শনি গ্রহের অশুভ প্রভাব কমানোর উপায়
![]() |
শনি গ্রহের অশুভ প্রভাব কমানোর উপায় |
শনিদেবের অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তির ১০টি উপায়
শনিদেবের খারাপ নজর থেকে বাঁচতে কিছু অদ্ভুত নিয়ম মানলে ভালো ফল পাওয়া যায়। এতে তার দয়াও পাওয়া যায়। মন দিয়ে শনিদেবের পুজো করলে আর রোজ শনি চালিশা পড়লে, তিনি সব দুঃখ থেকে বাঁচিয়ে শান্তিতে রাখেন ও মনের মতো ফল দেন।
1. প্রত্যেক শনিবার শনিদেবের সঙ্গে হনুমানজির পুজো করা দরকার। শনি চালিশা পড়ার পরে হনুমানজির আরতি করতে হয়। প্রতি শনিবার বটগাছে জল ঢেলে আর শনিদেবের পুজো করলে শনিদেব খুব খুশি হন, আর অনেক আনন্দ দিয়ে থাকেন।
2. শনিবার দিন বটগাছের নিচে অল্প কালো তিল, সর্ষের তেল, আর ছোট কালো কাপড় দিলে খারাপ শনি শান্ত হয়, অভাব দূর হয়।
3. শনির খারাপ নজর থেকে বাঁচতে চাইলে প্রতি শনিবার নারিকেল তেলে একটু কর্পূর মিশিয়ে চুলে লাগান।
4. শনিদেবের সেরা দিন হলো শনিবার। এদিনটাতে কিছু না খেয়ে শনিদেবকে তেল, নীল জামাকাপড়, আর কালো তিল দিও। শনিদেবের গান পড়ো।
5. শনিদেবকে খুশি করতে শনিবারে কালো তিল, লোহার জিনিস, কালো কাপড়, আর সরষের তেল গরিব লোকেদের বা পণ্ডিতকে দিলে শনিদেব দয়া করে।
6. শনিদেব হলেন হনুমানের ভক্ত। তাই মঙ্গলবার ও শনিবার হনুমানের গান পাঠ করলে আর মন দিয়ে পুজো করলে শনির খারাপ নজর থেকে বাঁচা যায়।
7. 'ওঁ প্রাঁ প্রী প্রৌং সঃ শনৈশ্চরায় নমঃ' এই কথাটি জপ করো। এটা শনিদেবের মন্ত্র।
এই পুরনো মন্ত্রটি শনিকে শান্ত করে, খুবই কাজের। রোজ ২৩ বা ১০৮ বার জপ করলে মন শান্ত থাকে, আর শনির দোষ কাটে।
8. শনিবার কালো গরুকে আটা, মিষ্টি আর সবজি খাওয়ালে শনি খুশি হন। গরু হলো আমাদের ভালো কাজের চিহ্ন।
9. শনিদেবের ছবিতে বা পাথরের মূর্তিতে সরষের তেল ঢাললে শনির খারাপ প্রভাব কমে যায়। এতে শরীর, মন ও টাকার কষ্ট দূর হয়।
10. শনিদেব আমাদের কাজের ফল দেন, তাই ভালো কাজ করলে, দান করলে, আর সৎ পথে চললে শনিদেব খুশি হন ও আমাদের ভালোর জন্য আশীর্বাদ করেন।
রোজ সকালে সূর্য ওঠার সময় সূর্যকে দেখে চোখ বন্ধ করে মন্ত্র পড়লে শনির কষ্ট কমে। এই কথাগুলো বললে ভগবান ছায়ানন্দন খুব খুশি হন - সূর্যপুত্র দীর্ঘদেহী বিশালাক্ষঃ শিবপ্রিয়ঃ। মন্দচারঃ প্রসন্নাত্মা পীড়া দহতু মে শনিঃ।।
