বাংলাদেশের হিন্দু তীর্থস্থান ও মন্দির সমূহ
জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম হিন্দু বা সনাতনী ধর্মের দেশ বাংলাদেশ। ভারত ও নেপালের পরে বাংলাদেশে বেশী সংখ্যক হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষের বসবাস । দেশবিভক্তি ও জাতিগত কলহের কারণে দিন দিন বাংলাদেশি হিন্দু জনসংখ্যা ক্রমান্বয়ে কমে গেলেও এখনো বাংলাদেশে অনেক প্রাচীন ও হিন্দু মন্দির রয়ে গেছে। তবে মুসলিম শাসনের জন্য আর ভিন্ন মতের লোকেদের জমির ইচ্ছায়, আমাদের বাংলাদেশে অনেক হিন্দু মন্দিরের জমি এখন অন্যের দখলে। নানান সমস্যা থাকার পরেও এখন বাংলাদেশে মন্দির, মঠ বা আখড়ার সংখ্যা এক লাখের বেশি হবে।
![]() |
বাংলাদেশের হিন্দু তীর্থস্থান ও মন্দির সমূহ |
বাংলাদেশে অনেক হিন্দু মন্দির রয়েছে, আর এর মধ্যে কিছু মন্দির খুবই গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে। ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দির, যা আমাদের জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিত, বেশ পুরানো। রাজশাহীর পুঠিয়া রাজবাড়ির গোবিন্দ মন্দির ও জগন্নাথ মন্দির তাদের টেরাকোটা নকশার জন্য বিখ্যাত। দিনাজপুরের কান্তজিউ মন্দির ১৮শ শতকের এক অসাধারণ কাজ, যা তার সুন্দর টেরাকোটা কারুকাজের জন্য পরিচিত। সাতক্ষীরায় যশোরেশ্বরী কালীমন্দির শাক্ত ধর্মাবলম্বীদের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ তীর্থস্থান এবং এটি ৫১ শক্তিপীঠের একটি। খুলনার বড়া কালী মন্দির এবং বরিশালের দুর্গসাগর দিঘির পাশে দুর্গা মন্দিরও বিশেষভাবে পূজনীয়। চট্টগ্রামের চাঁদনাথ মন্দির, সিলেটের শ্রীশ্রী রাধাকৃষ্ণ জিউর আখড়া, এবং ময়মনসিংহের গোপাল জিউর মন্দিরও স্থানীয় ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্দিরগুলো কেবল হিন্দুদের উপাসনাস্থল নয়, বরং দেশের ইতিহাস ও সংস্কৃতির অংশ হিসেবেও বেশ মূল্যবান।
বাংলাদেশের শীর্ষ 11 টি হিন্দু মন্দির সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হল –
1. সৎসঙ্গ আশ্রম-পাবনাঃ পাবনা শহরের কাছে থাকা দশম তালিকার হেমায়েতপুর গ্রাম,যেখানে সৎসঙ্গের গুরু শ্রী শ্রী ঠাকুর অনুকূল চন্দ্রের আশ্রম।এই ঠাকুরের জন্ম ১৮৮৮ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর, ব্রিটিশ ভারতের পাবনা জেলার রায়পুর গ্রামে।শরীর খারাপ হওয়ায় দেশভাগের আগে ভারতের দেওঘরে যান।এরপর তিনি আর কোনোদিনও পাবনায় আসেননি।১৯৪৭ এর পর পাকিস্তান সরকার পাগলা গারদ বানানোর জন্য আশ্রমের জমি নেয় ও হাসপাতাল বানায়।