ধর্মমতে ২৮টি নরকের বর্ণনা ও শাস্তি - বিস্তারিত জানুন

ঋগবেদ বলছে নরক হলো ভয়ানক অন্ধকার, যেখানে খারাপ লোকেরা থাকে, এর কোনো শেষ নেই। অথর্ববেদ অন্য এক রাজ্যের কথা বলে, যেখানে যারা মানুষ মারে, তারা মরার পরে বন্দী থাকে। আগ্নি পূরাণ শুধু ৪টা নরকের কথা বলেছে, এটা একটু অন্যরকম।

ধর্মমতে ২৮টি নরকের বর্ণনা ও শাস্তি
ধর্মমতে ২৮টি নরকের বর্ণনা ও শাস্তি


এখানে নরকের ধারণা একই, কিন্তু দেখতে ভিন্ন; যেমন অপরাধ, তেমন শাস্তি, আর শাস্তির ধরণ অনুযায়ী নরকের আলাদা নাম বর্ণনা আছে। মনুস্মৃতি ২১ রকমের নরকের কথা বলে। কিন্তু ভাগবত্ পূরাণ, দেবী ভাগবত্ পূরাণ, বিষ্ণু পূরাণ গরুড় পূরাণ ২৮ ধরনের ভয়ংকর নরকের কথা বলে। এই ২৮ নরককেই আসল নরক ধরা হয়। এই প্রধান নরকগুলো ছাড়াও অনেক ছোটখাটো নরকের কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে।

২৮টি নরককুণ্ডের কথা বলা আছে, যা শ্রীমদ্ভাগবতে (/২৬/-৩৬) লেখা আছে এখন আমরা জানবো এই নরকগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত একটি একটি করে   ২৮ প্রকার নরক তার ভয়াবহতা।

তামিস্র নরক: হিন্দু ধর্মশাস্ত্রের মতে, তামিস্র নরক খুবই ভয়াবহ একটি স্থান যেখানে বিশ্বাসঘাতক, পরনারীগামী এবং অন্যের সম্পত্তি লোভী পাপীরা পাঠানো হয়। তামিস্র শব্দের মানে হলো গভীর অন্ধকারএমন এক অন্ধকার যেখানে আলো ঢুকতে পারেনা। গরুড় পুরাণ শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, এখানে পাপীদের শারীরিক মানসিক কষ্ট সহ্য করতে হয়। ক্ষুধা, তৃষ্ণা এবং অবিরাম প্রহারের মাধ্যমে তাদের শাস্তি দেওয়া হয়। নরক পাপীদের জন্য এক কঠিন অনুশোচনার স্থান, যেখানে তারা নিজেদের কার্যকলাপের জন্য দুঃখ ভোগ করে। এভাবে ধর্ম থেকে বিচ্যুত আত্মাগুলি তামিস্রের অন্ধকারে পড়ে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা অন্যের জিনিস চুরি করে, তাদের এখানে শাস্তি পেতে হয়, যেন তাদের মার খেতে খেতে খারাপ লাগে।

অন্ধ তামিস্র নরক: হিন্দুশাস্ত্র বলছে, ঘোর তিমিরের এক নরক আছে, যেখানে পাপীদের এমন জমাট বাঁধা অন্ধকারে পাঠানো হয় যে, শুধু দেখা নয়, তাদের আত্মাও পথ হারিয়ে ফেলে। "অন্ধ" মানে হলোপুরোপুরি দেখা বন্ধ, আর "তামিস্র" মানে হলোঅন্ধকার জগৎ। যারা অন্যের পেটে লাথি মারে, চিটিংবাজি করে, নিজের ধান্দায় মত্ত হয়ে সমাজে অশান্তি ঘটায়, তাদের ঠিকানা এই নরক। এখানে পাপিষ্ঠদের হাত-পা বেঁধে, খিদে পিপাসায় কাতর করে রাখা হয়; তাদের এমন মার মারা হয় যে তারা নিজেদের পরিচয় পর্যন্ত ভুলে যায়। গরুড় পুরাণে এই নরকের খুঁটিনাটি বলা আছে, যা মৃত্যুর পরে আত্মার নতুন জন্মের আগে শুদ্ধ হওয়ার জায়গা বলে ধরা হয়।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: এখানে খারাপ লোকেরা এমন মার খায় যে তাদের বুদ্ধি লোপ পায়, কারণ তারা অন্যের বউ ভোগ করেছে যেন।