আটা না চাললে, তা দিয়ে রুটি বানিয়ে, তাতে তেল মাখিয়ে দিন। একটি রুটি গরুকে, অন্যটি কুকুরকে খাওয়ান, রোজ করুন এটা। খারাপ শনি থেকে মুক্তি পাবেন খুব তাড়াতাড়ি। ঘোড়ার নালের আংটি যখন খুশি কিনতে পারেন। শনিবার, প্রথমে দুধ, পরে গঙ্গার জল দিয়ে ধুয়ে, শনিদেবকে মনে করে ডান হাতের আঙুলে পরুন। এতে শনির খারাপ নজর থেকে বাঁচা যায়। প্রতি শনিবার পিপল বা বটগাছের তলায় তেলের প্রদীপ জ্বালান, আর গাছের চারপাশে সাতবার সুপারি বাঁধুন। তারপর গাছকে প্রণাম করুন, শনিদেবের রাগ থেকে মুক্তি পাবেন। প্রতি শনিবার ভেজা বা ভাজা ছোলা বাঁদরকে খেতে দিন, শনির খারাপ প্রভাব কাটবে। বাঁদরকে হনুমানের রূপ ভাবা হয়, তাই এটা করা হয়। ঘুম থেকে উঠে, বিছানায় বসেই (পায়ের আগে), শনিদেবের দশ নাম জপ করুন—শনি, ছায়ানন্দন, পিঙ্গল, বভ্রু, রৌদ্র, সৌরী, মন্দ, কৃষ্ণা, দুঃখভঞ্জন, কৌনস্থ্য। এই নামগুলো পাঁচবার করে মনে মনে বলুন, শনিদেব খুশি হবেন, আর আপনি তাঁর খারাপ নজর থেকে মুক্তি পাবেন। শনিদেবের মূর্তিতে অল্প তেল মাখিয়ে প্রণাম করলে, শনির খারাপ প্রভাব কমে যায়।
প্রতিদিন সকালে বা দুপুরে নিজের ভাগের খাবার থেকে অল্প একটু সরিয়ে রাখতে হবে। তারপর সেই বাঁচানো খাবারটি কাককে দিলে শনিদেবের খারাপ নজর থেকে মুক্তি পাওয়া যায় ও আশীর্বাদ পাওয়া যায়। প্রতি শনিবার সন্ধ্যায় একবার কালো ডাল, জল আর চাল দিয়ে খিচুড়ি বানিয়ে খেতে হয়। সাথে সবজিও খাওয়া যাবে। এটা ঘি দিয়ে রান্না করতে হবে, তেল নয়। অন্য বেলায় রুটি বা পরোটা খাওয়া যেতে পারে, কিন্তু সেটাও ঘি দিয়ে ভাজা হওয়া চাই। এভাবে শনিবারে নিয়ম মানলে শনির খারাপ প্রভাব তাড়াতাড়ি কেটে যায়। জীবনে শান্তি আর সুখ আসতে শুরু করে। কালো রঙের জামাকাপড়, নীল বা কালো রঙের চাদর, আর দরজার পর্দা ব্যবহার না করাই ভালো। এই রংগুলোর ওপর শনিদেবের সরাসরি দৃষ্টি থাকে। যারা এই রঙের পোশাক পরে, তাদের দিন কাটে নানান অশান্তির মধ্যে। তারা খুব অস্থির হয়ে যায়। প্রতি শনিবার গরুকে কালো তিল আর গুড় খাওয়ালে শনিদেব আর মা ভগবতী খুব খুশি হন। শরীর, মন ও সংসারে অনেক উপকার হয়, কষ্ট দূর হয়।
শনিদেবের অশুভ প্রভাবের লক্ষণসমূহ:
জ্যোতিষশাস্ত্র বলছে, শনি যখন কুণ্ডলীতে খারাপ জায়গায় থাকে, অনেকটা সাড়ে সাতির মতো, বা জন্ম সময় শত্রু ঘরে থাকলে, তখন নানা রকম বিপদ আসতে পারে। নিচে শনির খারাপ দশার দশটা আজব লক্ষণের কথা বলা হলো:
১. মন খারাপ ও চাপ: অনেক সময় হঠাৎ করে মন খারাপ হয়ে যায়, হতাশা আসে, একাকিত্বে ভোগেন এবং আত্মবিশ্বাস কমে যায়।
