শিবরাত্রি ব্রত মাহাত্ম্য
এ বছর শিবরাত্রি কবে ? ব্রতপালনের জন্য কতক্ষণ সময় পাবেন?
এবার মহাশিবরাত্রি অনুষ্ঠিত হবে ২৬ ফেব্রুয়ারি, বুধবার। এই দিন শিব চতুর্দশীর তিথি শুরু হবে সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে, এবং তিথি সমাপ্ত হবে পরের দিন সকাল ৮টা ৩১ মিনিটে। অর্থাৎ, পুরো এই সময়জুড়ে শিবরাত্রির পূজা-উপবাস পালন করা হবে।
শিবরাত্রি ব্রতকথা ও মাহাত্ম্য
যেহেতু ভগবান মহাদেব শংকরের প্রতি নিবেদিত পূজা উপবাস হলো শিবরাত্রি ব্রত তাই ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে যে প্রথম পালন করা হয় তাহা শিবরাত্রি মহাব্রত হিসেবে পরিচিত। শিবভক্তদের কাছে এটি এক অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত দিন, যেদিন উপবাস, পূজা এবং আরাধনার মাধ্যমে তাঁরা মহাদেবের কৃপা ও আশীর্বাদ প্রার্থনা করেন।
পুরাণ মতে, একসময় এক দরিদ্র শিকারি, যিনি প্রতিদিন শিকার করে পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন, অজান্তেই শিবরাত্রির দিন উপবাসে ছিলেন। সেদিন রাতে তিনি একটি বেলগাছের নিচে, একটি কূপের ধারে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন এবং শিকার করার জন্য বেলপাতা ছিঁড়ছিলেন। তিনি জানতেন না, তাঁর ছেঁড়া বেলপাতাগুলো একটি শিবলিঙ্গের উপর পতিত হচ্ছিল। পরদিন সকালে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি সারা রাত শিবের অজ্ঞাতসারে উপাসনা করেছেন। এই নিষ্কলুষ উপাসনার ফলে তাঁর সমস্ত পাপ মোচন হয় এবং তিনি মৃত্যুর পর শিবলোকে গমন করেন। এই কাহিনির মাধ্যমে বোঝা যায়, শ্রদ্ধা ও নিষ্ঠা সহকারে,অজ্ঞাতসারে শিবরাত্রি ব্রত পালন করলে, ভগবান শিবের কৃপা ও আশীর্বাদ লাভ করা সম্ভব।
শিবরাত্রির মাহাত্ম্য
![]() |
শিবরাত্রি ব্রত মাহাত্ম্য |
3. কামনা পূরণ: এই ব্রত পালন করলে ভক্তের সমস্ত ইচ্ছা পূর্ণ হয় এবং জীবন সুখময় হয়।
4. সুখ ও সমৃদ্ধি: দাম্পত্য কল্যাণ ও সন্তান-সন্ততি লাভ হয় /সংসার জীবনে সুখ-শান্তি লাভ হয়।
শিবরাত্রি ব্রত পালনের বিধি
শিবরাত্রি ব্রত পালনের মাধ্যমে ভক্তরা মহাদেবের অশেষ কৃপা লাভ করেন, যার ফলে তাদের জীবনে সুখ, সমৃদ্ধি ও পরম মুক্তির পথ উন্মোচিত হয়। শিবেরভক্তদের জন্য বিশেষ উৎসবগুলির মধ্যে এই শিবরাত্রিও অন্যতম। এই বছর মহাশিবরাত্রি পড়েছে ২৬ ফেব্রুয়ারি। মহাদেবের আশীর্বাদ পেতে মধ্যরাতেও পুজো করেন ভক্তরা। মহাদেবের কাছে প্রার্থনা করে এবং তাঁর আশীর্বাদ চান। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, শিবরাত্রি উৎসব বছরে ১২বার পালিত হয়। তার মধ্যে ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি মহাশিবরাত্রি নামে পরিচিত। মহাশিবরাত্রির দিন মহাদেব ও পার্বতীর বিয়ে হয়েছিল। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশী ও চতুর্দশী তিথিতে লক্ষ লক্ষ ভক্ত অপার ভক্তিভাবে পালন করেন মহাশিবরাত্রি। যদিও বছরজুড়ে মোট বারোটি শিবরাত্রি পালিত হয়, তবু ফাল্গুন মাসের এই বিশেষ তিথিকে সর্বাধিক পবিত্র ও মহাত্মময় বলে গণ্য করা হয়। এই সময়ে ভারতবর্ষের শহর-বন্দর, গ্রামাঞ্চল ও অলিগলি জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সহস্র শিবমন্দির যেন জেগে ওঠে ‘ওঁ নমঃ শিবায়’ ধ্বনিতে। শৈব মতে, সমস্ত ব্রতের মধ্যে শিবরাত্রি সর্বোৎকৃষ্ট, কারণ এটি পালন করলে সাধকের সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। বিশেষ করে নারীদের জন্য এই ব্রত অমূল্য। বলা হয়, এই ব্রত পালনের মাধ্যমে নারীরা পতিকামনা, পুত্রলাভ, বৈধব্যের দুর্ভাগ্য দূরীকরণ ও পারিবারিক কল্যাণ লাভ করেন। কুমারী মেয়েরা এই দিনে শিবলিঙ্গে জল ও বেলপাতা নিবেদন করে মহাদেবের মতো আদর্শ স্বামীর প্রার্থনা করে থাকেন।