পরে বাংলাদেশ স্বাধীন হলে ভক্তরা নতুন করে সৎসঙ্ঘ করার কাজে নামে।এখন এখানে অনুকূল চন্দ্রের মন্দির আছে।এই আশ্রমের তেমন কোনো আলাদা গঠন চোখে পড়ে না।মন্দিরের পাশেই শ্রী শ্রী ঠাকুরের পূজার ঘর।এখানে তাঁর জন্ম আর মৃত্যুদিনে বড় অনুষ্ঠান হয়। প্রতি বছর ভাদ্র মাসের তাল নবমীর দিনে তাঁর জন্মদিনে স্নানযাত্রা হয়।তখন অনেক মানুষ এখানে আসেন। প্রতিবছর অনেক ভারতীয় এই মন্দির দেখতে আসেন।
2. চৈতন্য মন্দির-গোলাপগঞ্জঃ নবম তালিকায় থাকা আমাদের ঢাকা শহরের গোলাপগঞ্জ থানার দক্ষিণ প্রান্তে এই পুরনো চৈতন্য মন্দির, এটা হিন্দু ভক্তদের খুব পবিত্র একটা তীর্থের জায়গা। এইখানে চৈতন্যদেবের বাবার পরিবারের ভিটা ছিল, তাই মন্দিরটা স্পেশাল। তার মা আর বাবার আগের বাড়ি এখানে ছিল। বাবার নাম ছিল জগন্নাথ মিশ্র, আর মায়ের নাম ছিল শচী দেবী, তারা এই বাড়িতেই থাকতেন। বিয়ের কিছু দিন পর চৈতন্যদেবের মা যখন পেটে বাচ্চা নিলেন, তখন তার দিদিমা স্বপ্নে দেখলেন যে তাদের নাতি স্বয়ং ভগবান হবে। দিদিমার কথা মতো চৈতন্যদেব একবার ঢাকা শহরে এসেছিলেন তার বাবার পুরনো বাড়িটা দেখতে। প্রত্যেক বছর চৈত্র মাসে এখানে একটা বড় অনুষ্ঠান হয়। পুরো মাস ধরে এই অনুষ্ঠানে অনেক মেলা বসে, কীর্তন হয়, আর দেব-দেবীর পূজার আয়োজন করা হয়।
4, কাল ভৈরব মন্দির ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালভৈরব মন্দিরটি খুব পুরনো, এটা জেলার সবচেয়ে বিখ্যাত হিন্দু মন্দিরগুলোর মধ্যে একটা। এটা সাত নম্বর তালিকায় আছে। তিতাস নদীর পাশে এই মন্দির, এটা পুরনো আর ঐতিহ্যের জন্য খুব পরিচিত। এখানে কাল ভৈরবের একটা মূর্তি আছে যেটা দেখলে সবাই টানে, প্রায় ২৮ ফুট লম্বা। ১৯০৫ সালে এই লম্বা মূর্তিটা বানানো হয়েছিল। প্রথমবার দেখলে যে কেউ একটু চমকে যেতে পারে এত বড় মূর্তি দেখে। মূর্তির ডান দিকে কালী আর বাঁ দিকে পার্বতী দেবীর মূর্তি আছে। ১৯৭১ সালে যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার জন্য যুদ্ধ করছিল, তখন পাকিস্তানি সেনারা কাল ভৈরবের মূর্তিটা ভেঙে দিতে চেয়েছিল, তাই ডিনামাইট দিয়ে শিব আর পার্বতীর মূর্তির ক্ষতি করে।