২. টাকা বা ঋণের সমস্যা: একটা ব্যবসা বা চাকরিতে ক্ষতি, টাকা আটকে যাওয়া বা ঋণ বাড়া – এসব সংকেত হতে পারে।
৩. কাজের সিদ্ধান্তে বাধা: শ্রম করেও ফল না পাওয়া, কাজ সহজ না হওয়া বা পরিকল্পনা বারবার নষ্ট হওয়া।
৪. আইনগত সমস্যা বা অপমান: আইনি জটিলতা, আদালতের ঝামেলায় পড়া বা সমাজে খারাপ ভাবনার শিকার হওয়া।
৫. চাকরি বা ব্যবসায় স্থিতিশীলতার অভাব:চাকরি চলে যাওয়া, পদোন্নতি না পাওয়া, সহকর্মীদের সঙ্গে ঝগড়া, ব্যবসায় লোকসান।
৬. স্বাস্থ্য সমস্যা (বিশেষ করে হাড় ও স্নায়ুর): ঘন ঘন হাঁটুর বা পায়ের ব্যথা, বাত, স্নায়বিক দুর্বলতা এসব হতে পারে।
৭. ঘুমের সমস্যা ও দুঃস্বপ্ন: রাতে ভালো ঘুম না হওয়া, দুঃস্বপ্ন দেখা বা মনে অশান্তি হওয়া।
৮. সম্পর্কের দূরত্ব ও ঝগড়া: বন্ধু,পরিবার বা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিতর্ক, বিচ্ছেদ বা ভুল বোঝাবুঝি।
৯. বারবার দুর্ঘটনা বা সমস্যা: রাস্তার দুর্ঘটনা, হঠাৎ আঘাত বা ভ্রমণে সমস্যা হওয়া।
১০. আত্মসম্মান কমে যাওয়া: আপনার পরিশ্রম বা গুণের সঠিক প্রশংসা না পাওয়া, বারবার অবহেলিত হওয়া।
জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরীর শনিদেবের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আজব টোটকা-
শনিদেবের আরেক আজব টোটকা বলছি শুনুন। আমার শিক্ষক জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরী এই গল্প বলেছিলেন। তিনি বলতেন এক দারুণ সত্যি ঘটনার কথা। অনেক বছর আগের ব্যাপার। তখন তিনি হুগলির চাঁপাডাঙা স্কুলে পড়াতেন। প্রায়ই যেতেন তারকেশ্বরে। তখন তারকেশ্বর মন্দিরের প্রধান ছিলেন হৃষীকেশ আশ্রম নামে এক সন্ন্যাসী। খুব কম লোকই জানত তিনি কত বড় যোগী ছিলেন। শিক্ষক মানুষটির সাথে তার ভালো বন্ধুত্ব হয়ে যায়। সেখানে গেলে ধর্ম নিয়ে অনেক আলোচনা হত তাদের মধ্যে। একদিন মহন্তজি বলেন, শনিদেব নাকি রক্তমাংসের শরীর নিয়ে তার ঘরে দেখা দিয়েছিলেন, নানা উপদেশও দিয়েছিলেন। পুরাণের মতো রোগা আর কালো চেহারা নিয়েই তিনি মহন্ত মহারাজের কাছে এসেছিলেন। তখন মানুষের ভালোর জন্য শনিদেবকে খুশি করার একটা উপায় মহন্তজি বলেছিলেন। সেটাই তিনি বলেছিলেন মাস্টারমশাইকে। আমি শুনেছি সেই গল্প। শনি মন্দিরে প্রতি শনিবার মাটির প্রদীপে সর্ষের তেল দিয়ে বাতি জ্বালিয়ে আরতি করার পরে সেই তেল একটু করে গায়ে মাখলে শনিদেব খুশি হন। এতে শনির খারাপ প্রভাব দ্রুত কেটে যায়। সংসারে শান্তি আসে। শনিদেবের পছন্দের সাদা ফুলের মালা। তবে টগর ফুল তিনি একদম পছন্দ করেন না। তার ভালোলাগার খাবারের মধ্যে কেবল সাদা বাতাসা বিদ্যমান। শনিদেব লাল, নীল ফুল একদম পছন্দ করেন না।