রৌরব নরক: হিন্দু কল্পকথা অনুযায়ী, রৌরব হলো নরকের সেই জায়গা, যেখানে খারাপ লোকেদের খুব কঠিন কষ্ট পেতে হয়। রৌরব নামের মানেই হলো চেঁচানো বা কান্নাকাটি করাএই নরকে খারাপ লোকেদের কান্না কোনো দিনও থামে না। যারা অন্য মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করে, দুর্বল প্রাণীদের মারে, আর ভুল পথে চলে অন্যদের দুঃখ দেয়, তারা মরে গেলে এই নরকে যায়। গরুড় পুরাণ ভাগবত পুরাণ বলছে, এখানে আত্মাকে ভয়ঙ্কর দেখতে রাক্ষসের মতো প্রাণীরা খুব মারে। প্রতি সেকেন্ডে নতুন কষ্ট শুরু হয়, যেন খারাপ লোকটা একটুও শান্তি না পায়। এই নরক খারাপ আত্মাকে তার করা খারাপ কাজের জন্য খুব দুঃখ দেয়। 

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা জীবজন্তু মারে, তারা এখানে আসে। যাদের মারা হয়েছে, তারা ভয়ংকর জন্তু হয়ে তাদের মারে যেন। 

মহা রৌরব নরক: মহারৌরব নামক একটি নরক আছে, এটা হিন্দু ধর্মের বইতে বলা সবচেয়ে খারাপ জায়গা, যেখানে খারাপ লোকেদের কঠিন শাস্তি পেতে হয়। এখানে "মহা" মানে অনেক বেশি বা বড় কিছু, আর "রৌরব" মানে হল কান্নার আওয়াজ বা দুঃখের চিৎকার। এই নরক তাদের জন্য যারা শুধু নিজের ভালো চায় না, বরং অন্য মানুষের ক্ষতি করে, বিশেষ করে যারা অন্যের জীবন কেড়ে নেয় বা চালাকি করে তাদের জিনিসপত্র দখল করে। গরুড় পুরাণ বইয়ে বলা আছে, এই নরকেরৌরবনামের রাক্ষসের মতো দেখতে কিছু আত্মা আছে, যারা খারাপ কাজ করা লোকদের মারে। তাদের শরীর বারবার কেটে আবার লাগিয়ে দেওয়া হয়, যাতে শাস্তি চলতেই থাকে। এই নরক হল আত্মার কান্না আর শরীরের যন্ত্রণার এক অন্ধকার জায়গা, যেখান থেকে পালানোর কোনো উপায় নেই, যতক্ষণ না পর্যন্ত তাদের সব পাপ শেষ হয়। 

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: এখানে অন্যকে কষ্ট দেওয়া লোকেরা মার খায়, মাংস খায় যেন।

কুম্ভীপাক নরক:  কুম্ভীপাক হল এক নরক, হিন্দু শাস্ত্রে এর কথা আছে, যেখানে আগুনে ঝলসে দেওয়া হয় পাপিকে। কুম্ভী মানে হাঁড়ি, আর পাক মানে হল কিছু সেদ্ধ করা। গরুড় পুরাণ বলছে, যারা পশু মারে, মাংস খায় বা পশুদের কষ্ট দেয়, তারা যায় কুম্ভীপাকে। সেখানে লোহার কড়াইয়ে তেল দিয়ে তাদের পোড়ানো হয়। এত কষ্ট যে তারা চিৎকার করে বাঁচার জন্য, কিন্তু কেউ শোনে না। বার বার তাদের শরীর তৈরি হয় আর পোড়ানো হয়, যতক্ষণ না সব পাপ শেষ হয়। এটা হল আত্মার শাস্তি, পরের জন্মের আগে পাপ ধুয়ে ফেলার উপায়।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা পশু-পাখি রান্না করে, তাদের ফুটন্ত তেলে ভাজা হয় যেন। 

কালসূত্র নরক: কালসূত্র হল এক বিভীষিকাময় নরক (Kālasūtra), যেখানে পাপিষ্ঠদের আগুনের আঁচে ফেলে অসহ্য কষ্ট দেওয়া হয়। এখানে "কাল" মানে হল সময় বা মরণ, "সূত্র" মানে হল দাগ বা কিনারা। এই নরকের মাটি লোহার গঠিত, যা রোদের তেজে গরম হয়ে সবসময় আগুনের মতো জ্বলে। গরুড় পুরাণ ভাগবত পুরাণ বলে, যারা গুরুকে মানে না, খারাপ কাজ করে, মিথ্যে কথা বলে বা মা-বাবার কথা শোনে না, তারা মরে গেলে এই নরকে যায়। সেখানে তাদের জামাকাপড় ছাড়া গরম লোহার ওপর ফেলে রাখা হয় আর জ্বলন্ত রড দিয়ে খুব মারা হয়। দিন আর রাতের তফাৎ বোঝা যায় না, কারণ আগুনের গরমে তারা সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এটা হল এক শেষ না হওয়া আগুনের জায়গা, যেখানে শুধু পাপ কমানোর জন্য আত্মা জ্বলতে থাকে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা ব্রহ্মহত্যা করে, তারা এখানে আসে। গরম তামার উপর তাদের কষ্ট পেতে হয় যেন।

