রুদ্রাক্ষ শোধন পদ্ধতি ও রুদ্রাক্ষ ধারণের উপকারিতা
রুদ্রাক্ষ হল একটা বড় ও চওড়া পাতা যুক্ত চিরহরিৎ গাছের ফলের বীজ। এই রুদ্রাক্ষ গাছের বীজ হিন্দু ধর্মের লোকেরা ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করেন। রুদ্রাক্ষ (Rudraksha) হল একটি অত্যন্ত পবিত্র ও শক্তিশালী জপমালা বা পুঁতি, যা হিন্দু ধর্মে, বিশেষ করে শিবের ভক্তদের মধ্যে খুব পরিচিত ধর্মীয় গ্রন্থ অনুসারে। এর উৎস আর গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক কথা শিব পুরাণ, পদ্ম পুরাণ, দেবী ভাগবত পুরাণ আর অন্যান্য হিন্দু বইতে উল্লেখ আছে। পৃথিবীতে এই গাছ Elaeocarpus গোত্রের অন্তর্গত এবং এর অনেক প্রজাতি আছে। এর মধ্যে E. ganitrus প্রজাতিটা বিশেষ করে মালা তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। বিশ্বাস করা হয় এই মালা ধারণে ধর্মীয় ও শারীরিকভাবে নানান উপকার পাওয়া যায়।
![]() |
রুদ্রাক্ষ শোধন পদ্ধতি |
এর উৎপত্তি সম্পর্কে পৌরানিক ও ধর্মীয় মোট চারটি কাহিনী বিদ্যমান রয়েছে। তার মধ্যে শিব পুরাণের কাহিনীটি সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য। তবে আমরা চারটি কাহিনী সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানবো।
রুদ্রাক্ষের উৎপত্তি (পৌরাণিক কাহিনী)
এর উৎপত্তি সম্পর্কে হিন্দু পুরাণে বেশ কিছু কাহিনী প্রচলিত আছে, বিশেষত শিব (রুদ্র) সংক্রান্ত। নিচে কয়েকটি প্রধান পৌরাণিক কাহিনী দেওয়া হল:
১. শিবের অশ্রু থেকে রুদ্রাক্ষের জন্ম: রুদ্রাক্ষ সম্পর্কে প্রচলিত একটি মজার কাহিনী আছে যা অনেকের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। বলা হয়, দেবাদিদেব শিবের চোখের জল থেকে এই বিশেষ বৃক্ষের জন্ম হয়েছে। অনেক বছর আগে, একবার শিব কঠিন তপস্যার জন্য ধ্যানরচনা করেছিলেন এবং সেখানে তিনি হাজার হাজার বছর কাটিয়েছিলেন। যখন তাঁর ধ্যান ভাঙলো, তখন তিনি মানব প্রজাতির দুঃখ-কষ্ট ও পাপ নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করেন। তাঁর মনে হচ্ছিল যে মানুষ কতটা দুঃখে দিন কাটাচ্ছে। এ সময়, শিবের চোখ থেকে কিছু অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। সেই অশ্রুগুলো যখন মাটিতে পড়লো, তখন সেখান থেকে রুদ্রাক্ষ গাছের জন্ম হলো। এটাকে অনেকেই একটি সুন্দর ও অর্থপূর্ণ গল্প মনে করেন। রুদ্রাক্ষকে ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় এবং এটি সাধারণত পূজায় ব্যবহার করা হয়। মানুষ রুদ্রাক্ষের মধ্যে শিবের বন্দনা খুঁজে পায় এবং বিশ্বাস করে যে এই গাছ মানুষের জীবনে শান্তি ও প্রশান্তি নিয়ে আসতে পারে।
২. ত্রিপুরাসুর বধ ও রুদ্রাক্ষ: আরেকটা গল্পে বলা হয়, শিব ত্রিপুরাসুর নামে এক দানবকে হারানোর পর তাঁর রাগ নরম করতে ধ্যানে বসেন। সেই সময় তাঁর চোখ থেকে অশ্রু পড়ে, আর সেই অশ্রু থেকেই রুদ্রাক্ষ বের হয়। বলা হয়, রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে শিবের আশীর্বাদ পাওয়া যায়।