6. পুঠিয়া মন্দির চত্বরঃ রাজশাহীর পুঠিয়াতে অবস্থিত পঞ্চম তালিকাভুক্ত পুঠিয়া মন্দির এলাকা যেন আলাদা এক অনুভূতি জাগায়। রাজশাহী শহর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে এই স্থানে সবচেয়ে পুরনো এবং ঐতিহ্যবাহী মন্দিরগুলো একত্রিত হয়েছে। একসময় রাজশাহীর দয়ালু হিন্দু রাজপরিবার এই মন্দিরগুলো নির্মাণ করেছিলেন, যা দেখতে সত্যিই মনোমুগ্ধকর। মন্দিরগুলোর গাঁথুনিতে রয়েছে টেরাকোটার সূক্ষ্ম কারুকাজ, যা চোল-বাংলা স্থাপত্যের এক অভিনব সংমিশ্রণ। এই স্থাপত্যশৈলীকে ইন্দো-সারাসেনিক রীতি বলা হয়, যা শুনতেও এবং দেখতেও বেশ অনন্য ও অদ্ভুত মনে হয়। এই রীতিতে তৈরি পুঠিয়ার মন্দিরগুলো একটা পুকুরের আশেপাশে ছড়ানো, দেখলে মনে হয় কেউ সাজিয়ে রেখেছে। এখানে পঞ্চরত্ন শিব মন্দির, চৌচালা গোবিন্দ মন্দির, আর জগদ্ধাত্রী মন্দির বিশেষভাবে চোখে পড়ে। পুঠিয়ার জমিদাররা আঠারো ও উনিশ শতকে এই মন্দিরগুলো তৈরি করেন। এত বড় জায়গায় এত মন্দির বাংলাদেশে আর কোথাও নেই, এটা সত্যি একটা আশ্চর্য ব্যাপার। শুধু ভারতের বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে এমন কিছু মন্দির একসঙ্গে দেখা যায়।
7. আদিনাথ মন্দির, মহেশখালীঃ বাংলাদেশের হিন্দু মন্দিরগুলোর মাঝে চার নম্বরে থাকা কক্সবাজারের আদিনাথ মন্দির বেশ পরিচিত একখানা হিন্দু উপাসনালয়। এই উপাসনালয়টি শহর কক্সবাজার হতে বারো কিলোমিটারেরও বেশি পথ দূরের দ্বীপ মহেশখালীর মাঝে লুকানো আছে। এটি শিব ঠাকুরের নামে হওয়ার কারণে অনেকেই একে শিবের মন্দির বলে ডেকে থাকে সবসময়। সনাতন ধর্মের মানুষেরা এখানকার মহাদেবকে খুব জাগ্রত এক দেবতা হিসেবে মানে সবসময়।
8, চন্দ্রনাথ ধাম-সীতাকুন্ড: বিষ্ণুদেবের চক্রের কারণে সতীর ডান হাত চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ ধামে পড়ে। গবেষকদের মতে, আগে এই জায়গার নাম ছিল সতীকুন্ড, পরে সীতাকুন্ড হয়ে যায়। তবে এই বিষয়ে কিছু বিতর্ক আছে। প্রতি বছর ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে সীতাকুন্ড পাহাড়ে মানুষের মেলা বসে। এখানে ৩৫০ কিলোমিটারের একটি বড় পাহাড়ি এলাকা রয়েছে, যার প্রাকৃতিক দৃশ্য সত্যিই সুন্দর।
এছাড়া, দুই পাহাড়ের মাথায় দুটি মন্দির আছে। একটি বিরূপাক্ষ মন্দির, অন্যটি চন্দ্রনাথ মন্দির। চন্দ্রনাথ মন্দিরটি সমতল থেকে ১৩০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এই দুটি মন্দির একে অপরের সঙ্গে মিলেমিশে চন্দ্রনাথ ধাম নামে পরিচিত। প্রতি বছর শ্রীশ্রী শিবরাত্রি উপলক্ষে এখানে অনেক মানুষ আসে। এই তীর্থস্থান পবিত্র। এখানে জল, মাটি আর বাতাস সবই পবিত্র। তাই এখানে এলে মনও পরিষ্কার হয় এবং ধর্মের ভাব জাগতে শুরু করে। মানুষের মধ্যে হিংসা বা বিদ্বেষ থাকেনা, উচু-নীচু ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে সবাই একসাথে মিলিত হয়। তীর্থ ভ্রমণের ফলে মন অনেক বেশি সতেজ হয়, শান্তি আসে।তাইতো কবি বলেছেন-