অসিপত্র বন নরক: অসিপত্র বন এক বিভীষিকাময় স্থান (Asipatra Vana), হিন্দু কল্পনায় এক ভয়ানক জঙ্গল-নরক, যেখানে পাপিষ্ঠদের সূঁচালো তীক্ষ্ণ পাতাবিশিষ্ট গাছে ছুঁড়ে দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। "অসি" মানে যেমন তলোয়ার বা কোনো অস্ত্র, "পত্র" মানে তো গাছের পাতা, আর "বন" হলো জঙ্গল বা অরণ্য। যারা বিধর্মী, ঈশ্বরে অবিশ্বাসী, গুরুকে মানে না, আর ধর্মগ্রন্থ সাধুদের অপমান করে, তাদের এই নরকে পাঠানো হয়। গরুড় পুরাণ অনুযায়ী, এই জঙ্গলটি ভয়ংকর তলোয়ারের মতো পাতায় ভরা, যেখানে পাপি লোকদের শরীর ছুঁড়ে মারা হয়। প্রতিটি গাছের পাতা এতই ধারালো যে, সেগুলো নিমিষেই চামড়া, মাংস কেটে ফেলে দেয়। তাদের আত্মা আর্তনাদ করে, তবুও রেহাই নেই; কেননা শরীর আবার তৈরি হয়, আর ফের কাটা হয়এই চলতেই থাকে যুগ যুগ ধরে। এটা এক শরীর-খন্ডিত হওয়ার অনুতাপের জায়গা, যা আত্মাকে শরীর গর্ব থেকে আলাদা করে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: খারাপ লোকেরা এই বনে ঢোকে। তাদের মারধর করা হয়, তারা দৌড়াতে থাকে, আর ধারালো পাতায় শরীর কাটে যেন।

সূকর মুখ নরক: শূকরের মুখ এক বিভীষিকাময় স্থান, যেখানে পাপীদের শূকরের মতো দেখতে পেটের ভেতরে পুরে দেওয়া হয়। এর মানে হলো শূকরের মুখগহ্বর। যারা বাজে জীবন কাটায়, শুধু নিজের সুখের জন্য অন্যকে কষ্ট দেয়, তাদের মনে শুধু খারাপ চিন্তাতাদের জন্য এই জায়গাটা ঠিক করা আছে। গরুর পুরাণে আছে, পাপীদের শূকরের মুখের মতো চেহারার রাক্ষস বা ভয়ঙ্কর প্রাণীর মুখে ফেলে দেওয়া হয়, যেখানে তাদের জীবন্ত গিলে ফেলে, আবার বমি করে বের করে আনে, আবার গিলতে দেয়এভাবে চলতে থাকে যতক্ষণ না তাদের আত্মা ক্লান্ত হয়ে যায়। শূকরের মুখ হলো শরীর, মন অনুভূতির জন্য খুব কষ্টের একটা জায়গা

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: ক্ষমতাশালী ব্যক্তি ভুল শাস্তি দিলে, এখানে তার হাড়গোড় পিষে দেওয়া হয় যেন।

অন্ধকূপ নরক: অন্ধকার নরক হিন্দু পুরাণে এক আজব শাস্তির জায়গা, যেখানে খারাপ লোক গুলোকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ফেলে নানান আজব শাস্তি দেওয়া হয়। "অন্ধ" মানে হলো চারদিকে অন্ধকার আর "কূপ" মানে হলো কোনো গর্ত বা কোনো গভীর খাদ। এই নরক তাদের জন্য যারা অন্যকে মারে আর খারাপ ব্যবহার করে, যারা সবসময় মিথ্যা কথা বলে, ঘুষ খায় আর বেইমানি করে। গরুড় পুরাণ বলে, এখানে পাপীদের অন্ধকার গর্তে রাখা হয়, যেখানে তারা একটুও আলো দেখতে পায় না আর তাদের চারপাশে খারাপ আত্মা দুঃখের শক্তি ঘিরে থাকে। মার খেতে খেতে তারা খুব জোরে চিৎকার করে কিন্তু কেউ তাদের সাহায্য করে না। তাদের শরীর মন অন্ধকারে ডুবে যায় আর তারা সব সময় কষ্ট পায়।

 অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা পোকামাকড় মারে, তারা এখানে আসে। তাদের পোকামাকড় কামড়ায়, আর তারা ছটফট করে যেন।