৩. বিষ্ণুপুরাণ ও শিবপুরাণে উল্লেখ: হিন্দু শাস্ত্রগুলো, যেমন শিবপুরাণ ও বিষ্ণুপুরাণে, রুদ্রাক্ষের গুণগুলো নিয়ে বলা হয়েছে। শিবপুরাণে লেখা আছে, রুদ্রাক্ষ ধরা হলে পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায় এবং মোক্ষ লাভ করা সহজ হয়। এটাকে শিবের চিহ্ন হিসেবে ধরা হয়।
৪. রাক্ষসদের বিরুদ্ধে রুদ্রাক্ষের শক্তি: অনেক লোককথায় বলা হয়, রাক্ষসরা যখন দেবতাদের অসস্তি দিচ্ছিল, তখন শিবের রুদ্রাক্ষ তাদের ধ্বংস করতে সাহায্য করেছিল। এজন্য রুদ্রাক্ষকে শক্তিশালী নিরাপত্তা হিসেবে মনে করা হয়।
রুদ্রাক্ষ শোধন পদ্ধতি
আমরা ত্র্যম্বক (তিন-চক্ষু বিশিষ্ট শিব) এর পূজা করি, যিনি মধুর সুবাসযুক্ত, জীবনের পুষ্টি ও সমৃদ্ধি বৃদ্ধিকারী। যেমন পাকা ফল ডালের বন্ধন থেকে মুক্ত হয়, তেমনই আমাদের মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত করে অমৃতত্ব প্রদান করুন।"ওঁ হোঁ অঘোরে ওঁ হোঁ ঘোরে ওঁ হুং ঘোরতরে ওঁ হৈ জীং শ্রী ঐ সর্বেতঃ সর্বেভ্যো নমঃস্ত রুদ্ররূপিণে হুঁ হুঁ নমঃ।।"
রুদ্রাক্ষের মাহাত্ম্য (মুখ অনুযায়ী ফলাফল):
রুদ্রাক্ষ শোধন: যদি আপনি নতুন রুদ্রাক্ষ কিনেছেন কিন্তু তা শোধন করেননি, তাহলে আপনাকে আগে শোধন করতে হবে। নাহলে, রুদ্রাক্ষ ঠিকভাবে কাজ করবে না।
শোধনের উপকরণ: আপনাকে কিছু উপকরণ লাগবে – দুধ, দই, ঘি, মধু, চিনি, শুদ্ধ জল বা গঙ্গাজল, বেলপাতা, ১০৮, ৮ বা ২৮টি ফুল, মালা, নৈবেদ্য, ধূপ, মোমবাতি এবং কর্পূর।
নিয়ম:- শুদ্ধাসনে বসে মুখ পূর্ব দিকে করুন। একটি দ্বীপ ধূপ জ্বালান। রুদ্রাক্ষটা পাথরের বা মাটির বা কাঁসার পাত্রে রাখুন।
আচমন: তিনবার ডান হাত দিয়ে কিছু জল নিয়ে নিচে দেয়া মন্ত্র পড়ুন এবং তিনবার জল পান করুন। শেষে হাতটি ধুয়ে ফেলুন।
মন্ত্ৰ: আত্মতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ বিদ্যাতত্ত্বায় স্বাহা। ওঁ শিবতত্ত্বায় স্বাহা।
জলশুদ্ধি: শাং মন্ত্রে যে জলে পূজা করছেন, সেখানে ডানহাতের মধ্যমা দিয়ে একটা ত্রিভূজ আঁকুন।
আসনশুদ্ধি: শাং মন্ত্রে আপনার আসনের নিচে একটা ত্রিভূজ আঁকুন। ডান হাতের মধ্যমা দিয়ে।
পুষ্পশুদ্ধি: শাং মন্ত্র দিয়ে ফুলের উপর গঙ্গাজল এবং চন্দন ছিটিয়ে ফুলগুলোকে পরিষ্কার পূষ্পশুদ্ধি করুন।
মন্ত্র পাঠ করুন: প্রথমে মন্ত্রপাঠ করুন:
ওঁত্র্যম্বকং যজামহে সুগন্ধিঁপুষ্টিবর্ধনং উর্বারুকমিব বদ্ধনান্মৃত্যোর্মুক্ষীয় মামৃতাৎ।।"
বাংলায় সরলার্থ (অর্থ):
এরপর নিম্নলিখিত মন্ত্র দ্বারা রুদ্রাক্ষ স্পর্শ করে প্রাণপ্রতিষ্ঠা করুন:
তারপর, ৮ / ২৮ / ১০৮ টি বেলপাতা এবং চন্দন নিন। প্রতিটি বেলপাতার অগ্রভাগ অল্প একটু ছিঁড়ে নিয়ে অর্ধেক প্রদক্ষিণ করে রুদ্রাক্ষে নিবেদন করুন। এই সময় নিম্নলিখিত মন্ত্র উচ্চারণ করুন:
"ওঁ রুদ্রাক্ষায় নমঃ।।"
এভাবে শুদ্ধচিত্তে রুদ্রাক্ষকে শিব রূপে পূজা করুন।