‘‘তীর্থের মহিমা না করা যায় বর্নন,
করিলে ভ্রমন হয় মনের পবিত্রতায় পূন্য সঞ্চালন”।
সীতা মন্দিরটা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত। এটা খুবই সুন্দর জায়গা। ধর্মীয় অনুভূতির সাথে প্রকৃতির শান্ত শব্দ, একসাথে মিলে এক নজরকাড়া দৃশ্য তৈরি করে ভক্তদের জন্য। মন্দিরের ভিতরে চতুর্ভূজা সীতার মূর্তি আছে। ত্রিপুরার ইতিহাস অনুযায়ী, সম্ভুনাথ মন্দিরের নির্মাণ শুরু হয়েছিল ১৫০১ সালে। তারপর ১৯২০-২৪ সালে ত্রিপুরার মহারানী রত্নমঞ্জরী মন্দিরটি সংস্কার করেন। মাঝের পাহাড়ে আরও কটি মন্দির আছে, যেমন স্বয়ম্ভুনাথ, রামকুন্ড, এবং লক্ষনকুন্ড। বর্তমানে ভক্তরা বিশেষ করে সম্ভুনাথ মন্দিরে আসেন এই সময়ে, কারণ অনেকের জন্য উঁচু পাহাড়ে ওঠা সম্ভব হয়না। এই মন্দিরটি ১৬০০ সালে ধনমানিক্য বাহাদুর, পরৈকোড়ার জমিদার বৃন্দাবন দেওয়ানের মা দুর্গারানী এবং প্রতাপ চৌধুরী ও মুক্তাগাছার জমিদার বিদ্যাময়ী দেবীর অর্থায়নে তৈরি হয়েছিল। ১৯ শতকে বর্ধমান জেলার শিয়ালশোলের রাজা বাবু প্রমথনাথ মালিয়া মন্দিরে যাওয়ার জন্য ৬৮টি সিঁড়ি নির্মাণ করেছিলেন। সিঁড়িগুলো পাদদেশ থেকে শীর্ষপর্যন্ত তৈরি হয়েছে। নানা সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তি এগুলো নির্মাণ করেছেন, আর বেশিরভাগ সিঁড়ির উপরে লেখাই আছে সেগুলোর নির্মাতার নাম। অনেক সিঁড়ি পাপ খণ্ডনের জন্য অথবা নিকট আত্মীয়দের নামে উৎসর্গ করা হয়েছে। জানা যায়, প্রথম সিঁড়ির কাজ শুরু করেছিলেন ২৪ পরগনার শ্রীগঙ্গারাম বিশ্বাস। তার মা, চন্দ্রনাথ দর্শনে এসে পাহাড়ি পথে যেতে পারেননি। ফলে তিনি তার ছেলেকে নির্দেশ দেন, সীতাকুন্ডে সিঁড়ি বানানোর জন্য। তার এই আদেশ পালন করতে ১২৭০ বঙ্গাব্দে শ্রীগঙ্গারাম বিশ্বাস ৭৮২টি সিঁড়ি তৈরি করেন। পরে, ১৩২৯ বঙ্গাব্দে জমিদার শ্রীসূর্যকান্ত রায় চৌধুরী সিঁড়িগুলো মেরামত করেন। এরপর শ্রীগোপাল চন্দ্র সাহা এবং মধুসূধন সাহা ভাইয়েরা বিরুপাক্ষ মন্দির থেকে চন্দ্রনাথ মন্দিরের মধ্যে সাড়ে ১.২৫ কিলোমিটার সিঁড়ি নির্মাণ করেন। অনেকে আছেন যাদের নামে সিঁড়ি আছে, যেমন অন্নদা রঞ্জন বন্দোপাধ্যায় ও বসন্ত কুমারী দেবী। এই সিঁড়িগুলোর কারণে তীর্থযাত্রীরা মন্দিরে পৌঁছাতে পারছেন। চন্দ্রনাথ মন্দির এবং বিরুপাক্ষ মন্দির মূল পাহাড়ের উপর রয়েছে। জমিদার নারায়ন লালা এই মন্দিরগুলোর নির্মাতা। তিনি ৮০০ দ্রোন লাখেরাজ ভূমি দান করেছিলেন মন্দিরগুলোর