কৃমিভোজন নরক: কৃমিভোজন নরক হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে এমন এক জায়গা, যেখানে পাপীদের শরীর থেকে কৃমি বা পোকা বের হয়ে তাদের মুখে ঢুকে যায়। এই কৃমি পচে যাওয়া অস্বাস্থ্যকর জীবাণুর মতো, এবং এখানে পাপীদের সেই পোকা খেতে বাধ্য করা হয়। গরুড় পুরাণে বলা আছে, যারা ধর্মের পথে ভুল পথে চলে গিয়েছে, বিশেষভাবে যারা অহংকারের কারণে অন্যদের ক্ষতি করেছে, তাদের জন্য এই শাস্তি অপেক্ষা করে। কৃমিভোজন নরকে পাপীরা তাদের শরীর থেকে বের হওয়া পোকা খায়, যা খুবই অপমানজনক যন্ত্রণাদায়ক। তাদের দেহে পোকা পূর্ণ হয়ে যায়, এবং প্রতি বার কৃমি খাওয়ার পর নতুন কৃমি তৈরি হয়। এই অভিজ্ঞতা শারীরিক মানসিকভাবে অনেক কষ্টদায়ক, যা আত্মাকে পাপের শাস্তির অনুভূতি দিয়ে দগ্ধ করে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: অতিথি বা বাচ্চাদের আগে না খাইয়ে খেলে, তাদের কৃমি হয়ে অন্য কৃমি খেতে হয়, আর অন্যেরা তাদের খায় যেন।

সন্দংশ নরক: সন্দংশ নরক হিন্দু ধর্মের একটি খুব কঠোর জায়গা, যেখানে পাপীদের দাঁত দিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়। 'সন্দংশ' মানে দাঁতের আঘাত বা দাঁত দিয়ে কামড়ানো। গরুড় পুরাণ এবং ভাগবত পুরাণ অনুসারে, যারা অন্যদের শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাত করেছে, তাদের জন্য এই নরক তৈরি করা হয়েছে। এখানে পাপীদের দেহকে দাঁত দিয়ে চাপা দেওয়া হয় এবং তারা বারবার দাঁতের ব্যথায় কষ্ট পায়। এটা শারীরিক এবং মানসিক উভয় দিক থেকেই খুব যন্ত্রণাদায়ক। শাস্তির সময়, পাপী আত্মা এসব দাঁতের আঘাতে কষ্ট পায় এবং তাদের পাপগুলো স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: দাঁতের আঘাতে পাপীদের চরম শাস্তি,যারা জোর করে ভালো মানুষের ধন কাড়ে, তাদের গরম কাঁচি দিয়ে নাড়ি বের করা হয় যেন।

তপ্ত শূর্মী নরক: তপ্ত শূর্মী নরক হিন্দু পুরাণে বর্ণিত এক অগ্নিজ্বালিত নরক, যেখানে পাপীদের শরীরে তপ্ত লোহার শলাকা দিয়ে আঘাত করা হয়। "তপ্ত" শব্দের অর্থ গরম বা উত্তপ্ত, আর "শূর্মী" মানে গরম লোহার শলাকা বা তলোয়ার। গরুড় পুরাণের মতে, যারা নিরীহ প্রাণী হত্যা করে, ধর্মবিরোধী কাজ করে বা নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত থাকে, তাদের এই নরকে পাঠানো হয়। এখানে পাপীদের তপ্ত লোহার শলাকা দিয়ে বারবার আঘাত করা হয়, যেন তাদের দেহে জ্বালাময় আগুনের মতো যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে। এই শাস্তি এতটাই প্রচণ্ড যে, পাপীরা বারবার দগ্ধ হয়ে চিৎকার করে, কিন্তু কোনো মুক্তি তাদের জন্য নেই। এটি আত্মার জন্য এক চরম পাপমোচন প্রক্রিয়া, যেখানে তার শাস্তি অবিরত চলে যতক্ষণ না তারা তার পাপের ফল ভোগ করে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো:যারা খারাপ কাজ করে, তাদের জ্বলন্ত লোহার মূর্তি ধরতে বাধ্য করা হয় যেন (পাপীদের জন্য আগুনের কঠোর শাস্তি)

 বজ্রকণ্টক শাল্মলী নরক: বজ্রকণ্টক শাল্মলী হলো হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে উল্লেখিত এক ভয়াবহ নরক। এখানে পাপীদের শরীরে তীক্ষ্ণ বজ্রকণ্টক প্রবাহিত হয়। 'বজ্র' মানে শক্তিশালী আঘাত আর 'কণ্টক' মানে কাঁটা। 'শাল্মলী' হলো একটি গাছ, যার তন্তু খুব তীক্ষ্ণ। গরুড় পুরাণসহ কিছু ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, যারা গুরুদ্রোহী, পরকীয়া বা মিথ্যা কাজে লিপ্ত তাদের এই নরকে পাঠানো হয়। এখানে, পাপীরা শাল্মলী গাছের কাঁটায় আক্রান্ত হয় এবং তাদের শরীরে প্রতিটি আঘাত যেন বজ্রের মতো যন্ত্রণার সৃষ্টি করে। এটা শুধু শরীরের জন্য নয়, আত্মার জন্যও খুব যন্ত্রণাদায়ক একটি অভিজ্ঞতা, যা তাদের বারবার পাপের ফল ভোগ করতে বাধ্য করে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা খারাপ কাজ করে, তাদের কাঁটাময় গাছে টানা হয় যেন (বজ্রের কাঁটায় দগ্ধ আত্মার চরম শাস্তি )