বেলপাতা প্রদানের মন্ত্র:- ওঁ পূর্ন বৃক্ষ মহাভাগং সদাত্বং মহেশ প্রিয় মহেশং পূজা নিমিত্তং বরদা ভব শোভনে ১০ বার শিবগায়ত্রী মন্ত্র উচ্চারন করুন:- তৎপুরুষায় বিঘ্নহে বেদমহীমহাদেবায় ধীয়োমহো তন্নো রুদ্র প্রচোদয়াৎ।। ১০৮ বার হাত জড়ো করে, চোখ বন্ধ করে- ওঁ নমঃ শিবায় মন্ত্র উচ্চারন করুন। এরপর ক্ষমা চেয়ে বিসর্জন।
বিসর্জন মন্ত্র:- আবহনং নজনামি নৈবজনামি নৈবজনামি পূজনং বিসর্জনং ন জনামি ক্ষমধ্য পরমেশ্বর।।
বিভিন্ন মুখী রুদ্রাক্ষ ও রুদ্রাক্ষ ধারণে মেলে নানাবিধ ফলঃ
‘বিবেক চিন্তামণি’’ নামক মহা গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, জগতের উদ্ধারের জন্য ভগবান শিবের নেত্র থেকে রুদ্রাক্ষের উৎপত্তি হয়েছে, যার মহিমা বর্ণনা করা খুবই কঠিন। যদিও সকল প্রকার রুদ্রাক্ষের জন্ম ভগবান শিবের মাধ্যমেই হয় তবুও রুদ্রাক্ষের প্রকারভেদে ধারকের ফলপ্রাপ্তি কিন্তু বিভিন্ন হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, প্রকৃতি ভেদে রুদ্রাক্ষের স্বরূপও বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে।
রুদ্রাক্ষের স্বরূপ ও ফলাফল গুলি দেখে নেওয়া যাক -
1. এক-মুখী রুদ্রাক্ষ (শিবের স্বরূপ): এক-মুখী রুদ্রাক্ষ শিবের স্বরূপের প্রতীক হিসেবে পরিচিত। এটাকে পবিত্র রুদ্রাক্ষের মধ্যে সেরা বলা হয়। এই রুদ্রাক্ষ পেলে জীবনের সব পাপ, বিশেষ করে বড় পাপগুলোও দূর হয়ে যায়। যার কাছে এই রুদ্রাক্ষ থাকে, তার মধ্যে আত্মিক শক্তি এবং শিবের প্রতি ভক্তি বাড়ে, যা তাকে সংসারের ফাঁদ থেকে মুক্ত করতে সাহায্য করে। শিবের আশীর্বাদে, এই রুদ্রাক্ষ মানুষের জীবনকে আরও সুন্দর এবং মোক্ষের দিকে নিয়ে যায়।
2. দুই-মুখী রুদ্রাক্ষ (হর-গৌরী স্বরূপ): দুই-মুখী রুদ্রাক্ষ হর-গৌরীর প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়, যা শিব ও পার্বতীর একতাকে প্রকাশ করে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে দাম্পত্য জীবনে সুখ, শান্তি ও সমন্বয় বজায় থাকে। এটি বিশেষভাবে পারিবারিক কল্যাণ, দাম্পত্য সুখ, এবং সম্পর্কের মধুরতার জন্য উপকারী। দুই-মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে হর-গৌরীর কৃপায় আয়ু বৃদ্ধি পায়, সাধনায় সিদ্ধি লাভ হয় এবং গো-হত্যা জনিত পাপ থেকেও মুক্তি পাওয়া যায়। এটি মানুষের জীবনে প্রেম, ঐক্য ও স্থিতির শক্তি এনে দেয়।
3. তিন-মুখী রুদ্রাক্ষ (অগ্নিদেবতার স্বরূপ): তিন-মুখী রুদ্রাক্ষকে অগ্নিদেবের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা তেজ, শক্তি ও শুদ্ধির প্রতীক। এটি ধারণ করলে জীবনের সমস্ত পাপ, বিশেষত স্ত্রীহত্যা জনিত পাপ, ধীরে ধীরে ক্ষয় হয় এবং ধারক পাপমুক্ত হয়ে যায়। তিন-মুখী রুদ্রাক্ষ অন্তরের অশুচিতা দূর করে আত্মশক্তি বৃদ্ধি করে, সাহস ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে। এটি শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে এবং মানুষকে কর্মক্ষম করে তোলে। তিন-মুখী রুদ্রাক্ষ ধারণকারী ব্যক্তি জীবনে সাহসী, দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ও দৃঢ়চেতা হয়ে ওঠেন। এটি ধারণ করলে স্ত্রীহত্যা জনিত পাপ থেকে মুক্তি মেলে।
