিত্র নয়; এটি এক
গভীর আধ্যাত্মিক ঐক্যের চিত্র। লোককথায় ও পৌরাণিক কাহিনিতে
কালী ও শিবের সম্পর্ক
কখনও রোমান্টিক, কখনও বিপরীতধর্মী আবার
কখনও গভীর। তবে সবসময় তাদের
একে অপরকে কেন্দ্র করে। কালী কখনও
শক্তি, রক্ষা ও সংগ্রামের প্রতীক,
আর শিব সেই শক্তির
শান্তি ও আশ্রয়।
উপসংহার: মা কালীর রুদ্ররূপ দেখলে সব কিছু কেঁপে ওঠে। তাঁর কৃষ্ণ রঙের শরীর থেকে জ্বলজ্বলে আলো ছড়ায়, গলায় রক্তাক্ত মুণ্ডমালা ঝুলছে, আর তাঁর চোখে ক্রোধের আগুন। ভয়ঙ্কর লম্বা নখ আর ঢেউ খেলানো কৃষ্ণকেশ বাতাসে উড়ছে। হাতে ডমরু আর ত্রিশূল নিয়ে তিনি তাণ্ডব নাচ করছেন, যেন পৃথিবী ধ্বংসের তাল মিলাচ্ছেন। শিব তাঁর পদতলে শায়িত—সৃষ্টি আর ধ্বংসের এই মিলনে মা কালী ভয় ও ভক্তির একসাথে অনুভূতি সৃষ্টি করেন। মা কালীর রুদ্ররূপ দেখলে সব কিছু কেঁপে ওঠে। তাঁর কৃষ্ণ রঙের শরীর থেকে জ্বলজ্বলে আলো ছড়ায়, গলায় রক্তাক্ত মুণ্ডমালা ঝুলছে, আর তাঁর চোখে ক্রোধের আগুন। ভয়ঙ্কর লম্বা নখ আর ঢেউ খেলানো কৃষ্ণকেশ বাতাসে উড়ছে। হাতে ডমরু আর ত্রিশূল নিয়ে তিনি তাণ্ডব নাচ করছেন, যেন পৃথিবী ধ্বংসের তাল মিলাচ্ছেন। শিব তাঁর পদতলে শায়িত—সৃষ্টি আর ধ্বংসের এই মিলনে মা কালী ভয় ও ভক্তির একসাথে অনুভূতি সৃষ্টি করেন।