বৈতরণী নরক: বৈতরণী নরক হিন্দু ধর্মের একটি ভয়ঙ্কর স্থান, যেখানে পাপীদের বৈতরণী নদী পার হওয়ার সময় অনেক দুঃখ যন্ত্রণার সম্মুখীন হতে হয়। 'বৈতরণী' মানে এমন একটি নদী, যা জীবনের চলাচল আত্মার মুক্তির পথে বাধা দেয়। গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে, এই নরক তাদের জন্য, যাঁরা ধর্মবিরোধী কাজ করেন এবং পরকালের শাস্তি থেকে মুক্তির চেষ্টা করেন না। বৈতরণী নরকে পাপীরা এক ভয়ের নদী পার করতে বাধ্য হন, যেখানে তাদের দেহে অনেক যন্ত্রণা আগুন সহ্য করতে হয়। নদীটি সাপ আর বিষাক্ত প্রাণীতে ভরা থাকে, যা তাদের দেহে কামড়ে বা আঘাত করে, ফলে পাপীদের যন্ত্রণাও বাড়ে। সত্যি বললে, এটা একটি অসহ্য যন্ত্রণার জায়গা, যেখানে পাপীরা তাদের অপরাধের ফল ভোগ করে।

 অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা ধর্ম মানে না, তাদের নোংরা নদীতে ডুবতে হয় যেন (পাপীদের জন্য কঠিন শাস্তি নদী পার হওয়া অনেক কঠিন)

পূয়োদ নরক:পূয়োদ হচ্ছে হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বর্ণিত একটি নরক, যেখানে পাপীরা পঁচন বা দুর্গন্ধযুক্ত পরিবেশে কঠিন শাস্তি ভোগ করে। পূয়োদ শব্দটা পঁচন বা দুর্গন্ধ বোঝাতে ব্যবহার হয়, যা এই নরকের অশুভ প্রকৃতির কথা বলে। গরুড় পুরাণের মতে, এখানে আত্মা পঁচনশীল জিনিসে ডুবে থাকে এবং প্রতিদিন নানা ধরনের দুঃশাসন আক্রমণের শিকার হয়। পাপীরা তাদের সব পাপের ফল হিসেবে এখানে শাস্তি পায়, এবং তাদের শরীরে বিভিন্ন পঁচনশীল বস্তু ঢুকে যায়, ফলে তাদের অবিরাম যন্ত্রণা হয়। এটা সত্যিই একটি নাপাক, অশুদ্ধ জায়গা, যেখানে আত্মা তাদের কৃত পাপের কারণে ভোগে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা খারাপ জীবন কাটায়, তাদের নোংরা জিনিস খেতে হয় যেন (পঁচনশীল দুঃখের শাস্তি)

প্রাণরোধ নরক: প্রাণরোধ এমন একটা নরক, যা হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে। এখানে পাপীদের শ্বাসরোধের যন্ত্রণায় শাস্তি দেওয়া হয়। 'প্রাণ' মানে জীবন বা শ্বাস এবং 'রোধ' মানে আটকে দেওয়া। গরুড় পুরাণ এবং অন্য ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, যারা অন্যদের হত্যা করে, যারা গুরুদ্রোহী অথবা যারা দুর্নীতি বা অন্যায় কাজে জড়ায়, তাদের এখানে পাঠানো হয়। এই নরকে পাপীরা শ্বাস নিতে গেলে আটকে যায়, যেন তারা এক ভয়াবহ শ্বাসরোধের অভিজ্ঞতার মধ্যে পড়ে। দীর্ঘসময় শ্বাস নিতে না পেয়ে তারা শারীরিক মানসিক কষ্ট ভোগ করে। এটা খুবই কষ্টদায়ক এবং অস্বস্তিকর, যেখানে প্রতিটি শ্বাস নেওয়ায় তারা যন্ত্রণার সম্মুখীন হয়। এই শাস্তি তাদের আত্মাকে শুদ্ধ করার জন্য। 

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা পশু-পাখি মারে, তাদের নোংরা জিনিস খেতে হয় যেন(শ্বাসরোধের যন্ত্রণায় ভুগছে আত্মা)

বিশসন নরক: বিশসন নরক হিন্দু পুরাণে সরাসরি বলিএক ভয়ংকর স্থান, যেখানে পাপীরা কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হয়। গরুড পুরাণ অনুযায়ী, এখানে তারা যায় যারা নিষ্ঠুরতা, নিরহঙ্কার হত্যা, বা গুরুদ্রোহের মতো বড় পাপ করেছে। এদের শাস্তি হিসেবে, তারা একটি ভয়াবহ শারীরিক যন্ত্রণার মধ্যে যায়, যেখানে তাদের দেহ বারবার ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়। কিন্তু তারা মারা যায় না; বরং আবার তাদের দেহ গড়তে থাকে এবং শাস্তির পুনরাবৃত্তি হয়। এটা এক শেষহীন যন্ত্রণার চক্র, যেখানে আত্মা তাদের পাপের ফলবিকিরণ বুঝতে বাধ্য হয়।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা দেখিয়ে পশু মারে, তাদের মেরে ফেলা হয় যেন(খণ্ড খণ্ড করে কেটে পাপীদের কঠিন শাস্তি) 