4. চার-মুখী রুদ্রাক্ষ (সাক্ষাৎ ব্রহ্মা স্বরূপ): চার-মুখী রুদ্রাক্ষকে সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মার প্রতীক হিসেবে গণ্য করা হয়। এটি জ্ঞান, বিদ্যা, মেধা ও সৃষ্টিশক্তির প্রতীক। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে জ্ঞান ও বুদ্ধি বৃদ্ধি পায়, শ্রীবৃদ্ধি ঘটে এবং রোগ-ব্যাধি দূর হয়। চিত্ত প্রশান্ত থাকে এবং ধ্যান-ধ্যানে মনোনিবেশ সহজ হয়। চার-মুখী রুদ্রাক্ষ বিশেষভাবে শিক্ষার্থীদের, গবেষকদের এবং জ্ঞানার্জনকারীদের জন্য উপকারী। এছাড়া এটি নরহত্যার পাপ থেকেও মুক্তি দেয়। এই রুদ্রাক্ষ শিবের কৃপায় ধারককে শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক শক্তিতে পরিপূর্ণ করে তোলে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে শ্রীবৃদ্ধি, জ্ঞান বৃদ্ধি, রোগমুক্তি, ও নরহত্যার পাপ থেকে মুক্তি লাভ হয়। মানসিক শান্তি ও প্রশান্তিও লাভ হয়।
5. পাঁচ-মুখী রুদ্রাক্ষ (কালাগ্নি রুদ্র স্বরূপ): পাঁচ-মুখী রুদ্রাক্ষকে কালাগ্নি রুদ্রের স্বরূপ বলা হয়, যা শক্তি ও পরিশুদ্ধির প্রতীক। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে অখাদ্য, অশুচি বা অনিয়মিত খাদ্য গ্রহণের ফলে সৃষ্ট পাপ ধীরে ধীরে নাশ হয়। এটি দেহ ও মনকে পরিশুদ্ধ করে, নেতিবাচক শক্তি ও অসুস্থতা দূর করে জীবনে সাফল্য ও শান্তি নিয়ে আসে। পাঁচ-মুখী রুদ্রাক্ষ ধারক জীবনে স্থিরতা, শক্তি এবং সমৃদ্ধি অর্জন করেন। এটি শিবের এক অন্যতম প্রধান রূপের শক্তি ধারন করে ধারককে আধ্যাত্মিক ও শারীরিকভাবে সুরক্ষিত রাখে। এটি ধারণ করলে অখাদ্য বা অশুচি আহারে হওয়া পাপের বিনাশ ঘটে।
6. ছয়-মুখী রুদ্রাক্ষ (কার্তিকেয় স্বরূপ): ছয়-মুখী রুদ্রাক্ষ কার্তিকেয় দেবতার রূপ হিসেবে পরিচিত, যিনি যুদ্ধের দেবতা ও শক্তির প্রতীক। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে ধারক গণহত্যা ও বৃহৎ পাপ থেকে মুক্তি পান। এটি সাহস, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। কার্তিকেয় ব্রত পালন এবং ধর্মকর্মে মনোযোগ বৃদ্ধির মাধ্যমে ধারকের জীবনে সাফল্য ও কল্যাণ আনে। ছয়-মুখী রুদ্রাক্ষ ধারনকারী ব্যক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠেন এবং জীবনের সকল বাধা ও প্রতিবন্ধকতা দূর হয়। এটি ধারণ করলে গণহত্যার পাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এছাড়া কার্তিক ব্রত পালনে উৎসাহ বৃদ্ধি পায় এবং ধর্মকর্মে মনোযোগ বাড়ে।