জল সরবরাহের খরচ মেটানোর জন্য। ১৩২৫ সালে মন্দিরগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হলে, রংপুরের ডিমলার রানী শ্রীমতী বৃন্দারানী চৌধুরানী অনেক অর্থ খরচ করে মন্দিরগুলো ঠিক করে দেন। এছাড়া, ১৩০৪ বঙ্গাব্দে চন্দ্রনাথ ও বিরুপাক্ষ মন্দিরের সিঁড়ি ও লৌহ সেতু নির্মাণ করেছিলেন এবং তার স্বামী রাজা শ্রীজানকি বল্লভ সেনের নামে স্মৃতিফলক রেখেছিলেন। মন্দির নির্মাণ, সংস্কার এবং উন্নয়নে আরও অনেকের অবদান রয়েছে, যেমন ত্রিপুরার রাজা শ্রীগোবিন্দ মানিক্য, সরোয়াতলী গ্রামের জমিদার শ্রীরাম সুন্দর সেন, এবং ময়মনসিংহের জমিদার রাজেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরী। এখন এসব মন্দিরের অবস্থা ভালো নয়, তাই সংস্কার করা জরুরি।
9. কান্তজির মন্দির বা কান্তনগর মন্দির, দিনাজপুরঃকান্তজির মন্দির, যা কান্তনগর মন্দির নামেও পরিচিত, বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলায় অবস্থিত একটি সুন্দর historic ও religious জায়গা। এটি ১৮শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে দিনাজপুরের রাজা প্রাণনাথের সাহায্যে নির্মাণ শুরু হয় এবং তার ছেলে রামনাথ ১৭৫২ সালে এটি পুরোটা শেষ করেন। এই মন্দিরটি ভগবান কৃষ্ণকে উৎসর্গ করা হয়েছে, আর এর দেয়ালে রাধাকৃষ্ণ এবং মহাভারতের নানা কাহিনী নিয়ে টেরাকোটা কাজ করা আছে। তিন তলা বিশিষ্ট এই মন্দির টা এক সময়ে চূড়াবেষ্টিত ছিল, কিন্তু ভূমিকম্পে সেটা ভেঙে যায়। আজও মন্দিরের দেয়ালে নানা ধরনের সুন্দর শিল্পকর্ম দর্শকদের আকর্ষণ করে। কান্তজির মন্দির শুধু ধর্মীয় উপাসনার স্থান নয়, বরং বাংলাদেশের স্থাপত্য ও শিল্পের এক দারুণ উদাহরণ হিসেবেও পরিচিত। দ্বিতীয় স্থানে আছে কান্তজির মন্দির, যা দিনাজপুরে অবস্থিত। এই প্রাচীন মন্দিরটা তিন তলার এবং এখানে দারুণ কিছু ধর্মীয় স্থাপনা আছে, যা সত্যিই চোখে পড়ার মতো।
10. ঢাকেশ্বরী মন্দির, ঢাকাঃ ঢাকেশ্বরী মন্দির বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরে অবস্থিত। এটি দেশের জাতীয় মন্দির হিসেবে পরিচিত এবং ঢাকার রক্ষাকর্ত্রী দেবী হিসাবে এই মন্দিরের নামকরণ হয়েছে। উজ্জ্বল হলুদ ও লাল রঙের এই মন্দির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলের দক্ষিণ-পশ্চিমে জায়গা পেয়েছে। মন্দিরের উত্তর-পশ্চিম কোণে চারটি শিব মন্দিরও রয়েছে। এখানে দেবী দুর্গার একটি ধাতু তৈরি প্রতিমা আছে।