লালাভক্ষ নরক: লালাভক্ষ নরক হচ্ছে হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বর্ণিত একটি নরক, যেখানে পাপীদের নোংরা বিকৃত খাবার খেতে দেওয়া হয়। লালা মানে থুতু, যা সাধারণত ঘৃণার প্রতীক, আর ভক্ষ মানে খাওয়া। গরুড পুরাণ বলছে, যারা পেটের জন্য অন্ধ বা খাবারের জন্য লালায়িত, তাদের এই নরকে পাঠানো হয়। এখানে পাপীরা এমন জায়গায় থাকে, যেখানে তাঁরা মানুষদের থুতু নোংরা জিনিস খেতে বাধ্য হয়। এটা এক ধরনের মানসিক এবং শারীরিক যন্ত্রণা, যেখানে আত্মা লজ্জা কষ্টের মধ্যে তাদের পাপের শাস্তি ভোগ করে।

 অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো:যারা খারাপ কাজ করে, তাদের খারাপ জিনিস খাওয়ানো হয় যেন (অপবিত্র ভক্ষণে পাপীদের চরম শাস্তি)

সারমেয়াদন নরক: সারমেয়াদন নরক হিন্দু ধর্মের এক ভয়াবহ জায়গা, যেখানে পাপীরা ভীষণ রকমের পোষা কুকুরের দ্বারা আক্রমণ করা হয়। গরুড পুরাণের মতে, যারা নিরপরাধ প্রাণী হত্যা করে, অতিথিদের অসম্মান করে, এবং অসহায়দের ওপর অত্যাচার চালায়, তাদের এখানে পাঠানো হয়। সেখানে অনেকগুলি আগুনে দগ্ধ চোখওয়ালা কুকুর পাপীদের ঘিরে ধরে এবং তাদের শরীর ছিঁড়ে খেয়ে ফেলে। কিন্তু আত্মা মরতে পারে না, বরং আবার দেহ গঠন হয়, আবার শাস্তি শুরু হয়। এই চক্র চলে চলতেই থাকে। এখানে আত্মাকে বোঝানো হয় যে নিষ্ঠুরতা আর কঠোরতার কারণে পাপীদের চিরকাল সন্তাপ ভোগ করতে হয়।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা আগুন দেয়, লুট করে, বিষ দেয়, তাদের কুকুর ছিঁড়ে খায় যেন (কুকুরের দংশনে ভয়াবহ শাস্তি।)

অবীচি নরক: অবীচি নরক হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নরক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এখানে পাপীরা কোনো বিশ্রাম পায় না এবং অনন্তকাল ধরে শাস্তি ভোগ করতে হয়। এমনকি মৃত্যুও তাদের মুক্তি দেয় না। গরুড় পুরাণের কথা অনুযায়ী, যারা গুরুদ্রোহী, ব্রাহ্মণ হত্যা, গাভী হত্যা, গুরুতর ধর্মদ্রোহিতা কিংবা আত্মবিক্রয়মূলক পাপ করে, তাদের এই নরকে চলে যেতে হয়। এখানে আত্মাকে আগুনে পুড়িয়ে, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটাকুটি করে এবং বিষাক্ত প্রাণীর দ্বারা দংশন করিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়, আর এক মুহূর্তের জন্যও বিরতি নেই। তাই মানে চিরন্তন নরকযন্ত্রণার চিত্র, যেখানে পাপীরা তাদের কাজের ফল ভোগ করে এক কঠিন বাস্তবতায় নিয়োজিত থাকে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো:যারা মিথ্যে কথা বলে, তাদের উঁচু থেকে ফেলে দেওয়া হয়, শরীর ভেঙে যায় যেন (চিরন্তন যন্ত্রণার শেষ সীমা।)

অয়ঃপান নরক: অয়ঃপান নরক হিন্দু ধর্মের কথায় বলা হয়েছে এমন একটা জায়গা, যেখানে পাপীরা ফুটন্ত লোহা জোর করে পান করতে বাধ্য হয়। গরুড পুরাণ বলছে, যারা ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করে, অন্যদের ভুল পথে চালায়, গুরুজনকে অসম্মান করে বা মিথ্যা বলে, তাদের সেখানে পাঠানো হয়। এখানে আত্মাকে গলিত ধাতুর বড় পাত্রে রাখা হয়, যেন তারা আগুনের মতো লোহা খেতে বাধ্য হয়। এর ফলে তাদের গলা, মুখ মূলত পুড়ে যায়, কিন্তু আত্মা মারা যায় নতুন দেহ আবার তৈরি হয় এবং শাস্তি আবার শুরু হয়। অয়ঃপান নরক সেই পাপীদের কঠিন কপাল দেখায়, যারা সব জানার পরেও ধর্ম থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় এবং অন্যদেরও ভুল পথে ঠেলে দেয়।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো:যারা মদ খায়, তাদের গরম লোহা খাওয়ানো হয় যেন (গলিত লোহা পান করিয়ে পাপীদের পুড়িয়ে দেওয়া হয়)