7. সাত-মুখী রুদ্রাক্ষ (অনন্ত স্বরূপ): সাত-মুখী রুদ্রাক্ষকে অনন্ত স্বরূপ বলা হয়, যা চিরস্থায়ী শক্তি ও অমরত্বের প্রতীক। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সকল প্রকার পাপ ধূলোয়িত হয় এবং ধারক দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পায়। এটি জীবনে সমৃদ্ধি, সুখ ও সৌভাগ্য বৃদ্ধি করে। সাত-মুখী রুদ্রাক্ষ ধারক শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, স্থিরচেতা এবং পরম শান্তিতে আবিষ্ট হন। এই রুদ্রাক্ষ ধারনে আধ্যাত্মিক উন্নতি ঘটে এবং ধারক অনন্ত পরম তত্ত্বের সঙ্গে সংযুক্ত হন। এটি ধারণ করলে সমস্ত প্রকার পাপ থেকে মুক্তি মেলে এবং দারিদ্র দূর হয়।
8. আট-মুখী রুদ্রাক্ষ (গণেশের স্বরূপ): আট-মুখী রুদ্রাক্ষ গণেশ দেবতার স্বরূপ হিসেবে বিবেচিত, যিনি বাধা-বিঘ্ন বিনাশ এবং সমৃদ্ধির দাতা। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে জীবনের সকল দোষ-ত্রুটি ও বাধা দূর হয়, বাধা-বিঘ্ন মুক্তি লাভ করে। ধারক জীবনে সফলতা, শান্তি ও পরম শুদ্ধতা অর্জন করেন। আট-মুখী রুদ্রাক্ষ পরম সাধনার প্রতীক, যা পরমপদে পৌঁছানোর পথ সুগম করে এবং ধারককে আধ্যাত্মিকভাবে সমৃদ্ধ করে। এটি ধারণ করলে সকল দোষ খণ্ডন, বাধা-বিঘ্ন দূরীকরণ, এবং পরম পদ লাভ সম্ভব হয়।
9. নয়-মুখী রুদ্রাক্ষ (দুর্গা স্বরূপ): নয়-মুখী রুদ্রাক্ষকে দুর্গা দেবীর স্বরূপ বলা হয়, যিনি শক্তি, সাহস এবং সকল কষ্ট ও দুঃখের বিনাশের দেবী। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে জীবনের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট নাশ হয় এবং ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি ও বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। ধারক মনের সকল ভয় ও শঙ্কা দূর করে মুক্তি লাভের পথপ্রদর্শক হয়। নয়-মুখী রুদ্রাক্ষ ধারনকারীর জীবনে শান্তি, সুখ ও পরম মঙ্গল আসতে শুরু করে এবং সে আত্মিক উন্নতির উচ্চতর স্তরে পৌঁছে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে সকল দুঃখ-কষ্টের বিনাশ হয়, ভগবানের প্রতি ভক্তি বৃদ্ধি পায়, এবং মোক্ষলাভ সম্ভব হয়।
10. দশ-মুখী রুদ্রাক্ষ (বিষ্ণু স্বরূপ): দশ-মুখী রুদ্রাক্ষকে বিষ্ণু দেবতার স্বরূপ হিসেবে গণ্য করা হয়, যিনি রক্ষা ও সংরক্ষণের প্রতীক। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে ভূত, প্রেত, ব্রহ্মদৈত্য, পিশাচ প্রভৃতি অশুভ শক্তির ভয় দূর হয়। ধারক জীবনে সুরক্ষা, শান্তি ও স্থিতি লাভ করে এবং সবরকম অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তি পায়। দশ-মুখী রুদ্রাক্ষ মানুষের জীবনে সমৃদ্ধি, সফলতা ও আধ্যাত্মিক উন্নতি নিয়ে আসে, যা তাকে জীবনের সকল বাধা ও বিপদ থেকে রক্ষা করে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণে ভূত-প্রেত, ব্রহ্মদৈত্য, পিশাচ ইত্যাদি অশুভ শক্তির ভয় দূর হয়।