11. ভবানীপুর মন্দির-শেরপুরঃ বগুড়ার শেরপুরে করতোয়ার তীরে ভবানীপুর, মায়ের একান্ন পীঠের একখানা, ভক্তদের মনে শান্তির ঠিকানা। পুরাকালে দক্ষযজ্ঞ শেষে সতী যখন শরীর ছাড়লেন, মহাদেব কাঁধে নিয়ে ঘুরতে লাগলেন, বিষ্ণু সুদর্শন চক্রে মায়ের দেহ কাটেন। মায়ের দেহের টুকরোগুলি পড়ল পৃথিবীর নানা কোণে, সেই থেকে জায়গাগুলো শক্তিপীঠ নামে পরিচিত হল। শোনা যায়, ভবানীপুরে মায়ের বাঁ পায়ের অলঙ্কার বা পাঁজরের হাড় পড়েছিল। তাই ভবানীপুর উপমহাদেশে খুব নামকরা এক শক্তিপীঠ। এখানে সব ধর্মের মানুষ বছরভর আসেন মায়ের দর্শন পেতে। অর্পণা এখানে শক্তিদেবী, আর ভৈরব হলেন বামন, তাদের নামেই সবাই চেনে। এক শাঁখারি নাকি ভবানীপুর মন্দিরের পাশের জঙ্গলের পুকুর পাড় দিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন এক সিঁদুর পরা ছোট্ট মেয়ে এসে বলল, সে নাটোর রাজবাড়ির রাজকন্যা। মেয়েটি শাঁখারির থেকে শাঁখা নিল, আর বলল নাটোরের রাণীকে যেন দামটা একটা ঝুড়ি থেকে নিতে বলেন। শাঁখারি অবাক হয়ে মেয়েটির কথা শুনে শাঁখা দিল তাকে। রাণীর কানে গেলে, তিনি লোকজন নিয়ে সেই জায়গায় গেলেন। শাঁখারির কথা শুনে মা ভবানী পুকুর থেকে দুই হাতে শাঁখা দেখালেন। রাণী আর সবাই অবাক হলেন, মায়ের মহিমা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ল। সেই শাঁখা-পুকুরে আজও তীর্থযাত্রীরা ডুব দেন। চার একর জমির ওপর মন্দিরটি, চারপাশে দেওয়াল। ভেতরে মূল মন্দির, বেলবরণ তলা, চারটা শিব মন্দির, পাতাল ভৈরব, গোপাল, বাসুদেব মন্দির ও নাট মন্দির আছে। আরও আছে সেবার জায়গা, শাঁখা পুকুর, দুটো ঘাট, আর বাইরে চারটা শিব মন্দির ও পঞ্চমুন্ড আসন।সকালে হয় বাল্যভোগ, দুপুরে অন্নভোগ, সন্ধ্যায় আরতি ও ভোগ নিবেদন করা হয়। ভক্তরা মিষ্টি ও অন্ন মায়ের কাছে দেন, পরে সবাই প্রসাদ পান। মাঘ মাসে মাঘী পূর্ণিমা, চৈত্রে রামনবমী, আর দূর্গোৎসব, শ্যামাপূজা ও নবান্ন এখানে খুব ধুমধাম করে হয়। ১৯৯১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কমিটি মায়ের সব দেখাশোনা করত। কিন্তু খারাপ খবর হলো, দেবোত্তর আইনের গ্যাঁড়াকলে মায়ের অনেক সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার পথে। কমিটির একজন সদস্য দীপঙ্করকে ২০০৪ সালে মেরে ফেলা হয়, কিন্তু অপরাধীরা আজও ধরাছোঁয়ার বাইরে। তার ওপর, ২০০৭ সালে সেনারা নাকি ভক্তদের জন্য তৈরি গেস্টহাউস ভেঙে দিয়েছিল।
মন্তব্য: সব সময় পরিবার মুখী না হয়ে মাঝেমধ্যে আপনাদের পরিবারের সবাইকে নিয়ে মন্দির গুলো ঘুরে আসতে পারেন। এর ফলে আপনাদের মন মেজাজ এর পাশাপাশি ধর্মীয় অনেক উপকার হবে।