শনিদেব সম্পর্কে রামায়ণে বর্ণিত কাহিনী
একবার তারকেশ্বরের মহন্ত মহারাজ থাকাকালীন স্থূল শরীরে বিভীষণ সাক্ষাৎ দিয়েছিলেন, হৃষীকেশ আশ্রমের জ্ঞানদাপ্রসাদকে এমন গল্প বলেছিলেন। এখনকার দিনে কেউ বিশ্বাস করবে না, তবুও আমি অনেকটা বিশ্বাস করি। শনিদেবের সাথে হনুমানজির একটা গভীর সম্পর্ক আছে। এটা রামায়ণের সময়কালের কথা। রাবণের অনেক ক্ষমতা ছিল। তিনি দেবতাদের বন্দি করে রেখেছিলেন। রাবণ জ্যোতিষশাস্ত্রে পণ্ডিত ছিলেন। তাই তিনি পুত্র মেঘনাদের জন্মকালে তার খারাপ সময় জানতে পারেন।
রাবণ মেঘনাদের জীবন বাঁচাতে শনিদেবকে একটি ঘরে বন্দি করে রাখেন। এরপর সীতাহরণ হলে হনুমানজি সীতার খোঁজে লঙ্কায় আসেন। সীতাকে খুঁজতে খুঁজতে তিনি শনিদেবের কান্নার আওয়াজ পান এবং তাকে বন্দি দেখেন। শনিদেব হনুমানজিকে মুক্তি দিতে বলেন। হনুমানজি মুক্তি দিলেন। শনিদেবের কুদৃষ্টি হনুমানজির উপর পড়ল। কিন্তু শক্তিশালী হনুমানজি সবকিছু সহ্য করলেন। শনিদেব কৃতজ্ঞতা জানালেন।
শনিবার যদি কেউ হনুমানজির পূজা দেয়, তবে সব দুঃখ দূর হবে, মাথা নিচু করে তিনি এটা বললেন। মিষ্টি ফল, জবাফুল, আর কাঁচাগোল্লা (যদি পাও) দিয়ে হনুমানজির মন্দিরে পূজা দিলেই হবে। প্রথমে দুটো ধূপ জ্বালিয়ে একটু নাচানাচি করবে। প্রতি শনিবারে শনিমন্দিরে অল্প কালো তিল, কালো কাপড়, সরষের তেল, আর কিছু টাকা দিলে শনিদেব সাড়ে সাতির খারাপ নজর থেকে বাঁচায়। প্রতি শনিবার একটা কুকুরকে কিছু খেতে দিও, আর নিজে আমিষ না খেলে শনিদেবের খারাপ প্রভাব কাটে। উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, বা পশ্চিম দিকে দরজা হোক, দরজায় ঘোড়ার পায়ের পুরোনো লোহার টুকরো আর হনুমানজির ছবি লাগালে শনির খারাপ নজর থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। শনিদেবকে খুশি করতে আর খারাপ প্রভাব কমাতে, হনুমানজিকে আগে খুশি করতে হবে। প্রতি মঙ্গল ও শনিবারে হনুমানজির পূজা করে একটু গান-বাজনা করে সবাইকে মিষ্টি বিলি করো বা হনুমান চালিশা পড়ো।
আমি আমার শিক্ষক স্বর্গীয় শুকদেব গোস্বামী আর জ্ঞানদাপ্রসাদ চৌধুরীর কাছে অনেক শিখেছি। আরও অনেকের সাহায্য পেয়েছি, কিন্তু জায়গা কম তাই নাম বলতে পারলাম না, তাই দুঃখিত।