11. এগারো-মুখী রুদ্রাক্ষ (রুদ্র ও ইন্দ্র স্বরূপ): এগারো-মুখী রুদ্রাক্ষকে রুদ্র এবং ইন্দ্র দেবতার সংমিশ্রিত রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশেষ করে নারীদের জন্য এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে স্বামীর সুরক্ষা, উন্নতি, সৌভাগ্য এবং দীর্ঘায়ু লাভ হয়। সন্তানসুখে এ রুদ্রাক্ষ বিশেষ উপকারী। এছাড়া এটি পরিবারের সম্প্রীতি বজায় রাখতে এবং দাম্পত্য জীবনে সুখ ও শান্তি আনতে সাহায্য করে। এগারো-মুখী রুদ্রাক্ষ ধারনকারী ব্যক্তি জীবনে সমৃদ্ধি ও আধ্যাত্মিক শুদ্ধি অর্জন করেন। বিশেষত নারীদের জন্য অত্যন্ত ফলদায়ক। স্বামীর সুরক্ষা, উন্নতি, সৌভাগ্য ও দীর্ঘায়ু লাভ হয়। সন্তান-সুখের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত উপকারী।
12. বারো-মুখী রুদ্রাক্ষ (সূর্য স্বরূপ): বারো-মুখী রুদ্রাক্ষকে সূর্য দেবতার প্রতীক হিসেবে ধরা হয়, যা তেজ, শক্তি ও মান সম্মানের প্রতীক। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে ধারকের চেহারায় তেজস্বিতা বৃদ্ধি পায় এবং সে হীনবল হলেও শক্তি ও উৎসাহ ফিরে পায়। এটি ধারকের মান, সম্মান ও প্রতিষ্ঠা বৃদ্ধি করে, দুর্ঘটনা ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি থেকে রক্ষা করে। এছাড়া রূপ-লাবণ্য বৃদ্ধিতে সহায়ক এবং ধারককে সদা সুখী ও প্রসন্ন রাখে। বারো-মুখী রুদ্রাক্ষ জীবনের সকল বাধা দূর করে সফলতার পথে নিয়ে যায়। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে চেহারায় তেজস্বিতা আসে, হীনবলতা দূর হয়, এবং মান-সম্মান বৃদ্ধি হয়। দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়, এবং রূপ-লাবণ্য বৃদ্ধি সহ সদা আনন্দময় থাকা সম্ভব হয়।
13. তেরো-মুখী রুদ্রাক্ষ (কামদেব স্বরূপ): তেরো-মুখী রুদ্রাক্ষ কামদেবের স্বরূপ হিসেবে পরিচিত, যিনি প্রেম, আকাঙ্ক্ষা ও মনোকামনার প্রতীক। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে মনোরঞ্জন ও ইচ্ছাপূরণ ঘটে এবং জীবনে কোনরূপ অকল্যাণ হয় না। এটি ধারকের মনকে শুদ্ধ ও শান্ত রাখে, বাসনা ও আকাঙ্ক্ষাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে। তেরো-মুখী রুদ্রাক্ষ ধারনকারী ব্যক্তি জীবনে প্রেম, সুখ ও সাফল্য লাভ করেন এবং মনোভাব ও আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আসে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে মনোবাসনা পূর্ণ হয়, এবং অকল্যাণের সম্ভাবনা দূর হয়।
14. চৌদ্দ-মুখী রুদ্রাক্ষ (শিব ও হনুমান স্বরূপ): চৌদ্দ-মুখী রুদ্রাক্ষ শিব ও হনুমান দেবতার মিলিত রূপ হিসেবে পরিচিত, যা শক্তি, সমৃদ্ধি ও রক্ষা প্রদান করে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়, সর্বত্র সম্মান লাভ হয় এবং সকল ধরনের সুখ-শান্তি ও আয়ু বৃদ্ধি পায়। ধারক শিবরূপী হয়ে ওঠেন এবং শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে সুস্থ ও রোগমুক্ত থাকেন। চৌদ্দ-মুখী রুদ্রাক্ষ জীবনের সকল অসুখ, বাধা ও দুঃখ দূর করে ধারককে পরম কল্যাণে উপনীত করে। এই রুদ্রাক্ষ ধারণ করলে জীবনে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়, সম্মান, সুখ-শান্তি ও দীর্ঘায়ু লাভ হয়। শিব-রূপে ধারককে নীরোগ রাখতে সাহায্য করে, এবং সব রোগ থেকে মুক্তি দেয়।