তবে কি শিবরাত্রির মতো এক মহান ব্রতের মাহাত্ম্য কেবল এতটুকুতেই সীমাবদ্ধ? এ কি শুধুই নারীদের জন্য নির্ধারিত একটি উপবাস ব্রত? শিবলিঙ্গের শিরে জল নিবেদনের পেছনে কি কোনো বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে? কোন ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল এই শিবরাত্রি ব্রত মর্তলোকে? কেমন বা হওয়া উচিত শিবরাত্রি পালনের নিয়মকানুন? আর এই ব্রতের কাহিনি বা ব্রতকথা শ্রবণ করলে কি ফল লাভ হয়? সবচেয়ে বড় প্রশ্ন—সারা বছর ধরে বারোটি শিবরাত্রি থাকলেও কেন ফাল্গুন মাসের এই চতুর্দশী তিথির শিবরাত্রিই এত মহান, এত মহিমান্বিত?
এসব প্রশ্ন বারবার আমাদের মনে ফিরে আসে, কৌতূহলের দরজা ঠেলে উঁকি দেয় অন্তরের গভীরে। অনেকেই এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানেন, আবার অনেকে হয়তো এখনও জানেন না। বিশেষ করে যারা জানেন না, তাদের জন্য এই লেখা হয়ে উঠবে একান্ত প্রয়োজনীয় ও মূল্যবান। আজকের এই নিবন্ধে থাকছে—শিবরাত্রির ব্রতকথা, এই ব্রত ঘিরে ঘোরাফেরা করা নানা প্রশ্নের উত্তর, আর সঙ্গে থাকছে শিবরাত্রি সম্পর্কিত সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা।
শিবরাত্রি সম্পর্কে ধর্মীয় কাহিনী
উপসংহার:আপনি হয়তো জানেন না, ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতেই মহাদেব প্রথমবার লিঙ্গরূপে প্রকাশিত হয়েছিলেন। অনেক ধর্মগ্রন্থ মতে, এই দিনেই শিব ও পার্বতীর শুভ বিবাহ সম্পন্ন হয়েছিল। বিশ্বাস করা হয়, এই তিথিতে উত্তর গোলার্ধে গ্রহ ও নক্ষত্রের এক বিশেষ সংযুক্তি ঘটে, যা আত্মিক জাগরণ ও মানসিক শক্তি বৃদ্ধির অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে।শিব স্বয়ং দেবী পার্বতীকে বলেছিলেন,এই বিশেষ দিন ব্রত সহকারে পালিত হলে, জীবনের পাপের বন্ধন কাটে ও মোক্ষের পথ সুগম হয়। এছাড়াও এই রাত্রিতে তিনি তাঁর প্রলয়তাণ্ডব নৃত্য করেছিলেন, যা পরে ‘তাণ্ডব’ নামে বিশ্বজুড়ে প্রসিদ্ধ হয়। শিবরাত্রি ব্রত শুধুই অবিবাহিত নারীদের জন্য নয়— বিবাহিত স্ত্রী, এমনকি পুরুষরাও এই ব্রতে অংশগ্রহণ করতে পারেন। কেউ করেন আদর্শ জীবনসঙ্গীর আশায়, কেউ আবার করেন সাফল্য, শান্তি ও সমৃদ্ধির আকাঙ্ক্ষায়। এই ব্রতের মাধ্যমে অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শাস্ত্রমতে, নিশীথকাল— অর্থাৎ রাতের মধ্যভাগ, যখন শিব লিঙ্গরূপ ধারণ করেছিলেন— সেই সময়টি শিবরাত্রি উদযাপনের শ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। বিশেষ করে এই রাতে মহামৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র জপ করলে, জীবনের সংকট ও গ্রহদোষ প্রশমিত হয় এবং আয়ু বৃদ্ধি পায় বলে বিশ্বাস করা হয়। উপরন্তু, শিবরাত্রির ব্রতকথা একাগ্রচিত্তে শ্রবণ করলে শ্রোতার জীবনে মহাপুণ্য লাভ ঘটে।.....ধন্যবাদ
খুব সুন্দর লিখেছেন ধন্যবাদ আপনাকে
ReplyDeletegood writing
ReplyDelete