ক্ষারকর্দম নরক: ক্ষারকর্দম নরক হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বলা হয়েছে যে, এটা এক ভয়ঙ্কর নরক যেখানে পাপীদের শরীরে ক্ষার বা অ্যাসিড ঢেলে শাস্তি দেওয়া হয়। গরুড পুরাণ মতে, যারা গুরুজনদের অসম্মান করে বা অন্যদের শারীরিক মানসিকভাবে নিঃশেষ করে, তাদের এই নরকে পাঠানো হয়। এখানে পাপীদের দেহে ক্ষার বা অ্যাসিড মেশানো তরল বা কাদা ঢালা হয়, যা তাদের ত্বক পুড়িয়ে দেয় এবং মাংস ক্ষয় করতে শুরু করে। এর ফলে তৈরি হয় এক ভয়ানক গন্ধ এবং যন্ত্রণাও। তবে আত্মা মরতে পারে না। তাদের এই কষ্ট অবিরত চলতে থাকে, যা তাদের করা পাপের শাস্তির চিহ্ন বলে ধরা হয়।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা অহংকার করে, তাদের ক্ষার কাদায় ডুবতে হয় যেন (ক্ষারাক্ত পদার্থের মাধ্যমে পাপীদের শাস্তি) 

রক্ষোভোজন নরক: রক্ষণভোজন নরক হল এক ভয়ানক স্থান, যেটা হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বর্ণিত হয়েছে। এখানে পাপীরা এক ধরনের রাক্ষসের খাদ্য হয়ে যায়। গরুড পুরাণ অনুযায়ী, যারা অন্যদের ক্ষতি করে বা মিথ্যা কথা বলে, তাদের এখানে পাঠানো হয়। রাক্ষসেরা পাপীদের ধরে ধরে তাদের শরীরের টুকরো খেয়ে ফেলে। তাদের দেহ আবার তৈরি হয়, কিন্তু শাস্তির কারণে বারবার ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। আত্মা এখানে মৃত্যুবরণ করতে পারে না, বরং এই যন্ত্রণায় চিরকাল ভোগ করে। এই শাস্তি হল পাপীর জন্য একটি শিক্ষা, যেন তারা তাদের ভুল বুঝতে পারে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা বলি দিয়ে মাংস খায়, তাদের রাক্ষস মাংস খায় যেন।

শূলপ্রোত নরক: শূলপ্রোত নরক হল হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে উল্লেখিত একটি ভয়ঙ্কর জায়গা, যেখানে পাপীদের কঠিন শাস্তি দেওয়া হয়। গরুড় পুরাণ এবং অন্য কিছু ধর্মগ্রন্থে বলা হয়েছে, যারা গুরুজনদের অসম্মান করে, মিথ্যা বলে মানুষের ক্ষতি করে, বা ধর্মের বিরুদ্ধে কাজ করে, তাদেরকে এখানে পাঠানো হয়। এখানে পাপীদের দেহে অনেক তীক্ষ্ণ অস্ত্র ঢুকিয়ে দেওয়া হয়, যা তাদের শরীরে যন্ত্রণা সৃষ্টি করে। এই শাস্তি এতটাই কঠিন যে, তাদের দেহ ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু আত্মা মারা যায় নাআত্মা আবার নতুন করে তৈরি হয় এবং শাস্তি আবার শুরু হয়। এই প্রক্রিয়া চলতেই থাকে, যা আত্মাকে তার কৃতকর্মের ভয়াবহ ফলাংশের শিক্ষা দেয়

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা পশু-পাখিকে কষ্ট দেয়, তাদের পাখি ছিঁড়ে খায় যেন।

অবট নিরোধন নরক: অবট নিরোধন নরক হিন্দু পুরাণে বর্ণিত একটি ভীতিকর জায়গা, যেখানে পাপীরা গভীর, অন্ধকার গর্তে ফেলে রাখা হয়। এই গর্ত এত গভীর যে, সেখানে আলো ঢুকতে পারে না, আর পাপীরা শ্বাস নিতে বা নড়তে পারে না। গরুড় পুরাণে বলা হয়েছে, যারা ঈশ্বরকে অস্বীকার করে, ধর্মকে অবমাননা করে বা অন্যদের অন্ধকারে ফেলতে চায়, তাদের এই নরকে পাঠানো হয়। তারা সেখানে একাকীত্ব এবং নিঃশ্বাসরুদ্ধ অবস্থায় থেকে যায়, যা তাদের জন্য এক ভয়ের কষ্টের অভিজ্ঞতা। এই নরক আসলে শাস্তি দেওয়ার একটি উপায়, যেখানে আত্মাকে তার নিজের অন্ধকারের সঙ্গে মুখোমুখি হতে হয়। 

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা বন্দী করে কষ্ট দেয়, তাদের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আসে যেন (হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে বর্ণিত এক ভয়ঙ্কর নরক) 

দন্দশূক নরক: দন্দশূক নরক হিন্দু ধর্মগ্রন্থে এক ভয়ঙ্কর জায়গা, যেখানে পাপী মানুষদের অসংখ্য বিষাক্ত সাপ বা জীব কামড়ায়। গরুড পুরাণ বলছে, যারা মিথ্যা কথা বলে, ঠকায়, বা নিরীহ প্রাণীকে আঘাত করে, তাদের এখানে পাঠানো হয়। এখানে আত্মাকে অন্ধকার সাপে পরিপূর্ণ পরিবেশে রাখা হয়, যেখানে একসাথে সেই সাপগুলো তাদের দেহে কামড়াতে থাকে। দেহে রক্ত বেরিয়ে যায়, কিন্তু আত্মা মারা যায় নাশুধু হলেও নিরন্তর যন্ত্রণায় ভোগে। এই শাস্তি তাদের খারাপ কাজের ফল শিখিয়ে দেয়।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা সাপের মতো রাগ দেখায়, তাদের সাপেরা কষ্ট দেয় যেন (বিষাক্ত দংশনের যন্ত্রণায় আত্মার করুণ শাস্তি)

পর্যাবর্তন নরক: পর্যাবর্তন হল হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বর্ণিত এক ভয়ঙ্কর নরক, যেখানে পাপীদের কষ্ট দেওয়া হয় অবিরত ঘূর্ণনের মাধ্যমে। পর্যাবর্তন মানে হচ্ছে বারবার ঘোরা বা ঘূর্ণন। গরুড় পুরাণ এবং ধর্মশাস্ত্র অনুসারে, যারা অন্যের সফলতা দেখে ঈর্ষা করে, যারা মানুষের চিন্তা, ধর্মকর্ম আত্মিক উন্নতির পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে এবং যারা নিয়মিত দুষ্টকর্মে লিপ্ত থাকে, তাদের এখানে পাঠানো হয়। এখানে পাপীদের শরীরকে খুব দ্রুত একটি বিষাক্ত রক্তাক্ত গহ্বরে ঘুরতে বাধ্য করা হয়, যাতে তারা সব অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। এই ঘূর্ণন কখনো থামে নাএটি একটি নিরন্তর শাস্তি, যা আত্মাকে ধার্মিকতা এবং পাপ থেকে মুক্তির কঠোর শিক্ষা দেয়।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা অতিথির উপর রাগ করে, তাদের চোখ তুলে নেওয়া হয় যেন (ঘূর্ণিবৎ শাস্তির এক ভয়াবহ গন্তব্য)

সূচীমুখ নরক: সূচীমুখ নরক হিন্দু ধর্মশাস্ত্রে একটা খুব ভয়ের জায়গা। এখানে যারা পাপ করে, তাদের শরীরে ধারালো শলাকা ঢুকিয়ে যন্ত্রণা দেওয়া হয়। গরুড় পুরাণ বলে, যারা ধোঁকা দেয়, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, বা পরনিন্দা করে, তাদের এই নরকে পাঠানো হয়। এখানে পাপীদের শরীরে বারবার শলাকাগুলো প্রবেশ করে, ফলে তারা প্রচন্ড যন্ত্রণার মধ্যে থাকতে বাধ্য হয়। তাদের দেহ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও তারা মরতে পারে না, আবার সেই দেহ আবার গঠন হয়ে যায়। তাই তাদের শাস্তি চলতেই থাকে। সূচীমুখ নরক কেবল শারীরিক পীড়নই দেয় না, বরং আত্মার উপরও ভয় আর অপমানের চিহ্ন ফেলে রাখে।

অর্থাৎ সংক্ষেপে হলো: যারা বিশ্বাসীকে সন্দেহ করে, তাদের লোহার সূঁচ দিয়ে শরীর সেলাই করা হয় যেন (সূচালো শলাকায় বিদ্ধ করে পাপীদের ভয়াবহ শাস্তি)

মন্তব্যহিন্দু ধর্মে 28টি নরকের কথা বলা হয়, যেখানে পাপি আত্মারা শাস্তি ভোগ করে। তবে, এগুলি আসলে একটা পরীক্ষার মতো, যার মাধ্যমে আত্মা শুদ্ধ হয়ে মুক্তি পেতে পারে। পাপ দুঃখের পর, সত্যের দিকে যাওয়ার সুযোগ থাকে, যেখানে ঈশ্বরের কৃপায় সব দুঃখ দূর হয়। মুক্তির পথে, আত্মা সত্যের আলো পায়, যা তাকে নরক থেকে রক্ষা করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url